বসনিয়ার মুসলিম ও বলকানের কসাই সমাচার by মু. ওমর ফারুক আকন্দ
ইউরোপ
মহাদেশের বলকান অঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা।
অড্রিয়াটিক উপসাগরের তীরে ত্রিভুজ আকৃতির দেশটির আয়তন ৫১ হাজার ১২৯
বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৩৫ লাখ দুই হাজার ৬৩৬ জন। রাজধানী সারায়েভো।
অতীতে এটি যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের একটি অংশ ছিল। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। প্রাচীনকালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে বলা হতো ইলিরিকাম। পূর্ব ইউরোপের জাতি সার্বরা সপ্তম শতাব্দীতে ওই অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বসনিয়া হাঙ্গেরির কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় এবং এর পরের ২৬০ বছরের মধ্যে এটি স্বাধীন খ্রিষ্টান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৪ শতকে রাজপুত্র শাসিত বসনিয়া দক্ষিণের ডিউক শাসিত হার্জেগোভিনার সাথে মিলে একটি ক্ষণস্থায়ী মধ্যযুগীয় রাজ্য গঠন করেছিল। তারপর ১৫ শতকে সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ বসনিয়াকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। তারপর উনিশ শতকের শেষ দিকে রাশিয়ার সাথে উসমানীয় সাম্রাজ্যের যুদ্ধের ফলে দেশটি উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অস্টীয়-হাঙ্গেরি রাজ্যের অধীনে চলে যায়। তারপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষে বসনিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
পরবর্তীতে বলকানে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সম্প্র্রসারণের ফলে ওই অঞ্চলে ভিন্ন সংস্কৃতি, রাজনীতি ও ধর্মীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠে। আনুমানিক সাড়ে ৪০০ বছর বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসন ছিল। ওই সময় অনেক খ্রিষ্টান স্লাব মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। বসনিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় ধীরে ধীরে প্রভাবশালী হতে থাকে এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের পক্ষে তারা দেশ শাসন করতে থাকে। উসমানীয় সাম্রাজ্যে সঙ্কুচিত হতে থাকলে উনিশ শতকে বলকানের অন্য মুসলিমরা বসনিয়ায় চলে যেতে থাকে। একই সময়ে বসনিয়ায় ইহুদি জনসংখ্যা বাড়তে থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে যুগোস্লøাভিয়া থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) স্বীকৃতি চাওয়া হয়। ১৯৯২ সালের মার্চে এক গণভোটে বসনিয়ার ভোটারেরা স্বাধীনতা বেছে নেয়। ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা সংসদ যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এমন সিদ্ধান্ত নিলেও বসনিয়ার সার্বরা এর প্রচণ্ড বিরোধিতা করে এবং বেলগ্রেডের সহায়তায় পরদিন ৬ এপ্রিল মুসলমানদের জাতিগত নিধন শুরু করে। মুসলমানেরা সভ্য ইউরোপে এমন হবে, তা ভাবতেও পারেনি। তাই তাদের প্রতিরোধের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এই নির্মূল অভিযান সভ্য ইউরোপে সাড়ে তিন বছর চলতে থাকে। হাজার হাজার মুসলমান নর-নারী হত্যাযজ্ঞের শিকার হয় এবং ২০ লাখ মুসলমান দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।
সার্বদের তাণ্ডবলীলার সবচেয়ে বড় শিকার সেব্রেনিৎসা শহরের মানুষ। জাতিসঙ্ঘ ওই শহরটিকে নিরাপদ শহর ঘোষণা করার পরও ১৯৯৫ সালে সার্বরা সেখানে আগ্রাসন চালায় এবং জাতিসঙ্ঘের পর্যবেক্ষক সেনাদলের সামনেই তারা আট হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করে। বসনিয়ার যুদ্ধে দেশটির এক লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
