আওয়ামী লীগ ডুবলে আমরা সবাই ডুবব’ by মইনুল ইসলাম
বাংলাদেশের জনজীবনে মুদ্রাস্ফীতির তাণ্ডবের চেয়েও শ্রাবণ মাসের অন্তিমলগ্নে এবং ভাদ্রের শুরুতে প্রধান বিপর্যয়কারী সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশব্যাপী সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার ভগ্নদশা। প্রতিবছর বর্ষাকালে রাস্তাঘাট-জনপথগুলো ভাঙনের শিকার হলেও মেরামত ও চলনসই সংস্কারের পাল্টা-প্রয়াস জোরদার করে সড়ক যোগাযোগকে মোটামুটি চলনসই রাখাটাই ছিল এ দেশের ঐতিহ্য। তার বিপরীতে এবারই মন্ত্রীপ্রবরের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে সড়ক মেরামতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার অজুহাতের কথা। সরকারের অভ্যন্তরীণ রশি টানাটানির খবর ফাঁস করে দিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী যতই আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলুন না কেন, তাঁর মন্ত্রণালয় দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অযোগ্যতায় রেকর্ড সৃষ্টি করে চলেছে। এবার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থায় যে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা নজিরবিহীন। প্রশ্ন উঠেছে, একজন অযোগ্য মন্ত্রীর জন্য পুরো সরকারকে জনগণের বিরাগভাজন হতে দিচ্ছেন কেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে বাস চলাচল কয়েক দিন বন্ধ ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম-বারইয়ারহাট অংশ, মিয়াবাজার-চৌদ্দগ্রাম অংশ এবং কাঁচপুর-যাত্রাবাড়ী অংশ ভেঙেচুরে মরণফাঁদে রূপান্তরিত হয়েছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন: যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে যোগ্য হাতে সমর্পণ করুন।
সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার মহাবিপর্যয়ে যে বিষয়টি কিছুটা ধামাচাপা পড়েছে, তা আরও বেশি বিপজ্জনক—মানে, আমি মুদ্রাস্ফীতি ও বাজার নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তেলেসমাতির কথা বলছি। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান মুদ্রাস্ফীতি সমস্যার সমাধানে ‘কম খাওয়ার’ প্রেসক্রিপশন দিয়ে জাতির হাসির খোরাক হয়ে গেছেন। এমনকি বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী মহোদয় পর্যন্ত সপ্তাহে এক দিন বাজারে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে নানা মহল থেকে বিদ্রূপের ‘পাটকেল’ হজম করছেন। কিন্তু বাজারের যে বিপুল চাহিদার বিস্ফোরণ, তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, এ দেশের ফরমাল অর্থনীতির পাশাপাশি যে বিশাল ‘সমান্তরাল অর্থনীতি’ বা ‘কালো অর্থনীতি’ দ্রুত বর্ধনশীল, তার আয়তন ও ব্যাপ্তি সঠিকভাবে প্রাক্কলন যেহেতু দুরূহ, তাই চাহিদা ও জোগানের ফারাকটা মাঝেমধ্যেই জনগণকে মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার দাবড়ানির মুখে ঠেলেদেয়; বিশেষত, আমদানি-বাণিজ্যে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে যেহেতু ‘যোগসাজশমূলক অলিগোপলি’ এবং ‘গোপন কার্টেল’ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ওপরের কেতাবি বাজারব্যবস্থাগুলোই ‘বাজার সিন্ডিকেট’ নামে অভিহিত হচ্ছে টেলিভিশনের টকশো ও পত্রপত্রিকার কলামে। সাধারণ মানুষও সিন্ডিকেটের কারসাজিকে দোষারোপ করছে বারবার। আমদানি স্তর থেকে শুরু করে ফাইনাল প্রসেসিং, পাইকারি ব্যবসা ও খুচরা ব্যবসার স্তর পর্যন্ত সিন্ডিকেট-পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। শুধু ডিও প্রথা বাতিল করে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
