যুক্তরাষ্ট্রে ডানপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠী মাথা চাড়া দিচ্ছে
মার্কিন ‘হেট গ্রুপ’ ও চরমপন্থীদের গতিবিধি নিয়ে ‘দি সেকেন্ড ওয়েভ: রিটার্ন অব দ্য মিলিশিয়া’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়, আদর্শগতভাবে বর্ণবাদী এবং তীব্রভাবে সরকারবিরোধী, অভিবাসী ইস্যু এবং করারোপের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের বিরোধী স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো নব্বইয়ের দশকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এরপর থেকে তারা ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানোর তাড়না অনুভব করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মাত্র ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে গোষ্ঠীগুলো ওই অবস্থায় এসে দাঁড়ায়।’ একে তিনি হুমকি ও সহিংসতার প্রাক-মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেন।
১৯৯৫ সালে ওকলাহোমা সিটিতে সরকারি ভবনে বোমা হামলায় ১৬৮ জন নিহত হওয়ার পর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। গত দশকে প্রায় নিয়মিতই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এসপিএলসির মার্ক পোটক বলেন, রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় সন্ত্রাসী হামলা অনেকাংশে কমে আসে। তাদের মতে, ওই সময়ের সঙ্গে আজকের মূল পার্থক্য হলো প্রেসিডেন্ট পদে একজন কৃষ্ণাঙ্গের আসীন হওয়া, যা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যকামীদের ক্ষুব্ধ করে তোলে।
ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এসপিএলসির গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০০ সালে ‘হেট গ্রুপের’ সংখ্যা ছিল ৬০২টি। ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২৬টিতে। এতে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের হাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের খুনের সংখ্যা তুলে ধরে আগের সময়ের তুলনা করা হয়। এসপিএলসির ল্যারি কেলার বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নির্বাচিত হওয়ায় ‘চরম হতাশ’ এক ব্যক্তি তেজস্ক্রিয় ‘নোংরা বোমা’ তৈরি করেছেন। আর এক ক্ষুব্ধ ব্যক্তি ফ্লোরিডার প্রধান দুই আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাকে হত্যার জন্য মিলিশিয়া গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বারাক ওবামা জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিক না হওয়ায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না—এই অভিযোগ তুলে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ‘বার্থার’ নামের একটি গোষ্ঠী।
ডানপন্থী নানা আন্দোলনের দীর্ঘদিনের বিশ্লেষক চিপ বার্লেট বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংসতারই সৃষ্টি করবে বলেই মনে হয়।
মিলিশিয়ারা তাদের আদর্শকে তুলে ধরতে মূলধারার গণমাধ্যম বিশ্লেষক ও রাজনীতিকদেরও চাপ দিচ্ছে। ফক্স নিউজের বিশ্লেষক গ্লেন বেকের নিচের এই মন্তব্য বিষয়টিকে কিছুটা হলেও তুলে ধরে। তিনি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ‘ফ্যাসিবাদী’, ‘নািস’ ও ‘মার্কসবাদী’ বলে বর্ণনা করেছেন। প্রতিদিন গড়ে আড়াই মিলিয়ন দর্শক সন্ধ্যার পর পরই প্রচারিত গ্লেন বেকের ওই অনুষ্ঠান উপভোগ করে থাকেন।
এপ্রিলে সরকারি এক প্রতিবেদনে ডানপন্থী চরমপন্থীরা অর্থনৈতিক মন্দা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি নির্বাচনের সময় বারাক ওবামা যাঁদের নির্বাচনী কাজে নিয়োগ দিয়েছিলেন তাঁদেরও সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। এর মাধ্যমে তাঁরা ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন বলে সরকারি ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
No comments