ভয় পেলে অভিযানে নামতাম না :- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ক্যাসিনো
ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, কে কোন দল করে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। অপরাধী অপরাধীই।
কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ভয় পাওয়ার লোক আমি নই। ভয় পেলে আমি এ অভিযানে
নামতাম না। গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক ন্যাম সম্মেলনে অংশ নেয়ার বিষয় দেশবাসীকে অবহিত করতে এ সংবাদ
সম্মেলন ডাকা হলেও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন
প্রধানমন্ত্রী। ঘণ্টাব্যাপী প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী
অভিযানের বিষয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি প্রতিক্রিয়া না জানালেও বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার জয়ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাম্প্রতিক ইস্যুগুলো নিয়েও কথা বলেন। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম। আমার বাবাকে দেখেছি কীভাবে সাহসের সঙ্গে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই ভয় এ শব্দটা আমার ছোটবেলা থেকেই নেই। ভয় পাওয়ার লোক আমি না। ভয় পেলে এ অভিযানে আমি নামতাম না। আমি যখন নেমেছি, তখন সে কি করে, কোন দলের সেটি আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। বিএনপিকে দুর্নীতির খনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির দুয়ার খুলে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। তার হাতে গড়া দল, সেখানে আপনারা দেখেন প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা তো আছেই। হত্যা, খুন, দুর্নীতি এমন ধরনের কোন কাজ নেই, যা তারা করেনি। সেই দলের নেতা যিনি চেয়ারপারসন দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি কারাগারে। আরেকজন যাকে ভারপ্রাপ্ত করা হলো, সে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং মামলায় দেশান্তর। তাদের মুখে এতো কথা কোথা থেকে আসে, কোন সাহসে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীর সঙ্গে যারা জড়িত আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। আর আমরা ঘর থেকে অভিযানটা শুরু করেছি। না হলে তো আবার বলত রাজনৈতিক হয়রানির জন্য আমরা এটা করছি।
চলমান অভিযানকে বিএনপির তরফে আইওয়াশ বলা হচ্ছে-এটি আসলে কি আইওয়াশ এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, আইওয়াশ করতে যাবো কেন? আমি তো আমার আপন-পর কিছু দেখিনি। যারাই অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদেরই ধরা হচ্ছে। তাহলে আইওয়াশ বলে কী করে? আইওয়াশের ব্যবসা বিএনপিই ভালো জানে-বোঝে। দেশটাকে দুর্নীতিতে নিয়ে এসেছে তো বিএনপি। দুর্নীতিকে ‘নীতি’তে নিয়ে এসেছে তারা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এমন কিছু করেনি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান শুদ্ধি অভিযান আইওয়াশ নাকি অন্য কিছু, অপেক্ষা করুন দেখতে পাবেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বাংলাদেশে যেদিন এসেছি, সেদিন থেকেই ভয় নেই। আমার বিরোধীরা বিদেশের মাটিতে সক্রিয়, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে আমাকে হত্যা করা হতে পারে। তবে আমি এসবকে ভয় পাই না।
কলকাতা টেস্ট দেখতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী: সৌরভ গাঙ্গুলীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিসিসিআইয়ের নতুন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে ইডেন গার্ডেনে ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট দেখতে যাবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সৌরভ আমার সাথে ফোনে কথা বলেছে। আমাকে দাওয়াত দিল। আমি যেন যাই। কলকাতায় যেন থাকি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌরভ গাঙ্গুলি দাওয়াত দিয়েছে, আমি বলেছি যাব। এটা প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াত না, মুখ্যমন্ত্রীর দাওয়াতও না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সব সময় প্রটোকল, নীতিমালা এতকিছু থাকবে কেন। খেলা দেখতে সকালে যাব বিকালে চলে আসবো। এটুকুই। কলকাতায় ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দেখতে গিয়ে তিস্তা নদী নিয়ে কূটনৈতিক কোন আলোচনা হবে কিনা এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ক্রিকেটকে নদীতে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? ক্রিকেট খেলা দেখতে যাবো সেখানে তিস্তা নিয়ে কথা বলে তিক্ততা এখানে তুলবো কেন? এসময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ওই খেলা দেখতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসছেন না। আর কূটনীতি বিষয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কথা বলার তো আরও সময় আছে। তখন কথা হবে।
