বাবা তখন চট্টগ্রামে by বুলবন ওসমান
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাবা শওকত ওসমান
কলকাতা সরকারি কমার্স কলেজ থেকে অপশান দিয়ে যোগ দেন চট্টগ্রাম সরকারি
কমার্স কলেজে। তখন তার বয়স ৩০। পাতলা গড়ন, ঝাঁকড়া চুল, দেখতে যুবকই মনে
হতো। ১৯৫০ সালে দুই বাংলায় আবার বড় ধরনের দাঙ্গা বাধে, তাই মা ও আমরা পাঁচ
ভাইবোন নানাবাড়ি হাওড়া জেলার ঝামটিয়া গ্রাম থেকে চলে আসি চট্টগ্রামে। বাসা
নেয়া হয় চন্দনপুরায়। দারোগাবাড়ির কাছে। দোতলা বাড়ি, নাম রাধিকা ভবন, ঠিকানা
৩৪বি চন্দনপুরা। এটা সিরাজউদ্দৌলা রোডের কিছুটা ভেতরে। বাড়ির সামনে
শান-বাঁধান পুকুর। ঘাটের দুপাশে দুটি লিচুগাছ। বাঁপাশের গাছটার নাম
বোম্বাইয়া লিচু- এটি উঁচু জাতের। আঁটি ছোট, শাঁস বেশি, কাঁচা অবস্থায়
কিছুটা মিষ্টি, পাকলে অপূর্ব। অনেকটা স্ট্রবেরির মতো দেখতে। তবে গাঢ় লাল
হতো না, কিছুটা হালকা লাল। পরে আমরা দিনে কাক তাড়ান ছাড়াও রাত জেগে এ লিচু
পাহারা দিতাম, বাদুড় তাড়াতে। লিচুর মৌসুমে চট্টগ্রাম শহরে সব জায়গায়
দিন-রাত শোনা যেত গাছে বাঁধা টিন টানার শব্দ অথবা ফাটা বাঁশ বেঁধে ফটাস
ফটাস করে শব্দ তুলে কাক ও বাদুড় তাড়ান। বাদুড় তাড়ানোর জন্য রাতে গাছে
হারিকেনও বাঁধা হতো। চট্টগ্রাম শহর খুব লিচুগাছ সমৃদ্ধ।
১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে দুই বাংলার সংস্কৃতি সম্মেলন হয়। এ সময় বাবা ছিলেন অন্যতম আহ্বায়ক। চট্টগ্রামে সংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি তখন অন্যতম প্রাণপুরুষ। এ সম্মেলন নিয়ে দিন-রাত খাটা-খাটনি করেন। কলকাতা থেকে সলিল চৌধুরীর দল আসেন সঙ্গীত পরিবেশন করার জন্য। নাটকের দলও আসে।
বাবার কাছে চট্টগ্রামের বুদ্ধিজীবীদের অনেকে আসতেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আবুল ফজল চাচা। তিনি কখনও কখনও মেয়ে মমতাজকে সঙ্গে নিয়ে আসতেন। আরও যারা নিয়মিত আসতেন তাদের মধ্যে ছিলেন সাহিত্যিক শ্রীমোপাল বিশ্বাস কাকা। ছিলেন অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, আবু সুফিয়ান, আহমদ হোসেন, জালাল উদ্দীন প্রমুখ। ইদ্রিস চাচা বাড়িতে ঢুকেই বলতেন, ভেউ... অর্থাৎ ভাইকে আদর করে এভাবে ডাকতেন।
চন্দনপুরায় একজন দুর্ধর্ষ গুণ্ডা-প্রকৃতির যুবক ছিল। ডাকনাম দুদু, ভালো নাম গোলাম নবী। মধ্যম উচ্চতার এ যুবককে বাবা একসময় ডেকে ভালোভাবে বোঝায় এ-জীবনধারা ছেড়ে দিতে। শুধু উপদেশ নয়, বাবা তাকে ন্যাশনাল ব্যাংকে পিয়নের চাকরিও নিয়ে দেন। এরপর থেকে দুদুভাই সব খারাপ কাজ ছেড়ে দেন এবং তিনি বাবাকে আব্বা সম্বোধন করতেন। বয়সে মাত্র আট-১০ বছরের পার্থক্য দুজনের। দুদুভাই এক সময় সস্ত্রীক আমাদের চন্দনপুরার বাড়িতেও কিছুদিন ছিলেন। দুদুভাই ছিলেন আমাদের বড় ভাইয়ের মতো।
