ভুজপুর পুরুষ শূণ্য, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার- সহিংসতায় মামলা, জামায়াত নেতাসহ আটক ৩৪
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার
কাজীরহাটে বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে-জামায়েত-শিবিরের
মধ্যে সহিংসতার পর শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ
করছিল। এলাকা পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার রাত ৮টায় উপজেলা নির্বাহি
কর্মকর্তা ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এদিকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উভয় পক্ষের
মধ্যে নতুন করে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এদিকে বৃহস্পতিবারের সহিংসতায়
ভুজপুর থানায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা (মামলা নম্বর-২) দায়ের করেছে।
শুক্রবার সকালে ভুজপুর থানার উপ-পরিদর্শক নূরুন্নবী বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের
করেছেন।
এ মামলায় ১০০ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় ৬ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে পুরুষ শূণ্য হয়েছে ভূজপুর এলাকা।
পুলিশ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় ভুজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা শফিউল আলম নূরীসহ এ পর্যন্ত ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
ওই এলাকায় পুলিশ-বিজিবি ও র্যাবের
সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জারি করা ১৪৪ ধারা শুক্রবার রাত
৮টায় প্রত্যাহার করা হয়।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জনা
খান মজলিশ বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কোনো ধরণের সংঘর্ষের
ঘটনা ঘটেনি। রাতে এলাকায় তল্লাশী চালানো হয়েছে। তবে আর কোনো লাশ উদ্ধার করা
হয়নি।
পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক থাকায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ৩৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন
ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ
উপ-পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফটিকছড়ি উপজেলার
ভুজপুর থানার কাজির হাট এলাকায় আওয়ামী লীগের হরতাল বিরোধী মিছিল-সমাবেশে
হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা স্থানীয় গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে হামলা চালায়।
তাদের নৃশংস হামলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন কর্মী নিহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,
হরতালের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম
পেয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ফটিকছড়িতে মিছিল বের করে স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
মিছিলটি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উত্তর ফটিকছড়ির ভুজপুর
থানার কাজিরহাট এলাকায় গিয়ে সমাবেশ করে।
সমাবেশ চলাকালে কাজীরহাট এলাকায় হেফাজত
নিয়ন্ত্রিত একটি মাদ্রাসা থেকে স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়,
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাদ্রাসা ও মসজিদে হামলা চালাতে
এসেছে।
এ ঘোষণা শুনে গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে
পড়ে। হেফাজতের নেতাকর্মীরা এ সময় বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে এবং
গ্রামের লোকজনকে নিয়ে ওই সমাবেশে হামলা চালায়।
হেফাজত ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের
ঘটনায় উভয় পক্ষের তিনজন নিহত ও পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মচারী, বিজিবি
সদস্য, সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হেফাজত,জামায়াত ও শিবিরের সহিংসতায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হেফাজতের সঙ্গে
জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় উত্তেজিত লোকজন শতাধিক মোটর সাইকেল,
চারটি মিনি ট্রাক, তিনটি প্রাইভেট কার, একটি মাইক্রোবাস, ফায়ার সার্ভিসের
একটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বাংলানিউজের কাছে দাবি
করেছেন, হতাহতরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
তিনজনের জানাজা অনুষ্ঠিত:
ভূজপুর কাজিরহাট এলাকায় আওয়ামীলীগের
মিছিলে হামলায় নিহত ফারুক ইকবাল বিপুল, মোহাম্মদ ফোরকান ও মোহাম্মদ রুবেলের
নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ফটিকছড়ি
ডিগ্রি কলেজ মাঠে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের
প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম, সাবেক
রাষ্ট্রদূত নুরুল আলম চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা
এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব আহমেদ, মিরসরাই
উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ও ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা
অঞ্জনা খান মজলিশ জানাজার আগে বক্তব্য রাখেন।
সেখানে তারা এ হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা
জানান এবং জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আশ্বাসদেন। নিহতের নিজ গ্রামে
আলাদা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা
থেকে ফটিকছড়ির ভুজপুর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। ঘটনাস্থলে
অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
No comments