নিচের কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বাজার কারসাজির বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো:
১. ভোজ্যতেল আমদানির সিংহভাগ জুড়ে থাকে পাম অয়েল, দ্বিতীয় স্থানে থাকে সয়াবিন তেল। সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক দাম পাম অয়েলের চেয়ে বেশি। তাই অপরিশোধিত আমদানিকৃত পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলকে পরিশোধন পর্যায়ে রিফাইনারিগুলো বিভিন্ন অনুপাতে একসঙ্গে মিশিয়ে বোতলজাত করে পরিশোধিত সয়াবিন তেলের ‘ফ্যাক্টরি দামে’ মিলগেট থেকে বাজারজাত করে। বহুল আলোচিত ডিও প্রথার মাধ্যমে কয়েক হাত ঘুরে পাইকারি বাজারে এই মিলগুলোর সরবরাহকৃত তেল আসত, তাই এ পর্যায়ে তেলের দাম কারসাজির শিকার হতো বলে জনমনে ধারণাটা জেঁকে বসেছে। সরকারও ডিও প্রথা বাতিল করে ডিলার বা পরিবেশক নিয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজছে। কিন্তু ভোজ্যতেলের তেলেসমাতি তো রিফাইনারি বা ‘অয়েল মিল’ পর্যায় থেকেই শুরু—ওই সমস্যার সমাধান শুধু পরিবেশক নিয়োগপ্রথায় পাওয়া যাবে না। অয়েল রিফাইনারিগুলোতে অপরিশোধিত তেল আমদানিপর্যায় থেকে পরিশোধন, বোতলজাতকরণ ও মিলের গেট পর্যায়ে বাজারজাতকরণ—সব মিলিয়ে প্রকৃত ‘অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন’ ২০ শতাংশেও হয়তো হবে না। তাই এ ধনের শিল্পায়নকে ‘মেকি শিল্পায়ন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এর মানে হলো, অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট শিল্পের মতো এগুলোও প্রকৃত প্রস্তাবে উৎপাদনশীল শিল্পায়ন নয়, আমদানিনির্ভর অপচয়মূলক পুঁজি-বিনিয়োগ, যেখানে আমদানি-বাণিজ্যে মুনাফা আহরণই এর মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে। ম্যানুফ্যাকচারিং এ ক্ষেত্রে গৌণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে ম্যানিপুলেট করে আমদানিকৃত পণ্যের বাজার দামের একটা বিপুল অংশ দখল করার দুরভিসন্ধিই এ ক্ষেত্রে ‘প্রকৃতপক্ষে বণিক, কিন্তু নামে শিল্পপতি’—এসব পুঁজিপতির প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলোতে। তাত্ত্বিকভাবে এদের মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অর্থনীতিবিদ প্রয়াত পল বারান। যেহেতু এ ধরনের ১০-১২ জন ভোজ্যতেল ‘আমদানিকারক-মিলমালিকদের’ হাতে ভোজ্যতেল ‘আমদানি-পরিশোধন-বোতলজাতকরণ-বাজারজাতকরণ’ প্রক্রিয়াটি কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে,সেহেতু ভোজ্যতেলের শতভাগ নিয়ন্ত্রণও এদের হাতে চলে গেছে। এরাই এ বাজারের বহুল আলোচিত ‘সিন্ডিকেট’; অর্থনীতির পরিভাষায় যোগসাজশমূলক অলিগোপলি। গোপন যোগসাজশ প্রায়ই গোপন কার্টেলে পরিণত হয়ে যায়—এটাও তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণিত। মন্ত্রীর হুমকি-ধমকি বা টেলিভিশন-ক্যামেরার উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি এ ধরনের যোগসাজশমূলক অলিগোপলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। এটা শুধু ‘লোক দেখানো নাটক’ কিংবা জনগণের হাসির খোরাক হবে। পুঁজিবাদের বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারব, ১৮৯০ সাল থেকে শুরু করে গত ১২০ বছরে ধাপে ধাপে বাজার শাসন বা বাজার-নিয়ন্ত্রণ আইনগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা যোগসাজশমূলক অলিগোপলি, কার্টেল ও বাজারের একচেটিয়া ক্ষমতাকে বাগে নিয়ে এসেছে। নিচের আইনগুলো এ ক্ষেত্রে একেকটি মাইলফলক:
