স্বীকৃতির অপেক্ষায় হুমায়রা আমিন by মিজানুর রহমান খান
নুরুল আমিন খান |
আমার
তিন অবিবাহিত বোন, দুই ছোট শিশুসহ আমার মা ও জ্যেষ্ঠ বোন ছাড়া আমরা
স্বামী-স্ত্রী অপহৃত হলাম। এর নেতৃত্ব দেন মেজর গোলাম আহমেদ। কিছু
কাপড়চোপড় নেওয়ার কথা বললে এই মেজরটি বলেছিলেন, “তোমরা কি ভেবেছ বিয়ের
পার্টিতে যাচ্ছো?’”
এভাবেই একাত্তরের ২৩ এপ্রিলের বিভীষিকা স্মরণ করেন মিসেস হুমায়রা আমিন। তাঁর বাবা বিচারপতি আবদুস সোবহান চৌধুরী। বিচারপতি চৌধুরীর ধানমন্ডির ১৯ নম্বর রোডের ৮৪৯ নম্বর বাড়িতেই অবস্থান করছিল নুরুল আমিন খানের পরিবার। সে যাত্রায় মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল কলেজের ড্রয়িং-ডাইনিং রুমে লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় ১৫ দিন আটকে রেখে নুরুল আমিন খানকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আসতে দেওয়া হয়। হুমায়রা বাসায় ফিরে দেখেন তাঁর রেখে যাওয়া গয়না, টাকা, আসবাব এমনকি ঘরের ফ্যান পর্যন্ত লুট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে তাঁদের নতুন গাড়িটিও। তাঁদের লাইসেন্স করা পিস্তল ও বন্দুক জব্দ করা হয়েছিল আগেই।
উল্লেখ্য, ওই তিন বোনসহ বাদবাকিদের আটকে রাখা হয়েছিল পরের ৪ মাস ১০ দিন।
অবশেষে সেই দিনটি এল, ২০ মে ১৯৭১। নুরুল আমিন খান সকাল আটটায় অফিসে গেলেন কিন্তু আর ফিরলেন না। পিস্তল ফেরত নেওয়ার কথা বলে তাঁকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল সেনানিবাসে। ২৩ মে তাঁকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল। সেনানিবাসের একটি সেলের দেয়ালে তাঁর শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আরও অনেক বিশিষ্ট নামের সঙ্গে তাঁর নামটিও উৎকীর্ণ ছিল। ওই সময়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কৃষি বিভাগে একজন উপসচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নুরুল আমিন খান সিএসপি অফিসার ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি বরিশালের ডিসি থাকাকালে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান শাসকগোষ্ঠীর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সামরিক শাসনে তাঁর সমর্থন নেই। এক পিকনিক পার্টিতে তাঁর মত প্রকাশ পেয়েছিল। বরিশালে অশ্বিনীকুমার হলের নাম পাল্টে আইয়ুবের নামে করার উদ্যোগকে তিনি সুনজরে দেখেননি। সত্তরের নির্বাচনের ঠিক আগে তাঁকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছিল এই বিবেচনায় যে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি আনুকূল্য দেখাতে পারেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর পক্ষপাতও লুকোছাপা ছিল না। ভাষা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মুচলেকা দিয়ে মুক্তি প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে আরও কয়েক মাস কারাবাসে থাকতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে পাঠ শেষে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৬১ সালে সিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লাহোরে প্রশিক্ষণ শেষে সাতক্ষীরায় এসডিও নিযুক্ত হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শিকারপুর গ্রামে তার পৈতৃক নিবাস হলেও ১৯৩৫ সালে তিনি ভারতের আসামের তিনসুকিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ছেলে সাহেজ আমিন খান আমাকে লিখেছেন, ‘আমি আমার শহীদ পিতার যথাযোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছি।’ নুরুল আমিন খানের ভাই সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইফুল আমিন খান ২৩ নভেম্বর লন্ডন থেকে আমাকে লিখেছেন, ‘আমরা জানি না, আমাদের ভাবি, নুরুল আমিন খানের বিধবা পত্নী আর কত দিন বেঁচে থাকবেন?’ ১৬ ডিসেম্বরের পরে এক বুক আশা নিয়ে সাইফুল আমিন খানরা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছুটে গিয়েছিলেন। হুমায়রা স্বাধীনতার পর অনেকগুলো বছর পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকেছেন। তাঁর লেখার পৌনঃপুনিক চিঠির উত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান লিখেছিলেন, একাত্তরের অক্টোবরে আপনি যে আপনার স্বামীর খোঁজ জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর বিষয়ে সেনা কর্তৃপক্ষের কিছু জানা নেই।
নুরুল আমিন খান তাঁর শিশুসন্তান ও পরিবারের আরও অনেক সদস্যকে ফেলে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারেননি। কিন্তু স্ত্রীর ভাইয়ের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র শাস্তি পেয়েছিলেন তিনি। স্ত্রীর ভাই ছিলেন মেজর জেনারেল হারুন আহমদ। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সময় তিনি ক্যাপ্টেন ছিলেন।
শুধু বিয়ামের নিচতলায় তাঁর নামে একটি হল ও বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিটে নুরুল আমিন খানের স্মৃতি ধরে রাখা আছে। শহীদপত্নী হুমায়রা ও তাঁর ছেলেমেয়েরা একটি উপযুক্ত ‘স্বীকৃতি’ আশা করেন এবং সেটা তাঁদের প্রাপ্য। নুরুল আমিন খান জুনিয়র লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতাসীন, এখন আমার মেয়ের প্রশ্ন আমাকে কেবলই ক্ষতবিক্ষত ও বিদ্রোহী করে তোলে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিজে ডেকে হুমায়রাকে সমাজকল্যাণ দপ্তরের একটি প্রকল্পে চাকরি দেন। কিন্তু পরে সেখানে বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়লে তিনি চাকরিটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। শুনেছি, ইস্কাটন ও মোহাম্মদপুরে অন্তত দুবার সরকারিভাবে তাঁর নামে বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু দুবারই তিনি উঠতে গিয়ে দেখেন সেখানে আগে থেকেই অন্য শহীদ পরিবার বসবাস করছে!