৪৪ মাস ধরে সারায়েভো অবরোধের ঘটনা ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর অন্যতম নায়ক সাবেক সার্ব সেনাপ্রধান জেনারেল রাদোভান কারাদজিচ। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালত কুখ্যাত এই ‘বলকানের কসাই’কে ২০১৬ সালে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
ওই সময় বিচারক অলফোনস অরিয়ে তার রায়ে বলেন, সেব্রেনিৎসায় বসবাসরত মুসলমানদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে অপরাধীরা ওই অপরাধ সংঘটিত করেছিল। ‘বসনিয়ার কসাই’ হিসেবে খ্যাত রাদোভান কারাদজিচের বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়ার এই যুদ্ধে কারাদিজিচের নেতৃত্বে তার বাহিনী এসব অপরাধ সংঘটিত করে।
আদালত কারাদজিচকে দেয়া ৪০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছে। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য শহর সেব্রেনিৎসায় গণহত্যা চালানোর দায়ে তাকে দেয়া এই দণ্ড চূড়ান্ত রায়ে বহাল রেখেছেন যুগোস্লাভিয়ায় যুদ্ধাপরাধ তদন্তে গঠিত জাতিসঙ্ঘ ট্রাইব্যুনাল।
দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন রাদোভান কারাদজিচ। কিন্তু বিচারক জোয়েনসেন এই রায় ঘোষণার সময় বলেন, কারাজদিচ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, বসনিয়ার সার্ব সেনাদের কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে অপরাধের তদন্ত করা ও অপরাধীদের শাস্তি দেয়া কারাদজিচের দায়িত্ব ছিল বলে বিচারিক ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছে, তাতে ত্রুটি প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন কারাদজিচ।
৭৩ বছর বয়সের কারাদজিচ বসনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৯৫ সালে সেব্রেনিৎসায় গণহত্যায় ভূমিকার জন্য তাকে ‘বলকানের কসাই’ বলা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে এটি সবচেয়ে খারাপ জঘন্য গণহত্যা।
এই রায় বহাল থাকায় অনেকেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এই রায় ন্যায়বিচারের জন্য ঐতিহাসিক বলেছেন অনেকে। যদিও অনেকেই তাকে বাকি জীবন কারাগারেই দেখতে চেয়েছিলেন। তবে তার এই রায় দেশটিতে যে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অতীতে এটি যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের একটি অংশ ছিল। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। প্রাচীনকালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে বলা হতো ইলিরিকাম। পূর্ব ইউরোপের জাতি সার্বরা সপ্তম শতাব্দীতে ওই অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বসনিয়া হাঙ্গেরির কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় এবং এর পরের ২৬০ বছরের মধ্যে এটি স্বাধীন খ্রিষ্টান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৪ শতকে রাজপুত্র শাসিত বসনিয়া দক্ষিণের ডিউক শাসিত হার্জেগোভিনার সাথে মিলে একটি ক্ষণস্থায়ী মধ্যযুগীয় রাজ্য গঠন করেছিল। তারপর ১৫ শতকে সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ বসনিয়াকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। তারপর উনিশ শতকের শেষ দিকে রাশিয়ার সাথে উসমানীয় সাম্রাজ্যের যুদ্ধের ফলে দেশটি উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অস্টীয়-হাঙ্গেরি রাজ্যের অধীনে চলে যায়। তারপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষে বসনিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
পরবর্তীতে বলকানে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সম্প্র্রসারণের ফলে ওই অঞ্চলে ভিন্ন সংস্কৃতি, রাজনীতি ও ধর্মীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠে। আনুমানিক সাড়ে ৪০০ বছর বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসন ছিল। ওই সময় অনেক খ্রিষ্টান স্লাব মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। বসনিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় ধীরে ধীরে প্রভাবশালী হতে থাকে এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের পক্ষে তারা দেশ শাসন করতে থাকে। উসমানীয় সাম্রাজ্যে সঙ্কুচিত হতে থাকলে উনিশ শতকে বলকানের অন্য মুসলিমরা বসনিয়ায় চলে যেতে থাকে। একই সময়ে বসনিয়ায় ইহুদি জনসংখ্যা বাড়তে থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে যুগোস্লøাভিয়া থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) স্বীকৃতি চাওয়া হয়। ১৯৯২ সালের মার্চে এক গণভোটে বসনিয়ার ভোটারেরা স্বাধীনতা বেছে নেয়। ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা সংসদ যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এমন সিদ্ধান্ত নিলেও বসনিয়ার সার্বরা এর প্রচণ্ড বিরোধিতা করে এবং বেলগ্রেডের সহায়তায় পরদিন ৬ এপ্রিল মুসলমানদের জাতিগত নিধন শুরু করে। মুসলমানেরা সভ্য ইউরোপে এমন হবে, তা ভাবতেও পারেনি। তাই তাদের প্রতিরোধের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এই নির্মূল অভিযান সভ্য ইউরোপে সাড়ে তিন বছর চলতে থাকে। হাজার হাজার মুসলমান নর-নারী হত্যাযজ্ঞের শিকার হয় এবং ২০ লাখ মুসলমান দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।
সার্বদের তাণ্ডবলীলার সবচেয়ে বড় শিকার সেব্রেনিৎসা শহরের মানুষ। জাতিসঙ্ঘ ওই শহরটিকে নিরাপদ শহর ঘোষণা করার পরও ১৯৯৫ সালে সার্বরা সেখানে আগ্রাসন চালায় এবং জাতিসঙ্ঘের পর্যবেক্ষক সেনাদলের সামনেই তারা আট হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করে। বসনিয়ার যুদ্ধে দেশটির এক লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
৪৪ মাস ধরে সারায়েভো অবরোধের ঘটনা ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর অন্যতম নায়ক সাবেক সার্ব সেনাপ্রধান জেনারেল রাদোভান কারাদজিচ। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালত কুখ্যাত এই ‘বলকানের কসাই’কে ২০১৬ সালে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
ওই সময় বিচারক অলফোনস অরিয়ে তার রায়ে বলেন, সেব্রেনিৎসায় বসবাসরত মুসলমানদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে অপরাধীরা ওই অপরাধ সংঘটিত করেছিল। ‘বসনিয়ার কসাই’ হিসেবে খ্যাত রাদোভান কারাদজিচের বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়ার এই যুদ্ধে কারাদিজিচের নেতৃত্বে তার বাহিনী এসব অপরাধ সংঘটিত করে।
আদালত কারাদজিচকে দেয়া ৪০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছে। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য শহর সেব্রেনিৎসায় গণহত্যা চালানোর দায়ে তাকে দেয়া এই দণ্ড চূড়ান্ত রায়ে বহাল রেখেছেন যুগোস্লাভিয়ায় যুদ্ধাপরাধ তদন্তে গঠিত জাতিসঙ্ঘ ট্রাইব্যুনাল।
দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন রাদোভান কারাদজিচ। কিন্তু বিচারক জোয়েনসেন এই রায় ঘোষণার সময় বলেন, কারাজদিচ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, বসনিয়ার সার্ব সেনাদের কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে অপরাধের তদন্ত করা ও অপরাধীদের শাস্তি দেয়া কারাদজিচের দায়িত্ব ছিল বলে বিচারিক ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছে, তাতে ত্রুটি প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন কারাদজিচ।
৭৩ বছর বয়সের কারাদজিচ বসনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৯৫ সালে সেব্রেনিৎসায় গণহত্যায় ভূমিকার জন্য তাকে ‘বলকানের কসাই’ বলা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে এটি সবচেয়ে খারাপ জঘন্য গণহত্যা।
এই রায় বহাল থাকায় অনেকেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এই রায় ন্যায়বিচারের জন্য ঐতিহাসিক বলেছেন অনেকে। যদিও অনেকেই তাকে বাকি জীবন কারাগারেই দেখতে চেয়েছিলেন। তবে তার এই রায় দেশটিতে যে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
No comments