বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয়করণ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে ভারতকে -দ্য ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্ট by অভিজিৎ চক্রবর্তী
৩০শে
ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরেছে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এটা এক অভূতপূর্ব বিষয়। তা সত্ত্বেও এই নির্বাচন যে
ব্যতিক্রমী তার আরো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।
এবারই প্রথম ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতার অধীনে থেকে নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচন করেছে এবং তাতে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করার কারণে বড় বিরোধী দলগুলো ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিরোধীদের মতে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারই হলো একমাত্র উপায়।
এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। অক্টোবরে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে বিরোধী দলগুলোর ফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে সুখ্যাতি আছে এমন কিছু বিরোধী নেতা এবার খুব বেশি সিরিয়াস ছিলেন। তারা সম্ভবত বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এখানে বলে রাখা ভালো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার দলের ধর্মনিরপেক্ষতাকে হালকা করে ফেলেছেন। কারণ, তিনি নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে ধর্মীয় গ্রুপ হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কওমি মাদরাসা ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেয়ার যে মূল দাবি তাদের তা তিনি মেনে নিয়েছেন।
প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস।
যখন পর্যবেক্ষকরা শেখ হাসিনার ক্ষমতায় ফেরাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে পারেন, তখন উপরে বর্ণিত প্রথমবারে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আঞ্চলিক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু হিসেবে দেখা যেতে পারে।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিস্তৃত গ্রহণযোগ্যতা (ওয়াইডস্প্রিড এক্সেপট্যাবলিটি) থেকে পিছিয়ে আছে, যেহেতু শুধু বিরোধী দলগুলোই নয়, কিন্তু একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একই সঙ্গে তারা হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার রিপোর্টের তদন্ত দাবি করেছে। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ৭টি আসনে বিজয়ী হয়েছে বিরোধীরা এবং এসব আসনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি বিজয় পেয়েছে। কিছু কিছু আসনে তারা বিস্ময়কর মার্জিনে জয় পেয়েছে, যার ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ওইসব এলাকা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিশ্রুত ভোটের ঘাঁটি বলে পরিচিত। যে দেশে অতীতে বার বার সামরিক হস্তক্ষেপ হয়েছে তেমন একটি দেশের স্থিতিশীল গণতন্ত্রে এসব ফ্যাক্টর হতে পারে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
সব রাজনৈতিক দল যখন ধর্মীয় দলগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে তখন একটি ইঙ্গিত মেলে, আওয়ামী লীগ ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সামাজিক আবহ শক্তিশালী ইসলামী পরিচয়ের দিকেই অব্যাহতভাবে ধাবিত। ধর্মনিরপেক্ষতায় ক্ষয় ধরায় এতে শুধু সংখ্যালঘুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমন নয়, একই সঙ্গে উজ্জীবিত ইসলামপন্থিরা তরুণদের মধ্যে তাদের ভাবধারা ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপক সুযোগ খুঁজবে। এসব বিষয় ভারতের জন্য নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। যদিও শেখ হাসিনা সন্ত্রাস মোকাবিলায় বেশ সক্রিয় তবু হেফাজতে ইসলামের মতো গ্রুপের সঙ্গে তার যুক্ত হওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি করে। কারণ, ওই গ্রুপটি এখন তাদের বাকি দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
উল্লসিত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এতে একটি ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। তাহলো, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক গতি নিয়ে পরিবর্তন হচ্ছে। অবকাঠামোগত প্রকল্প বাদেও চীন অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করছে। এর মধ্যে দুটি মিং-ক্লাসের সাবমেরিন রয়েছে। এতে বোঝা যায়, বাণিজ্যিক বিবেচনার বাইরেও ঢাকায় স্বার্থ আছে বেইজিংয়ের। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘেঁষা বঙ্গোপসাগরের পাড়ে বাংলাদেশের অবস্থান। এসব এলাকা নিয়ে চীনের বিরোধ রয়েছে। তাছাড়া কুনমিংয়ে তারা আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়াকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দহরম মহরমকে শুধুই শুভ হিসেবে নেয়া যেতে পারে না। এ ছাড়া চীনের রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে পারে পাকিস্তানের আইএসআই- এমন আশঙ্কাও এড়িয়ে দেয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় ভারতের জন্য শুভ সংবাদ। সহচরের জোরালো প্রবণতা দাবি রাখে বাস্তবভিত্তিক বিবেচনা ও নীতি মূল্যায়নের। নাগরিক সমাজে অস্থিরতার অপছায়া, ইসলামী কট্টরপন্থি ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিকট এই প্রতিবেশী দেশটিতে ইস্যু হতে পারে, যা ভারত অবজ্ঞা করার সামর্থ্য রাখে না।