জীবনে এমন ধর্মঘট দেখিনি: সমপ্রতি ক্রিকেটারদের ডাকা ধর্মঘট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা হঠাৎ করেই একটা ধর্মঘট ডেকেছে। তাদের দাবি থাকলে তো জানাতে পারত। কথা নেই বার্তা নেই, হুট করে ধর্মঘট ডাকা জীবনে শুনিনি ক্রিকেটাররা এভাবে ধর্মঘট ডাকে। পরবর্তী সময়ে তারা বোর্ডে গেছে। সে ঝামেলা মিটমাট হয়ে গেছে। আমার মনে হয় পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে, যারা এভাবে ক্রিকেটারদের সমর্থন দেয়। এসময় ?সাকিব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিসিবি সাকিবের পাশে আছে এবং সব রকমের সহযোগিতা দেবে। এই ধরনের ক্রিকেটারদের সঙ্গে জুয়াড়িরা যোগাযোগ করে। ওর (সাকিবের) যেটা উচিত ছিল, যখনই ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, ও খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ফলে সে আইসিসিকে বিষয়টি জানায়নি। নিয়মটা হচ্ছে, ওর সঙ্গে সঙ্গে জানানো উচিত ছিল। সাকিব এই জায়গায় ভুল করেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখানে সে একটা ভুল করেছে। এক্ষেত্রে আপনারা জানেন, আইসিসি যদি কোনও ব্যবস্থা নেয়, এখানে আমাদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না। তবু আমরা বলব, বিশ্ব ক্রিকেটে তার একটা অবস্থান আছে। একটা ভুল সে করেছে এবং সেটা সে বুঝতেও পেরেছে। এখানে খুব বেশি কিছু করার নেই আমাদের। বিসিবি’র একজনের ক্যাসিনোতে জড়িত থাকার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ক্যাসিনোর যে প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন, সেটা বোধহয় ঠিক না। বাইরে কে কী করছে, সেটার সঙ্গে বিসিবির কোনো সম্পর্ক নেই। খোঁজ করলে সাংবাদিকদের ভেতরেও হয়তো ক্যাসিনোতে জড়িত কাউকে পাওয়া যাবে। তখন কী হবে? আমরা তো অভিযান চালাচ্ছি। কে কখন কিভাবে ধরা পড়বে, বলা যায় না। আমরা কিন্তু ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ধরেছি। তাদের কেউ বহাল তবিয়তে আছে, সেটাও ঠিক না। এর আগের এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, এখন আপনারা খুঁজে দেখেন, কোথায় কী পাওয়া যাচ্ছে। কারও যদি জুয়া খেলার আকাঙ্খা থাকে, হোম মিনিস্টারকে বলেছি, একটা চরে জুয়ার ব্যবস্থা করে দেন, ট্যাক্স বসান, নীতিমালা করেন। অন্তত ট্যাক্স তো পাওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করে। আমরা ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশের সম্মান ফিরে এসেছে। ন্যাম সম্মেলনে যাওয়ার পর সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। সেখানকার প্রবাসীদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা বলেছেন তারা ভালো আছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে তারা খুশি। তাই কারও কথায় কিছু যায়-আসে না।
পদ্মাসেতু উদ্বোধনের সুনির্দিষ্ট সময় বলা যাবে না: মুজিব বর্ষে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতু উদ্বোধনের কোনও সুনির্দিষ্ট সময় বলা যাবে না। পদ্মা সেতুর পুরো প্রক্রিয়াটাই হাইলি টেকনিক্যাল বিষয়। সেতুর নিচের অংশে ট্রেন, ওপরের অংশে গাড়ি চলবে। এটার টেকনোলজিটাই ভিন্ন। এছাড়া নদীর চরিত্রও একটা বড় ব্যাপার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সবচেয়ে খরস্রোতা নদী। একটা বর্ষার পরেই নদীর চরিত্র বদলায়। পলি পড়ে। গতিপথ পরিবর্তন হয়। এসব কারণে অনেক দিন কাজ বন্ধও রাখতে হয়েছিল। তাই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার বিষয়টি অনেক কিছুর ওপরও নির্ভর করে। মুজিব বর্ষের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠিও দিয়েছিলাম এ ব্যাপারে। নূর আছে কানাডায়, তার ব্যাপারেও কানাডা সরকারের সঙ্গে কথা চলছে। ট্রুডোর (কানাডার প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন-ব্যক্তিগতভাবে তিনিও এরকম নৃশংস ঘটনার বিচার চান। কিন্তু তাদের দেশের আদালতের