ঢাকা শেয়ারবাজারে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৫০৩ কোটি টাকার শেয়ার, যা গত রোববারের রেকর্ড লেনদেনের চেয়ে ৫১ কোটি টাকা বেশি।
এদিন স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ১৫৫ পয়েন্ট বা তিন শতাংশ বেশি বেড়ে পাঁচ হাজার ৩১২ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্ট বেড়েছে কেবল গ্রামীণফোনের মূল্যবৃদ্ধির কারণে।
গতকাল গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ার আগের দিনের চেয়ে ২২ টাকা ৯০ পয়সা বা নয় শতাংশ বেড়ে ২৭৫ টাকায় সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির পর এটিই ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি।
এ দর বাড়ার কারণ জানতে এসইসির নির্দেশে ডিএসইর দেওয়া চিঠির জবাবে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কাছে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই, যার কারণে শেয়ারের দাম বাড়তে পারে।
বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রচুর নতুন টাকাও ঢুকছে। এর বড় অংশ এসেছে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের যে সুযোগ রয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে। মূলত এসব বিনিয়োগই বাজারকে অতিমূল্যায়িত করে তুলছে।’
অস্বাভাবিক লেনদেনের তদন্ত: এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ খাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেডের শেয়ারের সাম্প্রতিক লেনদেনকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে এর কারণ তদন্তে মাঠে নেমেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।
গতকাল সোমবার এসইসির তদন্ত দল ছয়টি ব্রোকারেজ হাউস থেকে গ্রামীণফোনের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করেছে।
একই সঙ্গে সংস্থাটি ডিএসইকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এতে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ নির্দেশের পরপরই গ্রামীণফোনের শেয়ারের লেনদেন বেশি হয়েছে এমন প্রায় ৩৫টি ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১৮টি ব্রোকারেজ হাউসে চিঠি পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
চিঠিতে আগামী তিন দিনের মধ্যে ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে গ্রামীণফোনের শেয়ার লেনদেনের শীর্ষ ২০ গ্রাহকের (১ থেকে ২৫ জানুয়ারির লেনদেনের তথ্যসহ) বিভিন্ন ধরনের তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসইসির সদস্য মনসুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামীণফোনের শেয়ারের লেনদেন এসইসির কাছে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। এ কারণেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ডিএসইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা নিজেরাও খতিয়ে দেখছি, এ লেনদেনের পেছনে সন্দেহজনক কিছু রয়েছে কি না।’
এসইসি ও ডিএসইর প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জানা গেছে, কয়েকজন প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী সংঘবদ্ধ হয়ে কৃত্রিমভাবে গ্রামীণফোনের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। আর হঠাত্ করেই এভাবে দাম বাড়তে দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি কেনার ব্যাপারে প্ররোচিত হয়েছে।
মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক: বিকেলে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে পুঁজিবাজারে ঋণ জোগানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, চাহিদা ও জোগানের অসামঞ্জস্যের কারণে বাজারে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন নতুন শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানো। এ জন্য এসইসি, ডিএসই, সিএসই ও সরকার সবাইকে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ঋণ প্রদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। কোনো গ্রাহক ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে ঋণ নিতে গেলে তাকে সতর্ক করবে। এর বাইরেও কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকতে পারবে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আজ থেকে তাঁরা গ্রামীণফোনের শেয়ার কেনার জন্য ঋণসুবিধা দেবেন না।
এদিকে আজ মঙ্গলবার ডিএসই বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ৫৫টি ব্রোকারেজ হাউসের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে: লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজ, উইফেং সিকিউরিটিজ, আল-আরাফাহ ব্যাংক, আইডিএলসি, পিএফআই সিকিউরিটিজ, বিএলআই সিকিউরিটিজ, আইসিবি, আইআইডিএফসি, প্রাইলিঙ্ক সিকিউরিটিজ, এনসিসি ব্যাংক, ই সিকিউরিটিজ, মাল্টি সিকিউরিটিজ, এবি ফাউন্ডেশন, এসইএস, আইএফআইসি, সিএমএসএল, গ্রিনডেল্টা ও কান্ট্রি স্টক লিমিটেড।
মিউচুয়াল ফান্ড: মিউচুয়াল ফান্ড-সংক্রান্ত মামলার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এসইসি আপিল না করার সিদ্ধান্তে গতকাল বেশির ভাগ মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। বাজারে ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে কেনার জন্য দর হাঁকলেও শেষ পর্যন্ত অনেকেই আর কিনতে পারেনি।
No comments