অন্ধকারে বাঁচে না গণতন্ত্র by রফিকুজজামান রুমান
উন্নয়ন
নাকি গণতন্ত্র- সেই বিতর্কটাও এখন নেই। এখন মূলত মেনে নেওয়ার সময়।
চারিদিকের যাবতীয় নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার এই সময়ের সমান্তরালে চলছে
উন্নয়নের নানা কর্মযজ্ঞ। উন্নয়নই আমাদের উদ্দেশ্য। উন্নয়নই আমাদের বিকল্প।
একসময় বলা হতো- গণতন্ত্রের বিকল্প আরো গণতন্ত্র। এখন বলা যেতে পারে,
গণতন্ত্রের বিকল্প উন্নয়ন এবং আরো উন্নয়ন। সে হোক।
কিন্তু গণতন্ত্রের পাটাতন যে গণমাধ্যম, সেও যদি উন্নয়নের ‘বলী’ হয়, তখন সমাজে রাষ্ট্রে অন্ধকার নেমে আসে। সেই অন্ধকারে পথ হারায় সবাই। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় গণতন্ত্র নিজেই। গণতন্ত্র অন্ধকারে বাঁচে না।
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বছর দুয়েক আগে এমন একটি স্লোগানই নির্ধারণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দৈনিকটির ১৪০ বছরের ইতিহাসে কোনো অফিসিয়াল স্লোগান ছিল না। ২০১৬ সালে পত্রিকাটির মালিকানার পরিবর্তন হলে নতুন স্লোগানটি সংযুক্ত করা হয়। স্লোগানটি হলো “অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র (Democracy dies in darkness)।” এটি এমন সময়ে করা হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র তার ৪৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছে। ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে এবং ক্ষমতায় আসার পর থেকেও নানা কৌতুহল উদ্দীপক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো গণমাধ্যমের সমালোচনা। সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনায় মুখর ট্রাম্প কোনো রাখঢাক না রেখেই যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন। সাংবাদিকরা ‘অসৎ’, ‘এরা আমেরিকার জনগণের শত্রু’ সহ আরো নানা তীর্যক মন্তব্য করেছেন।
অনেকেই মনে করেছিলেন দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাটি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করেই তাদের নতুন স্লোগান প্রণয়ন করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এক বছর আগেই একটি সাক্ষাৎকারে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এর নতুন মালিক, যিনি আমাজনডটকম এরও প্রতিষ্ঠাতা, জেফারি বেজোস স্লোগানের কথাগুলো বলেছিলেন। ২০১৬ সালের ১৮ মে এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন পোস্ট এরই নির্বাহী সম্পাদক মার্টিন ব্যারন। সেখানে কথা প্রসঙ্গে বেজোস বলেছিলেন, “আমি মনে করি আমাদের অনেকেরই বিশ্বাস যে, অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র । তাই (গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য) কিছু প্রতিষ্ঠানকে (যেমন: গণমাধ্যম) আলো ছড়ানোর দায়িত্ব নিতে হয়।” ধারণা করা হয়, জেফারি বেজোস এর এই কথা থেকেই ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের নতুন স্লোগানটি নিয়ে নেয়- অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র
(Democracy dies in darkness)। যদিও বেজোস স্বীকার করেন, তিনি “অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র”- এটি তার নিজের কথা নয়। কথাটি শুনেছেন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক, বিখ্যাত অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বব উডওয়ার্ডের কাছ থেকে। উডওয়ার্ড তার সর্বশেষ বই দ্য লাস্ট অব দ্য প্রেসিডেন্টস মেন নিয়ে ২০১৫ সালে একটি প্রেজেনটেশন দেওয়ার সময় কথাটি বলেছিলেন যেখানে বেজোস উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু ১৯৭২ সালে ‘ওয়াটেরগেট স্ক্যান্ডাল’ রিপোর্ট করে আমেরিকার ৩৭তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পদত্যাগে বাধ্য