ক. ১৮৯০ সালে গৃহীত শেরম্যান অ্যান্টি-ট্রাস্ট অ্যাক্ট;
খ. ১৯১৪ সালে গৃহীত ক্লেটন অ্যাক্ট;
গ. ১৯১৪ সালে প্রথম গৃহীত এবং ১৯৩৮, ১৯৭৩ ও ১৯৭৮ সালে সংশোধিত ফেডারেল ট্রেড কমিশন অ্যাক্টসমূহ;
ঘ. ১৯৩৬ সালের রবিনসন-প্যাটম্যান অ্যাক্ট এবং
ঙ. ১৯৬৩ সালের ক্রেতা সংরক্ষণ অ্যাক্ট;
শেরম্যান অ্যাক্টে গোপন যোগসাজশকে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। ক্লেটন অ্যাক্টে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কোন কোন তৎপরতাকে বাজার প্রতিযোগিতার জন্য ক্ষতিকর আখ্যায়িত করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ক্লেটন অ্যাক্টে ‘লুণ্ঠনমূলক দাম নির্ধারণের’ সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করে সেগুলোকে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। রবিনসন-প্যাটম্যান অ্যাক্টে একই ধরনের বা প্রায় একই মানের পণ্যের জন্য বেশি দাম ধরে মুনাফাবাজি করাকে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফেডারেল ট্রেড কমিশন আইন ও এর পরবর্তী সংশোধনীগুলোয় অন্যায্য ব্যবসার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৬৩ সালের বিখ্যাত ক্রেতা সংরক্ষণ আইন ক্রেতাসাধারণকে বিক্রেতাদের নানা প্রতারণা থেকে সুরক্ষা প্রদানের একটা ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনগুলোর প্রয়োজনীয় ধারা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে এ দেশে কি ‘বাজার শাসন আইন’ বা ‘বাজার প্রতিযোগিতা আইন’ প্রণয়ন করা যায় না? খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাজারের মুনাফাখোর একচেটিয়া বণিকদের কবল থেকে ক্রেতাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে, তা কি আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তি বা কর্মকর্তারা শিক্ষণীয় মনে করেন না? মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রয়াস রয়েছে। পুঁজিবাজারকে লুটেরা-ফাটকাবাজদের কবল থেকে বাঁচাতে এসইসির ক্ষমতাবৃদ্ধির প্রয়াস চলেছে। কিন্তু পণ্যবাজার এবং বিশেষত আমদানিকৃত পণ্যের ‘বাজার শাসনব্যবস্থা’ কোথায়? প্রস্তাবিত ‘ফেয়ার কম্পিটিশন অ্যাক্ট’-এর খসড়া তো ২০১০ সালের জানুয়ারিতেই প্রস্তুত হয়ে গেছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল। ওই খসড়াটি কার ডেস্কে ঘুমাচ্ছে? ওটাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য ব্যবসায়ীরা কত টাকা নজরানা দিয়েছেন? এই বিল সংসদে উত্থাপিত হয় না কেন?
২. এক নম্বর আইটেমে ভোজ্যতেল নিয়ে যে বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হয়েছে, তার প্রায় পুরোটাই প্রযোজ্য হবে চিনির বাজারের তেলেসমাতি ব্যাখ্যায়। চিনি আমদানিতেও গেঁড়ে বসেছে অপরিশোধিত চিনি পরিশোধন ও প্যাকেটজাত করার মিলগুলো। একই প্রক্রিয়ায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন; একই প্রক্রিয়ায় ১০-১২ জন আমদানিকারক-মিলমালিকদের কাছে চিনি ‘আমদানি-পরিশোধন-প্যাকেটজাতকরণ-বাজারজাতকরণ’ জিম্মি হয়ে গেছে। তারাই ‘সিন্ডিকেট’ বা চিনি-মাফিয়া। আবার চিনি ও ভোজ্যতেল সিন্ডিকেটে কয়েকজন অভিন্ন খেলোয়াড় রয়েছেন—মানে, এই দুই বাজারে একই ব্যবসায়ী খেলছেন!
