ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি এমন হলো কেন by সানজানা চৌধুরী
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgGQrDtZfhvGl1GD2XiBVnUz7K-v2ixn95CYWXkXYkmj8CooN57OGxjTR5djItgPJ1mEo0eYaLI5gF1pnisHahbwuCHbjoNJKOpCT2kRiS8gc5SqfSLXIMpri108S8c_Vlo5VtwGRaEGtY/s400/%25E0%25A6%25A2%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AF%25E0%25A6%25BC+%25E0%25A6%25A1%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%2599%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%2597%25E0%25A7%2581+%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B8%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A5%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BF.jpg)
ঢাকায় আজিমপুরের বাসিন্দা জিনাত
শারমিনের বাড়ির সামনের রাস্তায় গত কয়েকদিন আগে মশার ওষুধ স্প্রে করে
যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু সেই ওষুধ এলাকার
মশা কমাতে পারেনি বলে তার অভিযোগ।
তিনি মনে করেন, যে নিয়মে ওষুধ ছিটানো হয়েছে তা যথাযথ নয়।
"তারা
তো রাস্তার পাশে ওষুধ ছিটিয়ে চলে যায়। তখন দেখা যায় যে সব মশা বাসায়
ঢুকে পড়ে। আর ইদানিং বৃষ্টির কারণে পানি জমে। এদিকের ড্রেনগুলোও সব খোলা।
মশাগুলোর লার্ভা তো ওই পানিতেই থাকে। সেগুলোর জন্য তো সিটি কর্পোরেশন কিছু
করে না," বলেন মিসেস শারমিন।
একই পরিস্থিতি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত মিরপুর এলাকার।
সেখানকার
বাসিন্দা পপি আহমেদের অভিযোগ: দিন দিন তার এলাকায় মশার উপদ্রব এতোটাই
বেড়েছে যে তীব্র গরমের মধ্যেও সারাদিন দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়
তাকে।
"আমি মিরপুরের যে এলাকায় থাকি তার পাশেই একটা বড় খাল আছে।
সেখানে আশেপাশের মানুষজন ময়লা ফেলতেই থাকে। আর এ কারণে এতো মশা যে দিনে
রাতে কখনোই জানালা খুলতে পারি না। কখন এসে ডেঙ্গু মশা কামড় দেয়, এখন যা
অবস্থা!"
তিনি জানান, গত কয়েক বছরে তার এলাকায় একবারও ওষুধ স্প্রে করতে দেখেননি মিসেস আহমেদ।
"সরকারি
লোকরা শুধু বলে যে ওনারা এটা করছে, ওটা করছে। কিন্তু বাস্তবে কয়েক বছর
আমার এলাকায় একবারও ওষুধ দিতে দেখলাম না। আর এগুলো নিয়ে কারও কাছে অভিযোগ
করেও লাভ নাই। আমাদের কষ্ট আমাদেরকেই ভোগ করতে হবে।"
দুই সিটির কাজে কৌশলগত পার্থক্য
দুই সিটি কর্পোরেশনের কাজে সমন্বয়হীনতার কারণে নগরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রাজধানীবাসীর।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের জরিপ থেকে জানা গেছে যে আগের চাইতে মশার ঘনত্ব কয়েকগুণ বাড়ার
কারণেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এতো ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে।
কিন্তু সমন্বয়হীনতার এমন অভিযোগ মানতে নারাজ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বর্তমান পরিস্থিতির জন্য জনবল সংকট এবং উত্তর সিটির অভিজ্ঞতার অভাবকে দায়ী করেন।
"আমাদের
মধ্যে যে সমন্বয় নেই এটা বলা যাবে না। আমাদের প্রধান সমস্যা হল জনবল। দুই
সিটি কর্পোরেশন চাহিদার ৪০% জনবল নিয়ে কাজ করছে। তাছাড়া উত্তর সিটি
কর্পোরেশনে যেসব কর্মকর্তারা কাজ করছেন, তাদের নিয়োগও হয়েছে সম্প্রতি।"
"তারমধ্যে এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাদের হয়তো একটু গুছিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি একসাথে কাজ করার।"
দুই
সিটি কর্পোরেশন গত দুদিন ধরে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ শুরুর কথা জানালেও
এখনও তাদের কাজে কৌশলগত কিছু পার্থক্য রয়েছে বলে জানান ঢাকা উত্তরের
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মোমিনুর রহমান মামুন।
"আমাদের
কার্যক্রম আমরা আমাদের মতো করছি। এখন দক্ষিণ কীভাবে করবে এটা তাদের
পরিকল্পনার ব্যাপার। কিন্তু এই মশক নিধন কার্যক্রমটা শুক্রবার থেকে আমরা
সমন্বিতভাবেই করছি। তবে তাদের মেশিন তাদের ওষুধ তারা কিভাবে ব্যবহার করবে,
জনবলকে কিভাবে কাজে লাগাবে সেটা তাদের ব্যাপার। একেক সিটির কৌশল ভিন্ন হতেই
পারে। তবে আমাদের লক্ষ্য একটাই। আর সেটা হল এই পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করা।"
দুই সিটির সমন্বয় নেই কেন
ডেঙ্গুবাহী
এডিস মশা নির্মূল ও ধ্বংসের শুনানিতে এক আইনজীবী আদালতকে বলেন, "উত্তরে
ওষুধ দিলে মশা দক্ষিণে যায়, দক্ষিণে দিলে উত্তরে যায়।" তার মতে এ কারণেই
মশা নিধন করা সম্ভব হয়নি।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের এমন সময়ে এ ধরনের বক্তব্যকে অমূলক বলে সমালোচনা করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ।
তার মতে, মশা নিধনে সঠিক সময়ে দুটো সিটি কর্পোরেশনের কাজের ব্যর্থতার কারণেই ডেঙ্গু এতোটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
তাদের
মধ্যে কোন সমন্বয় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, "দুটা সিটি আলাদা হলেও
সমস্যাকে আলাদা করার সুযোগ নাই। তার মধ্যে একটা হল এই মশা নিয়ন্ত্রণের
বিষয়টি। এটাকে অখণ্ডভাবে অ্যাড্রেস করতে হবে।"
"এই ডেঙ্গুর উৎপাত তো
নতুন কিছু না। গত ১০ বছর ধরেই চলে আসছে। এক্ষেত্রে তো তাদের আগে থেকেই
একটা পদক্ষেপ নেয়ার দরকার ছিল। সুতরাং এখানে দুই সিটির অগ্রিম পরিকল্পনার
অভাবের বিষয়টি স্পষ্ট।"
"যখন শুরু হয়ে গেছে, তখনও তাদেরকে বেসামাল
দেখা গিয়েছে। তারা কী করবেন সেটা যেন বুঝতে পারছেন না। তারা বলছেন, এক
সিটির মশা আরেক সিটিতে চলে যাচ্ছে, মশার ওষুধ কাজ করে না। এই যে একেক সময়
তাদের নানা রকম কথা, এগুলো তাদের বিশৃঙ্খল অবস্থাকেই রিপ্রেজেন্ট করে,"
বলেন তিনি।
তবে দুই সিটি কর্পোরেশন যদি সমন্বয়ের ভিত্তিতে একটি
অভিন্ন নীতিমালার আওতায় কাজ করে তাহলে দৃশ্যপট বদলাবে বলে মনে করেন
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ।
No comments