স্পেনের গৌরব পুনরুদ্ধারের ম্যাচ
জং তায়ে-সেকে প্রথম ম্যাচেই মনে ধরেছে আমার। বিশেষ করে জাতীয় সংগীত বাজছিল যখন, জংয়ের চোখ বেয়ে ঝরেছে আবেগের অশ্রুজল। মানসিকভাবে ও কিন্তু খুবই দৃঢ়। আজও পর্তুগালের বিপক্ষে উত্তর কোরিয়ার মূল ছক হবে পাল্টা আক্রমণ। এবং স্ট্রাইকার জংই থাকবে তার নেতৃত্বে।
যেমনটা বললাম, কোরীয়দের কৌশল হবে ঠাসবুনুনির রক্ষণ, মাঝমাঠে জায়গা বেশি না দেওয়া, বল পায়ে এলেই গতি দিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণে আচমকা হামলা চালানো। আইভরিকোস্ট ম্যাচে পর্তুগালের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো মাত্র একবারই জ্বলে উঠেছিল, যখন ওর শট গিয়ে লাগল পোস্টে। আজ কোরীয়দের বিপক্ষে ওকে আরও বেশি করে জ্বলে উঠতে হবে। কারণ এই ম্যাচটায় পর্তুগালের জন্য তিন পয়েন্টের বিকল্প কিছু নেই।
কোচ কার্লোস কুইরোজ অবশ্য তাঁর রক্ষণ নিয়ে চিন্তামুক্তই আছেন। পাওলো ফেরেইরা, কারভালহো, ব্রুনো আলভেজ, কোয়েন্ট্রাও প্রথম ম্যাচে ভালো খেলেছে। মাঝমাঠে ওদের মূল খেলোয়াড় রাউল মিরেলেস, তার সঙ্গে থাকছে পেদ্রো মেন্দেজ আর ডেকো। একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে লিডসনকে খেলানো হলেও প্রথম ম্যাচে তেমন কিছুই সে করে দেখাতে পারেনি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ছিল না। রোনালদো শুনলাম বলেছে, গোল নাকি ক্যাচাপের মতো। একবার বের হতে শুরু করলে বেরোতেই থাকে!
আজকের ম্যাচে ক্যাচাপের বর্ষণ দেখানোর জন্য রোনালদোর উচিত হবে শুরু থেকেই প্যাকেটের গায়ে চাপ দেওয়া। আমি কী বলছি, রোনালদো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে। না হলে কী হবে? সেই ক্যাচাপ দিয়ে পর্তুগালকে স্যুপ বানিয়ে খেয়ে ফেলবে উত্তর কোরিয়া!
‘এইচ’ গ্রুপের দুই চমক হলো চিলি আর সুইজারল্যান্ড। স্পেনের হাত যেখানে এখনো শূন্য, এই দুই দলই তিনটি করে পয়েন্ট কুড়িয়ে নিয়েছে। হন্ডুরাসের বিপক্ষে চিলি মাত্র এক গোলেই জিতেছে। কিন্তু ফুটবলটা খেলেছে ওরা খুবই সুুন্দর। ইজলা আর মেদেল তো গাত্তুসোর মতো খেলল। এদের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া আছে রক্ষণের আরও দুই সেনানি পোন্স আর ভিদালের। কোচ বিয়েলসা এমনভাবে দলটা গড়ে তুলেছেন, যেন এটি একটি ক্লাব। ক্লাবেই ফুটবলাররা বেশি সময় খেলে বলে সেখানকার সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়াটাও ভালো থাকে। এই দলে আমি সেটাই দেখতে পাচ্ছি। প্রত্যেক খেলোয়াড়ই নিজের পজিশন আর কাজ সম্পর্কে সজাগ। আক্রমণে ভালদিভিয়াকে সামনে রেখে একটু পেছনেই থাকছে সানচেজ আর বোশেজোর জুটি।
প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ড স্পেনকে হারিয়ে দিয়েছে মূলত অটুট রক্ষণ আর মিডফিল্ডার জেলসন ফার্নান্দেজের আচমকা গোলে। ওরা ৪-২-৩-১ এমনই ঠাসা রক্ষণাত্মক ছকই পছন্দ করে। ওদের গোলরক্ষক বেনাগলিও দুর্দান্ত। স্পেনের মুহুর্মুহু আক্রমণ প্রতিহত করে এসেছে রক্ষণ। আলাদা করে প্রশংসা আর নাইবা করলাম। কোচ ওটমার হিজফেল্ড দলটাকে সুসংগঠিত আর রক্ষণে সুশৃঙ্খল করে তুলেছেন। একঘেয়ে, কিন্তু মানতেই হবে বেশ কার্যকর। পয়েন্ট টেবিলের যে অবস্থা, তাতে দুই দলই হার এড়াতে চাইবে। ফলে ম্যাচটা গোলশূন্য ড্র হয়ে যেতে পারে।
কাগজে-কলমের হিসাব বলছে, হতশ্রী হন্ডুরাসের ওপর আজ প্রতিশোধস্পৃহ স্পেন ঝাঁপিয়ে পড়বে। আগের ম্যাচের দলটাই খেলাবেন দেল বস্ক। তবে তোরেস আজ শুরু থেকেই থাকবেন মাঠে। আক্রমণে তাঁর সঙ্গী ডেভিড ভিয়া। তারকাবহুল মাঝমাঠে থাকছে জাভি-ইনিয়েস্তারা। সুইজারল্যান্ড ম্যাচে একক আধিপত্য থাকার পরও স্পেন জেতেনি। কারণ বক্সের সামনে এসে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল। তবে হন্ডুরাসের রক্ষণ কিন্তু সুইসদের মতো অতটা অটুট নয়। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে একের পর এক আক্রমণ করে প্রতিপক্ষের রক্ষণে চাপ তৈরি, সেই চাপে সৃষ্টি হওয়া ফাটল দিয়ে গোল—এটাই হবে স্পেনের সরল কৌশল।
তবে আমার চোখে হন্ডুরাসের এখন পর্যন্ত সেরা খেলোয়াড় ওদের গোলরক্ষক। আজও ভ্যালাদারেসকে দুর্দান্ত কিছু একটা করতেই হবে। এই বিশ্বকাপ এরই মধ্যে ফরাসি, জার্মান, ইংলিশ আর স্প্যানিশদের বুঝিয়ে দিয়েছে, বিশ্বকাপ এখন আর কারও জন্যই সহজ নয়। স্পেনকে তাই এই টুর্নামেন্টে নিজেদের হূতগৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে আজকের ম্যাচে কর্তৃত্ব খাটাতেই হবে।
No comments