কিছু নিয়মের কারণে প্রতিবন্ধকতা আছে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন মৃত্যুদণ্ড রহিত করেছে। যেহেতু তারা (খুনিরা) মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত, তাই সেই ছুতোয় তারা দেশে না ফেরার কৌশল অবলম্বন করছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুজনকে আমরা আনতে পেরেছিলাম। হুদাকে আনতে পেরেছি থাইল্যান্ড থেকে। মহিউদ্দিনকে আনতে পেরেছি। তিনি বলেন, যে বিচার করার প্রক্রিয়াই ছিল না, নিষিদ্ধ ছিল, সেই বিচার করতে পেরেছি। আমার জন্য কেউ সুন্দর রাস্তা বানিয়ে দেয়নি। রাস্তা তৈরি করতে হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান এসে তা থামিয়ে দিলো, যারা জেলে ছিল তাদের ছেড়ে দিলো, তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিলো। নতুন প্রজন্মকে এসব বিষয়ে অবহিত করতে হবে।
পিয়াজ কিন্তু পচেও যায়: পিয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিয়াজ মজুত যারা করছে তারা কত দিন ধরে তা রাখতে পারে, পিয়াজ কিন্তু পচেও যায়। বেশি রাখতে গিয়ে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গিয়ে তাদের লোকসান হবে। লাভ হবে না। এটাও বাস্তবতা। পিয়াজের দরজা খুলে দেয়া হলো। সমস্যা থাকবে না, হয়তো সাময়িক। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ চলে আসছে। ১০ হাজার টন কয়েক দিনের মধ্যেই চলে আসবে। পিয়াজ কিন্তু অলরেডি আছে। তিনি বলেন, আপনারা পত্রিকায়ই তো বের করেছেন অনেক জায়গায় পিয়াজ রয়ে গেছে। কিন্তু কেন তারা বাজারে ছাড়ছে না, সেটা বড় ব্যাপার।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ন্যাম সম্মেলনে দেশগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উন্নয়ন গুরুত্ব পেয়েছে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, শান্তি যাতে প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিকে দৃষ্টি ছিল। সবাই বাংলাদেশের উন্নয়নে বাহবা দিয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের অব্যবহিত পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে জোরদার করেছে বলে আমি মনে করি। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস-এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যেন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা হয় সেদিকেই এবারকার সম্মেলনের দৃষ্টি বেশি ছিল। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ও বর্তমান অনেক ছাত্রলীগ নেতাকে এর আগে দেখা গেলেও গতকাল তাদের উপস্থিতি ছিল না।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি প্রতিক্রিয়া না জানালেও বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার জয়ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাম্প্রতিক ইস্যুগুলো নিয়েও কথা বলেন। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম। আমার বাবাকে দেখেছি কীভাবে সাহসের সঙ্গে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই ভয় এ শব্দটা আমার ছোটবেলা থেকেই নেই। ভয় পাওয়ার লোক আমি না। ভয় পেলে এ অভিযানে আমি নামতাম না। আমি যখন নেমেছি, তখন সে কি করে, কোন দলের সেটি আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। বিএনপিকে দুর্নীতির খনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির দুয়ার খুলে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। তার হাতে গড়া দল, সেখানে আপনারা দেখেন প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা তো আছেই। হত্যা, খুন, দুর্নীতি এমন ধরনের কোন কাজ নেই, যা তারা করেনি। সেই দলের নেতা যিনি চেয়ারপারসন দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি কারাগারে। আরেকজন যাকে ভারপ্রাপ্ত করা হলো, সে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং মামলায় দেশান্তর। তাদের মুখে এতো কথা কোথা থেকে আসে, কোন সাহসে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীর সঙ্গে যারা জড়িত আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। আর আমরা ঘর থেকে অভিযানটা শুরু করেছি। না হলে তো আবার বলত রাজনৈতিক হয়রানির জন্য আমরা এটা করছি।
