পান্থজনঃ কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজি

দৈনিক ইত্তেফাকের উপসম্পাদকীয়ঃ- অনেক সময় কী লিখব তা নিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়। কিন্তু এ মুহূর্তে ঘরেবাইরে লেখার মতো বিষয় অনেক। তার মধ্যে সবার আগে উলেস্নখ করতে হয়'উইকিলিকস' বিস্ফোরণের কথা। এই ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ একাই কাঁপিয়ে দিয়েছেন গোটা বিশ্ব। এতোকাল আমরা জেনে এসেছি যে, অসির চেয়ে মসিই অধিক শক্তিশালী।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, এ-যুগের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হলো_ তথ্য। আপাত নিরীহ এই অস্ত্রটি যে কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে_ তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ। মূলত এ কারণেই গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিকাশে অবাধ তথ্যপ্রবাহের ওপর এতো গুরুত্ব দেয়া হয়। এ নিয়েই লেখা যেতো এবারের উপসম্পাদকীয় নিবন্ধ।
এদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। নিকট অতীতের ভয়ঙ্কর তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি, এর সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে ঘনঘন হুঁশিয়ারিও উচ্চারিত হচ্ছে উভয় দলের ভুক্তভোগী ও বিদগ্ধ নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। থামছে না কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, অসহিষ্ণুতা ও বিদ্বেষ ভাবই প্রবল হয়ে উঠছে ক্রমে। সমস্যাটি নতুন নয়। তবে এর শেষ কোথায় কেউ জানে বলে মনে হয় না। দলমত নির্বিশেষে সকলেই বোঝেন ও স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশের মতো নাজুক একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কিংবা গণতন্ত্রের জন্য এটা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। সর্বোপরি, গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য যেখানে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে নানা ক্ষেত্রে সমঝোতা ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হয়, সেখানে ব্যাপক জনসমর্থনপুষ্ট প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিদ্যমান অসহিষ্ণুতা ও বৈরিতা বাড়তে থাকলে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়বে_এটাই স্বাভাবিক। আর গণতন্ত্রহীনতার পরিণাম যে কতো ভয়াবহ হতে পারে বহুল আলোচিত 'ওয়ান-ইলেভেন'ই তার একমাত্র উদাহরণ নয়।
কার্যকর গণতন্ত্র ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যে সম্ভব নয়_সেই অভিজ্ঞতাও আমাদের অঢেল। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে, বাংলাদেশের সামনে যতো সম্ভাবনাই থাকুক, তার তীব্র নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের অন্যসব ক্ষেত্রে পড়তে বাধ্য। বাস্তবেও কিন্তু সেটাই হচ্ছে। মুখে গণতন্ত্র সবাই চান। ধৈর্য, পরমতসহিষ্ণুতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ছাড়া যে গণতন্ত্র অচল_সেটাও কারো অজানা নয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার কোনো প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না। বরং মোড়লিপনা বা বলতন্ত্র ও দলতন্ত্রের দাপটই যেন ক্রমবর্ধমান। নব্বইয়ে স্বৈরশাসনের পতনের পর গণতান্ত্রিক পন্থায় একাধিকবার সরকার বদল হলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তেমন একটা বদলায় নি। চতুর্থ নির্বাচিত সরকারের বয়স এখনও দু'বছর পূর্ণ হয় নি। অতীতের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে দু'টি হরতাল হয়ে গেছে অল্প সময়ের ব্যবধানে। আরও একটি আসন্ন। বিরোধী শিবিরে চলছে 'সর্বাত্মক আন্দোলনের' প্রস্তুতি। সরকারি দলের মনোভাবও কঠোর। সব মিলিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে গিয়ে গ্যাস, বিদু্যৎ ও শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা সমস্যায় যারা এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছেন, তাদের বুকের ধুকপুকানি ইতোমধ্যে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিপুলসংখ্যক হতদরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের উৎকণ্ঠার কথা নাইবা বললাম। লেখার জন্য এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর কী হতে পারে!