করা উডওয়ার্ড জানান, Democracy dies in darkness ঠিক তার নিজের উক্তি নয়। এটি তিনি বেশ কয়েক বছর আগে একটি বিচারিক মতামতে শুনেছিলেন, যেখানে আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনী নিয়ে মতামত দেওয়া হয়। যদিও উডওয়ার্ড ঐ বিচারপতির নাম মনে করতে পারেননি। উডওয়ার্ড আরো জানান, “এটা (‘অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র’ কথাটি) অনেক আগের ব্যাপার। এটা প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে না। এটার মূল উদ্দেশ্য হলো এটা বলা যে, সরকারের গোপনীয় আচরণ বিপদজনক।” পরবর্তীতে বিচারপতির নাম জানা যায়। তিনি হলেন ডেমোন জে কেইথ। তিনি ‘ওয়ারেন্ট ছাড়া কারো কথা রেকর্ড করা যাবে না’ মর্মে একটি রুল দিতে গিয়ে ঐ কথাটি বলেছিলেন।
যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এই কথাটিই নিজেদের স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই স্লোগানটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অবশ্য স্লোগানটি নির্বাচন করার প্রক্রিয়া সহজ ছিল না। ওয়াশিংটন পোস্ট এর একটি বিশেষজ্ঞ দল সম্ভাব্য আরো পাঁচশত স্লোগান নিয়ে কাজ করে। শেষ বিচারে টিকে যায় এই স্লোগানটিই- “অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র।” আগেই বলা হয়েছে, ১৪০ বছরের ইতিহাসে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কোনো অফিসিয়াল স্লোগান ছিল না। বিভিন্ন সময় তারা কিছু বাণিজ্যিক স্লোগান দিলেও পুরো পত্রিকার জন্য অফিসিয়াল স্লোগান এই প্রথম।
ওয়াশিংটন পোস্ট যখন নতুন স্লোগান দিয়ে চারিদিকে হইচই ফেলে দিয়েছে, বসে থাকেনি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নিউ ইয়র্ক টাইমসও। তাদের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে “দ্য ট্রুথ” নামে একটি বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। বলা হয়, “সত্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। সত্য জানা কঠিন। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সত্য জানা এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” এখান থেকেই নিউ ইয়র্ক টাইমস এর নতুন স্লোগান নির্ধারিত হয়- “আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সত্য জানা এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ (The truth is more important nwo than ever)।”
ওয়াশিংটন পোস্ট এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস এর এই স্লোগান কাকতালীয়ভাবে হলেও এমন সময়ে আলোড়ন তুললো যখন ডোনাল্ড ট্র্যাম্প ক্ষমতায় এবং আমেরিকার গণতন্ত্র ও ভবিষ্যত নিয়ে অনেকেই নানামুখী বিতর্কে লিপ্ত। আমেরিকার প্রথম সারির পত্রিকাগুলো ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট না করার জন্য প্রকাশ্য প্রচারণা চালিয়েছিল। ওয়াশিংটন পোস্ট তো ২০ জন প্রতিবেদকই নিয়োজিত করেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য উদঘাটন করার জন্য। পোস্ট এর সহযোগী সম্পাদক বব উডওয়ার্ড প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “(ট্রাম্প সম্পর্কে) অনেক কিছুই জানা বাকি আছে। আমরা ২০ জন প্রতিবেদক নিয়োগ করেছি ট্রাম্পের জীবনের প্রতিটি বিষয়ের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য। এমনকি আমরা এ বিষয়ে একটি বই বের করারও পরিকল্পনা করছি।”
