মেসিডোনার ‘বিপ্লব’
৭৫ মিনিটে সার্জিও আগুয়েরো নামলেন, উঠে এলেন কার্লোস তেভেজ। তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
৩৩, ৭৬ ও ৮০ মিনিটের তিন গোলে হ্যাটট্রিক করে ৮২ মিনিটে উঠে গেলেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। ডাগ-আউট থেকে কয়েক পা দৌড়ে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন ম্যারাডোনা।
খেলার শেষ বাঁশি বাজল, মাঝবৃত্তে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে জয় উদ্যাপন করছেন খেলোয়াড়েরা। তাঁদের কোচও যেন তখন ফিরে গেছেন খেলোয়াড়ি জীবনে। ধূসর রঙের স্যুট পরা লোকটা লাফাতে লাফাতে গিয়ে যোগ দিলেন উদ্যাপনে। একে একে জড়িয়ে ধরলেন সবাইকে। আনন্দোৎসব চলল মিনিট কয়েক। তবে ম্যারাডোনার আবেগ যেন বাঁধ মানতে চাইছিল না কিছুতেই। ড্রেসিং রুমে ঢোকার পথেও কোচ কারও চুল নেড়ে দিলেন আদর করে। কারও পিঠে বুলিয়ে দিলেন স্নেহস্পর্শ।
কিন্তু মেসির জন্য তো ওটুকু করলেই চলে না। দু গালে চুমু খেলেন। চুলে হাত বুলিয়ে পিঠে চাপড় দিলেন বারকয়েক। আর মেসি হাত তুললেন করতালিমুখর সমর্থকদের দিকে। এই অভিবাদনটুকু না জানালে সেটি যে অকৃতজ্ঞতা হয়। এদের ভালোবাসাই বার্সেলোনার মেসিকে আড়ালে ঠেলে আর্জেন্টিনার মেসিকে বের করে এনেছে। এই মেসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের পাশাপাশি একজন পরিপূর্ণ নেতারও ভূমিকায়। সারা মাঠে তাঁর খেলায় আর নেতৃত্বে বিধ্বস্ত দক্ষিণ কোরিয়া।
মিক্সড জোনে গিয়ে মেসি এই বড় জয়ের জন্য সবার অবদানকে নতমস্তকে শ্রদ্ধা জানান। আবার শিশুতোষ ভুল করে গোল খাওয়ানোর দায়ে অভিযুক্ত ডেমিচেলিসের পাশে দাঁড়ান, ‘আসলে “মিচো”কে (ডেমিচেলিস) দোষ দেওয়াটা ঠিক হবে না। লি চুং-ইয়ং যে বক্সে ঢুকে গোলটা পেয়ে গেল, তা ওই ভুভুজেলার কারণে। আমরা চিৎকার করছিলাম। কিন্তু ও কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না, এটা সে দেখেইনি, তাই বলের দখল হারিয়ে ফেলেছে। ভুভুজেলার শব্দের কারণে আমিও তো বারদুয়েক বল হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
সংবাদ সম্মেলনে ম্যারাডোনাকেও ডেমিচেলিসের ভুল নিয়ে কথা বলতে হয়েছে। কথা বলতে হয়েছে রক্ষণ দুর্বলতা নিয়ে। তবে জয়ের আনন্দে উদ্বেল আর্জেন্টিনা কোচও মেসির মতোই ডেমিচেলিসকে কাঠগড়ায় তুলছেন না, ‘ও (ডেমিচেলিস) একটু অমনোযোগী হয়ে পড়েই বলের দখল হারিয়ে ফেলেছে। খেলায় একটু-আধটু ভুল হতেই পারে। ওকে নিশ্চয়ই ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিতে হবে না, নিজেই বুঝতে পারছে। আর রক্ষণ নিয়েও আমি চিন্তিত নই। একেকটা করে ম্যাচ যাবে, আর সব গুছিয়ে ফেলব। আমি খুশি যে ছেলেরা বল পায়ে রাখতে পারছে, ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।’