বিষয় আরও আছে। নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে তর্কের ঝড় এখনও থামে নি। সহজে থামবে বলেও মনে হচ্ছে না। বরং সেই ঝড়ে বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো কার্যক্রম ক্ষুদ্রঋণের এ যাবৎকালের যাবতীয় অর্জনও ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের জন্ম বাংলাদেশে। এর উদ্ভব ও বিকাশে বহু বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা থাকলেও বিশ্ব জুড়ে আজ ক্ষুদ্রঋণ, গ্রামীণ ব্যাংক ও অধ্যাপক ইউনূস প্রায় সমার্থক হয়ে গেছে। আর এ সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। ফলে সুনাম-দুর্নাম যাই-ই তারা অর্জন করুক তার দায়ভারও অনিবার্যভাবে দেশের ঘাড়েই এসে পড়ে। এ নিবন্ধে তুলে ধরা যেতো জনমনে বিরাজমান সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথাও। কিন্তু হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো আমার সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে বিজয় দিবস। যে যাই বলুক না কেন, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর যে অভাবনীয় ঘটনাটি আমরা ঘটিয়েছিলাম তার চোখধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য ও আকাশচুম্বী বিশালতার কাছে আর সবই তুচ্ছ মনে হয়।
সময়ের হিসাবে এটা আমাদের ৩৯তম বিজয় বার্ষিকী। আর মাত্র এক বছর পরেই পূর্ণ হবে বিজয়ের চার দশক। এক্ষেত্রে সাধারণ অভিজ্ঞতাটি হলো, প্রায় প্রতিবারই বিজয়ের অপরিমেয় আবেগ, আনন্দ ও অশ্রুকে ছাপিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিষয়টিই সামনে চলে আসে। মুখ্য হয়ে ওঠে কী পেয়েছি আর কী পাইনি তার বস্তুগত হিসাবনিকাশ। তার সঙ্গে অনিবার্যভাবে জড়িয়ে যায় ব্যক্তি-মানুষের প্রতিদিনকার নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা, অসন্তোষ এবং অপ্রাপ্তির হতাশা ও ক্ষোভ। তদুপরি, এ অঞ্চলের মানুষের পর্বতপ্রমাণ প্রত্যাশা এবং সেই আশাভঙ্গের আহাজারি তো আছেই_যা নোবেলবিজয়ী সুইডিশ অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী গুনার মিরডাল (শধৎষ এঁহহবৎ গুৎফধষ) বহু আগেই বলে গেছেন তার বিখ্যাত 'এশিয়ান ড্রামা' গ্রন্থে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির প্রকৃত চিত্রটি চাপা পড়ে যায়। দেশঅন্তপ্রাণ মানুষের বেদনার্ত দীর্ঘশ্বাসের পাশাপাশি গজদন্তমিনারবাসী দেশবিমুখ কিছু মানুষের নৈরাশ্যের ফিরিস্তিই প্রধান হয়ে ওঠে সেই বিচার বা মূল্যায়নে। তবে ধীরে হলেও দিন বদলাচ্ছে। জনসংখ্যার বিচারে যতো নগণ্যই হোক_ নির্মোহ দৃষ্টিতে দেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে দেখার মতো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
সামপ্রতিক একটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরা খুবই প্রাসঙ্গিক হবে বলে আমার মনে হয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বর ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) 'বাংলাদেশ ২০৩০: উন্নয়ন কৌশল' শীর্ষক একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। সেই সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং ইকনমিজের প্রেসিডেন্ট গুস্তাফ এফ পাপানেভসহ দেশিবিদেশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে সেই সম্মেলনে। সম্মেলনের পেস্ননারি অধিবেশনে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, 'বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমানের ৪৮তম অবস্থান থেকে আগামী ২০ বছরে ৩০তম অবস্থানে উঠে আসতে সক্ষম বাংলাদেশ। বিশ্বের কমপক্ষে তিনটি নামি জরিপকারী প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনাময় দেশ বলে আখ্যায়িত করেছে।' এটা যে নিছক আবেগপ্রসূত কোনো মূল্যায়ন নয় তা বলা নিষপ্রয়োজন। ব্যাপক তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতেই এ পর্যবেক্ষণটি তুলে ধরা হয়েছে। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ১৯৯০ থেকে বর্তমান পর্যন্ত দুই দশকের গড় প্রবৃদ্ধি হলো ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তৈরি পোশাক ও প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) উচ্চতর প্রবৃদ্ধি এবং প্রবৃদ্ধি-সহায়ক অন্যান্য নীতি গ্রহণের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে।