এতো কিছুর পরেও ট্র্যাম্পের বিজয় ঠেকানো যায়নি। ভূমিধ্বস বিজয় নিয়ে তিনি ক্ষমতায় বসেন। কিন্তু থেমে নেই গণমাধ্যম। ট্রাম্প যেমন গণমাধ্যমকে ধুয়ে দিচ্ছেন, গণমাধ্যমও তেমনি ট্রাম্পের ব্যাপারে অসহনশীল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যম ও সরকারের মধ্যে চলমান সম্পর্ক (নাকি বৈরিতা) কি তাহলে নতুন কোনো বার্তা দিচ্ছে? হঠাৎ করে প্রভাবশালী দুটি পত্রিকার ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সত্য’ নিয়ে এমন উঠে পড়ার পেছনের কারণ কী? আমেরিকার গণতন্ত্র কি আসলেই হুমকির মুখে পড়েছে? সেক্ষেত্রে জনগণ বেছে নিবে কোনটিকে, সরকার নাকি গণমাধ্যম? অবশ্য আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন বহু আগেই বলে গেছেন, “Were it left to me to decide whether we should have a government without newspapers, or newspapers without a government, I should not hesitate a moment to prefer the later.” সংবাদপত্রহীন সরকারের চেয়ে সরকারহীন সংবাদপত্র ভালো।
আমেরিকার এই অবস্থাকে ভূমিকা হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে পর্যালোচনা করাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য। বিশেষ করে “অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র”- এই স্লোগানের মর্মার্থ বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চায় বেশ জুঁতসইভাবে খাপ খেয়ে যায় বলে এই আলোচনা এখানে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।
বলা ভুল হবে না যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র শুরু থেকেই ক্ষমতামুখী শুধু নয়; ক্ষমতা-সর্বস্ব। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যেতে হবে এবং যে কোনো কিছুর বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে- এই ক্ষমতাকেন্দ্রিক চক্র থেকে আমাদের গণতন্ত্র বের হতে পারেনি। এখানকার রাজনীতিও সীমাহীন ক্ষমতার প্রতীক। দু:খজনক হলো- এই ক্ষমতার নাটাই থাকে গুটিকয়েক মানুষের হাতে।
বাকিরা শুধুই ক্ষমতাচর্চার নীরব দর্শক। তাদের বসবাস অন্ধকারে। অধিকাংশ মানুষকে ‘অন্ধকারে’ রাখতে পারলেই ক্ষমতা চর্চার পথ সুগম হয়। অন্ধকার মানে তথ্যহীনতা, অন্ধকার মানে অধিকারহীনতা, অন্ধকার মানে প্রশ্নহীন সমাজ। একটি প্রশ্নহীন ‘মেনে নেওয়া’ সমাজ সৃষ্টি করা গেলে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার পথ প্রশস্ত হয়। জনগণের সামনে নেমে আসে অন্ধকার। শেক্সপিয়ার বলেছিলেন, “ক্ষমতা একবার সীমাহীন হলে কিছুই ঠিকমতো চলে না।” ‘কিছুই ঠিক মতো না চলার’ নামই অন্ধকার। এই অন্ধকারে ক্ষমতা শক্তিশালী হয় বটে; কিন্তু গণতন্ত্র মরে যায়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যামুয়েল হানটিংটন বলেছেন, “Power remains strong when it remains in the dark. Exposed to sunlight, it begins to evaporate.” জনগণকে অজ্ঞতায় অন্ধকারে রাখার ‘সামর্থ্যরে’ সমান্তরাল হলো ক্ষমতায় সীমা পরিসীমা। জনগণ যতো বেশি অন্ধকারে, ক্ষমতা ততো শক্তিশালী।
নোয়াম চমস্কি তার এক লেখায় বলেছেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষের সে দেশের ‘পলিসি মেকিং’ এ কোনো ভূমিকা নেই (নিউ এজ, আগস্ট ২০, ২০১৩)। বাংলাদেশে নি:সন্দেহে এই হার অনেক বেশি। অর্থাৎ এখানকার অধিকাংশ মানুষ অন্ধকারে। অন্ধকারে বাঁচে না গণতন্ত্র।
বাংলাদেশের জনগণকে অন্ধকারে রাখার উদাহরণ অনেক। বিদেশি রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তির পরে চুক্তি হয়। জনগণ সেই চুক্তির অন্তর্নিহিত ‘দেনা-পাওনার’ সামন্যই জানতে পারে। সুন্দরবনের রামপালে গড়ে ওঠে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতো বিরোধীতার পরেও রামপাল থেকে সড়ে না আসার কারণ সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার মূলে কে বা কারা আজো জানা যায়নি। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে অনেক চাপের মুখে তদন্ত করা হলেও কালোবৈশাখী ঝড়ের অন্ধকারের মতোই তার প্রতিবেদন হারিয়ে গেছে কোনো এক অন্ধকারে। আজও তা প্রকাশ করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জের রাব্বিকে কারা হত্যা করেছে আজও ধোঁয়াশা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর এতোগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারের চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য। তাদের ছোট্ট ছেলে মেঘ বড় হয়ে উঠছে বাব-মা’কে খুন করার কারণ না-জানার অন্ধকারকে সঙ্গী করেই। ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে কমপক্ষে ২৬৮টি গুমের ঘটনা ঘটেছে যেখানে ১৮৭ জন মানুষের এমনকি মৃতদেহও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের কী হলো, কেন হলো- কোনো উত্তর নেই। অন্ধকারেই কাঁটছে স্বজনদের সময়।
এই বাংলাদেশে তাহলে গণমাধ্যমের ভূমিকা কী? এখানে গণমাধ্যম কি সত্যিকারের ‘ওয়াচডগ’ হতে পেরেছে? গণতন্ত্রের উপর অন্ধকার নেমে এলে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণমাধ্যম আলো ছড়ানোর দায়িত্ব নিতে পারছে? সেটি যে ঠিকমতো পারছে না তার প্রমাণ মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান (১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬)। সুতরাং গণমাধ্যমকেও একপেশে দোষ দিলে চলবে না। গণমাধ্যম এবং তাতে কর্মরত সংবাদকর্মীরা এই সমাজ, এই সংস্কৃতি এবং এই রাজনীতির বৃত্তের বাইরের নন। সবকিছুকে বাদ দিয়ে, হুমায়ুন আজাদের ভাষায় ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে’ গেলে, শুধু গণমাধ্যমকেই ‘ধোয়া তুলসি পাতা’ ভেবে প্রত্যাশার পাহাড় রচনা করা অযৌক্তিক বিবেচিত হতে পারে। তবুও গণমাধ্যমকে অন্ধকার দূরীকরণে ভূমিকা রেখে যেতে হবে।
গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের পারস্পারিক সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতার জায়গাটি চাপমুক্ত রাখতে হবে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের স্বার্থেই। গণতন্ত্রে ‘অংশগ্রহণ’ না-করতে পারা মানুষজন ইতিমধ্যেই গণমাধ্যম-বিমুখ হতে শুরু করেছে। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম বাদ দিলে যা থাকে, তার নাম অন্ধকার। অন্ধকারই কি আমাদের নিয়তি?
লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কলাম লেখক
ই-মেইল: rafique.ruman@gmail.com
কিন্তু গণতন্ত্রের পাটাতন যে গণমাধ্যম, সেও যদি উন্নয়নের ‘বলী’ হয়, তখন সমাজে রাষ্ট্রে অন্ধকার নেমে আসে। সেই অন্ধকারে পথ হারায় সবাই। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় গণতন্ত্র নিজেই। গণতন্ত্র অন্ধকারে বাঁচে না।
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বছর দুয়েক আগে এমন একটি স্লোগানই নির্ধারণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দৈনিকটির ১৪০ বছরের ইতিহাসে কোনো অফিসিয়াল স্লোগান ছিল না। ২০১৬ সালে পত্রিকাটির মালিকানার পরিবর্তন হলে নতুন স্লোগানটি সংযুক্ত করা হয়। স্লোগানটি হলো “অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র (Democracy dies in darkness)।” এটি এমন সময়ে করা হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র তার ৪৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছে। ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে এবং ক্ষমতায় আসার পর থেকেও নানা কৌতুহল উদ্দীপক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো গণমাধ্যমের সমালোচনা। সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনায় মুখর ট্রাম্প কোনো রাখঢাক না রেখেই যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন। সাংবাদিকরা ‘অসৎ’, ‘এরা আমেরিকার জনগণের শত্রু’ সহ আরো নানা তীর্যক মন্তব্য করেছেন।