স্পেনের এক নারী সাংবাদিকের প্রশ্নে হো হো করে একচোট হেসে নিলেন আর্জেন্টিনা কোচ, যাঁকে প্রথম ম্যাচের পরই মিডিয়ার বড় একটা অংশ ‘স্যার’ উপাধি দিয়ে দিয়েছে। প্রশ্নটা ছিল, নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ম্যাচে স্যার ম্যারাডোনাকে কি আরও বেশি উজ্জ্বল মনে হলো? স্যার ম্যারাডোনা হাসি থামিয়ে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যান, ‘সে তো আমি বলতে পারব না। আমি শুধু জানি আর্জেন্টিনাকে ভালো খেলতে হবে, বিশ্বকাপটা জিততে হবে।’
একটা দল প্রত্যাশামতো ভালো খেলে তখনই, যখন কোচের রণকৌশল খেটে যায়। ম্যারাডোনা এ ম্যাচে দেখিয়েছেন রণকৌশলটা তিনি বোঝেন। হিগুয়েইনের পেছনে তেভেজ দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন অনেকটা মুক্ত থেকে। ডান প্রান্ত থেকে দৌড়ে বাঁয়ে গেছেন, মেসির জোগান দেওয়া বল দিয়েছেন হিগুয়েইনকে, নতুবা অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াকে পাস দিয়েছেন। প্রথমার্ধে গোলার মতো এক শটে দক্ষিণ কোরিয়াকে কাঁপিয়েও দিয়েছেন। তার পরও ৭৫ মিনিটে তাঁকে তুলে জামাই আগুয়েরোকে নামালেন কেন ম্যারাডোনা?
কারণ তিনি দেখেছেন, তেভেজ তাঁর গতি দিয়ে যেন ঠিকমতো কোরিয়ার রক্ষণ চিরে ফেলতে পারছেন না। তাই প্রয়োজন বোধ করেছেন একজন গতিসমৃদ্ধ ফরোয়ার্ডের, যে শেষ পাসটিও ভালো দিতে পারবে। মেসির সঙ্গে কার বোঝাপড়াটা বেশি হবে, সেটি ভেবেই নামিয়েছেন আগুয়েরোকে। কাজ হলো ম্যাজিকের মতো। মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে আগুয়েরোর কয়েকটা টানেই কোরীয় রক্ষণ এলোমেলো হয়ে গেল। এল আরও দুটি গোল। কোচ ম্যারাডোনার এই বিচক্ষণতাকে আপনি কী বলবেন?
ওদিকে মেসিও যেন তাঁর ২২ বছর বয়সকে ছাপিয়ে পরিণত হয়ে উঠছেন আরও। গত বিশ্বকাপে সার্বিয়া-মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে মাত্রই ১৬ মিনিট খেলে আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছিলেন ষষ্ঠ গোল। ওই টুর্নামেন্টের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা এই বিশ্বকাপে ১৮০ মিনিট খেলে ফেললেন, গোল পেলেন না। অথচ তাঁর রিয়াল মাদ্রিদ প্রতিদ্বন্দ্বী হিগুয়েইন গত দুই বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিকের মালিক হয়ে গেলেন তাঁর সৌজন্যেই। কখন গোল পাবেন মেসি? একটু আক্ষেপ নেই মনে? মেসির মুখে সেই নেতার মতো উত্তর, ‘গোল আসবে। এটা বিরাট কোনো সমস্যা নয়। আমি এ ম্যাচেও সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু বল জালে গেল না, এই আর কি! আমি জয় পেয়েই খুশি। আসল কথা হলো আমরা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। এটা অবশ্যই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ হবে।’
আর্জেন্টিনার ম্যাচ থাকলেই গ্যালারিগুলোকে আকাশি-সাদা সমুদ্রে ভরিয়ে তোলা আর্জেন্টাইন সমর্থকদের হাতে অনেক ব্যানার দেখা যায়। এ ম্যাচে ম্যারাডোনার ছবি আঁকা ব্যানার ছিল, ছিল মেসির ছবি আঁকা ব্যানারও। আর ছিল সর্বকালের অন্যতম সেরা বিপ্লবী চে গুয়েভারার ছবি, পাশে চে-ভক্ত ম্যারাডোনা। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, ম্যারাডোনা-মেসি যুগলবন্দী তো বিশ্বকাপে নতুন বিপ্লবের অঙ্গীকারই বয়ে এনেছে!
