সিনেমা হলের সূচনার গল্প (পর্ব-১) by কামরুজ্জামান মিলু
বিনোদনের
সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা। আর এই সিনেমা দেখার জন্য চাই প্রেক্ষাগৃহ বা হল।
দেশে কেমন ছিল সিনেমা হলের সূচনাকাল? আর তারপর ক্রমে উন্নয়ন, আধুনিকায়নের
পথ পেরিয়ে সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সাজানো হয়েছে ধারাবাহিক আয়োজন
বাংলাদেশের সিনেমা হল। লিখেছেন কামরুজ্জামান মিলু। আজ প্রকাশ হচ্ছে এর প্রথম পর্ব ‘সিনেমা হলের সূচনার গল্প’
সিনেমা হলে বসে এখন আমরা রঙিন বা থ্রিডি ছবি দেখার সুযোগ পেলেও আগের চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নির্বাক সিনেমা দিয়ে এর শুরু। সেটাও ছিল সাদাকালো। এরপর দীর্ঘ সময় পর আসে অর্ধেক রঙিন।
এরপর সম্পূর্ণ রঙিন ছবি। বর্তমানে আগের মতো সিনেমার ব্যবসা না হওয়ায় সিনেমা হলের সংখ্যা সারা দেশে ক্রমশ কমছে। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের সিনেমা হলগুলো। এরইমধ্যে দেশীয় ছবি ধারাবাহিকভাবে ব্যবসা না করাসহ নানা কারণে দেশের সব সিনেমা হল আগামী ১২ই এপ্রিল থেকে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। এ সমস্যার সমাধান হবে কি-না তা নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে সিনেমা হল নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই সিনেমাপ্রেমীদের। দেশে সিনেমা হলের শুরুর সময়ের অবস্থার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, একটা সময় বায়োস্কোপে ছবির মানুষ আর জন্তু-জানোয়ারের ভিডিও সকলে মিলে দেখা শুরু করে। সেটা ছিল চলন্ত ছবি। বায়োস্কোপের পর ঢাকার আহসান মঞ্জিলের কাছে ক্রাউন থিয়েটারে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিল। ঢাকার প্রথম সিনেমা হল ছিল ‘কমলা টকিজ’।
১৯২৭ সালে পুরনো ঢাকার রাজার দেউড়িতে প্রথম নির্মাণ হয় এটি, পরে যা ‘প্যারাডাইস সিনেমা’ নামে পরিচিতি পায়। এরপর পল্টন ময়দানের স্টেডিয়ামের পাশে ‘ব্রিটানিয়া সিনেমা হল’ নির্মাণ হয়। এখানে ইংরেজি ছবি প্রদর্শিত হতো। সেই সময় শিক্ষিত দর্শক শ্রেণির ভিড় ছিল বেশি। পল্টনের খোলা প্রান্তরে এ প্রেক্ষাগৃহটি ছিল বেশ বড়। তবে ছাদ ছিল টিনের। এরপর ‘পিকচার প্যালেস’ নির্মাণ হয় আরমানিটোলায়। পরে এই একতলা প্রেক্ষাগৃহটি ‘শাবিস্তান’ নামে পরিচিতি পায়। হারিকেন এবং লণ্ঠন দিয়ে সিনেমা প্রদর্শন করা হতো প্রথমদিকে। প্রতিদিন দুটি করে ছবি দেখানো হতো। এরপর ১৯৩০ সালের দিকে ঢাকার মির্জা আবদুল কাদের সরদার ডায়মন্ড জুবিলী থিয়েটারের কর্তৃত্ব নেন। তিনি সেসময় প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। যা ১৯৩২ সালে ‘লায়ন সিনেমা হল’ নামে পরিচিতি পায়।
এই ভবনটি ইংরেজি এল অক্ষরের আকৃতির ছিল। এই প্রেক্ষাগৃহে প্রথম উপমহাদেশের চলচ্চিত্র ‘আলম আরা’ মুক্তি পায়। দেশে সিনেমা হলের বিস্তার সম্পর্কে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ঢাকায় ‘রূপমহল’, ‘লায়ন’, ‘আজাদ’, ‘মধুমিতা’, ‘সনি’, চট্টগ্রামে ‘রঙ্গম’, ‘উজালা’ প্রভৃতি সিনেমা হল পরে গড়ে ওঠে। নারায়ণগঞ্জে ‘হংশ’, ‘ডায়মন্ড’সহ বাংলাদেশের অন্যান্য শহরেও সিনেমা হল গড়ে ওঠে। এসবই ছিল ইংরেজ শাসনামলের কথা এবং তখনও একচেটিয়া রাজত্ব চলছিল নির্বাক চলচ্চিত্রের। সে সময় ছবির মানুষ যে চলে-ফিরে বেড়ায়- সেটাই ছিল মহাআশ্চর্য ঘটনা। পঞ্চাশ-ষাটের দশক তো বটেই, আশির দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে সিনেমা হলকে আকর্ষণীয় করে সাজানোর প্রবণতা ছিল। ঢাকার মধুমিতা-গুলিস্তান শুধু নয়, এ দেশের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল হিসেবে পরিচিত যশোরের মণিহারও ছিল ভাস্কর্য-চিত্রশোভিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনশ’র বেশি সিনেমা হল ছিল।
