শিশু নির্যাতন-জিন তাড়ানোর নামে বর্বরতা
আট বছর বয়সী একটি শিশু আতিকুল ইসলাম। পড়ত ময়মনসিংহের একটি মাদ্রাসায়। গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের আল মাসরাতুল আহলিয়া দারুল উলুম ফারুকিয়া নামের ওই মাদ্রাসায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে ছোট এই শিশুটিকে।
ছয় দিন ঘরে আটকে রেখে শিশুটিকে বেত দিয়ে পেটানো হয়েছে। মোমবাতির আগুনে ঝলসে দেওয়া হয়েছে হাতের আঙুল। আর নির্যাতকরা বাইরের কেউ নয়, ওই মাদ্রাসারই শিক্ষক। কী ছিল শিশুটির অপরাধ? ঘুমের ঘোরে মাসুম বাচ্চাটি 'মা' বলে ডেকে উঠেছিল। আর তাতেই মাদ্রাসার দুই শিক্ষকের ধারণা হয়, শিশুটির ওপর জিনের আসর পড়েছে। জিনের আসর দূর করার জন্য তারা শিশুটির ওপর অকথ্য নির্যাতনের রাস্তা বেছে নেন। খবর পেয়ে শিশুটির বাবা এসে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন। মাদ্রাসা একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ধর্মের নৈতিকতা ও দর্শন শিক্ষা দেওয়া মাদ্রাসা শিক্ষকদের দায়িত্ব। মাদ্রাসা শিক্ষকরা যদি কুসংস্কারাচ্ছন্ন হন, সাধারণ বোধ-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে একটি শিশুর ওপর নির্মম নির্যাতন বেছে নেন, তবে তা খুবই দুঃখজনক। একটি শিশু ঘুমের ঘোরে মাকে ডাকলে তাকে স্নেহ ও যত্নে আশ্রয় দেওয়াই একজন শিক্ষকের কর্তব্য। বিশেষ করে কম বয়সী শিশুদের জন্য বাড়তি যত্নের ব্যবস্থা থাকা দরকার। এ বয়সীদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও থাকা দরকার। দুঃখজনক হলেও সত্যি, অনেক স্কুলেও শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ থাকে না। মাদ্রাসাগুলো এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। অনেক মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা সেখানে মধ্যযুগীয় পন্থায় নির্যাতনের শিকার হয়। এমন ব্যবস্থা জিইয়ে রেখে আগামী দিনের নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা সম্ভব কি-না সে প্রশ্ন উঠবে। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত আদর্শ মানুষ তৈরি করতে হলে আদর্শ শিক্ষার ব্যবস্থাও করতে হবে। কিন্তু সে ব্যবস্থা কোথায়? অবুঝ শিশুর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে গৌরীপুরে তা জেনে সবার মাথা হেঁট হয়ে গেছে। নির্যাতক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জরুরি। পাশাপাশি মাদ্রাসা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষ ও মাদ্রাসা বোর্ডকেও সচেতন হতে হবে। দেশের মাদ্রাসাগুলোতে কোন পন্থায় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, সেখানকার শিক্ষকদের যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের মান কী তা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনীর উদ্যোগও জরুরি।
No comments