চলমান অভিযানকে বিএনপির তরফে আইওয়াশ বলা হচ্ছে-এটি আসলে কি আইওয়াশ এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, আইওয়াশ করতে যাবো কেন? আমি তো আমার আপন-পর কিছু দেখিনি। যারাই অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদেরই ধরা হচ্ছে। তাহলে আইওয়াশ বলে কী করে? আইওয়াশের ব্যবসা বিএনপিই ভালো জানে-বোঝে। দেশটাকে দুর্নীতিতে নিয়ে এসেছে তো বিএনপি। দুর্নীতিকে ‘নীতি’তে নিয়ে এসেছে তারা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এমন কিছু করেনি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান শুদ্ধি অভিযান আইওয়াশ নাকি অন্য কিছু, অপেক্ষা করুন দেখতে পাবেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বাংলাদেশে যেদিন এসেছি, সেদিন থেকেই ভয় নেই। আমার বিরোধীরা বিদেশের মাটিতে সক্রিয়, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে আমাকে হত্যা করা হতে পারে। তবে আমি এসবকে ভয় পাই না।
কলকাতা টেস্ট দেখতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী: সৌরভ গাঙ্গুলীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিসিসিআইয়ের নতুন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে ইডেন গার্ডেনে ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট দেখতে যাবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সৌরভ আমার সাথে ফোনে কথা বলেছে। আমাকে দাওয়াত দিল। আমি যেন যাই। কলকাতায় যেন থাকি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌরভ গাঙ্গুলি দাওয়াত দিয়েছে, আমি বলেছি যাব। এটা প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াত না, মুখ্যমন্ত্রীর দাওয়াতও না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সব সময় প্রটোকল, নীতিমালা এতকিছু থাকবে কেন। খেলা দেখতে সকালে যাব বিকালে চলে আসবো। এটুকুই। কলকাতায় ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দেখতে গিয়ে তিস্তা নদী নিয়ে কূটনৈতিক কোন আলোচনা হবে কিনা এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ক্রিকেটকে নদীতে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? ক্রিকেট খেলা দেখতে যাবো সেখানে তিস্তা নিয়ে কথা বলে তিক্ততা এখানে তুলবো কেন? এসময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ওই খেলা দেখতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসছেন না। আর কূটনীতি বিষয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কথা বলার তো আরও সময় আছে। তখন কথা হবে।
জীবনে এমন ধর্মঘট দেখিনি: সমপ্রতি ক্রিকেটারদের ডাকা ধর্মঘট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা হঠাৎ করেই একটা ধর্মঘট ডেকেছে। তাদের দাবি থাকলে তো জানাতে পারত। কথা নেই বার্তা নেই, হুট করে ধর্মঘট ডাকা জীবনে শুনিনি ক্রিকেটাররা এভাবে ধর্মঘট ডাকে। পরবর্তী সময়ে তারা বোর্ডে গেছে। সে ঝামেলা মিটমাট হয়ে গেছে। আমার মনে হয় পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে, যারা এভাবে ক্রিকেটারদের সমর্থন দেয়। এসময় ?সাকিব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিসিবি সাকিবের পাশে আছে এবং সব রকমের সহযোগিতা দেবে। এই ধরনের ক্রিকেটারদের সঙ্গে জুয়াড়িরা যোগাযোগ করে। ওর (সাকিবের) যেটা উচিত ছিল, যখনই ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, ও খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ফলে সে আইসিসিকে বিষয়টি জানায়নি। নিয়মটা হচ্ছে, ওর সঙ্গে সঙ্গে জানানো উচিত ছিল। সাকিব এই জায়গায় ভুল করেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখানে সে একটা ভুল করেছে। এক্ষেত্রে আপনারা জানেন, আইসিসি যদি কোনও ব্যবস্থা নেয়, এখানে আমাদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না। তবু আমরা বলব, বিশ্ব ক্রিকেটে তার একটা অবস্থান আছে। একটা ভুল সে করেছে এবং সেটা সে বুঝতেও পেরেছে। এখানে খুব বেশি কিছু করার নেই আমাদের। বিসিবি’র একজনের ক্যাসিনোতে জড়িত থাকার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ক্যাসিনোর যে প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন, সেটা বোধহয় ঠিক না। বাইরে কে কী করছে, সেটার সঙ্গে বিসিবির কোনো সম্পর্ক নেই। খোঁজ করলে সাংবাদিকদের ভেতরেও হয়তো ক্যাসিনোতে জড়িত কাউকে পাওয়া যাবে। তখন কী হবে? আমরা তো অভিযান চালাচ্ছি। কে কখন কিভাবে ধরা পড়বে, বলা যায় না। আমরা কিন্তু ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ধরেছি। তাদের কেউ বহাল তবিয়তে আছে, সেটাও ঠিক না। এর আগের এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, এখন