দুর্নীতি ভারতকে কুরে কুরে খাচ্ছে: মোদি
৬৯তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বললেন, দুর্নীতি দেশকে ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে খাচ্ছে। দীর্ঘ ভাষণে তিনি দুর্নীতি ও দারিদ্র্য নির্মূল করারও ঘোষণা দেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এএফপির। প্রথা মেনে গতকাল শনিবার রাজধানী দিল্লির লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার এ ভাষণ দিলেন তিনি। হিন্দুত্ববাদীদের পছন্দের নেতা বলে পরিচিত মোদি সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ততা নিয়ে দেশবাসীকে সাবধান করে দেন। ভারতীয় প্রচারমাধ্যমে বলা হয়, ৮৫ মিনিট স্থায়ী ভাষণটি সম্ভবত ছিল ভারতের যেকোনো প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেওয়া স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ। মোদির ভাষণে বারবার ফিরে আসে দুর্নীতির প্রসঙ্গটি। তিনি স্বীকার করেন, দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে একেবারে ওপরের স্তরে। মোদি বলেন, ‘আমি আবার নিশ্চিত করে বলতে চাই, দুর্নীতির গ্রাস থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। একেবারে মাথা থেকে শুরু করতে হবে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দলীয় দুই মুখ্যমন্ত্রীর দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোদির এই বক্তব্য এল।
সাবেক কংগ্রেসি সরকারের আমলে দুর্নীতির একের পর এক ঘটনার পর প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদি। তাই দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তাঁকে বেশ বিব্রতকর অবস্থাতেই ফেলেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে মোদি জানান, কালোটাকার মালিকদের কাছে থেকে এযাবৎ সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। অনেকে আছেন যাঁরা এসব পছন্দ করছেন না। প্রধানমন্ত্রী মোদি গতকালের ভাষণে ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’ নামে নতুন এক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাঁর এই কর্মসূচির মধ্যে আছে নতুন তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, কৃষকদের কল্যাণ এবং দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িকতা দমন। মোদি তাঁর ভাষণে এক হাজার দিনের মধ্যে ভারতের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দরিদ্র ১৭ কোটি মানুষের জন্য ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছে তাঁর সরকার। উন্নয়ন পিরামিডের ভিত্তিমূলেই দরিদ্র মানুষ—এ মন্তব্য করে মোদি বলেন, ‘সেই ভিত্তিকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে।’ মোদির ভাষণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কংগ্রেস আমলের সম্প্রচারমন্ত্রী মনীশ তিওয়ারি বলেন, সম্প্রতি সরকারের যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পার্লামেন্টে উঠেছে, তাঁদের বাদ দেওয়ার নৈতিক সাহস দেখাননি প্রধানমন্ত্রী। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি অলটারনেটিভসের মোহন গুরুস্বামী বলেন, ‘ওপরের কারা দুর্নীতি করে কত আয় করছে, গরিবদের তা নিয়ে ভাবনা নেই। পুলিশ বা সরকারি কর্মকর্তারা তাঁদের কাছ থেকে যখন ঘুষ নেন, বিষয়টি তখনই তাঁদের ভাবায়। সেটি বন্ধ না করা গেলে কোনো পরিবর্তন হবে না।’
No comments