অনেকেই মনে করেছিলেন দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাটি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করেই তাদের নতুন স্লোগান প্রণয়ন করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এক বছর আগেই একটি সাক্ষাৎকারে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এর নতুন মালিক, যিনি আমাজনডটকম এরও প্রতিষ্ঠাতা, জেফারি বেজোস স্লোগানের কথাগুলো বলেছিলেন। ২০১৬ সালের ১৮ মে এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন পোস্ট এরই নির্বাহী সম্পাদক মার্টিন ব্যারন। সেখানে কথা প্রসঙ্গে বেজোস বলেছিলেন, “আমি মনে করি আমাদের অনেকেরই বিশ্বাস যে, অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র । তাই (গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য) কিছু প্রতিষ্ঠানকে (যেমন: গণমাধ্যম) আলো ছড়ানোর দায়িত্ব নিতে হয়।” ধারণা করা হয়, জেফারি বেজোস এর এই কথা থেকেই ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের নতুন স্লোগানটি নিয়ে নেয়- অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র
(Democracy dies in darkness)। যদিও বেজোস স্বীকার করেন, তিনি “অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র”- এটি তার নিজের কথা নয়। কথাটি শুনেছেন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক, বিখ্যাত অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বব উডওয়ার্ডের কাছ থেকে। উডওয়ার্ড তার সর্বশেষ বই দ্য লাস্ট অব দ্য প্রেসিডেন্টস মেন নিয়ে ২০১৫ সালে একটি প্রেজেনটেশন দেওয়ার সময় কথাটি বলেছিলেন যেখানে বেজোস উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু ১৯৭২ সালে ‘ওয়াটেরগেট স্ক্যান্ডাল’ রিপোর্ট করে আমেরিকার ৩৭তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পদত্যাগে বাধ্য করা উডওয়ার্ড জানান, Democracy dies in darkness ঠিক তার নিজের উক্তি নয়। এটি তিনি বেশ কয়েক বছর আগে একটি বিচারিক মতামতে শুনেছিলেন, যেখানে আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনী নিয়ে মতামত দেওয়া হয়। যদিও উডওয়ার্ড ঐ বিচারপতির নাম মনে করতে পারেননি। উডওয়ার্ড আরো জানান, “এটা (‘অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র’ কথাটি) অনেক আগের ব্যাপার। এটা প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে না। এটার মূল উদ্দেশ্য হলো এটা বলা যে, সরকারের গোপনীয় আচরণ বিপদজনক।” পরবর্তীতে বিচারপতির নাম জানা যায়। তিনি হলেন ডেমোন জে কেইথ। তিনি ‘ওয়ারেন্ট ছাড়া কারো কথা রেকর্ড করা যাবে না’ মর্মে একটি রুল দিতে গিয়ে ঐ কথাটি বলেছিলেন।
যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এই কথাটিই নিজেদের স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই স্লোগানটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অবশ্য স্লোগানটি নির্বাচন করার প্রক্রিয়া সহজ ছিল না। ওয়াশিংটন পোস্ট এর একটি বিশেষজ্ঞ দল সম্ভাব্য আরো পাঁচশত স্লোগান নিয়ে কাজ করে। শেষ বিচারে টিকে যায় এই স্লোগানটিই- “অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র।” আগেই বলা হয়েছে, ১৪০ বছরের ইতিহাসে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কোনো অফিসিয়াল স্লোগান ছিল না। বিভিন্ন সময় তারা কিছু বাণিজ্যিক স্লোগান দিলেও পুরো পত্রিকার জন্য অফিসিয়াল স্লোগান এই প্রথম।
ওয়াশিংটন পোস্ট যখন নতুন স্লোগান দিয়ে চারিদিকে হইচই ফেলে দিয়েছে, বসে থাকেনি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নিউ ইয়র্ক টাইমসও। তাদের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে “দ্য ট্রুথ” নামে একটি বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। বলা হয়, “সত্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। সত্য জানা কঠিন। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সত্য জানা এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” এখান থেকেই নিউ ইয়র্ক টাইমস এর নতুন স্লোগান নির্ধারিত হয়- “আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সত্য জানা এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ (The truth is more important nwo than ever)।”
ওয়াশিংটন পোস্ট এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস এর এই স্লোগান কাকতালীয়ভাবে হলেও এমন সময়ে আলোড়ন তুললো যখন ডোনাল্ড ট্র্যাম্প ক্ষমতায় এবং আমেরিকার গণতন্ত্র ও ভবিষ্যত নিয়ে অনেকেই নানামুখী বিতর্কে লিপ্ত। আমেরিকার প্রথম সারির পত্রিকাগুলো ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট না করার জন্য প্রকাশ্য প্রচারণা চালিয়েছিল। ওয়াশিংটন পোস্ট তো ২০ জন প্রতিবেদকই নিয়োজিত করেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য উদঘাটন করার জন্য। পোস্ট এর সহযোগী সম্পাদক বব উডওয়ার্ড প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “(ট্রাম্প সম্পর্কে) অনেক কিছুই জানা বাকি আছে। আমরা ২০ জন প্রতিবেদক নিয়োগ করেছি ট্রাম্পের জীবনের প্রতিটি বিষয়ের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য। এমনকি আমরা এ বিষয়ে একটি বই বের করারও পরিকল্পনা করছি।”
এতো কিছুর পরেও ট্র্যাম্পের বিজয় ঠেকানো যায়নি। ভূমিধ্বস বিজয় নিয়ে তিনি ক্ষমতায় বসেন। কিন্তু থেমে নেই গণমাধ্যম। ট্রাম্প যেমন গণমাধ্যমকে ধুয়ে দিচ্ছেন, গণমাধ্যমও তেমনি ট্রাম্পের ব্যাপারে অসহনশীল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যম ও সরকারের মধ্যে চলমান সম্পর্ক (নাকি বৈরিতা) কি তাহলে নতুন কোনো বার্তা দিচ্ছে? হঠাৎ করে প্রভাবশালী দুটি পত্রিকার ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সত্য’ নিয়ে এমন উঠে পড়ার পেছনের কারণ কী? আমেরিকার গণতন্ত্র কি আসলেই হুমকির মুখে পড়েছে? সেক্ষেত্রে জনগণ বেছে নিবে কোনটিকে, সরকার নাকি গণমাধ্যম? অবশ্য আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন বহু আগেই বলে গেছেন, “Were it left to me to decide whether we should have a government without newspapers, or newspapers without a government, I should not hesitate a moment to prefer the later.” সংবাদপত্রহীন সরকারের চেয়ে সরকারহীন সংবাদপত্র ভালো।
আমেরিকার এই অবস্থাকে ভূমিকা হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে পর্যালোচনা করাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য। বিশেষ করে “অন্ধকারে মরে যায় গণতন্ত্র”- এই স্লোগানের মর্মার্থ বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চায় বেশ জুঁতসইভাবে খাপ খেয়ে যায় বলে এই আলোচনা এখানে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।
বলা ভুল হবে না যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র শুরু থেকেই ক্ষমতামুখী শুধু নয়; ক্ষমতা-সর্বস্ব। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যেতে হবে এবং যে কোনো কিছুর বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে- এই ক্ষমতাকেন্দ্রিক চক্র থেকে আমাদের গণতন্ত্র বের হতে পারেনি। এখানকার রাজনীতিও সীমাহীন ক্ষমতার প্রতীক। দু:খজনক হলো- এই ক্ষমতার নাটাই থাকে গুটিকয়েক মানুষের হাতে।
বাকিরা শুধুই ক্ষমতাচর্চার নীরব দর্শক। তাদের বসবাস অন্ধকারে। অধিকাংশ মানুষকে ‘অন্ধকারে’ রাখতে পারলেই ক্ষমতা চর্চার পথ সুগম হয়। অন্ধকার মানে তথ্যহীনতা, অন্ধকার মানে অধিকারহীনতা, অন্ধকার মানে প্রশ্নহীন সমাজ। একটি প্রশ্নহীন ‘মেনে নেওয়া’ সমাজ সৃষ্টি করা গেলে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার পথ প্রশস্ত হয়। জনগণের সামনে নেমে আসে অন্ধকার। শেক্সপিয়ার বলেছিলেন, “ক্ষমতা একবার সীমাহীন হলে কিছুই ঠিকমতো চলে না।” ‘কিছুই ঠিক মতো না চলার’ নামই অন্ধকার। এই অন্ধকারে ক্ষমতা শক্তিশালী হয় বটে; কিন্তু গণতন্ত্র মরে যায়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যামুয়েল হানটিংটন বলেছেন, “Power remains strong when it remains in the dark. Exposed to sunlight, it begins to evaporate.” জনগণকে অজ্ঞতায় অন্ধকারে রাখার ‘সামর্থ্যরে’ সমান্তরাল হলো ক্ষমতায় সীমা পরিসীমা। জনগণ যতো বেশি অন্ধকারে, ক্ষমতা ততো শক্তিশালী।
