ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়-অভিনন্দন, জাতীয় ক্রিকেট দল
প্রাণভরা অভিনন্দন জাতীয় ক্রিকেট দলকে। সাবাস, দলের প্রতিটি লড়াকু সদস্য শ্বাসরুদ্ধকর বা স্নায়ুক্ষয়ী কিংবা এ ধরনের কোনো শব্দ হয়তো দুর্ধর্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জয় সম্পর্কে ক্রিকেট বোদ্ধারা ব্যবহার করবেন।
কিন্তু এমন বাঁধভাঙা আনন্দ প্রকাশে কোনো বিশেষণই সম্ভবত যথেষ্ট হবে না। খুলনায় পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দুটিতে জয় নিয়ে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল ঢাকায় ফিরে আসার পর থেকেই অপেক্ষায় ছিল পুরো দেশ_ সিরিজ চাই। এর আগে বাংলাদেশ শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করেছে। জিম্বাবুয়েকে অনেক বছর ধরেই পেছনে ঠেলে রাখছে। প্রতিষ্ঠিত বড় দলগুলোও মাঝে মধ্যেই পরাভব মানে টাইগারদের কাছে। এককালে ক্রিকেটের দাপুটে শক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তার ঘরের মাঠেই টেস্ট ও ওয়ানডেতে হারিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা ছিল 'হীনবল দল'। তাই খানিকটা অতৃপ্তি ছিলই। বর্তমান বিশ্বক্রিকেটে সেরাদের সেরার সারিতে স্থান পাওয়া বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলকে নিয়ে সদ্য টি২০ বিশ্বকাজ জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশ সফরে এলে ওই অপূর্ণতা ঘোচানোর স্বপ্ন পূরণ যে মস্ত চ্যালেঞ্জ_ সেটা বুঝতে ক্রিকেট বোদ্ধা হওয়ার দরকার নেই। দুটি টেস্ট ম্যাচে সহজেই বাংলাদেশকে ধরাশায়ী করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বুঝিয়েও দিয়েছিল_ এবারেরটি 'বদলার সফর'। কিন্তু অপরিমেয় সম্ভাবনা নিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ জাতীয় দলের তরুণ খেলোয়াড়রাও বুঝিয়ে দিয়েছে, কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতা বাড়ছে। শনিবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে তারা। বিশ্বের সেরা দলগুলোর সারিতে থাকা দলটির বিরুদ্ধে এ সাফল্য জাতীয় দলকে নব নব ভিক্টরি ল্যাপে অনুপ্রাণিত করবে_ এটাই প্রত্যাশা। সম্প্রতি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেস্ট অঙ্গনে এক যুগ পূর্তির অনুষ্ঠান পালন করেছে। এখন আর অভিজ্ঞতার জন্য খেলা নয়। জাতীয় দলের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা ধারাবাহিকতার। সে জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। দেশের ক্রিকেট পরিকাঠামো এখন মজবুতই বলা যায়। অভ্যন্তরীণ টুর্নামেন্টগুলোতে নতুন ও অভিজ্ঞদের অনেকেই ব্যাটিং-বোলিংয়ে সাফল্য দেখাচ্ছেন। সরকারের মনোযোগও যথেষ্ট। বাজেটে খেলাধুলার জন্য বরাদ্দ বাড়ছে। আইসিসি থেকেও আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা মেলে নিয়মিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই খেলাধুলার অনুরাগী। শনিবার মাঠে থেকে তিনি খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিয়েছেন। আমরা দেখি, যখন কোনো খেলায় সাফল্য আসে, দেশবাসীর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা মুক্তকণ্ঠে খেলোয়াড়দের অভিনন্দনে সিক্ত করেন। নিজেদের মেলে ধরার জন্য এমন অনুকূল মনোভাবই কাম্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে হারানোর পর ক্রিকেটে উন্নতির জন্য সরকারের সহায়তার হাত আরও প্রসারিত হবে_ সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে বাড়তে থাকবে দেশবাসীর প্রত্যাশা। তার সঙ্গে মানিয়ে চলতেই হবে। এ প্রসঙ্গেই বলা দরকার_ শুধু ক্রিকেট নয়, আরও অনেক ধরনের খেলার প্রতি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মনোযোগ বাড়াতে হবে। ফুটবল বহু যুগ ধরেই দেশের জনপ্রিয় খেলা। বিশ্ব পর্যায়ে না হোক, অন্তত এশীয় মানে নিজেদের উন্নত করার টার্গেট রাখা চাই। সাঁতার, হা-ডু-ডু, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, হকিসহ আরও কয়েক ধরনের খেলায় উৎকর্ষ বাড়ানোর সুযোগ আমাদের রয়েছে। আর এটাও মনে রাখতে হবে, খেলাধুলা শুধু বিনোদনের মাধ্যম কিংবা সেরা হওয়ার জন্য নয়। স্বাস্থ্যবান প্রজন্ম গড়ে তুলতে এর বিকল্প কিছুই হতে পারে না।
No comments