এরপর এ সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে ১২০০-তে দাড়ায়। কিন্তু একসময় তা কমতে থাকে নানা কারণে। মিয়া আলাউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে সিনেমা হল কমতে শুরু করে। ‘গুলিস্তান’ ও ‘নাজ’ ভেঙে ফেলা হয়। ‘নাজ’ সিনেমা হলে আমি ও বঙ্গবন্ধু একসঙ্গে বসে একই ছবি দেখার সুযোগ হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে ‘রুপবান’ ছবি দেখতে গিয়েছিলাম। সেসময় আমি জগন্নাথ কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়তাম। ছবি দেখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা হয় আমার। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, লেখাপড়া রেখে সিনেমা দেখতে এসেছো নাকি? লেখাপড়া ঠিকমতো করো। তখন আমি উত্তরে বলেছিলাম, লিডার, আমি সব সিনেমা দেখি না। ‘রুপবান’ বলেই দেখতে এলাম এবং আমি লেখাপড়া ঠিকমতো করছি। তখন তিনি পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বললেন, ঠিক আছে। তাহলে দেখ। এই কথাগুলো আমার আজও মনে আছে।
ঢাকার ‘সনি’ সিনেমা হলের মালিক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ১৯৮৬ সালের ১৬ই আগস্ট ‘সনি’ সিনেমা হলটি নির্মাণ করি। এ হলের ভেতরে দর্শকদের জন্য ছিল পর্যাপ্ত জায়গা এবং সিট সংখ্যা ছিল মোট ১২০০। দারুণ ব্যবসা করতে শুরু করেছিল এ সিনেমা হলটি। আমার সিনেমা হল ছাড়াও ঢাকার ‘আজাদ’, ‘চিত্রামহল’, ‘মানসী’, ‘অভিসার’, ‘নেপচুন’, ‘গীত’, ‘সংগীত’, ‘জোনাকী’, ‘রাজমণি’, ‘রাজিয়া’, ‘পদ্মা’, ‘সুরমা’, ‘গ্যারিসন’, ‘শাহীন’, ‘পুরবী’, ‘এশিয়া’, ‘পর্বত’, ‘মুক্তি’, ‘শ্যামলী’, ‘বিজিবি অডিটোরিয়াম’, ‘বলাকা’, ‘আনন্দ’, ‘ছন্দ’, ‘পুনম’, ‘মধুমিতা’সহ সারা দেশে ক্রমশ ১২০০ সিনেমা হল তৈরি হয়। আর এখন ১৭৪টি সিনেমা হল চালু আছে। কারণটা সকলের জানা।
সিনেমা হলে বসে এখন আমরা রঙিন বা থ্রিডি ছবি দেখার সুযোগ পেলেও আগের চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নির্বাক সিনেমা দিয়ে এর শুরু। সেটাও ছিল সাদাকালো। এরপর দীর্ঘ সময় পর আসে অর্ধেক রঙিন।
এরপর সম্পূর্ণ রঙিন ছবি। বর্তমানে আগের মতো সিনেমার ব্যবসা না হওয়ায় সিনেমা হলের সংখ্যা সারা দেশে ক্রমশ কমছে। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের সিনেমা হলগুলো। এরইমধ্যে দেশীয় ছবি ধারাবাহিকভাবে ব্যবসা না করাসহ নানা কারণে দেশের সব সিনেমা হল আগামী ১২ই এপ্রিল থেকে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। এ সমস্যার সমাধান হবে কি-না তা নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে সিনেমা হল নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই সিনেমাপ্রেমীদের। দেশে সিনেমা হলের শুরুর সময়ের অবস্থার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, একটা সময় বায়োস্কোপে ছবির মানুষ আর জন্তু-জানোয়ারের ভিডিও সকলে মিলে দেখা শুরু করে। সেটা ছিল চলন্ত ছবি। বায়োস্কোপের পর ঢাকার আহসান মঞ্জিলের কাছে ক্রাউন থিয়েটারে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিল। ঢাকার প্রথম সিনেমা হল ছিল ‘কমলা টকিজ’।