৩. নজির হিসেবে ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারকে উল্লেখ করা হলেও প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আমদানি করা পণ্যে গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ীর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়ে গেছে গত তিন দশকের ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির’ রাজত্বকালে। আমদানি উদারকরণ, প্রাইভেট মালিকানায় ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রসার এবং রাজনীতি ও রাষ্ট্রের ওপর এসব মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ স্থাপন এ দেশের বাজারকে একচেটিয়া ক্ষমতা ও ম্যানিপুলেশনের ‘স্বর্গরাজ্যে’ পরিণত করেছে। তাই ‘ফেয়ার কম্পিটিশন অ্যাক্ট’-এর খসড়া বিলটি অবিলম্বে সংসদে উপস্থাপন করে আইনে পরিণত করা যেমন জরুরি, তেমনি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও বাজার শাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। প্রস্তাবিত ‘ফেয়ার কম্পিটিশন অ্যাক্ট’-এ নিবন্ধে উল্লিখিত মার্কিন আইনগুলোর বিভিন্ন দিক কতটা ধারণ করছে, তা জানি না। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট ও ট্যারিফ কমিশন জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে গবেষণা চালানোর প্রয়াস নিতে পারে। ওই প্রস্তাবিত আইনে আমদানি করা পণ্যের মজুদ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকতে হবে; একটি ইমপোর্ট প্রাইজিং কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের দামের সঙ্গে সর্বোচ্চ মার্জিন কত যোগ করা যাবে, তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে; আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ, গুদাম পরিস্থিতি ও বাজারজাতকরণ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে; বিভিন্ন অপরাধের জন্য জেল-জরিমানা, বাণিজ্য লাইসেন্স স্থগিতকরণ ও বাতিলকরণ, ব্যাংকঋণ ও এলসির অযোগ্যতা এবং প্রয়োজনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন পূর্ণ বিচারিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে বাজার-নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠা নয়। বাজার শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতেই হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতির মধ্যে ‘সমাজতন্ত্র’ ফিরে এসেছে। তা সত্ত্বেও বাজারব্যবস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক করার বিকল্প নেই। কিন্তু বাজার শাসনব্যবস্থা দুর্বল হলে যে অত্যন্ত সবল অর্থনীতিও বিপর্যয়ের চক্রে নিপতিত হয়, তার প্রমাণ এখন পশ্চিমা পুঁজিবাদী বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ। রাষ্ট্রকে এ ক্ষেত্রে শক্তিধর রেগুলেটরের ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের পণ্যের বাজারকে কতিপয় পুঁজি-লুটেরা ব্যবসায়ীর মৃগয়ার ক্ষেত্রে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না। মানুষ বড্ড কষ্ট পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের একজনভোটার ও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনুন। দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য মন্ত্রীদের অচিরেই বিদায় করুন। দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি ও দখলবাজি রোধ করুন। এখনো সময় আছে। আওয়ামী লীগ ডুবলে আমরা সবাই ডুবব। তাই দেশটা আবারও বিএনপি-জামায়াতচক্রের খপ্পরে পড়ার আগেই সাবধানবাণী উচ্চারণ করছি।