পাশাপাশি, মারাত্মক কিছু ঝুঁকি এবং আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে উক্ত প্রবন্ধে। উপস্থিত বিশেষজ্ঞরাও তার সঙ্গে একমত হয়েছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড়ো ঝুঁকিটি হলো_বিনিয়োগের স্বল্পতম হার_ যা বর্তমানে জিডিপির মাত্র ২৪ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এরপরেই রয়েছে বিদু্যতের ঘাটতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি ও অদক্ষতার মতো মজ্জাগত কিছু সমস্যা। এ ব্যাপারে গুস্তাফ পাপানেভের পর্যবেক্ষণ যেমন আরও আশাব্যঞ্জক, তেমনি তার সতর্কবার্তাটি যথেষ্ট তীক্ষ্নও বটে। বাংলাদেশের মধ্যে তিনি 'পরবর্তী চীন'কে দেখতে পেয়েছেন। বলেছেন, 'বাংলাদেশের রপ্তানি পরাশক্তির দেশ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর রয়েছে বিশাল শ্রমবাজার। বর্তমানে যেখানে কোনোমতে বছরে ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়, তাকে ৩০ লাখে উন্নীত করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ তা কাজে লাগাতে পারছে না।' তাঁর মতে, দুর্বলতম অবকাঠামো, উচ্চতর আমদানি খরচ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতাসহ বিরাজমান সমস্যাসমূহ দ্রুত কাটিয়ে উঠতে না পারলে সব সম্ভাবনাই ভেস্তে যেতে পারে। বলা বাহুল্য, আমরা যারা বিশেষজ্ঞ নই, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতাও ভিন্ন নয়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে গিয়ে কেউ কেউ এমনও বলে ফেলেন যে, একটি মানচিত্র আর একটি পতাকা ছাড়া স্বাধীনতা আমাদের আর কিছুই দেয় নি। এর পেছনে রাগ, ক্ষোভ, অভিমান বা বিদ্বেষ যাই থাকুক না কেন, এর সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্ক নেই বললেই চলে। শুধু বস্তুগত বিচারেও মাত্র চার দশকে স্বাধীনতা আমাদের যা দিয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, একাত্তরের বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে আজকের বাস্তবতা মিলিয়ে দেখলেই ব্যবধানটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে। নানা ক্ষেত্রে এখনও বঞ্চনা আছে, দারিদ্র্য আছে সত্য। তবে স্বাধীনতাপূর্বকালের জীর্ণমলিন ও হতদরিদ্র সেই বাংলাদেশকে এখন কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অর্থনীতির আকার কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র ও পরিধি শুধু নয়, বদলে গেছে মানুষের জীবনমানও। এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও এখন আর সার্বিকভাবে বিপন্ন মানুষের করুণ মুখচ্ছবি তেমন একটা দেখা যায় না। সবাই কিছু না কিছু করছেন বা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, স্বাধীনতা এই জনপদের মানুষের মনোজগৎটাই বদলে দিয়েছে। খুলে দিয়েছে অমিত সম্ভাবনার স্বর্ণদ্বার।
ব্যক্তিগতভাবে আমি স্বাধীনতার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা করি না। তুলনা করতে কুণ্ঠাবোধ করি। এ কথা সত্য যে, পেটে ভাত না থাকলে মানুষ 'মানচিত্র' খেতেও উদ্যত হতে পারে। পূর্ণিমার চাঁদকে মনে হতে পারে 'ঝলসানো রুটি'। আবার এও তো আমরা দেখেছি যে, কোনোকিছু দিয়েই স্বাধীনতার অভাব পূরণ করা যায় না। 'স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়'_এ অবিস্মরণীয় পংক্তিটি উচ্চারিত হয়েছিল এক বাঙালি কবির কণ্ঠেই। যারা বলেন, স্বাধীনতা আমাদের একটি মানচিত্র ও একটি পতাকা ছাড়া কিছুই দেয় নি, তারা হয়তো এর তাৎপর্য বোঝেন না বা বোঝার চেষ্টাও করেন না। নিজস্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে বাঁচার যে আনন্দ ও আকুলতা_ তা কেবল স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব বাজি রেখে যুগ যুগ ধরে যারা যুদ্ধ করে চলেছেন তাদের পক্ষেই বোঝা সম্ভব। অন্যের কথাইবা বলি কেন, আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে এমন মাহেন্দ্রক্ষণ আর কখনই আসে নি। তাই বিজয় দিবস নিয়ে লিখতে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিম্নে উদ্ধৃত পংক্তিগুলোর সঙ্গে আমি আমার অনুভূতির আশ্চর্য মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম:
কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজি।
আজ হূদয়ের ছায়াতে আলোতে বাঁশরি উঠেছে বাজি ।।
ভালোবেসেছিনু এই ধরণীরে সেই স্মৃতি মনে আসে ফিরে ফিরে,
কত বসন্তে দখিনসমীরে ভরেছে আমারি সাজি ।।
নয়নের জল গভীর গহনে আছে হূদয়ের স্তরে,
বেদনার রসে গোপনে গোপনে সাধনা সফল করে।
মাঝে মাঝে বটে ছিঁড়েছিল তার, তাই নিয়ে কেবা করে হাহাকার_
সুর তবু লেগেছিল বারে-বার মনে পড়ে তাই আজি।।
বাংলাদেশ আমাদের অভূতপূর্ব ভালোবাসা শুধু নয়, অতুলনীয় আত্মত্যাগের ফসলও বটে। সঙ্গত কারণেই প্রায় ৪০ বছর বয়েসী এই বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকের মতো আমারও কষ্ট আছে, কান্না আছে_আছে অনেক স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। কিন্তু ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কোনো ক্ষোভ বা দুঃখ নেই। আমার বিশ্বাস, বিস্তর বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও সমষ্টিগত এই অপূর্ণতার বোধই বাংলাদেশকে ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
==============================
বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য  ৭২-এর সংবিধানের আলোকে কি রূপকল্প বদল করা উচিত নয়?  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক  প্রশাসনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি  পরিবেশ সুরক্ষায় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  রাত যায় দিন আসে  শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব  ভালবাসা নিভিয়ে দেয় হিংসার আগুন  মহান মুক্তিযুদ্ধঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি  রহস্যের পর্দা সরিয়ে দ্যুতিময় এমিলি ডিকিনসন  বেগম রোকেয়াঃ নারী জাগরণের বিস্ময়কর প্রতিভা  শিক্ষারমান ও সমকালীন প্রেক্ষাপট  বিজয় দিবসঃ অর্জন ও সম্ভাবনা  একটি ট্রেন জার্নির ছবি ও মাইকেলের জীবন দর্শন  ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক  উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা  বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন  ক্ষুদ্রঋণ ও বাংলাদেশের দারিদ্র্য  শেয়ারবাজারে লঙ্কাকাণ্ড  মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার  শক্ত ভিত ছাড়া উঁচু ভবন হয় না  ট্রেন টু বেনাপোল  বনের নাম দুধপুকুরিয়া  নথি প্রকাশ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার অ্যাসাঞ্জের  ছিটমহলবাসীর নাগরিক অধিকার  শিক্ষা আসলে কোনটা  জীবন ব্যাকরণঃ হিরালি  ন্যাটো ও রাশিয়ার সমঝোতা ইরানের ওপর কি প্রভাব ফেলবে  জার্নি বাই ট্রেন  পারিষদদলে বলেঃ  চরাঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা  সচেতন হলে শিশু প্রতিবন্ধী হয় না  স্মৃতির জানালায় বিজয়ের মাস  বিচারপতিদের সামনে যখন ‘ঘুষ’  কয়লানীতিঃ প্রথম থেকে দশম খসড়ার পূর্বাপর  শ্বাপদসংকুল পথ  মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম  ১২ বছর আগে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে  চট্টগ্রাম ইপিজেডে সংঘর্ষে নিহত ৪  ড. ইউনূস : প্রতিটি বাংলাদেশির গৌরব  জলাভূমিবাসীদের দুনিয়ায় আবার..  আসুন, আমরা গর্বিত নাগরিক হই


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
ইত্তেফাকের উপসম্পাদকীয়


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.