বিনিয়োগে কঠিন বাস্তবতায় দেশ
বিআইডিএসের সেমিনারে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কঠিন বাস্তবতা মোকাবেলা করছে। এখানে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা প্রবল। ঝুঁকি নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে চলছে খরা। স্থানীয় বিনিয়োগে ব্যাংকের অর্থায়নই বড় উৎস। কিন্তু ঋণের উচ্চ সুদহার উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে পারছে না। পুঁজিবাজার বিকল্প অর্থায়নের উৎস হলেও সেখানে গেম্বলিংয়ের ভয় আছে। ব্যক্তি উদ্যোক্তার অর্জিত আয়ও বিনিয়োগে আসছে না। অনিশ্চয়তাই তাদের বড় ভয়। ফলে দেশে একটা বিনিয়োগ বন্ধ্যত্ব পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সোমবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) দুই দিনব্যাপী সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তবে সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম অর্থনীতিবিদদের এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকবে। এটা সব দেশেই আছে। সরকারের নীতিগত সহায়তা নিয়ে এ ঝুঁকি মোকাবেলায় উদ্যোক্তাকে এগিয়ে আসতে হবে। শিল্প উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখায় উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের শীর্ষ দুটি কোম্পানির নাম উল্লেখ করে তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এই সাহসী উদ্যোক্তাদের অন্যতম পথপ্রদর্শক হতে পারেন।’ তারা দেশে এমন কোনো শিল্প নেই যা গড়ে তোলেননি। বিদ্যমান এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই তারা দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে সাহসের সঙ্গে বিনিয়োগ করে তারা সফল হয়েছেন। শীর্ষ প্রতিষ্ঠান দুটি অন্য ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। দুই দিনব্যাপী সেমিনারের শেষদিন টুওয়ার্ডস ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন শীর্ষক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক রেহমান সোবহান। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অলস্টার ইউনিভার্সিটির (ইউকে) অধ্যাপক এসআর ওসমানি, এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করেই বিনিয়োগে আসতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিতে এবং উদ্যোক্তার ধারণায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। বিনিয়োগে অর্থায়ন সংকট দূর করতে হবে। এখানে বিদেশি বিনিয়োগ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এর জন্য হয়তো কমবেশি পদক্ষেপ আছে। কিন্তু দেশি বিনিয়োগ বাড়ানোও জরুরি। স্থানীয় বিনিয়োগে অর্থায়নের বড় উৎস ব্যাংক। কিন্তু ঋণের উচ্চ সুদহার উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। পুঁজিবাজার বিকল্প অর্থায়নের উৎস হলেও সেখানে গেম্বলিংয়ের ভয় আছে। ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের অর্জিত আয়ও আসছে না বিনিয়োগে। বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি সংকট দূর, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি, উৎপাদন ও মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি এবং পণ্যের বহুমুখীকরণ ও ব্যবসার ব্যয় কমানো গেলে উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়বে। মুনাফা বাড়লে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগেও আসবেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিনিয়োগে এখন বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। চাইলেই যেখানে-সেখানে শিল্প গড়ে তোলা যায় না। এটি হওয়াও উচিত নয়। এখানে পরিবেশ রক্ষা করে শিল্পায়ন হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকলে তাতে দেশ ও উদ্যোক্তারা দু’ভাবেই লাভবান হবেন। শুধু বিনিয়োগ করলেই হবে না। ভবিষ্যতের বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। সেটি উদ্যোক্তা এবং দক্ষ শ্রমিক দু’ভাবেই পরবর্তী প্রজন্মকে তৈরি করতে হবে। শিক্ষার সঙ্গে শিল্প উৎপাদনের সহায়ক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
No comments