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার মহাবিপর্যয়ে যে বিষয়টি কিছুটা ধামাচাপা পড়েছে, তা আরও বেশি বিপজ্জনক—মানে, আমি মুদ্রাস্ফীতি ও বাজার নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তেলেসমাতির কথা বলছি। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান মুদ্রাস্ফীতি সমস্যার সমাধানে ‘কম খাওয়ার’ প্রেসক্রিপশন দিয়ে জাতির হাসির খোরাক হয়ে গেছেন। এমনকি বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী মহোদয় পর্যন্ত সপ্তাহে এক দিন বাজারে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে নানা মহল থেকে বিদ্রূপের ‘পাটকেল’ হজম করছেন। কিন্তু বাজারের যে বিপুল চাহিদার বিস্ফোরণ, তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, এ দেশের ফরমাল অর্থনীতির পাশাপাশি যে বিশাল ‘সমান্তরাল অর্থনীতি’ বা ‘কালো অর্থনীতি’ দ্রুত বর্ধনশীল, তার আয়তন ও ব্যাপ্তি সঠিকভাবে প্রাক্কলন যেহেতু দুরূহ, তাই চাহিদা ও জোগানের ফারাকটা মাঝেমধ্যেই জনগণকে মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার দাবড়ানির মুখে ঠেলেদেয়; বিশেষত, আমদানি-বাণিজ্যে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে যেহেতু ‘যোগসাজশমূলক অলিগোপলি’ এবং ‘গোপন কার্টেল’ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ওপরের কেতাবি বাজারব্যবস্থাগুলোই ‘বাজার সিন্ডিকেট’ নামে অভিহিত হচ্ছে টেলিভিশনের টকশো ও পত্রপত্রিকার কলামে। সাধারণ মানুষও সিন্ডিকেটের কারসাজিকে দোষারোপ করছে বারবার। আমদানি স্তর থেকে শুরু করে ফাইনাল প্রসেসিং, পাইকারি ব্যবসা ও খুচরা ব্যবসার স্তর পর্যন্ত সিন্ডিকেট-পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। শুধু ডিও প্রথা বাতিল করে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
নিচের কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বাজার কারসাজির বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো:
১. ভোজ্যতেল আমদানির সিংহভাগ জুড়ে থাকে পাম অয়েল, দ্বিতীয় স্থানে থাকে সয়াবিন তেল। সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক দাম পাম অয়েলের চেয়ে বেশি। তাই অপরিশোধিত আমদানিকৃত পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলকে পরিশোধন পর্যায়ে রিফাইনারিগুলো বিভিন্ন অনুপাতে একসঙ্গে মিশিয়ে বোতলজাত করে পরিশোধিত সয়াবিন তেলের ‘ফ্যাক্টরি দামে’ মিলগেট থেকে বাজারজাত করে। বহুল আলোচিত ডিও প্রথার মাধ্যমে কয়েক হাত ঘুরে পাইকারি বাজারে এই মিলগুলোর সরবরাহকৃত তেল আসত, তাই এ পর্যায়ে তেলের দাম কারসাজির শিকার হতো বলে জনমনে ধারণাটা জেঁকে বসেছে। সরকারও ডিও প্রথা বাতিল করে ডিলার বা পরিবেশক নিয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজছে। কিন্তু ভোজ্যতেলের তেলেসমাতি তো রিফাইনারি বা ‘অয়েল মিল’ পর্যায় থেকেই শুরু—ওই সমস্যার সমাধান শুধু পরিবেশক নিয়োগপ্রথায় পাওয়া যাবে না। অয়েল রিফাইনারিগুলোতে অপরিশোধিত তেল আমদানিপর্যায় থেকে পরিশোধন, বোতলজাতকরণ ও মিলের গেট পর্যায়ে বাজারজাতকরণ—সব মিলিয়ে প্রকৃত ‘অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন’ ২০ শতাংশেও হয়তো হবে না। তাই এ ধনের শিল্পায়নকে ‘মেকি শিল্পায়ন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এর মানে হলো, অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট শিল্পের মতো এগুলোও প্রকৃত প্রস্তাবে উৎপাদনশীল শিল্পায়ন নয়, আমদানিনির্ভর অপচয়মূলক পুঁজি-বিনিয়োগ, যেখানে আমদানি-বাণিজ্যে মুনাফা আহরণই এর মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে। ম্যানুফ্যাকচারিং এ ক্ষেত্রে গৌণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে ম্যানিপুলেট করে আমদানিকৃত পণ্যের বাজার দামের একটা বিপুল অংশ দখল করার দুরভিসন্ধিই এ ক্ষেত্রে ‘প্রকৃতপক্ষে বণিক, কিন্তু নামে শিল্পপতি’—এসব পুঁজিপতির প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলোতে। তাত্ত্বিকভাবে এদের মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অর্থনীতিবিদ প্রয়াত পল বারান। যেহেতু এ ধরনের ১০-১২ জন ভোজ্যতেল ‘আমদানিকারক-মিলমালিকদের’ হাতে ভোজ্যতেল ‘আমদানি-পরিশোধন-বোতলজাতকরণ-বাজারজাতকরণ’ প্রক্রিয়াটি কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে,সেহেতু ভোজ্যতেলের শতভাগ নিয়ন্ত্রণও এদের হাতে চলে গেছে। এরাই এ বাজারের বহুল আলোচিত ‘সিন্ডিকেট’; অর্থনীতির পরিভাষায় যোগসাজশমূলক অলিগোপলি। গোপন যোগসাজশ প্রায়ই গোপন কার্টেলে পরিণত হয়ে যায়—এটাও তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণিত। মন্ত্রীর হুমকি-ধমকি বা টেলিভিশন-ক্যামেরার উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি এ ধরনের যোগসাজশমূলক অলিগোপলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। এটা শুধু ‘লোক দেখানো নাটক’ কিংবা জনগণের হাসির খোরাক হবে। পুঁজিবাদের বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারব, ১৮৯০ সাল থেকে শুরু করে গত ১২০ বছরে ধাপে ধাপে বাজার শাসন বা বাজার-নিয়ন্ত্রণ আইনগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা যোগসাজশমূলক অলিগোপলি, কার্টেল ও বাজারের একচেটিয়া ক্ষমতাকে বাগে নিয়ে এসেছে। নিচের আইনগুলো এ ক্ষেত্রে একেকটি মাইলফলক:
ক. ১৮৯০ সালে গৃহীত শেরম্যান অ্যান্টি-ট্রাস্ট অ্যাক্ট;
খ. ১৯১৪ সালে গৃহীত ক্লেটন অ্যাক্ট;
গ. ১৯১৪ সালে প্রথম গৃহীত এবং ১৯৩৮, ১৯৭৩ ও ১৯৭৮ সালে সংশোধিত ফেডারেল ট্রেড কমিশন অ্যাক্টসমূহ;
ঘ. ১৯৩৬ সালের রবিনসন-প্যাটম্যান অ্যাক্ট এবং
ঙ. ১৯৬৩ সালের ক্রেতা সংরক্ষণ অ্যাক্ট;
শেরম্যান অ্যাক্টে গোপন যোগসাজশকে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। ক্লেটন অ্যাক্টে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কোন কোন তৎপরতাকে বাজার প্রতিযোগিতার জন্য ক্ষতিকর আখ্যায়িত করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ক্লেটন অ্যাক্টে ‘লুণ্ঠনমূলক দাম নির্ধারণের’ সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করে সেগুলোকে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। রবিনসন-প্যাটম্যান অ্যাক্টে একই ধরনের বা প্রায় একই মানের পণ্যের জন্য বেশি দাম ধরে মুনাফাবাজি করাকে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফেডারেল ট্রেড কমিশন আইন ও এর পরবর্তী সংশোধনীগুলোয় অন্যায্য ব্যবসার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৬৩ সালের বিখ্যাত ক্রেতা সংরক্ষণ আইন ক্রেতাসাধারণকে বিক্রেতাদের নানা প্রতারণা থেকে সুরক্ষা প্রদানের একটা ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনগুলোর প্রয়োজনীয় ধারা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে এ দেশে কি ‘বাজার শাসন আইন’ বা ‘বাজার প্রতিযোগিতা আইন’ প্রণয়ন করা যায় না? খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাজারের মুনাফাখোর একচেটিয়া বণিকদের কবল থেকে ক্রেতাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে, তা কি আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তি বা কর্মকর্তারা শিক্ষণীয় মনে করেন না? মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রয়াস রয়েছে। পুঁজিবাজারকে লুটেরা-ফাটকাবাজদের কবল থেকে বাঁচাতে এসইসির ক্ষমতাবৃদ্ধির প্রয়াস চলেছে। কিন্তু পণ্যবাজার এবং বিশেষত আমদানিকৃত পণ্যের ‘বাজার শাসনব্যবস্থা’ কোথায়? প্রস্তাবিত ‘ফেয়ার কম্পিটিশন অ্যাক্ট’-এর খসড়া তো ২০১০ সালের জানুয়ারিতেই প্রস্তুত হয়ে গেছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল। ওই খসড়াটি কার ডেস্কে ঘুমাচ্ছে? ওটাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য ব্যবসায়ীরা কত টাকা নজরানা দিয়েছেন? এই বিল সংসদে উত্থাপিত হয় না কেন?
