‘সময় বদলেছে, মানুষ বদলাচ্ছে’ -অং সান সু চি

অং সান সু চি
নিম্নকক্ষে ৩৩০-এ ২৭১, উচ্চকক্ষে ১৬৮-এ ১৩৫ আসন
দৃপ্তকণ্ঠে অং সান সু চি বললেন, সময় বদলেছে। মানুষও বদলাচ্ছে। মিয়ানমারে ঐতিহাসিক নির্বাচনে তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) যখন ভূমিধস বিজয়ের দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তখন বিবিসিকে দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে এসব কথা বললেন সু চি। আরও বললেন, তিনি বিশ্বাস করেন পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন তারা। স্পষ্ট করে বললেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নি। তবে বহুলাংশে অবাধ হয়েছে। গতকালই তার সাক্ষাৎকারটি নেন বিবিসির ফারগাল কিন। সু চি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। বর্তমান সংবিধানের অধীনে সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যখন একজন সহযোগী ওই পদ ধারণ করবেন তখন তো বড় সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে। কৌতুক করে সু চি ইংরেজিতে বলেন, ‘এ রোজ বাই এনাদার নেম’। এ বাক্যটি বিখ্যাত ইংলিশ লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের লেখা রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে বোঝানো হয় যে, পদ যা-ই হোক তাতে কিছু এসে যায় না। সাক্ষাৎকারে সু চি বলেন, নির্বাচনের ফল একে একে আসছে। ইউনিয়ন লেজিসলেচারে আমরা সম্ভবত ৭৫ শতাংশের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবো। আমরা যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে চাই সেক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। ফারগাল কিন তার কাছে জানতে চান- জেনারেলরা যারা মিয়ানমারে এতো দীর্ঘ সময় কর্তৃত্ব করেছেন, তারা আপনাকে সেটা করতে দেবে- এমনটা বিশ্বাস করেন কি? জবাবে সুচি বলেন, তারা বার বার বলে আসছেন যে, মানুষের পছন্দের প্রতি তারা সম্মান দেখাবেন। নির্বাচনের ফল বাস্তবায়ন করবেন। তার কাছে ফের ফারগাল জানতে চান, আমরা অতীতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনেছি। ২৫ বছর আগের নির্বাচনের বাতিল করা ফলই শুধু নয়। আপনাকে বার বার গৃহবন্দি করা হয়েছে। এবার ব্যতিক্রম হবে এমনটা বিশ্বাস করার পেছনে কারণ কি? সু চির কণ্ঠ জোরালো হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, আমি মনে করি মানুষ এখন রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি সচেতন। শুধু ১৯৯০ সালের তুলনায় নয়, ২০১২ সালে যখন আমরা উপনির্বাচনে প্রচারণা করেছিলাম তখনকার তুলনায়ও মানুষ রাজনীতি নিয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন। আশেপাশে কি ঘটছে তা নিয়ে মানুষ অনেক বেশি সতর্ক। তাছাড়া, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব এসেছে, যা বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। প্রত্যেকে ইন্টারনেটে গিয়ে কি ঘটছে তা অপরকে অবহিত করে। কাজেই যারা অনিয়মে লিপ্ত হতে চান তাদের জন্য পার পেয়ে যাওয়াটা অনেক বেশি কঠিন।
ওদিকে নির্বাচনের ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সু চির দল এনএলডি। সু চির মুখপাত্র ইউ উইন হতে বলেছেন, নির্বাচন ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশন নির্বাচনের ফল প্রকাশে অসৎ উপায় অবলম্বন করছে। গতকাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ৮৮টি আসনের ফল ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনএলডি পেয়েছে ৭৮টি আসন। সরকার গঠন করতে গেলে তাদেরকে ৪৯৮টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হতে হবে। অর্থাৎ ৪২৯টি আসন পেতে হবে। পার্লামেন্টের ৬৬৪ আসনের মধ্যে এক চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। ওদিকে বিরোধী দল এনএলডির একটি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে যে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৩৩০টি আসনে এনএলডি বিজয়ী হয়েছে ২৭১ আসন। উচ্চকক্ষের ১৬৮ আসনে এনএলডি পেয়েছে ১৩৫টি। তবে এ তথ্য দলীয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য বলে অভিহিত করেছে। উল্লেখ্য, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও প্রেসিডেন্ট আগেভাগেই স্পষ্ট করেছে যে, তারা নির্বাচনের ফল মেনে নেবেন। তবে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী স্বামী ও দু’সন্তান বিদেশী হওয়ায় প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না সু চি। তিনি চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে বলেছেন, এনএলডি সরকার গঠন করলে প্রেসিডেন্টের কোন ক্ষমতা থাকবে না। এক্ষেত্রে তিনি সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি ক্ষমতা অর্জন করবেন। ইন্টেলিজেন্স ক্রাইসিস গ্রুপের রিচার্ড হোরসি সতর্ক করেছেন এ বিষয়ে। তিনি বলেন, এতে জেনারেলরা ক্ষুব্ধ হতে পারে। রিচার্ড হোরসি তার এক ব্লগে লিখেছেন, মিয়ানমারের শক্তিধর সেনাবাহিনী ও এর কমান্ডার ইন চিফ সু চির এ উদ্যোগকে প্ররোচনামূলক হিসেবে দেখতে পারেন। তারা মনে করতে পারেন, তারা যে সীমানা বেঁধে দিয়েছিলেন সু চি তা অতিক্রম করছেন। কারণ, সু চি যাতে প্রেসিডেন্ট হতে না পারেন সে জন্যই তারা সংবিধান পরিবর্তন করেছিলেন। সু চি নির্বাচিত হলেও এখনই তার হাতে ক্ষমতা তুলে দিচ্ছে না সেনাবাহিনী। এখন সেনাবাহিনীর ক্ষমতার মেয়াদ আছে প্রায় ৫ মাস। এরপরেই নতুন প্রশাসনের কাছে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। ফলে এসব বিষয় নিয়ে এনএলডির সঙ্গে তারা সমঝোতা করার জন্য প্রচুর সময় পাবে। যদি এ সেনাবাহিনী দেখতে পায় যে, সু চি সংবিধান পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছেন তাহলে দু’পক্ষে সংঘাত লাগতে পারে। ওদিকে এনএলডির সমালোচনার জবাব দিয়েছে দেশটির ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশন। এর প্রধান সাবেক জেনারেল ইউ টিন আয়ি বলেছেন, তারা ফল ঘোষণা নিয়ে পূর্ণ স্বচ্ছতা অবলম্বন করছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর তারা ফল ঘোষণা করবেন। কিন্তু এখনও সে অনুযায়ী ফল পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানী ন্যাপিডতে ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশনের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের এক কর্মকর্তা ইউ মিন্ট নাইংকে সংবাদ সম্মেলনে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কত সময় লাগতে পারে ফল পেতে। জবাবে তিনি বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফল জানানো হবে। তবে তা নির্ভর করে কত তাড়াতাড়ি ভোট গণনা করা যাবে।

1 comment:

  1. Getting a great victory after a big sacrifice,
    Congratulations,
    wazipoint.blogspot.com

    ReplyDelete

Powered by Blogger.