আসামে এনআরসি: আত্মীয় স্বজনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিলেটজুড়ে উদ্বেগ by মিলাদ জয়নুল
অন্তত
৬০ বছর আগের কথা। বিয়ের পর স্বামী তাকে নিয়ে চলে যান করিমগঞ্জে। সেখানে
তার ৫ ছেলে, ৩ মেয়ে। সন্তানদের সবাই প্রতিষ্ঠিত, মেয়েরা ভালো চাকরি করছে।
প্রতি ২ বছর পর পর একবার বাংলাদেশে আসতেন। এখানে তার বাপের বাড়ি-নাড়ির টান।
ভাইবোনদের সবাই বাংলাদেশে বসবাস করছেন। এদেশে এলে কমপক্ষে তিন মাস তাকে
থাকতে হতো।
এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে সময় কাটাতেন সুফিয়া বেগম। এখন তার বয়স ৮০-এর কাছাকাছি। বয়স আর অসুখে কণ্ঠস্বর ক্ষিণ হয়ে এসেছে। মোবাইল ফোন ধরতে গেলে হাত কাঁপে। এরপরও প্রতিদিন ২-৩ বার ফোন করে ভাইবোনদের কাছে জানতে চান- ‘এখন আমার কিতা অইবো। ছেলেদের এত বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্যের কী হবে? সত্যিই যদি তাদের বন্দিশালায় নিয়ে যায়, তবে ব্যবসা-সম্পত্তির দেখাশোনা করবে কে?’-এসব নানা প্রশ্ন করে কাঁদতে শুরু করেন সুফিয়া বেগম। তার বাপের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার মুল্লাগ্রামে।
সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে করিমগঞ্জের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটারের কম। বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে শেওলা-সূতারকান্দি চেকপোস্ট দিয়ে পার হলেই আসামের গ্রামগঞ্জ। আবার জকিগঞ্জ পৌরশহরের কাছাকাছি কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিলেই করিমগঞ্জ জেলা শহর। নদীর ওপার থেকে ডাক দিলে এপারের লোক শুনতে পায়। শীতকালে পানি কমে গেলে নদীতে জেগে ওঠা দু’পারের বালুচরে আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতেন। গল্প করতেন সুখ-দুঃখের। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বাধার দেয়াল তাদের ছুঁতে না দিলেও কাছ থেকে দেখা হতো-কথা হতো।
সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সীমান্তবর্তী থানাগুলো হচ্ছে, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট। এই উপজেলারগুলোর সীমান্তঘেঁষা এলাকা করিমগঞ্জ ও আসাম।
সম্প্রতি আসামের ১৯ লাখেরও বেশি মানুষের নাম জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি থেকে বাদ দেয়ার ঘটনায় সিলেটে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আসামের করিমগঞ্জ কিংবা বাংলাদেশের সিলেট, এই দুই এলাকায় খুব কম লোক পাওয়া যাবে- যাদের নিকটাত্মীয় এপারে-ওপারে নেই। সিলেট জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমান উদ্দিন বলেন, বিয়ানীবাজার, বড়লেখা, জকিগঞ্জ উপজেলার প্রায় সব ক’টি পরিবারের আত্মীয়-স্বজনরা করিমগঞ্জে বসবাস করেন। বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কসবা গ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আজিজের নিজস্ব নামে করিমগঞ্জে এখনো বিপণিবিতান রয়েছে। জকিগঞ্জ পৌরশহরের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নূর উদ্দিন বলেন, তার নানাবাড়ি, ভগ্নিপতিসহ অনেক আত্মীয়ের বাড়ি করিমগঞ্জে। এনআরসির পর থেকে নিকটাত্মীয়দের জন্য তিনিও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
বিবিসি বাংলার তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ করে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সময় প্রশ্ন ওঠে আসামের অংশ সিলেটের ভাগ্যে কী হবে। সিদ্ধান্ত হলো গণভোট অনুষ্ঠানের। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ই জুলাই সিলেটে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে মোট ভোটার ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৫ জন। ভোট দিয়েছিল ৭৭ শতাংশ মানুষ। ২৩৯টি ভোট কেন্দ্রে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছিল জানা যায়। ওই ভোটে কংগ্রেসের মার্কা ছিল ঘর আর মুসলিম লীগের মার্কা ছিল কুড়াল। হিন্দুদের মধ্যে নমশূদ্ররা ছিল মুসলিম লীগের পক্ষে। আলেমদের একদল ছিল কংগ্রেসের সমর্থনে। ওই ভোটে ৭৮ ভোট বেশি পেয়ে মুসলিম লীগ জয়লাভ করে। তবে গণভোটের রায় না মেনে মানচিত্রে দাগ কেটে করিমগঞ্জের কিছু অংশ ভারতকে দিয়ে দেয়ায় সিলেটের মানুষের কাছে চির বিতর্কিত হয়ে যায় রেডক্লিফ লাইন। ভোটে করিমগঞ্জের মানুষও আসাম ছাড়ার পক্ষে রায় দিলে করিমগঞ্জের কিছু অংশ রেডক্লিফ লাইনে ভারতের আসামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
দুবাগ এলাকার আব্দুল লতিফ জানান, তার আপন ভাই করিমগঞ্জে বসবাস করেন বহু বছর থেকে। সেখানে আসামের এক নারীকে বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন। কিন্তু এনআরসিতে তার সঙ্গে স্ত্রীও বাদ পড়েছেন। এখন করিমগঞ্জে ফোন করে ভাইকে তার ভাগের জমিজমা আলাদা করে রাখতে বলেছেন। এ নিয়ে টেলিফোনে দুই ভাইয়ের মধ্যে অনেকবার ঝগড়া হয়েছে। আব্দুল লতিফ বলেন, ভাই একা আসলে হয়তো তাকে গ্রহণ করবো। কিন্তু বউ-বাচ্ছাদের নিয়ে এলে জায়গা দিবো না।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. তপোধীর ভট্টাচার্যের পৈতৃক বাড়ি অধুনালুপ্ত পঞ্চখণ্ড তথা বিয়ানীবাজার পৌরশহরের নয়াগ্রামে। প্রায় ৫ বছর আগে তিনি নিজ বাড়ি ঘুরে গেছেন। তিনি জানান, এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়া লাখ লাখ মানুষকে অদূর ভবিষ্যতে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা হবে, সেই সম্ভাবনা খুব কম। তাই বলে বাংলাদেশ এই ইস্যুতে নিশ্চিন্ত হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতেও পারবে না। মুখে তারা যতই এটাকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে বর্ণনা করুক, পর্দার আড়ালে তাদের এই চেষ্টাও প্রতিনিয়ত চালিয়ে যেতে হবে যে, এই মানুষগুলোকে কিছুতেই যেন জোর করে সীমান্ত পার করিয়ে দেয়ার চেষ্টা না হয়!
নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ পড়েছেন এমন একজন তৈয়বুর রহমান। করিমগঞ্জের বঙ্গারইরগাঁও গ্রামে তার বসবাস। তিনি তার এক নিকটাত্মীয়কে জানান, আমি ভারতীয় নাগরিক, এ নিয়ে আমার সব ডকুমেন্টস আছে, এখন এনআরসিতে আমার নাম ওঠানো হয়নি। তিনি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। কবি ও গবেষক ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আসামের রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোকে নিয়ে ভাবছে। বিশেষ করে সিলেটবাসী বরাক উপত্যকার লোকজনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। খাসা গ্রামের জমিদার বংশের মেয়ে মহিরূহ পাল চৌধুরী টেলিফোনে বলেন, তার বাবা রেলওয়েতে চাকরি করতেন। বাবার নাম উঠলেও তার নাম ওঠেনি এনআরসিতে, ছেলেমেয়ে কারও নাম নেই। বাবার ভোটার তালিকা দেখাতে না পারলে তো সবাইকে জেলে ধরে নিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমার ঠাকুরদা, বা সব পূর্ব পুরুষরাই এখানকার বাসিন্দা। ইংরেজ আমলে সরকারি কর্মীও ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ। কিন্তু এত পুরনো কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানান মহিরূহ চৌধুরী।
এদিকে, আসামে এনআরসি তালিকা ঘোষণার পরই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কড়া নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বিজিবি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৫২ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আসামের বিষয় মাথায় রেখেই বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি আসামের পরিস্থিতি যদি কোনো সময় অবনতি হয় তাহলে সেদিকেও আমাদের নজরদারি আছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের বলা আছে তারা যাতে সতর্ক থাকেন। ভারতীয় বিএসএফ এবং ভারতীয় নাগরিকদের কোনো তৎপরতা দেখার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজিবি ক্যাম্পকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে।’
এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে সময় কাটাতেন সুফিয়া বেগম। এখন তার বয়স ৮০-এর কাছাকাছি। বয়স আর অসুখে কণ্ঠস্বর ক্ষিণ হয়ে এসেছে। মোবাইল ফোন ধরতে গেলে হাত কাঁপে। এরপরও প্রতিদিন ২-৩ বার ফোন করে ভাইবোনদের কাছে জানতে চান- ‘এখন আমার কিতা অইবো। ছেলেদের এত বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্যের কী হবে? সত্যিই যদি তাদের বন্দিশালায় নিয়ে যায়, তবে ব্যবসা-সম্পত্তির দেখাশোনা করবে কে?’-এসব নানা প্রশ্ন করে কাঁদতে শুরু করেন সুফিয়া বেগম। তার বাপের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার মুল্লাগ্রামে।
সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে করিমগঞ্জের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটারের কম। বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে শেওলা-সূতারকান্দি চেকপোস্ট দিয়ে পার হলেই আসামের গ্রামগঞ্জ। আবার জকিগঞ্জ পৌরশহরের কাছাকাছি কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিলেই করিমগঞ্জ জেলা শহর। নদীর ওপার থেকে ডাক দিলে এপারের লোক শুনতে পায়। শীতকালে পানি কমে গেলে নদীতে জেগে ওঠা দু’পারের বালুচরে আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতেন। গল্প করতেন সুখ-দুঃখের। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বাধার দেয়াল তাদের ছুঁতে না দিলেও কাছ থেকে দেখা হতো-কথা হতো।
সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সীমান্তবর্তী থানাগুলো হচ্ছে, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট। এই উপজেলারগুলোর সীমান্তঘেঁষা এলাকা করিমগঞ্জ ও আসাম।
সম্প্রতি আসামের ১৯ লাখেরও বেশি মানুষের নাম জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি থেকে বাদ দেয়ার ঘটনায় সিলেটে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আসামের করিমগঞ্জ কিংবা বাংলাদেশের সিলেট, এই দুই এলাকায় খুব কম লোক পাওয়া যাবে- যাদের নিকটাত্মীয় এপারে-ওপারে নেই। সিলেট জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমান উদ্দিন বলেন, বিয়ানীবাজার, বড়লেখা, জকিগঞ্জ উপজেলার প্রায় সব ক’টি পরিবারের আত্মীয়-স্বজনরা করিমগঞ্জে বসবাস করেন। বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কসবা গ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আজিজের নিজস্ব নামে করিমগঞ্জে এখনো বিপণিবিতান রয়েছে। জকিগঞ্জ পৌরশহরের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নূর উদ্দিন বলেন, তার নানাবাড়ি, ভগ্নিপতিসহ অনেক আত্মীয়ের বাড়ি করিমগঞ্জে। এনআরসির পর থেকে নিকটাত্মীয়দের জন্য তিনিও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
বিবিসি বাংলার তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ করে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সময় প্রশ্ন ওঠে আসামের অংশ সিলেটের ভাগ্যে কী হবে। সিদ্ধান্ত হলো গণভোট অনুষ্ঠানের। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ই জুলাই সিলেটে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে মোট ভোটার ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৫ জন। ভোট দিয়েছিল ৭৭ শতাংশ মানুষ। ২৩৯টি ভোট কেন্দ্রে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছিল জানা যায়। ওই ভোটে কংগ্রেসের মার্কা ছিল ঘর আর মুসলিম লীগের মার্কা ছিল কুড়াল। হিন্দুদের মধ্যে নমশূদ্ররা ছিল মুসলিম লীগের পক্ষে। আলেমদের একদল ছিল কংগ্রেসের সমর্থনে। ওই ভোটে ৭৮ ভোট বেশি পেয়ে মুসলিম লীগ জয়লাভ করে। তবে গণভোটের রায় না মেনে মানচিত্রে দাগ কেটে করিমগঞ্জের কিছু অংশ ভারতকে দিয়ে দেয়ায় সিলেটের মানুষের কাছে চির বিতর্কিত হয়ে যায় রেডক্লিফ লাইন। ভোটে করিমগঞ্জের মানুষও আসাম ছাড়ার পক্ষে রায় দিলে করিমগঞ্জের কিছু অংশ রেডক্লিফ লাইনে ভারতের আসামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