১৯৫০ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে কাগমারি সংস্কৃতি সম্মেলন হয়। তখন আমাদের বাসার নিচতলায় একেবারে সামনের বসার ঘরে মহড়া হতো। বাবার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক দল ঢাকা যাবে। দুতিন ঘণ্টা করে মহড়া হতো, বিকাল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত। আসতেন শিল্পী চিরঞ্জীব শর্মা, তার ভাইঝি দীপ্তি, মালেকা আজিম, কামেলা শরাফী, সুচরিতদা, অচিন্ত বাবু, ননী গোপাল বাবু, নৃত্যশিল্পী নিতাই ও শঙ্কর বাবু। এক মাস ধরে চলে মহড়া। চট্টগ্রামের দল খুব সুনাম কেনে সম্মেলনে। মালকা বানুর দেশে রে... চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গীতিকাব্যের এই সুর এখনও কানে লেগে আছে। চট্টগ্রামে থাকাকালীন সন্ধ্যার পর বাবা এশরাজ বাজাতেন। তার একটা খাতা ছিল- যাতে নানা রাগের গৎ-এর স্বরলিপি লেখা ছিল। এটা দেখে দেখে গৎগুলো তুলতেন। আমাকেও বাজনা শেখান। স্বরলিপি দেখে রবীন্দ্রসঙ্গীত তুলতেন। বাবার এ খাতাটা ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হারিয়ে যায়। এটা তার সঙ্গীতচর্চার একটা দলিল হিসেবে ছিল। আজ খুব আফসোস হয় খাতাটা হারিয়ে যাওয়ায়।
চট্টগ্রামে আমার ছোটভাই জাঁনেসার ওসমান জন্মলাভ করে। আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পেছনের হাসপাতালে ওর জন্ম। আমরা সবাই দেখতে গেছি- বাবা জাঁনেসারের হাত তুলে নিয়ে বললেন, দেখেছ, হাতের আঙুলগুলো কি আর্টিস্টিক। সেই জাঁনেসার আজ জীবনের ছটি দশক পার করে বাবার স্মৃতি রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাকি ভাই-বোনদের ওপর বয়স ভর করেছে তাই এখন দায়িত্বটা ওর।
এলো ১৯৫৮ সাল। দেশে আইউব খান মার্শাল ল জারি করলেন। সব বামপন্থী কর্মীরা গা ঢাকা দিতে বাধ্য হলেন। অনেকে হলেন অন্তরীণ। দেশ ছাড়তেও বাধ্য হলেন কেউ কেউ। যেমন গোপাল বিশ্বাস কাকা নীরবে দেশ ছেড়ে গেলেন। পশ্চিমবঙ্গের হুগলির শ্রীরামপুরে তিনি স্থিত হন। কাকি অর্চনা বিশ্বাস বিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগ দিয়ে সংসারের হাল ধরেন। সম্প্রতি গোপাল কাকা দেহত্যাগ করেছেন। মনে পড়ে আমাদের চন্দনপুরায় এলে বাবা না থাকলে বাজাতেন বাবার এশরাজটা নিয়ে। বসে বসে গৎ বাজাতেন। আমরা শুনতাম। আমাদের গানও শেখাতেন...
মার্শাল ল জারির কয়েক দিন পরই বাবার ডাক পড়ল চট্টগ্রামের কমিশনারের কাছ থেকে। বাবার একটা স্যুট ছিল, ওটা পরে বেরিয়ে গেলেন। বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পর দেখি দোতলায় বাবার কামরায় বসে মা কাঁদছেন। বাবা কেন সকালে স্যুট পরে বেরিয়ে গেলেন তখনও জানি না। আমি তখন চট্টগ্রাম কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। মা আমাকে খবরটা দিলেন। আমিও খুব চিন্তিত হয়ে পড়ি। পরিবারে কি ভয়াবহ এক বিপর্যয় নেমে আসতে যাচ্ছে? খুব উৎকণ্ঠায় থাকি। অন্যরা জানে না।
দুঘণ্টা পর বাবা ফিরলেন। তাকে খুব স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। পরে মার কাছ থেকে জানতে পারি চট্টগ্রামের কমিশনার ভদ্রলোক ইন্ডিয়ার হায়দ্রাবাদের লোক। তিনি বাবাকে খুব সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন। বাবাকে এও বলেছেন, দেশ ছেড়ে এসেছেন, নিজ পরিবার নিয়ে থাকেন, এখানে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনও নেই... তাই যেন সতর্ক থাকেন। এর বেশি কিছু বলেননি। হ্যাঁ, বাবা সতর্ক ছিলেন এবং পরে এর ফল হিসেবে প্রকাশিত হয় তার নাট্যরূপী উপন্যাস ক্রীতদাসের হাসি। আর আমরা চট্টগ্রামে তার সঙ্গে যোগ দেয়ার আগে তিনি যে সময়টুকু একা ছিলেন সে সময় শহর ও শহরতলীর আনাচে-কানাচে প্রতিদিন ঘুরে বেড়িয়েছেন, তার ফলে বেরোয় স্কচধর্মী সব গল্প যা নেত্রপথ নামক গল্পগ্রন্থে সংকলিত।