৩৩, ৭৬ ও ৮০ মিনিটের তিন গোলে হ্যাটট্রিক করে ৮২ মিনিটে উঠে গেলেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। ডাগ-আউট থেকে কয়েক পা দৌড়ে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন ম্যারাডোনা।
খেলার শেষ বাঁশি বাজল, মাঝবৃত্তে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে জয় উদ্যাপন করছেন খেলোয়াড়েরা। তাঁদের কোচও যেন তখন ফিরে গেছেন খেলোয়াড়ি জীবনে। ধূসর রঙের স্যুট পরা লোকটা লাফাতে লাফাতে গিয়ে যোগ দিলেন উদ্যাপনে। একে একে জড়িয়ে ধরলেন সবাইকে। আনন্দোৎসব চলল মিনিট কয়েক। তবে ম্যারাডোনার আবেগ যেন বাঁধ মানতে চাইছিল না কিছুতেই। ড্রেসিং রুমে ঢোকার পথেও কোচ কারও চুল নেড়ে দিলেন আদর করে। কারও পিঠে বুলিয়ে দিলেন স্নেহস্পর্শ।
কিন্তু মেসির জন্য তো ওটুকু করলেই চলে না। দু গালে চুমু খেলেন। চুলে হাত বুলিয়ে পিঠে চাপড় দিলেন বারকয়েক। আর মেসি হাত তুললেন করতালিমুখর সমর্থকদের দিকে। এই অভিবাদনটুকু না জানালে সেটি যে অকৃতজ্ঞতা হয়। এদের ভালোবাসাই বার্সেলোনার মেসিকে আড়ালে ঠেলে আর্জেন্টিনার মেসিকে বের করে এনেছে। এই মেসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের পাশাপাশি একজন পরিপূর্ণ নেতারও ভূমিকায়। সারা মাঠে তাঁর খেলায় আর নেতৃত্বে বিধ্বস্ত দক্ষিণ কোরিয়া।
মিক্সড জোনে গিয়ে মেসি এই বড় জয়ের জন্য সবার অবদানকে নতমস্তকে শ্রদ্ধা জানান। আবার শিশুতোষ ভুল করে গোল খাওয়ানোর দায়ে অভিযুক্ত ডেমিচেলিসের পাশে দাঁড়ান, ‘আসলে “মিচো”কে (ডেমিচেলিস) দোষ দেওয়াটা ঠিক হবে না। লি চুং-ইয়ং যে বক্সে ঢুকে গোলটা পেয়ে গেল, তা ওই ভুভুজেলার কারণে। আমরা চিৎকার করছিলাম। কিন্তু ও কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না, এটা সে দেখেইনি, তাই বলের দখল হারিয়ে ফেলেছে। ভুভুজেলার শব্দের কারণে আমিও তো বারদুয়েক বল হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
সংবাদ সম্মেলনে ম্যারাডোনাকেও ডেমিচেলিসের ভুল নিয়ে কথা বলতে হয়েছে। কথা বলতে হয়েছে রক্ষণ দুর্বলতা নিয়ে। তবে জয়ের আনন্দে উদ্বেল আর্জেন্টিনা কোচও মেসির মতোই ডেমিচেলিসকে কাঠগড়ায় তুলছেন না, ‘ও (ডেমিচেলিস) একটু অমনোযোগী হয়ে পড়েই বলের দখল হারিয়ে ফেলেছে। খেলায় একটু-আধটু ভুল হতেই পারে। ওকে নিশ্চয়ই ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিতে হবে না, নিজেই বুঝতে পারছে। আর রক্ষণ নিয়েও আমি চিন্তিত নই। একেকটা করে ম্যাচ যাবে, আর সব গুছিয়ে ফেলব। আমি খুশি যে ছেলেরা বল পায়ে রাখতে পারছে, ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।’
স্পেনের এক নারী সাংবাদিকের প্রশ্নে হো হো করে একচোট হেসে নিলেন আর্জেন্টিনা কোচ, যাঁকে প্রথম ম্যাচের পরই মিডিয়ার বড় একটা অংশ ‘স্যার’ উপাধি দিয়ে দিয়েছে। প্রশ্নটা ছিল, নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ম্যাচে স্যার ম্যারাডোনাকে কি আরও বেশি উজ্জ্বল মনে হলো? স্যার ম্যারাডোনা হাসি থামিয়ে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যান, ‘সে তো আমি বলতে পারব না। আমি শুধু জানি আর্জেন্টিনাকে ভালো খেলতে হবে, বিশ্বকাপটা জিততে হবে।’