১৯২৭ সালে পুরনো ঢাকার রাজার দেউড়িতে প্রথম নির্মাণ হয় এটি, পরে যা ‘প্যারাডাইস সিনেমা’ নামে পরিচিতি পায়। এরপর পল্টন ময়দানের স্টেডিয়ামের পাশে ‘ব্রিটানিয়া সিনেমা হল’ নির্মাণ হয়। এখানে ইংরেজি ছবি প্রদর্শিত হতো। সেই সময় শিক্ষিত দর্শক শ্রেণির ভিড় ছিল বেশি। পল্টনের খোলা প্রান্তরে এ প্রেক্ষাগৃহটি ছিল বেশ বড়। তবে ছাদ ছিল টিনের। এরপর ‘পিকচার প্যালেস’ নির্মাণ হয় আরমানিটোলায়। পরে এই একতলা প্রেক্ষাগৃহটি ‘শাবিস্তান’ নামে পরিচিতি পায়। হারিকেন এবং লণ্ঠন দিয়ে সিনেমা প্রদর্শন করা হতো প্রথমদিকে। প্রতিদিন দুটি করে ছবি দেখানো হতো। এরপর ১৯৩০ সালের দিকে ঢাকার মির্জা আবদুল কাদের সরদার ডায়মন্ড জুবিলী থিয়েটারের কর্তৃত্ব নেন। তিনি সেসময় প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। যা ১৯৩২ সালে ‘লায়ন সিনেমা হল’ নামে পরিচিতি পায়।
এই ভবনটি ইংরেজি এল অক্ষরের আকৃতির ছিল। এই প্রেক্ষাগৃহে প্রথম উপমহাদেশের চলচ্চিত্র ‘আলম আরা’ মুক্তি পায়। দেশে সিনেমা হলের বিস্তার সম্পর্কে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ঢাকায় ‘রূপমহল’, ‘লায়ন’, ‘আজাদ’, ‘মধুমিতা’, ‘সনি’, চট্টগ্রামে ‘রঙ্গম’, ‘উজালা’ প্রভৃতি সিনেমা হল পরে গড়ে ওঠে। নারায়ণগঞ্জে ‘হংশ’, ‘ডায়মন্ড’সহ বাংলাদেশের অন্যান্য শহরেও সিনেমা হল গড়ে ওঠে। এসবই ছিল ইংরেজ শাসনামলের কথা এবং তখনও একচেটিয়া রাজত্ব চলছিল নির্বাক চলচ্চিত্রের। সে সময় ছবির মানুষ যে চলে-ফিরে বেড়ায়- সেটাই ছিল মহাআশ্চর্য ঘটনা। পঞ্চাশ-ষাটের দশক তো বটেই, আশির দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে সিনেমা হলকে আকর্ষণীয় করে সাজানোর প্রবণতা ছিল। ঢাকার মধুমিতা-গুলিস্তান শুধু নয়, এ দেশের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল হিসেবে পরিচিত যশোরের মণিহারও ছিল ভাস্কর্য-চিত্রশোভিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনশ’র বেশি সিনেমা হল ছিল।
এরপর এ সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে ১২০০-তে দাড়ায়। কিন্তু একসময় তা কমতে থাকে নানা কারণে। মিয়া আলাউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে সিনেমা হল কমতে শুরু করে। ‘গুলিস্তান’ ও ‘নাজ’ ভেঙে ফেলা হয়। ‘নাজ’ সিনেমা হলে আমি ও বঙ্গবন্ধু একসঙ্গে বসে একই ছবি দেখার সুযোগ হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে ‘রুপবান’ ছবি দেখতে গিয়েছিলাম। সেসময় আমি জগন্নাথ কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়তাম। ছবি দেখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা হয় আমার। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, লেখাপড়া রেখে সিনেমা দেখতে এসেছো নাকি? লেখাপড়া ঠিকমতো করো। তখন আমি উত্তরে বলেছিলাম, লিডার, আমি সব সিনেমা দেখি না। ‘রুপবান’ বলেই দেখতে এলাম এবং আমি লেখাপড়া ঠিকমতো করছি। তখন তিনি পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বললেন, ঠিক আছে। তাহলে দেখ। এই কথাগুলো আমার আজও মনে আছে।
ঢাকার ‘সনি’ সিনেমা হলের মালিক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ১৯৮৬ সালের ১৬ই আগস্ট ‘সনি’ সিনেমা হলটি নির্মাণ করি। এ হলের ভেতরে দর্শকদের জন্য ছিল পর্যাপ্ত জায়গা এবং সিট সংখ্যা ছিল মোট ১২০০। দারুণ ব্যবসা করতে শুরু করেছিল এ সিনেমা হলটি। আমার সিনেমা হল ছাড়াও ঢাকার ‘আজাদ’, ‘চিত্রামহল’, ‘মানসী’, ‘অভিসার’, ‘নেপচুন’, ‘গীত’, ‘সংগীত’, ‘জোনাকী’, ‘রাজমণি’, ‘রাজিয়া’, ‘পদ্মা’, ‘সুরমা’, ‘গ্যারিসন’, ‘শাহীন’, ‘পুরবী’, ‘এশিয়া’, ‘পর্বত’, ‘মুক্তি’, ‘শ্যামলী’, ‘বিজিবি অডিটোরিয়াম’, ‘বলাকা’, ‘আনন্দ’, ‘ছন্দ’, ‘পুনম’, ‘মধুমিতা’সহ সারা দেশে ক্রমশ ১২০০ সিনেমা হল তৈরি হয়। আর এখন ১৭৪টি সিনেমা হল চালু আছে। কারণটা সকলের জানা।
No comments