সীমান্ত পত্রিকা বের করতেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী চাচা। তিনি ছিলেন বামপন্থী সক্রিয়কর্মী, মার্শাল ল জারি হওয়ার পর তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। বাবা একদিন বললেন, মাহবুবের সঙ্গে দেখা হল, দাড়ি রেখেছে। চট করে চেনা যায় না। তারপর আরও বললেন, মাহবুব জানাল, পুলিশ তাকে বলেছে, আমরা জানি আপনি দাড়ি রেখেছেন... আসলে মাহবুব চাচা এতো জনপ্রিয় ছিলেন যে ওকে কেউ অ্যারেস্ট করতে চাইত না।
ঢাকায় দীর্ঘজীবন কাটানোর পরও বাবা বলতেন, চিটাগাং আমার সেকেন্ড হোম। চট্টগ্রাম ছিল তার অতি প্রিয় জায়গা। ৩৪বি চন্দনপুরার বাড়িটি যদি শওকত ওসমান স্মৃতি হিসেবে রাখা যেত, অতি চমৎকার একটি ঘটনা ঘটত! এক যুগ তিনি চট্টগ্রামের সংস্কৃতি মণ্ডলে অনেক কিছু দিয়েছেন, আবার চট্টগ্রামও তাকে অনেক দিয়েছে। মনে পড়ে ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় গুলি চললে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী সব বিহারিদের পর্যন্ত ডেকে ডেকে শোনাতেন দেখো, ঢাকা যে পুলিশ গুলি চালায়া, বহুত স্টুডেন্ট মারা গিয়া আওর ঘায়েল হুয়া। তাকে অস্থির হয়ে পাঁয়চারি করতে দেখেছি। এর প্রতিবাদে পরদিন চট্টগ্রাম কলেজের নেতৃত্বে আমরা এম.ই. স্কুল ও কাজেম আলী স্কুলের ছাত্ররা বিরাট মিছিল করে সারা শহর ঘুরেছি। কোনো বাধা সে দিন ছাত্ররা মানেনি। সব ছাত্র তখন আগুনের মতো জ্বলছে।
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় ছিল ডাক্তার হাশেম চাচা আর ইউসুফ চাচার চেম্বার। তারা ছিলেন আমাদের গৃহচিকিৎসকের মতো। কিছু হলেই আমরা এ দুই চাচার চেম্বারে হাজির হতাম। কোনোদিন ফি দিতে হয়নি।
সব সময় ওষুধ কিনতাম লালদীঘির পাশে অবস্থিত পপুলার ফার্মেসি থেকে। ওখানে প্রতুল কাকা সব ওষুধ ঠিকঠাক করে হাতে দিতেন। চট্টগ্রামে বাবা গল্প ও নাটকের বই নিজের খরচে ছাপেন : জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প এবং বাগদাদের কবি। ঠিক মনে পড়ছে না সম্ভবত কোহিনুর ইলেকট্রিক প্রেসে ছাপা হয়েছিল। ইঞ্জিনিয়ার খালেক চাচা ছিলেন এ ছাপাখানার স্বত্বাধিকারী। সোনালি বিমের চশমা পরতেন। মধ্যম উচ্চতার ফর্সা চেহারা... এখনও চোখের সামনে ভাসে। তার ছেলে আবদুল মালেক ছিল আমার সহপাঠী।