নোয়াম চমস্কি তার এক লেখায় বলেছেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষের সে দেশের ‘পলিসি মেকিং’ এ কোনো ভূমিকা নেই (নিউ এজ, আগস্ট ২০, ২০১৩)। বাংলাদেশে নি:সন্দেহে এই হার অনেক বেশি। অর্থাৎ এখানকার অধিকাংশ মানুষ অন্ধকারে। অন্ধকারে বাঁচে না গণতন্ত্র।
বাংলাদেশের জনগণকে অন্ধকারে রাখার উদাহরণ অনেক। বিদেশি রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তির পরে চুক্তি হয়। জনগণ সেই চুক্তির অন্তর্নিহিত ‘দেনা-পাওনার’ সামন্যই জানতে পারে। সুন্দরবনের রামপালে গড়ে ওঠে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতো বিরোধীতার পরেও রামপাল থেকে সড়ে না আসার কারণ সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার মূলে কে বা কারা আজো জানা যায়নি। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে অনেক চাপের মুখে তদন্ত করা হলেও কালোবৈশাখী ঝড়ের অন্ধকারের মতোই তার প্রতিবেদন হারিয়ে গেছে কোনো এক অন্ধকারে। আজও তা প্রকাশ করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জের রাব্বিকে কারা হত্যা করেছে আজও ধোঁয়াশা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর এতোগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারের চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য। তাদের ছোট্ট ছেলে মেঘ বড় হয়ে উঠছে বাব-মা’কে খুন করার কারণ না-জানার অন্ধকারকে সঙ্গী করেই। ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে কমপক্ষে ২৬৮টি গুমের ঘটনা ঘটেছে যেখানে ১৮৭ জন মানুষের এমনকি মৃতদেহও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের কী হলো, কেন হলো- কোনো উত্তর নেই। অন্ধকারেই কাঁটছে স্বজনদের সময়।
এই বাংলাদেশে তাহলে গণমাধ্যমের ভূমিকা কী? এখানে গণমাধ্যম কি সত্যিকারের ‘ওয়াচডগ’ হতে পেরেছে? গণতন্ত্রের উপর অন্ধকার নেমে এলে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণমাধ্যম আলো ছড়ানোর দায়িত্ব নিতে পারছে? সেটি যে ঠিকমতো পারছে না তার প্রমাণ মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান (১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬)। সুতরাং গণমাধ্যমকেও একপেশে দোষ দিলে চলবে না। গণমাধ্যম এবং তাতে কর্মরত সংবাদকর্মীরা এই সমাজ, এই সংস্কৃতি এবং এই রাজনীতির বৃত্তের বাইরের নন। সবকিছুকে বাদ দিয়ে, হুমায়ুন আজাদের ভাষায় ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে’ গেলে, শুধু গণমাধ্যমকেই ‘ধোয়া তুলসি পাতা’ ভেবে প্রত্যাশার পাহাড় রচনা করা অযৌক্তিক বিবেচিত হতে পারে। তবুও গণমাধ্যমকে অন্ধকার দূরীকরণে ভূমিকা রেখে যেতে হবে।
গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের পারস্পারিক সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতার জায়গাটি চাপমুক্ত রাখতে হবে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের স্বার্থেই। গণতন্ত্রে ‘অংশগ্রহণ’ না-করতে পারা মানুষজন ইতিমধ্যেই গণমাধ্যম-বিমুখ হতে শুরু করেছে। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম বাদ দিলে যা থাকে, তার নাম অন্ধকার। অন্ধকারই কি আমাদের নিয়তি?
লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কলাম লেখক
ই-মেইল: rafique.ruman@gmail.com
No comments