(অভিজিত চক্রবর্তী ভারতের মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের সাবেক বিশেষ সচিব। দ্য ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
এবারই প্রথম ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতার অধীনে থেকে নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচন করেছে এবং তাতে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করার কারণে বড় বিরোধী দলগুলো ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিরোধীদের মতে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারই হলো একমাত্র উপায়।
এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। অক্টোবরে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে বিরোধী দলগুলোর ফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে সুখ্যাতি আছে এমন কিছু বিরোধী নেতা এবার খুব বেশি সিরিয়াস ছিলেন। তারা সম্ভবত বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এখানে বলে রাখা ভালো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার দলের ধর্মনিরপেক্ষতাকে হালকা করে ফেলেছেন। কারণ, তিনি নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে ধর্মীয় গ্রুপ হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কওমি মাদরাসা ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেয়ার যে মূল দাবি তাদের তা তিনি মেনে নিয়েছেন।
প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস।
যখন পর্যবেক্ষকরা শেখ হাসিনার ক্ষমতায় ফেরাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে পারেন, তখন উপরে বর্ণিত প্রথমবারে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আঞ্চলিক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু হিসেবে দেখা যেতে পারে।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিস্তৃত গ্রহণযোগ্যতা (ওয়াইডস্প্রিড এক্সেপট্যাবলিটি) থেকে পিছিয়ে আছে, যেহেতু শুধু বিরোধী দলগুলোই নয়, কিন্তু একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একই সঙ্গে তারা হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার রিপোর্টের তদন্ত দাবি করেছে। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ৭টি আসনে বিজয়ী হয়েছে বিরোধীরা এবং এসব আসনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি বিজয় পেয়েছে। কিছু কিছু আসনে তারা বিস্ময়কর মার্জিনে জয় পেয়েছে, যার ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ওইসব এলাকা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিশ্রুত ভোটের ঘাঁটি বলে পরিচিত। যে দেশে অতীতে বার বার সামরিক হস্তক্ষেপ হয়েছে তেমন একটি দেশের স্থিতিশীল গণতন্ত্রে এসব ফ্যাক্টর হতে পারে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
সব রাজনৈতিক দল যখন ধর্মীয় দলগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে তখন একটি ইঙ্গিত মেলে, আওয়ামী লীগ ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সামাজিক আবহ শক্তিশালী ইসলামী পরিচয়ের দিকেই অব্যাহতভাবে ধাবিত। ধর্মনিরপেক্ষতায় ক্ষয় ধরায় এতে শুধু সংখ্যালঘুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমন নয়, একই সঙ্গে উজ্জীবিত ইসলামপন্থিরা তরুণদের মধ্যে তাদের ভাবধারা ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপক সুযোগ খুঁজবে। এসব বিষয় ভারতের জন্য নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। যদিও শেখ হাসিনা সন্ত্রাস মোকাবিলায় বেশ সক্রিয় তবু হেফাজতে ইসলামের মতো গ্রুপের সঙ্গে তার যুক্ত হওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি করে। কারণ, ওই গ্রুপটি এখন তাদের বাকি দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
উল্লসিত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এতে একটি ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। তাহলো, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক গতি নিয়ে পরিবর্তন হচ্ছে। অবকাঠামোগত প্রকল্প বাদেও চীন অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করছে। এর মধ্যে দুটি মিং-ক্লাসের সাবমেরিন রয়েছে। এতে বোঝা যায়, বাণিজ্যিক বিবেচনার বাইরেও ঢাকায় স্বার্থ আছে বেইজিংয়ের। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘেঁষা বঙ্গোপসাগরের পাড়ে বাংলাদেশের অবস্থান। এসব এলাকা নিয়ে চীনের বিরোধ রয়েছে। তাছাড়া কুনমিংয়ে তারা আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়াকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দহরম মহরমকে শুধুই শুভ হিসেবে নেয়া যেতে পারে না। এ ছাড়া চীনের রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে পারে পাকিস্তানের আইএসআই- এমন আশঙ্কাও এড়িয়ে দেয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় ভারতের জন্য শুভ সংবাদ। সহচরের জোরালো প্রবণতা দাবি রাখে বাস্তবভিত্তিক বিবেচনা ও নীতি মূল্যায়নের। নাগরিক সমাজে অস্থিরতার অপছায়া, ইসলামী কট্টরপন্থি ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিকট এই প্রতিবেশী দেশটিতে ইস্যু হতে পারে, যা ভারত অবজ্ঞা করার সামর্থ্য রাখে না।
(অভিজিত চক্রবর্তী ভারতের মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের সাবেক বিশেষ সচিব। দ্য ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
No comments