৫ই আগস্ট গুলিবিদ্ধ আব্দুল্লাহ না ফেরার দেশে

প্রায় সাড়ে ৩ মাস ধরে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ। গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ই আগস্ট মাথায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর আবারও অবস্থার অবনতি হলে আরেকবার অস্ত্রোপচার শেষে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। গতকাল ভোর ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আব্দুল্লাহ। এরপর শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টার পরে আব্দুল্লাহর গ্রামের বাড়ি যশোরের উদ্দেশ্যে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় গ্রামের বাড়ি বড়আঁচড়ায় জানাজা শেষে আব্দুল্লাহর লাশ দাফন করা হবে। এদিকে আব্দুল্লাহর বাড়ি পরিদর্শন করেছেন নৌ-পরিবহন ও শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার জানান, ৫ই আগস্ট তাঁতীবাজার এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সিএমএইচ-এ স্থানান্তর করা হয়। গতকাল ভোর ৫টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকার শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন আব্দুল্লাহ (২৩)। আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ঢাকায় বোনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করা আব্দুল্লাহর গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া টার্মিনাল পাড়া গ্রামে। তার পিতা আব্দুল জব্বার, পেশায় দিনমজুর। মাতা মারিয়া খাতুন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আব্দুল্লাহ।
সূত্রে জানা যায়, গত ৫ই আগস্ট সন্ধ্যায় রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন। তার কপালের মাঝ বরাবর গুলি লাগে। এমন অবস্থায় প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে ছিলেন আব্দুল্লাহ। দীর্ঘ সময় রাস্তায় পড়ে থাকার পর প্রথমে তাকে মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে বের করা হয় গুলি। ১০ই আগস্ট তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এরপর তাকে গ্রামের বাড়ি বেনাপোলে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে গত ১১ই আগস্ট রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ঢামেকের চিকিৎসকরা আব্দুল্লাহ মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান, যা তরল প্লাজমার মতো। আবারও তার অপারেশন করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২২শে আগস্ট আব্দুল্লাহকে সিএমএইচ-এ স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে গতকাল বেনাপোল স্থলবন্দরে নির্মিত কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবর পান নৌ-পরিবহন ও শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। সেখান থেকে তিনি বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া গ্রামে অবস্থিত আব্দুল্লাহর গ্রামের বাড়ি পরিদর্শন করেন। এ সময় অব্দুল্লাহর মামা ইসরাইল সর্দার ও বড় দুই ভাইয়ের সঙ্গে উপদেষ্টার কথা হয়। তাদের সান্ত্ব্তনা দেন তিনি। সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.