২. এক নম্বর আইটেমে ভোজ্যতেল নিয়ে যে বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হয়েছে, তার প্রায় পুরোটাই প্রযোজ্য হবে চিনির বাজারের তেলেসমাতি ব্যাখ্যায়। চিনি আমদানিতেও গেঁড়ে বসেছে অপরিশোধিত চিনি পরিশোধন ও প্যাকেটজাত করার মিলগুলো। একই প্রক্রিয়ায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন; একই প্রক্রিয়ায় ১০-১২ জন আমদানিকারক-মিলমালিকদের কাছে চিনি ‘আমদানি-পরিশোধন-প্যাকেটজাতকরণ-বাজারজাতকরণ’ জিম্মি হয়ে গেছে। তারাই ‘সিন্ডিকেট’ বা চিনি-মাফিয়া। আবার চিনি ও ভোজ্যতেল সিন্ডিকেটে কয়েকজন অভিন্ন খেলোয়াড় রয়েছেন—মানে, এই দুই বাজারে একই ব্যবসায়ী খেলছেন!
৩. নজির হিসেবে ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারকে উল্লেখ করা হলেও প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আমদানি করা পণ্যে গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ীর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়ে গেছে গত তিন দশকের ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির’ রাজত্বকালে। আমদানি উদারকরণ, প্রাইভেট মালিকানায় ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রসার এবং রাজনীতি ও রাষ্ট্রের ওপর এসব মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ স্থাপন এ দেশের বাজারকে একচেটিয়া ক্ষমতা ও ম্যানিপুলেশনের ‘স্বর্গরাজ্যে’ পরিণত করেছে। তাই ‘ফেয়ার কম্পিটিশন অ্যাক্ট’-এর খসড়া বিলটি অবিলম্বে সংসদে উপস্থাপন করে আইনে পরিণত করা যেমন জরুরি, তেমনি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও বাজার শাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। প্রস্তাবিত ‘ফেয়ার কম্পিটিশন অ্যাক্ট’-এ নিবন্ধে উল্লিখিত মার্কিন আইনগুলোর বিভিন্ন দিক কতটা ধারণ করছে, তা জানি না। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট ও ট্যারিফ কমিশন জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে গবেষণা চালানোর প্রয়াস নিতে পারে। ওই প্রস্তাবিত আইনে আমদানি করা পণ্যের মজুদ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকতে হবে; একটি ইমপোর্ট প্রাইজিং কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের দামের সঙ্গে সর্বোচ্চ মার্জিন কত যোগ করা যাবে, তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে; আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ, গুদাম পরিস্থিতি ও বাজারজাতকরণ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে; বিভিন্ন অপরাধের জন্য জেল-জরিমানা, বাণিজ্য লাইসেন্স স্থগিতকরণ ও বাতিলকরণ, ব্যাংকঋণ ও এলসির অযোগ্যতা এবং প্রয়োজনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন পূর্ণ বিচারিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে বাজার-নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠা নয়। বাজার শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতেই হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতির মধ্যে ‘সমাজতন্ত্র’ ফিরে এসেছে। তা সত্ত্বেও বাজারব্যবস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক করার বিকল্প নেই। কিন্তু বাজার শাসনব্যবস্থা দুর্বল হলে যে অত্যন্ত সবল অর্থনীতিও বিপর্যয়ের চক্রে নিপতিত হয়, তার প্রমাণ এখন পশ্চিমা পুঁজিবাদী বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ। রাষ্ট্রকে এ ক্ষেত্রে শক্তিধর রেগুলেটরের ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের পণ্যের বাজারকে কতিপয় পুঁজি-লুটেরা ব্যবসায়ীর মৃগয়ার ক্ষেত্রে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না। মানুষ বড্ড কষ্ট পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের একজনভোটার ও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনুন। দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য মন্ত্রীদের অচিরেই বিদায় করুন। দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি ও দখলবাজি রোধ করুন। এখনো সময় আছে। আওয়ামী লীগ ডুবলে আমরা সবাই ডুবব। তাই দেশটা আবারও বিএনপি-জামায়াতচক্রের খপ্পরে পড়ার আগেই সাবধানবাণী উচ্চারণ করছি।
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments