কুঁড়ার তেলের বিদেশযাত্রা by ফখরুল ইসলাম
*১০ বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি কারখানা গড়ে উঠেছে।
*বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেল।
*দাম সয়াবিন তেলের চেয়ে কিছুটা বেশি।
*২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশ থেকে রপ্তানি হয় কুঁড়ার ২০ হাজার টন তেল।
*দেশে বছরে উৎপাদিত হয় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টন তেল।
*সাড়ে ছয় কেজি কুঁড়া থেকে এক লিটার তেল হয়।
দেশে তো জনপ্রিয় হচ্ছেই, ধানের কুঁড়ার তেল (রাইস ব্র্যান অয়েল) এখন বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশ থেকে কুঁড়ার ২০ হাজার টন তেল রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানির প্রায় পুরোটাই হচ্ছে বগুড়া থেকে। বর্তমানে এই তেল প্রধানত রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। তবে শ্রীলঙ্কা, জাপান, চীন—এসব দেশেও রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে।
স্বাধীনতার পর এবং আশির দশকেও দেশে প্রধান ভোজ্যতেল ছিল সরিষার তেল। তবে নব্বইয়ের দশক থেকেই অপরিশোধিত পাম তেল ও সয়াবিন তেলের আমদানি বাড়তে থাকে। দেশে গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটি ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাও। আর ভোজ্যতেল হিসেবে ঘরে ঘরে জায়গা করে নেয় পাম তেল ও সয়াবিন তেল। কেউ কেউ অবশ্য সূর্যমুখী বা জলপাই তেলও (অলিভ অয়েল) রান্নায় ব্যবহার করেন।
একসময় বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে আসে অন্য ভোজ্যতেলের তুলনায় ধানের কুঁড়ার তেলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক মাত্রা কম। ধানের তুষ ছাড়ানোর পর চালের গায়ে বাদামি যে অংশ থাকে, সেখান থেকে এই তেল নিষ্কাশন করা হয়।
গত ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধানের কুঁড়ার তেলের ১২টি কারখানা গড়ে ওঠে। পাবনার ঈশ্বরদীতে ২০১১ সালে রশিদ অয়েল মিলস লিমিটেড ‘হোয়াইট গোল্ড ব্র্যান্ড’ নামে ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদন শুরু করে। প্রায় একই সময়ে গড়ে ওঠে ময়মনসিংহে ‘স্পন্দন’ ব্র্যান্ডের আরেকটি কারখানা।
তবে উৎপাদনের মাঠে ভালোভাবে আছে এখন বগুড়ার মজুমদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। মজুমদার গ্রুপের তেলের ব্র্যান্ড ‘স্বর্ণা’। মজুমদার গ্রুপের কারখানায় প্রতিদিন তেল উৎপাদন হয় ৯০ থেকে ১০০ টন। এ ছাড়া রংপুরের গ্রিন অ্যান্ড পোলট্রি ফিড ইন্ডাস্ট্রিজও কিছু তেল উৎপাদন করে।
মজুমদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রপ্তানি করছি মূলত ভারতে। তবে বিশ্বব্যাপীই এই তেলের চাহিদা রয়েছে এবং বছর বছর চাহিদা বাড়ছে।’
কুঁড়ার তেল উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন ২৫০–৩০০ টন এই তেল উৎপাদিত হয়। বছরে হয় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টন। সাড়ে ছয় কেজি কুঁড়া থেকে এক লিটার তেল হয়। ধান থেকে চাল তৈরি করলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ কুঁড়া পাওয়া যায়।
তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিদিনের কুঁড়ার চাহিদা ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টন। দেশের চালকল থেকে বছরে ৩৭ লাখ টনের বেশি কুঁড়া উৎপাদিত হয়। বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের মধ্যে কুঁড়ার তেলের অবদান সোয়া দুই থেকে আড়াই শতাংশ। সয়াবিন ও পাম তেলের চাহিদা ১৪ লাখ টন।
তবে অন্যদের কাছ থেকে পরিশোধন করিয়ে নিয়েও এই তেল বাজারজাত করছে কয়েকটি বড় কোম্পানি। যেমন এসিআই। এসিআইয়ের রাইস ব্র্যান তেলের নাম ‘নিউট্রিলাইফ’। বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ব্র্যান্ড ‘ফরচুন’। ‘নেচুরা’ নামের একটি ব্র্যান্ডও বাজারে রয়েছে।
এসিআই কনজ্যুমার প্রোডাক্টসের বিজনেস ডিরেক্টর অনুপ কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এই পণ্যটির বিক্রির পরিমাণ যেহেতু বাড়ছে, অনুমান করা যায় যে সারা দেশে রাইস ব্র্যান তেল জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশ্বব্যাপীও এর জনপ্রিয়তা রয়েছে, তবে নানা কারণে রপ্তানি বাজার এখনো অত বড় হতে পারছে না।’
জনপ্রিয়তার কারণ জানতে চাইলে অনুপ কুমার বলেন, ডাক্তাররাই বলছেন এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অরাইজানল রয়েছে এবং এই তেল মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অরাইজানল ইনসুলিন প্রতিরোধে সহায়তা করে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ধারণা বোতলে তেলের রংটা একটু হালকা হলে ভালো হয়। কিন্তু তা করতে গেলে তেল থেকে উপকারিতা কম পাওয়া যেতে পারে।
কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, বোতলজাত এক লিটার কুঁড়ার তেলের দাম পাম ও সয়াবিন তেলের দামের চেয়ে একটু বেশি। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম যেখানে ১০০ টাকার মতো, কুঁড়ার তেলের দাম সেখানে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা।
কুঁড়ার তেল উৎপাদনকারীরা বলছেন, এই তেল যেমন স্বাস্থ্যসম্মত, তেমনি সাশ্রয়ী। এক লিটার সয়াবিন তেলে যে খাবার রান্না করা যায়, তা পৌনে এক লিটার কুঁড়ার তেলেই করা সম্ভব। এদিকে বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থার (বিসিএসআইআর) এক গবেষণাও বলছে, ভোজ্যতেলে যেসব খাদ্যগুণ থাকা উচিত, জলপাই তেলের পর সবচেয়ে বেশি তা কুঁড়ার তেলে রয়েছে।
মজুমদার গ্রুপের চিত্ত মজুমদার বলেন, ‘বড় সমস্যা কুঁড়ার সরবরাহ। যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ কুঁড়া সব সময় পাওয়া যায় না। কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এ কারণেই। তবে সম্ভাবনা বিশাল। পরিকল্পিতভাবে উৎপাদনের দিকে যেতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে দরকার নগদ সহায়তা। ভারতে আমরা রপ্তানি করি ঠিকই, কিন্তু ভারতই এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বড় প্রতিযোগী।’
*বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেল।
*দাম সয়াবিন তেলের চেয়ে কিছুটা বেশি।
*২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশ থেকে রপ্তানি হয় কুঁড়ার ২০ হাজার টন তেল।
*দেশে বছরে উৎপাদিত হয় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টন তেল।
*সাড়ে ছয় কেজি কুঁড়া থেকে এক লিটার তেল হয়।
দেশে তো জনপ্রিয় হচ্ছেই, ধানের কুঁড়ার তেল (রাইস ব্র্যান অয়েল) এখন বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশ থেকে কুঁড়ার ২০ হাজার টন তেল রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানির প্রায় পুরোটাই হচ্ছে বগুড়া থেকে। বর্তমানে এই তেল প্রধানত রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। তবে শ্রীলঙ্কা, জাপান, চীন—এসব দেশেও রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে।
স্বাধীনতার পর এবং আশির দশকেও দেশে প্রধান ভোজ্যতেল ছিল সরিষার তেল। তবে নব্বইয়ের দশক থেকেই অপরিশোধিত পাম তেল ও সয়াবিন তেলের আমদানি বাড়তে থাকে। দেশে গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটি ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাও। আর ভোজ্যতেল হিসেবে ঘরে ঘরে জায়গা করে নেয় পাম তেল ও সয়াবিন তেল। কেউ কেউ অবশ্য সূর্যমুখী বা জলপাই তেলও (অলিভ অয়েল) রান্নায় ব্যবহার করেন।
একসময় বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে আসে অন্য ভোজ্যতেলের তুলনায় ধানের কুঁড়ার তেলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক মাত্রা কম। ধানের তুষ ছাড়ানোর পর চালের গায়ে বাদামি যে অংশ থাকে, সেখান থেকে এই তেল নিষ্কাশন করা হয়।
গত ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধানের কুঁড়ার তেলের ১২টি কারখানা গড়ে ওঠে। পাবনার ঈশ্বরদীতে ২০১১ সালে রশিদ অয়েল মিলস লিমিটেড ‘হোয়াইট গোল্ড ব্র্যান্ড’ নামে ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদন শুরু করে। প্রায় একই সময়ে গড়ে ওঠে ময়মনসিংহে ‘স্পন্দন’ ব্র্যান্ডের আরেকটি কারখানা।
