হাজার বছর ধরে পথে পথে তারা
‘রোমা’ শব্দের অর্থ যাযাবরশ্রেণীর মানুষ। হাজার বছরের ব্যবধানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে তারা। তাদের কোনো দেশ নেই। ইতিহাসবিদেরা একমত যে, রোমাদের আদি বাস ছিল ভারতের উত্তরাঞ্চলে। তৃতীয় থেকে সপ্তম শতকে কয়েক দফায় তারা স্বদেশ ছেড়ে যায়। তাদের ভবঘুরে হয়ে ওঠার পেছনে ছিল বহু কারণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: দাঙ্গা, অস্থিতিশীলতা আর অপেক্ষাকৃত উন্নত জীবনযাপনের হাতছানি। অষ্টম শতক, পরে দশম থেকে ত্রয়োদশ শতকে উত্তর ভারতে মুসলমানদের আক্রমণের মুখে তারা দলে দলে ঘর ছাড়ে। তারা প্রথমে যায় তেহরান, সেখান থেকে বাগদাদ। পরে কনস্টান্টিনোপল (বর্তমানে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল) হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।
বর্তমানে এক কোটি ইউরোপীয় রোমার মধ্যে অন্তত ৬০ লাখের বাস মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে। রোমানিয়ায় বাস করে অন্তত ২০ লাখ । তাদের নামেই দেশটির নাম। তবে তারা আধুনিক সমাজের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত; প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে নেই। তারা হতদরিদ্র, বৈদ্যুতিক আলো থেকে দূরে। নেই স্থায়ী ঘরবাড়ি, নেই পানির সরবরাহ। তারা গান গেয়ে, লোক-মনোরঞ্জন করে যা আয় করে তা-ই দিয়ে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করে।
রোমা যাযাবরদের পেশা বরাবরই বিচিত্র। অতীতে তাদের কেউ ছিল কৃষক, কেউ বা রাখাল; আবার কেউ ছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভাড়াটে কর্মী, সৈনিক বা হিসাবরক্ষক। অন্যরা গানওয়ালা ও বিনোদনকর্মী। তারা ভাগ্য গণনা করে থাকে, নদীতে ডুবুরির মতো খুঁজে বেড়ায় সোনা। বেহালা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে, লোক-মনোরঞ্জন করে পাওয়া সামান্য বকশিশ দিয়ে খেয়ে না খেয়ে হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে তারা। তার পরও তারা ধরে রেখেছে তাদের ঐতিহ্য। হাজার বছরের নিপীড়ন-বঞ্চনা সত্ত্বেও হারিয়ে ফেলেনি তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। অবাক হওয়ার কথাই বটে, তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে সংস্কৃতঘেঁষা ভাষায়। পরে হিন্দি, পাঞ্জাবিসহ নানা দেশের নানা ভাষার মিশেলে তৈরি হয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা।
মধ্যপ্রাচ্যে এই যাযাবরদের ডাকা হতো ‘ডোম’ বলে। ডোম মানে মানুষ। ভারতে ডোম হলো অচ্ছুতশ্রেণীর মানুষ। তারা মড়া পোড়ানোর কাজ করে। ইউরোপে ঢোকার পর ডোমের ‘ডি’র জায়গা দখল করে ‘আর’। ডোম হয়ে যায় রোম। ইউরোপের আজকের রোমা হলো ‘রোম’-এর বহুবচন। রোমা যাযাবরেরা চতুর্দশ শতকের দিকে পৌঁছে যায় বুলগেরিয়া, সাইবেরিয়া, গ্রিস ও রোমানিয়ায়।
রোমানিয়ায় তাদের দাসে পরিণত করা হয়। পরের শতকে তারা যায় ইউক্রেন ও রাশিয়ায়। এখানে এসে তারা নিজেদের তীর্থযাত্রী হিসেবে তুলে ধরে। রাশিয়া কিছুটা সহনশীলতার পরিচয় দেয়। কিন্তু তারা বিপদে পড়ে জার্মানিতে। ১৯৩৩ সালে নািসরা ক্ষমতায় এলে এসব মানুষের ওপর নেমে আসে চরম অত্যাচার। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে, রোমা যাযাবরেরা মুসলমানদের গুপ্তচর। বলা হয়, তাদের আচার-আচরণ খ্রিষ্টানসুলভ নয়। একসময় যে মুসলমানদের ভয়ে স্বদেশ ছেড়ে পথে বেরিয়েছিল রোমা যাযাবরেরা, এবার সেই মুসলমানদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলে তাদের দেওয়া হতে থাকে শাস্তি। তারা জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ—এ রকম অভিযোগ তুলে জার্মানিতে বসবাসকারী রোমা যাযাবরদের ধরে ধরে বন্দিশিবিরে নেওয়া হতে থাকে। হরণ করা হতে থাকে তাদের সব ধরনের অধিকার ।