বুদ্ধিজীবী নুরুল আমিন খানের মতো চিরতরে হারিয়ে যাওয়া শহীদদের জন্য কি আমাদের আর কিছুই করণীয় নেই? পরিবারগুলো হয়তো আর অপেক্ষায় নেই। কিন্তু তাঁরা কে কীভাবে মারা গেছেন, তার একটা অনুসন্ধান চলমান রাখতে কি রাষ্ট্রের দায় নেই? আরও অনেক শহীদের মতো নুরুল আমিন খানকে ঠিক কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সরকারি নথি নেই। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কোনো ভাষ্য নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ শুনেছেন যে তাঁকে নির্যাতন করে পরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। হুমায়রা বিউটি সিনেমা হলের মালিকের কাছে একটি বিবরণ শুনেছিলেন, সেটাই সত্য বলে মানছেন। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেই।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর। ১ হাজার ৬০০ নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজতে আমেরিকার প্রশাসন আজও ফাইল ও খোঁজাখুঁজি চলমান রেখেছে। ১৯৬৮ সালের ২১ জানুয়ারি ভিয়েতনামে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছিল। নিখোঁজ হয়েছিলেন মার্কিন সার্জেন্ট বিল ডি হিল। তাঁর ভগ্ন দেহাবশেষ আমেরিকায় আনা হয়েছে। আজ ১৭ ডিসেম্বর টেক্সাসে তাঁকে সমাহিত করা হবে। একাত্তরের এমনতর শহীদরা সংখ্যায় কত? তাঁদের কি একটি তালিকা হতে পারে না। হুমায়রা স্বামীর জন্য আর অপেক্ষায় থাকেন না; স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছেন।
সত্যিই কি তাঁর কোনো দিন অপেক্ষা শেষ হবে?
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷
mrkhanbd@gmail.com
এভাবেই একাত্তরের ২৩ এপ্রিলের বিভীষিকা স্মরণ করেন মিসেস হুমায়রা আমিন। তাঁর বাবা বিচারপতি আবদুস সোবহান চৌধুরী। বিচারপতি চৌধুরীর ধানমন্ডির ১৯ নম্বর রোডের ৮৪৯ নম্বর বাড়িতেই অবস্থান করছিল নুরুল আমিন খানের পরিবার। সে যাত্রায় মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল কলেজের ড্রয়িং-ডাইনিং রুমে লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় ১৫ দিন আটকে রেখে নুরুল আমিন খানকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আসতে দেওয়া হয়। হুমায়রা বাসায় ফিরে দেখেন তাঁর রেখে যাওয়া গয়না, টাকা, আসবাব এমনকি ঘরের ফ্যান পর্যন্ত লুট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে তাঁদের নতুন গাড়িটিও। তাঁদের লাইসেন্স করা পিস্তল ও বন্দুক জব্দ করা হয়েছিল আগেই।
উল্লেখ্য, ওই তিন বোনসহ বাদবাকিদের আটকে রাখা হয়েছিল পরের ৪ মাস ১০ দিন।
অবশেষে সেই দিনটি এল, ২০ মে ১৯৭১। নুরুল আমিন খান সকাল আটটায় অফিসে গেলেন কিন্তু আর ফিরলেন না। পিস্তল ফেরত নেওয়ার কথা বলে তাঁকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল সেনানিবাসে। ২৩ মে তাঁকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল। সেনানিবাসের একটি সেলের দেয়ালে তাঁর শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আরও অনেক বিশিষ্ট নামের সঙ্গে তাঁর নামটিও উৎকীর্ণ ছিল। ওই সময়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কৃষি বিভাগে একজন উপসচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নুরুল আমিন খান সিএসপি অফিসার ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি বরিশালের ডিসি থাকাকালে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান শাসকগোষ্ঠীর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সামরিক শাসনে তাঁর সমর্থন নেই। এক পিকনিক পার্টিতে তাঁর মত প্রকাশ পেয়েছিল। বরিশালে অশ্বিনীকুমার হলের নাম পাল্টে আইয়ুবের নামে করার উদ্যোগকে তিনি সুনজরে দেখেননি। সত্তরের নির্বাচনের ঠিক আগে তাঁকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছিল এই বিবেচনায় যে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি আনুকূল্য দেখাতে পারেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর পক্ষপাতও লুকোছাপা ছিল না। ভাষা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মুচলেকা দিয়ে মুক্তি প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে আরও কয়েক মাস কারাবাসে থাকতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে পাঠ শেষে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৬১ সালে সিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লাহোরে প্রশিক্ষণ শেষে সাতক্ষীরায় এসডিও নিযুক্ত হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শিকারপুর গ্রামে তার পৈতৃক নিবাস হলেও ১৯৩৫ সালে তিনি ভারতের আসামের তিনসুকিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ছেলে সাহেজ আমিন খান আমাকে লিখেছেন, ‘আমি আমার শহীদ পিতার যথাযোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছি।’ নুরুল আমিন খানের ভাই সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইফুল আমিন খান ২৩ নভেম্বর লন্ডন থেকে আমাকে লিখেছেন, ‘আমরা জানি না, আমাদের ভাবি, নুরুল আমিন খানের বিধবা পত্নী আর কত দিন বেঁচে থাকবেন?’ ১৬ ডিসেম্বরের পরে এক বুক আশা নিয়ে সাইফুল আমিন খানরা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছুটে গিয়েছিলেন। হুমায়রা স্বাধীনতার পর অনেকগুলো বছর পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকেছেন। তাঁর লেখার পৌনঃপুনিক চিঠির উত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান লিখেছিলেন, একাত্তরের অক্টোবরে আপনি যে আপনার স্বামীর খোঁজ জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর বিষয়ে সেনা কর্তৃপক্ষের কিছু জানা নেই।
নুরুল আমিন খান তাঁর শিশুসন্তান ও পরিবারের আরও অনেক সদস্যকে ফেলে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারেননি। কিন্তু স্ত্রীর ভাইয়ের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র শাস্তি পেয়েছিলেন তিনি। স্ত্রীর ভাই ছিলেন মেজর জেনারেল হারুন আহমদ। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সময় তিনি ক্যাপ্টেন ছিলেন।
শুধু বিয়ামের নিচতলায় তাঁর নামে একটি হল ও বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিটে নুরুল আমিন খানের স্মৃতি ধরে রাখা আছে। শহীদপত্নী হুমায়রা ও তাঁর ছেলেমেয়েরা একটি উপযুক্ত ‘স্বীকৃতি’ আশা করেন এবং সেটা তাঁদের প্রাপ্য। নুরুল আমিন খান জুনিয়র লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতাসীন, এখন আমার মেয়ের প্রশ্ন আমাকে কেবলই ক্ষতবিক্ষত ও বিদ্রোহী করে তোলে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিজে ডেকে হুমায়রাকে সমাজকল্যাণ দপ্তরের একটি প্রকল্পে চাকরি দেন। কিন্তু পরে সেখানে বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়লে তিনি চাকরিটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। শুনেছি, ইস্কাটন ও মোহাম্মদপুরে অন্তত দুবার সরকারিভাবে তাঁর নামে বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু দুবারই তিনি উঠতে গিয়ে দেখেন সেখানে আগে থেকেই অন্য শহীদ পরিবার বসবাস করছে!
বুদ্ধিজীবী নুরুল আমিন খানের মতো চিরতরে হারিয়ে যাওয়া শহীদদের জন্য কি আমাদের আর কিছুই করণীয় নেই? পরিবারগুলো হয়তো আর অপেক্ষায় নেই। কিন্তু তাঁরা কে কীভাবে মারা গেছেন, তার একটা অনুসন্ধান চলমান রাখতে কি রাষ্ট্রের দায় নেই? আরও অনেক শহীদের মতো নুরুল আমিন খানকে ঠিক কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সরকারি নথি নেই। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কোনো ভাষ্য নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ শুনেছেন যে তাঁকে নির্যাতন করে পরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। হুমায়রা বিউটি সিনেমা হলের মালিকের কাছে একটি বিবরণ শুনেছিলেন, সেটাই সত্য বলে মানছেন। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেই।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর। ১ হাজার ৬০০ নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজতে আমেরিকার প্রশাসন আজও ফাইল ও খোঁজাখুঁজি চলমান রেখেছে। ১৯৬৮ সালের ২১ জানুয়ারি ভিয়েতনামে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছিল। নিখোঁজ হয়েছিলেন মার্কিন সার্জেন্ট বিল ডি হিল। তাঁর ভগ্ন দেহাবশেষ আমেরিকায় আনা হয়েছে। আজ ১৭ ডিসেম্বর টেক্সাসে তাঁকে সমাহিত করা হবে। একাত্তরের এমনতর শহীদরা সংখ্যায় কত? তাঁদের কি একটি তালিকা হতে পারে না। হুমায়রা স্বামীর জন্য আর অপেক্ষায় থাকেন না; স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছেন।
সত্যিই কি তাঁর কোনো দিন অপেক্ষা শেষ হবে?
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷
mrkhanbd@gmail.com
No comments