এম.ই. স্কুল আর গুরু ট্রেনিং স্কুলের (তখন নাম ছিল নর্মাল স্কুল) সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন বগুড়ার জসীমউদ্দীন চাচা। ছুটির দিনে তার বাড়িতে আমরা তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে হই-হুল্লোড় করে অনেক বছর কাটিয়েছি। সকালে ওবাসায় গেলে গরুর পায়ার স্যুপ ছিল বরাদ্দ। সত্যি বলতে কি বাবার কারণে চট্টগ্রাম আমাদের সব ভাই-বোনেরও সেকেন্ড হোম হয়ে গেছে। পঞ্চাশের দশকের চট্টগ্রাম তখন ছিল স্বপ্নের দেশ। গণি সওদাগরের বেকারির দুআনার পেস্ট্রি ছিল অমৃততুল্য। এ বেকারির বেলা বিস্কুট ছিল আমাদের আর এক আকর্ষণের খাবার। বোষ ব্রাদার্সের লবঙ্গ লতিফা ছিল অন্যতম সেরা মিষ্টি। দুআনা দামের মঙ্গোলিয়া ও প্যারাডাইস আইসক্রিম ছিল সবচেয়ে লোভনীয়। বাবার কারণে চট্টগ্রামের সব বড় বড় লোকের স্নেহ পেয়েছি আমরা। এদের মধ্যে ছিলেন ভাষাবিদ ড. এনামুল হক, ইন্স্যুরেন্সের সামাদ চাচা, অধ্যাপক ওমদাতুল চাচা, ন্যাপ নেতা হারুন চৌধুরী প্রমুখ। চন্দনপুরায় ছিলেন কবিরাজ ননী গোপালবাবু। তিনি বেহালা বাজাতেন। বাবার সঙ্গে ছিল খুব হৃদ্যতা। তার কাছে মাঝে মাঝে যেতাম গান শিখতে। তিনি একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখিয়েছিলেন, খরবায়ু বয় বেগে, চারদিক ছায় মেঘে... চট্টগ্রামের অন্যতম স্বনামধন্য সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুবুল আলমের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচয় হয়নি, কিন্তু তার সহোদর কবি ওহিদুল আলমের সঙ্গে ভালো ঘনিষ্ঠতা ছিল। এমনকি স্বাধীনতার পর ঢাকায় আমার সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন, একটি কিশোর উপন্যাস ছাপার ব্যাপারে।
সাহিত্যিক মাহবুবুল আলমের সঙ্গে সরাসরি পরিচয় না থাকলেও তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সবিহ্উল আলমের নাম শুনেছি ছোট চাচা শিল্পী জিলানির মাধ্যমে। আবুল ফজল সাহেবের ছেলে আবুল মনজুর আমার সহপাঠী। সবিহ্উল, মনজুর আর আমি তিনজনই সমবয়সী। সবিহ্উলের সঙ্গে পরে ঢাকায় আলাপ। ওদের দেখলেও আমাদের চট্টগ্রামের জীবনের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে বাবার কথা। তার কারণেই সবার সঙ্গলাভ। মনজুরের ছোট ভাই আবুল মনসুর চারুকলায় আমার প্রত্যক্ষ ছাত্র।
চন্দনপুরার বাসার পেছনে ছিল চাকতাই খাল। অনেক বাঁশ বেয়ে নিয়ে যেত বাঁশ ব্যবসায়ীরা। জোয়ারের সময় এ বাঁশ চকবাজারের অভিমুখে যাত্রা করত। ভাটার সময় বাঁশ সব নদীতে চলে যেত। দরকার হলে আমরা মাঝে মাঝে দুএকটা বাঁশ চুরি করতাম। অবশ্য বাবাকে না জানিয়ে।
বাসা আর খালের মাঝখানে একটা ছোট মাঠ ছিল। আমরা শীতকালে এখানে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। বাবা মাঝে মাঝে যোগ দিতেন এবং ভূমিকা নিতেন কোচের। ভালো ব্যাডমিন্টন খেলতেন। খেলার প্রতি তার ছিল সমান আকর্ষণ ও পারদর্শিতা। খুব ভালো খেলতেন ক্যারামবোড। তাস ও দাবাতেও ছিলেন দক্ষ। মোটামুটি সব রকম ইনডোর গেমে তার উৎসাহ ছিল প্রবল। ছেলেবেলায় জাবলসিংহপুরে খেলতেন চিকে বা দাঁড়িয়াবান্ধা। আর সারা গ্রামে একটি ছিল ক্যারামবোড আর সেটি ছিল বাবার।
১৯৫৮ সালে বাবা ঢাকা কলেজে বদলি হয়ে এলেন। তার একবছর পর আমি আইএ পাস করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হওয়ার জন্য আমাকেও আসতে হল ঢাকায়। এবার আমাদের জীবনের চট্টগ্রাম পর্বের সমাপ্তির সময় এসে গেল। ১৯৬০ সালের জানুয়ারিতে পুরো পরিবার ঢাকায় সোমেনবাগে আগে কেনা জায়গায় অর্ধসমাপ্ত ঘরেই শুরু হল বসবাস। ছোটদের স্কুল-কলেজের ভর্তির ব্যাপার আছে তাই আর চট্টগ্রামে থাকা গেল না। বাবার একযুগের চট্টগ্রাম বাসের এখানেই সমাপ্তি। বাকি আমাদেরও তাই।
অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় রাজধানী ঢাকা আজ প্রায় অচল মহানগর। একইভাবে আমাদের দেখা সেই পঞ্চাশের দশকের স্বপ্নের শহর চট্টগ্রাম আজ টিলা কাটার ফলে শরীরে কুষ্ঠরোগ সৃষ্টি করেছে। দুই টিলার মাঝে ঝরনা ধারা তির তির করে বয়ে চলে অবিরাম, আজ এসবই হুমকির মুখে। বাবা ইহলোক ছেড়ে গেছেন পনের-ষোল বছর, তার কথা মনে পড়লে যেমন কষ্ট হয়, তেমনি কষ্ট হয় আমাদের স্বপ্নের শহর চট্টগ্রামের শ্রীহীন পরিবেশ দেখে।
১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে দুই বাংলার সংস্কৃতি সম্মেলন হয়। এ সময় বাবা ছিলেন অন্যতম আহ্বায়ক। চট্টগ্রামে সংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি তখন অন্যতম প্রাণপুরুষ। এ সম্মেলন নিয়ে দিন-রাত খাটা-খাটনি করেন। কলকাতা থেকে সলিল চৌধুরীর দল আসেন সঙ্গীত পরিবেশন করার জন্য। নাটকের দলও আসে।
বাবার কাছে চট্টগ্রামের বুদ্ধিজীবীদের অনেকে আসতেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আবুল ফজল চাচা। তিনি কখনও কখনও মেয়ে মমতাজকে সঙ্গে নিয়ে আসতেন। আরও যারা নিয়মিত আসতেন তাদের মধ্যে ছিলেন সাহিত্যিক শ্রীমোপাল বিশ্বাস কাকা। ছিলেন অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, আবু সুফিয়ান, আহমদ হোসেন, জালাল উদ্দীন প্রমুখ। ইদ্রিস চাচা বাড়িতে ঢুকেই বলতেন, ভেউ... অর্থাৎ ভাইকে আদর করে এভাবে ডাকতেন।
চন্দনপুরায় একজন দুর্ধর্ষ গুণ্ডা-প্রকৃতির যুবক ছিল। ডাকনাম দুদু, ভালো নাম গোলাম নবী। মধ্যম উচ্চতার এ যুবককে বাবা একসময় ডেকে ভালোভাবে বোঝায় এ-জীবনধারা ছেড়ে দিতে। শুধু উপদেশ নয়, বাবা তাকে ন্যাশনাল ব্যাংকে পিয়নের চাকরিও নিয়ে দেন। এরপর থেকে দুদুভাই সব খারাপ কাজ ছেড়ে দেন এবং তিনি বাবাকে আব্বা সম্বোধন করতেন। বয়সে মাত্র আট-১০ বছরের পার্থক্য দুজনের। দুদুভাই এক সময় সস্ত্রীক আমাদের চন্দনপুরার বাড়িতেও কিছুদিন ছিলেন। দুদুভাই ছিলেন আমাদের বড় ভাইয়ের মতো।
১৯৫০ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে কাগমারি সংস্কৃতি সম্মেলন হয়। তখন আমাদের বাসার নিচতলায় একেবারে সামনের বসার ঘরে মহড়া হতো। বাবার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক দল ঢাকা যাবে। দুতিন ঘণ্টা করে মহড়া হতো, বিকাল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত। আসতেন শিল্পী চিরঞ্জীব শর্মা, তার ভাইঝি দীপ্তি, মালেকা আজিম, কামেলা শরাফী, সুচরিতদা, অচিন্ত বাবু, ননী গোপাল বাবু, নৃত্যশিল্পী নিতাই ও শঙ্কর বাবু। এক মাস ধরে চলে মহড়া। চট্টগ্রামের দল খুব সুনাম কেনে সম্মেলনে। মালকা বানুর দেশে রে... চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গীতিকাব্যের এই সুর এখনও কানে লেগে আছে। চট্টগ্রামে থাকাকালীন সন্ধ্যার পর বাবা এশরাজ বাজাতেন। তার একটা খাতা ছিল- যাতে নানা রাগের গৎ-এর স্বরলিপি লেখা ছিল। এটা দেখে দেখে গৎগুলো তুলতেন। আমাকেও বাজনা শেখান। স্বরলিপি দেখে রবীন্দ্রসঙ্গীত তুলতেন। বাবার এ খাতাটা ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হারিয়ে যায়। এটা তার সঙ্গীতচর্চার একটা দলিল হিসেবে ছিল। আজ খুব আফসোস হয় খাতাটা হারিয়ে যাওয়ায়।