তবে উৎপাদনের মাঠে ভালোভাবে আছে এখন বগুড়ার মজুমদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। মজুমদার গ্রুপের তেলের ব্র্যান্ড ‘স্বর্ণা’। মজুমদার গ্রুপের কারখানায় প্রতিদিন তেল উৎপাদন হয় ৯০ থেকে ১০০ টন। এ ছাড়া রংপুরের গ্রিন অ্যান্ড পোলট্রি ফিড ইন্ডাস্ট্রিজও কিছু তেল উৎপাদন করে।
মজুমদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রপ্তানি করছি মূলত ভারতে। তবে বিশ্বব্যাপীই এই তেলের চাহিদা রয়েছে এবং বছর বছর চাহিদা বাড়ছে।’
কুঁড়ার তেল উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন ২৫০–৩০০ টন এই তেল উৎপাদিত হয়। বছরে হয় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টন। সাড়ে ছয় কেজি কুঁড়া থেকে এক লিটার তেল হয়। ধান থেকে চাল তৈরি করলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ কুঁড়া পাওয়া যায়।
তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিদিনের কুঁড়ার চাহিদা ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টন। দেশের চালকল থেকে বছরে ৩৭ লাখ টনের বেশি কুঁড়া উৎপাদিত হয়। বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের মধ্যে কুঁড়ার তেলের অবদান সোয়া দুই থেকে আড়াই শতাংশ। সয়াবিন ও পাম তেলের চাহিদা ১৪ লাখ টন।
তবে অন্যদের কাছ থেকে পরিশোধন করিয়ে নিয়েও এই তেল বাজারজাত করছে কয়েকটি বড় কোম্পানি। যেমন এসিআই। এসিআইয়ের রাইস ব্র্যান তেলের নাম ‘নিউট্রিলাইফ’। বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ব্র্যান্ড ‘ফরচুন’। ‘নেচুরা’ নামের একটি ব্র্যান্ডও বাজারে রয়েছে।
এসিআই কনজ্যুমার প্রোডাক্টসের বিজনেস ডিরেক্টর অনুপ কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এই পণ্যটির বিক্রির পরিমাণ যেহেতু বাড়ছে, অনুমান করা যায় যে সারা দেশে রাইস ব্র্যান তেল জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশ্বব্যাপীও এর জনপ্রিয়তা রয়েছে, তবে নানা কারণে রপ্তানি বাজার এখনো অত বড় হতে পারছে না।’
জনপ্রিয়তার কারণ জানতে চাইলে অনুপ কুমার বলেন, ডাক্তাররাই বলছেন এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অরাইজানল রয়েছে এবং এই তেল মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অরাইজানল ইনসুলিন প্রতিরোধে সহায়তা করে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ধারণা বোতলে তেলের রংটা একটু হালকা হলে ভালো হয়। কিন্তু তা করতে গেলে তেল থেকে উপকারিতা কম পাওয়া যেতে পারে।
কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, বোতলজাত এক লিটার কুঁড়ার তেলের দাম পাম ও সয়াবিন তেলের দামের চেয়ে একটু বেশি। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম যেখানে ১০০ টাকার মতো, কুঁড়ার তেলের দাম সেখানে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা।
কুঁড়ার তেল উৎপাদনকারীরা বলছেন, এই তেল যেমন স্বাস্থ্যসম্মত, তেমনি সাশ্রয়ী। এক লিটার সয়াবিন তেলে যে খাবার রান্না করা যায়, তা পৌনে এক লিটার কুঁড়ার তেলেই করা সম্ভব। এদিকে বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থার (বিসিএসআইআর) এক গবেষণাও বলছে, ভোজ্যতেলে যেসব খাদ্যগুণ থাকা উচিত, জলপাই তেলের পর সবচেয়ে বেশি তা কুঁড়ার তেলে রয়েছে।
মজুমদার গ্রুপের চিত্ত মজুমদার বলেন, ‘বড় সমস্যা কুঁড়ার সরবরাহ। যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ কুঁড়া সব সময় পাওয়া যায় না। কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এ কারণেই। তবে সম্ভাবনা বিশাল। পরিকল্পিতভাবে উৎপাদনের দিকে যেতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে দরকার নগদ সহায়তা। ভারতে আমরা রপ্তানি করি ঠিকই, কিন্তু ভারতই এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বড় প্রতিযোগী।’
No comments