আপনারা খুঁজে দেখেন, কোথায় কী পাওয়া যাচ্ছে। কারও যদি জুয়া খেলার আকাঙ্খা থাকে, হোম মিনিস্টারকে বলেছি, একটা চরে জুয়ার ব্যবস্থা করে দেন, ট্যাক্স বসান, নীতিমালা করেন। অন্তত ট্যাক্স তো পাওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করে। আমরা ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশের সম্মান ফিরে এসেছে। ন্যাম সম্মেলনে যাওয়ার পর সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। সেখানকার প্রবাসীদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা বলেছেন তারা ভালো আছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে তারা খুশি। তাই কারও কথায় কিছু যায়-আসে না।
পদ্মাসেতু উদ্বোধনের সুনির্দিষ্ট সময় বলা যাবে না: মুজিব বর্ষে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতু উদ্বোধনের কোনও সুনির্দিষ্ট সময় বলা যাবে না। পদ্মা সেতুর পুরো প্রক্রিয়াটাই হাইলি টেকনিক্যাল বিষয়। সেতুর নিচের অংশে ট্রেন, ওপরের অংশে গাড়ি চলবে। এটার টেকনোলজিটাই ভিন্ন। এছাড়া নদীর চরিত্রও একটা বড় ব্যাপার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সবচেয়ে খরস্রোতা নদী। একটা বর্ষার পরেই নদীর চরিত্র বদলায়। পলি পড়ে। গতিপথ পরিবর্তন হয়। এসব কারণে অনেক দিন কাজ বন্ধও রাখতে হয়েছিল। তাই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার বিষয়টি অনেক কিছুর ওপরও নির্ভর করে। মুজিব বর্ষের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠিও দিয়েছিলাম এ ব্যাপারে। নূর আছে কানাডায়, তার ব্যাপারেও কানাডা সরকারের সঙ্গে কথা চলছে। ট্রুডোর (কানাডার প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন-ব্যক্তিগতভাবে তিনিও এরকম নৃশংস ঘটনার বিচার চান। কিন্তু তাদের দেশের আদালতের কিছু নিয়মের কারণে প্রতিবন্ধকতা আছে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন মৃত্যুদণ্ড রহিত করেছে। যেহেতু তারা (খুনিরা) মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত, তাই সেই ছুতোয় তারা দেশে না ফেরার কৌশল অবলম্বন করছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুজনকে আমরা আনতে পেরেছিলাম। হুদাকে আনতে পেরেছি থাইল্যান্ড থেকে। মহিউদ্দিনকে আনতে পেরেছি। তিনি বলেন, যে বিচার করার প্রক্রিয়াই ছিল না, নিষিদ্ধ ছিল, সেই বিচার করতে পেরেছি। আমার জন্য কেউ সুন্দর রাস্তা বানিয়ে দেয়নি। রাস্তা তৈরি করতে হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান এসে তা থামিয়ে দিলো, যারা জেলে ছিল তাদের ছেড়ে দিলো, তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিলো। নতুন প্রজন্মকে এসব বিষয়ে অবহিত করতে হবে।
পিয়াজ কিন্তু পচেও যায়: পিয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিয়াজ মজুত যারা করছে তারা কত দিন ধরে তা রাখতে পারে, পিয়াজ কিন্তু পচেও যায়। বেশি রাখতে গিয়ে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গিয়ে তাদের লোকসান হবে। লাভ হবে না। এটাও বাস্তবতা। পিয়াজের দরজা খুলে দেয়া হলো। সমস্যা থাকবে না, হয়তো সাময়িক। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ চলে আসছে। ১০ হাজার টন কয়েক দিনের মধ্যেই চলে আসবে। পিয়াজ কিন্তু অলরেডি আছে। তিনি বলেন, আপনারা পত্রিকায়ই তো বের করেছেন অনেক জায়গায় পিয়াজ রয়ে গেছে। কিন্তু কেন তারা বাজারে ছাড়ছে না, সেটা বড় ব্যাপার।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ন্যাম সম্মেলনে দেশগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উন্নয়ন গুরুত্ব পেয়েছে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, শান্তি যাতে প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিকে দৃষ্টি ছিল। সবাই বাংলাদেশের উন্নয়নে বাহবা দিয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের অব্যবহিত পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে জোরদার করেছে বলে আমি মনে করি। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস-এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যেন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা হয় সেদিকেই এবারকার সম্মেলনের দৃষ্টি বেশি ছিল। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ও বর্তমান অনেক ছাত্রলীগ নেতাকে এর আগে দেখা গেলেও গতকাল তাদের উপস্থিতি ছিল না।
No comments