চট্টগ্রামে আমার ছোটভাই জাঁনেসার ওসমান জন্মলাভ করে। আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পেছনের হাসপাতালে ওর জন্ম। আমরা সবাই দেখতে গেছি- বাবা জাঁনেসারের হাত তুলে নিয়ে বললেন, দেখেছ, হাতের আঙুলগুলো কি আর্টিস্টিক। সেই জাঁনেসার আজ জীবনের ছটি দশক পার করে বাবার স্মৃতি রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাকি ভাই-বোনদের ওপর বয়স ভর করেছে তাই এখন দায়িত্বটা ওর।
এলো ১৯৫৮ সাল। দেশে আইউব খান মার্শাল ল জারি করলেন। সব বামপন্থী কর্মীরা গা ঢাকা দিতে বাধ্য হলেন। অনেকে হলেন অন্তরীণ। দেশ ছাড়তেও বাধ্য হলেন কেউ কেউ। যেমন গোপাল বিশ্বাস কাকা নীরবে দেশ ছেড়ে গেলেন। পশ্চিমবঙ্গের হুগলির শ্রীরামপুরে তিনি স্থিত হন। কাকি অর্চনা বিশ্বাস বিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগ দিয়ে সংসারের হাল ধরেন। সম্প্রতি গোপাল কাকা দেহত্যাগ করেছেন। মনে পড়ে আমাদের চন্দনপুরায় এলে বাবা না থাকলে বাজাতেন বাবার এশরাজটা নিয়ে। বসে বসে গৎ বাজাতেন। আমরা শুনতাম। আমাদের গানও শেখাতেন...
মার্শাল ল জারির কয়েক দিন পরই বাবার ডাক পড়ল চট্টগ্রামের কমিশনারের কাছ থেকে। বাবার একটা স্যুট ছিল, ওটা পরে বেরিয়ে গেলেন। বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পর দেখি দোতলায় বাবার কামরায় বসে মা কাঁদছেন। বাবা কেন সকালে স্যুট পরে বেরিয়ে গেলেন তখনও জানি না। আমি তখন চট্টগ্রাম কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। মা আমাকে খবরটা দিলেন। আমিও খুব চিন্তিত হয়ে পড়ি। পরিবারে কি ভয়াবহ এক বিপর্যয় নেমে আসতে যাচ্ছে? খুব উৎকণ্ঠায় থাকি। অন্যরা জানে না।
দুঘণ্টা পর বাবা ফিরলেন। তাকে খুব স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। পরে মার কাছ থেকে জানতে পারি চট্টগ্রামের কমিশনার ভদ্রলোক ইন্ডিয়ার হায়দ্রাবাদের লোক। তিনি বাবাকে খুব সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন। বাবাকে এও বলেছেন, দেশ ছেড়ে এসেছেন, নিজ পরিবার নিয়ে থাকেন, এখানে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনও নেই... তাই যেন সতর্ক থাকেন। এর বেশি কিছু বলেননি। হ্যাঁ, বাবা সতর্ক ছিলেন এবং পরে এর ফল হিসেবে প্রকাশিত হয় তার নাট্যরূপী উপন্যাস ক্রীতদাসের হাসি। আর আমরা চট্টগ্রামে তার সঙ্গে যোগ দেয়ার আগে তিনি যে সময়টুকু একা ছিলেন সে সময় শহর ও শহরতলীর আনাচে-কানাচে প্রতিদিন ঘুরে বেড়িয়েছেন, তার ফলে বেরোয় স্কচধর্মী সব গল্প যা নেত্রপথ নামক গল্পগ্রন্থে সংকলিত।
সীমান্ত পত্রিকা বের করতেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী চাচা। তিনি ছিলেন বামপন্থী সক্রিয়কর্মী, মার্শাল ল জারি হওয়ার পর তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। বাবা একদিন বললেন, মাহবুবের সঙ্গে দেখা হল, দাড়ি রেখেছে। চট করে চেনা যায় না। তারপর আরও বললেন, মাহবুব জানাল, পুলিশ তাকে বলেছে, আমরা জানি আপনি দাড়ি রেখেছেন... আসলে মাহবুব চাচা এতো জনপ্রিয় ছিলেন যে ওকে কেউ অ্যারেস্ট করতে চাইত না।