জার্মানি ১৯৩৮ সালের ১২ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত সময়কে যাযাবরমুক্ত সপ্তাহ হিসেবে ঘোষণা করে। শুরু হয় রোমা নিধনযজ্ঞ। ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহারের পর হত্যা করা হয় ২৫০ রোমানি শিশুকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কত রোমাকে হত্যা করা হয়েছিল এর সঠিক পরিসংখ্যান আজও জানা সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘হলোকাস্ট মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ সাল নাগাদ ইউরোপে পাঁচ থেকে ১৫ লাখ রোমাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তাদের কথা কেউ স্মরণে রাখেনি। ভাগ্য বদল হয়নি যাযাবর রোমা জনগোষ্ঠীর। বিবিসি অবলম্বনে মিজান মল্লিক।
বর্তমানে এক কোটি ইউরোপীয় রোমার মধ্যে অন্তত ৬০ লাখের বাস মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে। রোমানিয়ায় বাস করে অন্তত ২০ লাখ । তাদের নামেই দেশটির নাম। তবে তারা আধুনিক সমাজের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত; প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে নেই। তারা হতদরিদ্র, বৈদ্যুতিক আলো থেকে দূরে। নেই স্থায়ী ঘরবাড়ি, নেই পানির সরবরাহ। তারা গান গেয়ে, লোক-মনোরঞ্জন করে যা আয় করে তা-ই দিয়ে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করে।
রোমা যাযাবরদের পেশা বরাবরই বিচিত্র। অতীতে তাদের কেউ ছিল কৃষক, কেউ বা রাখাল; আবার কেউ ছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভাড়াটে কর্মী, সৈনিক বা হিসাবরক্ষক। অন্যরা গানওয়ালা ও বিনোদনকর্মী। তারা ভাগ্য গণনা করে থাকে, নদীতে ডুবুরির মতো খুঁজে বেড়ায় সোনা। বেহালা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে, লোক-মনোরঞ্জন করে পাওয়া সামান্য বকশিশ দিয়ে খেয়ে না খেয়ে হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে তারা। তার পরও তারা ধরে রেখেছে তাদের ঐতিহ্য। হাজার বছরের নিপীড়ন-বঞ্চনা সত্ত্বেও হারিয়ে ফেলেনি তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। অবাক হওয়ার কথাই বটে, তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে সংস্কৃতঘেঁষা ভাষায়। পরে হিন্দি, পাঞ্জাবিসহ নানা দেশের নানা ভাষার মিশেলে তৈরি হয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা।
মধ্যপ্রাচ্যে এই যাযাবরদের ডাকা হতো ‘ডোম’ বলে। ডোম মানে মানুষ। ভারতে ডোম হলো অচ্ছুতশ্রেণীর মানুষ। তারা মড়া পোড়ানোর কাজ করে। ইউরোপে ঢোকার পর ডোমের ‘ডি’র জায়গা দখল করে ‘আর’। ডোম হয়ে যায় রোম। ইউরোপের আজকের রোমা হলো ‘রোম’-এর বহুবচন। রোমা যাযাবরেরা চতুর্দশ শতকের দিকে পৌঁছে যায় বুলগেরিয়া, সাইবেরিয়া, গ্রিস ও রোমানিয়ায়।
রোমানিয়ায় তাদের দাসে পরিণত করা হয়। পরের শতকে তারা যায় ইউক্রেন ও রাশিয়ায়। এখানে এসে তারা নিজেদের তীর্থযাত্রী হিসেবে তুলে ধরে। রাশিয়া কিছুটা সহনশীলতার পরিচয় দেয়। কিন্তু তারা বিপদে পড়ে জার্মানিতে। ১৯৩৩ সালে নািসরা ক্ষমতায় এলে এসব মানুষের ওপর নেমে আসে চরম অত্যাচার। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে, রোমা যাযাবরেরা মুসলমানদের গুপ্তচর। বলা হয়, তাদের আচার-আচরণ খ্রিষ্টানসুলভ নয়। একসময় যে মুসলমানদের ভয়ে স্বদেশ ছেড়ে পথে বেরিয়েছিল রোমা যাযাবরেরা, এবার সেই মুসলমানদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলে তাদের দেওয়া হতে থাকে শাস্তি। তারা জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ—এ রকম অভিযোগ তুলে জার্মানিতে বসবাসকারী রোমা যাযাবরদের ধরে ধরে বন্দিশিবিরে নেওয়া হতে থাকে। হরণ করা হতে থাকে তাদের সব ধরনের অধিকার ।
জার্মানি ১৯৩৮ সালের ১২ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত সময়কে যাযাবরমুক্ত সপ্তাহ হিসেবে ঘোষণা করে। শুরু হয় রোমা নিধনযজ্ঞ। ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহারের পর হত্যা করা হয় ২৫০ রোমানি শিশুকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কত রোমাকে হত্যা করা হয়েছিল এর সঠিক পরিসংখ্যান আজও জানা সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘হলোকাস্ট মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ সাল নাগাদ ইউরোপে পাঁচ থেকে ১৫ লাখ রোমাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তাদের কথা কেউ স্মরণে রাখেনি। ভাগ্য বদল হয়নি যাযাবর রোমা জনগোষ্ঠীর। বিবিসি অবলম্বনে মিজান মল্লিক।
No comments