একটা দল প্রত্যাশামতো ভালো খেলে তখনই, যখন কোচের রণকৌশল খেটে যায়। ম্যারাডোনা এ ম্যাচে দেখিয়েছেন রণকৌশলটা তিনি বোঝেন। হিগুয়েইনের পেছনে তেভেজ দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন অনেকটা মুক্ত থেকে। ডান প্রান্ত থেকে দৌড়ে বাঁয়ে গেছেন, মেসির জোগান দেওয়া বল দিয়েছেন হিগুয়েইনকে, নতুবা অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াকে পাস দিয়েছেন। প্রথমার্ধে গোলার মতো এক শটে দক্ষিণ কোরিয়াকে কাঁপিয়েও দিয়েছেন। তার পরও ৭৫ মিনিটে তাঁকে তুলে জামাই আগুয়েরোকে নামালেন কেন ম্যারাডোনা?
কারণ তিনি দেখেছেন, তেভেজ তাঁর গতি দিয়ে যেন ঠিকমতো কোরিয়ার রক্ষণ চিরে ফেলতে পারছেন না। তাই প্রয়োজন বোধ করেছেন একজন গতিসমৃদ্ধ ফরোয়ার্ডের, যে শেষ পাসটিও ভালো দিতে পারবে। মেসির সঙ্গে কার বোঝাপড়াটা বেশি হবে, সেটি ভেবেই নামিয়েছেন আগুয়েরোকে। কাজ হলো ম্যাজিকের মতো। মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে আগুয়েরোর কয়েকটা টানেই কোরীয় রক্ষণ এলোমেলো হয়ে গেল। এল আরও দুটি গোল। কোচ ম্যারাডোনার এই বিচক্ষণতাকে আপনি কী বলবেন?
ওদিকে মেসিও যেন তাঁর ২২ বছর বয়সকে ছাপিয়ে পরিণত হয়ে উঠছেন আরও। গত বিশ্বকাপে সার্বিয়া-মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে মাত্রই ১৬ মিনিট খেলে আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছিলেন ষষ্ঠ গোল। ওই টুর্নামেন্টের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা এই বিশ্বকাপে ১৮০ মিনিট খেলে ফেললেন, গোল পেলেন না। অথচ তাঁর রিয়াল মাদ্রিদ প্রতিদ্বন্দ্বী হিগুয়েইন গত দুই বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিকের মালিক হয়ে গেলেন তাঁর সৌজন্যেই। কখন গোল পাবেন মেসি? একটু আক্ষেপ নেই মনে? মেসির মুখে সেই নেতার মতো উত্তর, ‘গোল আসবে। এটা বিরাট কোনো সমস্যা নয়। আমি এ ম্যাচেও সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু বল জালে গেল না, এই আর কি! আমি জয় পেয়েই খুশি। আসল কথা হলো আমরা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। এটা অবশ্যই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ হবে।’
আর্জেন্টিনার ম্যাচ থাকলেই গ্যালারিগুলোকে আকাশি-সাদা সমুদ্রে ভরিয়ে তোলা আর্জেন্টাইন সমর্থকদের হাতে অনেক ব্যানার দেখা যায়। এ ম্যাচে ম্যারাডোনার ছবি আঁকা ব্যানার ছিল, ছিল মেসির ছবি আঁকা ব্যানারও। আর ছিল সর্বকালের অন্যতম সেরা বিপ্লবী চে গুয়েভারার ছবি, পাশে চে-ভক্ত ম্যারাডোনা। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, ম্যারাডোনা-মেসি যুগলবন্দী তো বিশ্বকাপে নতুন বিপ্লবের অঙ্গীকারই বয়ে এনেছে!
No comments