ঢাকায় দীর্ঘজীবন কাটানোর পরও বাবা বলতেন, চিটাগাং আমার সেকেন্ড হোম। চট্টগ্রাম ছিল তার অতি প্রিয় জায়গা। ৩৪বি চন্দনপুরার বাড়িটি যদি শওকত ওসমান স্মৃতি হিসেবে রাখা যেত, অতি চমৎকার একটি ঘটনা ঘটত! এক যুগ তিনি চট্টগ্রামের সংস্কৃতি মণ্ডলে অনেক কিছু দিয়েছেন, আবার চট্টগ্রামও তাকে অনেক দিয়েছে। মনে পড়ে ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় গুলি চললে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী সব বিহারিদের পর্যন্ত ডেকে ডেকে শোনাতেন দেখো, ঢাকা যে পুলিশ গুলি চালায়া, বহুত স্টুডেন্ট মারা গিয়া আওর ঘায়েল হুয়া। তাকে অস্থির হয়ে পাঁয়চারি করতে দেখেছি। এর প্রতিবাদে পরদিন চট্টগ্রাম কলেজের নেতৃত্বে আমরা এম.ই. স্কুল ও কাজেম আলী স্কুলের ছাত্ররা বিরাট মিছিল করে সারা শহর ঘুরেছি। কোনো বাধা সে দিন ছাত্ররা মানেনি। সব ছাত্র তখন আগুনের মতো জ্বলছে।
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় ছিল ডাক্তার হাশেম চাচা আর ইউসুফ চাচার চেম্বার। তারা ছিলেন আমাদের গৃহচিকিৎসকের মতো। কিছু হলেই আমরা এ দুই চাচার চেম্বারে হাজির হতাম। কোনোদিন ফি দিতে হয়নি।
সব সময় ওষুধ কিনতাম লালদীঘির পাশে অবস্থিত পপুলার ফার্মেসি থেকে। ওখানে প্রতুল কাকা সব ওষুধ ঠিকঠাক করে হাতে দিতেন। চট্টগ্রামে বাবা গল্প ও নাটকের বই নিজের খরচে ছাপেন : জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প এবং বাগদাদের কবি। ঠিক মনে পড়ছে না সম্ভবত কোহিনুর ইলেকট্রিক প্রেসে ছাপা হয়েছিল। ইঞ্জিনিয়ার খালেক চাচা ছিলেন এ ছাপাখানার স্বত্বাধিকারী। সোনালি বিমের চশমা পরতেন। মধ্যম উচ্চতার ফর্সা চেহারা... এখনও চোখের সামনে ভাসে। তার ছেলে আবদুল মালেক ছিল আমার সহপাঠী।
এম.ই. স্কুল আর গুরু ট্রেনিং স্কুলের (তখন নাম ছিল নর্মাল স্কুল) সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন বগুড়ার জসীমউদ্দীন চাচা। ছুটির দিনে তার বাড়িতে আমরা তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে হই-হুল্লোড় করে অনেক বছর কাটিয়েছি। সকালে ওবাসায় গেলে গরুর পায়ার স্যুপ ছিল বরাদ্দ। সত্যি বলতে কি বাবার কারণে চট্টগ্রাম আমাদের সব ভাই-বোনেরও সেকেন্ড হোম হয়ে গেছে। পঞ্চাশের দশকের চট্টগ্রাম তখন ছিল স্বপ্নের দেশ। গণি সওদাগরের বেকারির দুআনার পেস্ট্রি ছিল অমৃততুল্য। এ বেকারির বেলা বিস্কুট ছিল আমাদের আর এক আকর্ষণের খাবার। বোষ ব্রাদার্সের লবঙ্গ লতিফা ছিল অন্যতম সেরা মিষ্টি। দুআনা দামের মঙ্গোলিয়া ও প্যারাডাইস আইসক্রিম ছিল সবচেয়ে লোভনীয়। বাবার কারণে চট্টগ্রামের সব বড় বড় লোকের স্নেহ পেয়েছি আমরা। এদের মধ্যে ছিলেন ভাষাবিদ ড. এনামুল হক, ইন্স্যুরেন্সের সামাদ চাচা, অধ্যাপক ওমদাতুল চাচা, ন্যাপ নেতা হারুন চৌধুরী প্রমুখ। চন্দনপুরায় ছিলেন কবিরাজ ননী গোপালবাবু। তিনি বেহালা বাজাতেন। বাবার