দুবাগ এলাকার আব্দুল লতিফ জানান, তার আপন ভাই করিমগঞ্জে বসবাস করেন বহু বছর থেকে। সেখানে আসামের এক নারীকে বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন। কিন্তু এনআরসিতে তার সঙ্গে স্ত্রীও বাদ পড়েছেন। এখন করিমগঞ্জে ফোন করে ভাইকে তার ভাগের জমিজমা আলাদা করে রাখতে বলেছেন। এ নিয়ে টেলিফোনে দুই ভাইয়ের মধ্যে অনেকবার ঝগড়া হয়েছে। আব্দুল লতিফ বলেন, ভাই একা আসলে হয়তো তাকে গ্রহণ করবো। কিন্তু বউ-বাচ্ছাদের নিয়ে এলে জায়গা দিবো না।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. তপোধীর ভট্টাচার্যের পৈতৃক বাড়ি অধুনালুপ্ত পঞ্চখণ্ড তথা বিয়ানীবাজার পৌরশহরের নয়াগ্রামে। প্রায় ৫ বছর আগে তিনি নিজ বাড়ি ঘুরে গেছেন। তিনি জানান, এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়া লাখ লাখ মানুষকে অদূর ভবিষ্যতে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা হবে, সেই সম্ভাবনা খুব কম। তাই বলে বাংলাদেশ এই ইস্যুতে নিশ্চিন্ত হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতেও পারবে না। মুখে তারা যতই এটাকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে বর্ণনা করুক, পর্দার আড়ালে তাদের এই চেষ্টাও প্রতিনিয়ত চালিয়ে যেতে হবে যে, এই মানুষগুলোকে কিছুতেই যেন জোর করে সীমান্ত পার করিয়ে দেয়ার চেষ্টা না হয়!
নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ পড়েছেন এমন একজন তৈয়বুর রহমান। করিমগঞ্জের বঙ্গারইরগাঁও গ্রামে তার বসবাস। তিনি তার এক নিকটাত্মীয়কে জানান, আমি ভারতীয় নাগরিক, এ নিয়ে আমার সব ডকুমেন্টস আছে, এখন এনআরসিতে আমার নাম ওঠানো হয়নি। তিনি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। কবি ও গবেষক ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আসামের রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোকে নিয়ে ভাবছে। বিশেষ করে সিলেটবাসী বরাক উপত্যকার লোকজনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। খাসা গ্রামের জমিদার বংশের মেয়ে মহিরূহ পাল চৌধুরী টেলিফোনে বলেন, তার বাবা রেলওয়েতে চাকরি করতেন। বাবার নাম উঠলেও তার নাম ওঠেনি এনআরসিতে, ছেলেমেয়ে কারও নাম নেই। বাবার ভোটার তালিকা দেখাতে না পারলে তো সবাইকে জেলে ধরে নিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমার ঠাকুরদা, বা সব পূর্ব পুরুষরাই এখানকার বাসিন্দা। ইংরেজ আমলে সরকারি কর্মীও ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ। কিন্তু এত পুরনো কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানান মহিরূহ চৌধুরী।
এদিকে, আসামে এনআরসি তালিকা ঘোষণার পরই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কড়া নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বিজিবি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৫২ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আসামের বিষয় মাথায় রেখেই বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি আসামের পরিস্থিতি যদি কোনো সময় অবনতি হয় তাহলে সেদিকেও আমাদের নজরদারি আছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের বলা আছে তারা যাতে সতর্ক থাকেন। ভারতীয় বিএসএফ এবং ভারতীয় নাগরিকদের কোনো তৎপরতা দেখার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজিবি ক্যাম্পকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে।’
No comments