সঙ্গে ছিল খুব হৃদ্যতা। তার কাছে মাঝে মাঝে যেতাম গান শিখতে। তিনি একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখিয়েছিলেন, খরবায়ু বয় বেগে, চারদিক ছায় মেঘে... চট্টগ্রামের অন্যতম স্বনামধন্য সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুবুল আলমের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচয় হয়নি, কিন্তু তার সহোদর কবি ওহিদুল আলমের সঙ্গে ভালো ঘনিষ্ঠতা ছিল। এমনকি স্বাধীনতার পর ঢাকায় আমার সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন, একটি কিশোর উপন্যাস ছাপার ব্যাপারে।
সাহিত্যিক মাহবুবুল আলমের সঙ্গে সরাসরি পরিচয় না থাকলেও তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সবিহ্উল আলমের নাম শুনেছি ছোট চাচা শিল্পী জিলানির মাধ্যমে। আবুল ফজল সাহেবের ছেলে আবুল মনজুর আমার সহপাঠী। সবিহ্উল, মনজুর আর আমি তিনজনই সমবয়সী। সবিহ্উলের সঙ্গে পরে ঢাকায় আলাপ। ওদের দেখলেও আমাদের চট্টগ্রামের জীবনের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে বাবার কথা। তার কারণেই সবার সঙ্গলাভ। মনজুরের ছোট ভাই আবুল মনসুর চারুকলায় আমার প্রত্যক্ষ ছাত্র।
চন্দনপুরার বাসার পেছনে ছিল চাকতাই খাল। অনেক বাঁশ বেয়ে নিয়ে যেত বাঁশ ব্যবসায়ীরা। জোয়ারের সময় এ বাঁশ চকবাজারের অভিমুখে যাত্রা করত। ভাটার সময় বাঁশ সব নদীতে চলে যেত। দরকার হলে আমরা মাঝে মাঝে দুএকটা বাঁশ চুরি করতাম। অবশ্য বাবাকে না জানিয়ে।
বাসা আর খালের মাঝখানে একটা ছোট মাঠ ছিল। আমরা শীতকালে এখানে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। বাবা মাঝে মাঝে যোগ দিতেন এবং ভূমিকা নিতেন কোচের। ভালো ব্যাডমিন্টন খেলতেন। খেলার প্রতি তার ছিল সমান আকর্ষণ ও পারদর্শিতা। খুব ভালো খেলতেন ক্যারামবোড। তাস ও দাবাতেও ছিলেন দক্ষ। মোটামুটি সব রকম ইনডোর গেমে তার উৎসাহ ছিল প্রবল। ছেলেবেলায় জাবলসিংহপুরে খেলতেন চিকে বা দাঁড়িয়াবান্ধা। আর সারা গ্রামে একটি ছিল ক্যারামবোড আর সেটি ছিল বাবার।
১৯৫৮ সালে বাবা ঢাকা কলেজে বদলি হয়ে এলেন। তার একবছর পর আমি আইএ পাস করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হওয়ার জন্য আমাকেও আসতে হল ঢাকায়। এবার আমাদের জীবনের চট্টগ্রাম পর্বের সমাপ্তির সময় এসে গেল। ১৯৬০ সালের জানুয়ারিতে পুরো পরিবার ঢাকায় সোমেনবাগে আগে কেনা জায়গায় অর্ধসমাপ্ত ঘরেই শুরু হল বসবাস। ছোটদের স্কুল-কলেজের ভর্তির ব্যাপার আছে তাই আর চট্টগ্রামে থাকা গেল না। বাবার একযুগের চট্টগ্রাম বাসের এখানেই সমাপ্তি। বাকি আমাদেরও তাই।
অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় রাজধানী ঢাকা আজ প্রায় অচল মহানগর। একইভাবে আমাদের দেখা সেই পঞ্চাশের দশকের স্বপ্নের শহর চট্টগ্রাম আজ টিলা কাটার ফলে শরীরে কুষ্ঠরোগ সৃষ্টি করেছে। দুই টিলার মাঝে ঝরনা ধারা তির তির করে বয়ে চলে অবিরাম, আজ এসবই হুমকির মুখে। বাবা ইহলোক ছেড়ে গেছেন পনের-ষোল বছর, তার কথা মনে পড়লে যেমন কষ্ট হয়, তেমনি কষ্ট হয় আমাদের স্বপ্নের শহর চট্টগ্রামের শ্রীহীন পরিবেশ দেখে।
No comments