গোয়েন্দাজাল: মোসাদের চকোলেটে বিষের প্রলেপ by মোহাম্মদ আবুল হোসেন
ইসরাইলের
পারমাণবিক কর্মসূচি আরো বিস্তৃত করার জন্য লিকেম-মোসাদ ১৯৬৮ সালে একটি
অপারেশন পরিচালনা করে। এর নাম দেয়া হয় অপারেশন প্ল্যামবেট। ওই সময়
অ্যান্টিওয়ার্প থেকে জেনোয়া যাচ্ছিল জার্মানির মালবাহী জাহাজ ‘শিয়ার্সবার্গ
এ’। এতে ছিল ইউরেনিয়ামযুক্ত ২০০ টন ইয়েলো-কেক। তা ইসরাইলের একটি জাহাজে
স্থানান্তর হওয়ার পর নিখোঁজ হয়ে যায় ওই জাহাজটি।
১৯৭২ সালে জার্মানির মিউনিখে একটি গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এতে ইসরাইলের অলিম্পিক দলের ১১ সদস্য নিহত হয়েছিলেন। এর জবাবে মোসাদ একটি অভিযান পরিচালনা করে।
এর নাম দেয়া হয় অপারেশন র্যাথ অব গড। যা অপারেশন ‘বেয়োনেট’ নামেও পরিচিত। এ অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল মিউনিখ গণহত্যায় জড়িতদের হত্যা করা। মূল টার্গেট ছিল ফিলিস্তিনের সশস্ত্র উগ্রপন্থি গ্রুপ ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের’ সদস্যরা এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের অপারেটিভরা। এ অপারেশন অনুমোদন দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালের শরতে তখনকার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ার। ওই অপারেশন কমপক্ষে ২০ বছর অব্যাহত ছিল বলে মনে করা হয়। টিভিতে প্রচারিত ছবি ‘সোর্ড অব গিডিয়ন’ (১৯৮৬) এবং হলিউড পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের ২০০৫ সালের ছবি ‘মিউনিখ’-এ এই অপারেশন তুলে ধরা হয়েছে। এই অপারেশনের সময়ে পাঠানো হতো লেটার বোমা বা চিঠি বোমা। অর্থাৎ চিঠির মাধ্যমে বোমা পাঠানো হতো। তবে এসব হামলার কোনোটাই খুব ভয়াবহ ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল না কাউকে হত্যা করা। এমনই এক ঘটনা ঘটে নাৎসী যুদ্ধাপরাধী অ্যালোইস ব্রুনারের ক্ষেত্রে। তিনি ছিলেন পলাতক। তার হাতে পড়ে মোসাদের এমনই একটি লেটার বোমা। সেই চিঠি অ্যালোইস ব্রুনারের হাতে পড়ে ১৯৮০ সালে। তিনি যখন তা হাতে নেন তখন তা থেকে তার ডান হাতের চারটি আঙ্গুলই নষ্ট হয়ে যায়।
ফিলিস্তিনের লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের পপুলার ফ্রন্টের ফিলিস্তিনি এক নেতা ছিলেন ওয়াদি হাদাদ। তিনি আবু হানি নামেও পরিচিত ছিলেন। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তিনি বেশকিছু বেসামরিক বিমান ছিনতাই করেন ১৯৬০-এর দশক ও ১৯৭০-এর দশকে। এটা সংগঠিত করার বিষয়ে তাকে দায়ী করা হয়। তাকে হত্যার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বিষযুক্ত চকোলেট। ১৯৭৮ সালের ২৮শে মার্চ
তিনি মারা যান লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যানসারে। ২০০৬ সালে ‘স্ট্রাইকিং ব্যাক’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন আহারন ক্লেইন। এতে তিনি দাবি করেন, ড. ওয়াদি হাদাদকে হত্যা করেছে মোসাদ। তারা তার কাছে পাঠিয়েছিল বেলজিয়ান চকোলেট। এতে ছিল বিষের প্রলেপ দেয়া, যা খুব ধীরগতিতে কাজ করে। ফলে এই বিষক্রিয়া সহজে শনাক্ত করার মতো নয়। ফলে কয়েক মাস পড়ে মারা যান হাদাদ। ক্লেইন তার বইয়ে বলেছেন, এ জন্যই হাদাদ মারা যেতে সময় লেগেছে কয়েক মাস।
এক পর্যায়ে মোসাদ আবিষ্কার করে যে, জার্মান নাগরিক স্টিভেন স্মাইরেককে দলে ভিড়িয়েছে যোদ্ধা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এরপর স্টিভেন স্মাইরেক সফর করছিলেন ইসরাইলে। এ অবস্থায় তার ওপর কড়া নজর রাখে মোসাদ, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, জার্মান ইন্টারনাল সিকিউরিটি এজেন্সি ‘বুন্দেসামট ফার ভারফাসুঙ্গশটজ’ (বিএফভি) ও ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত। মোসাদের পরিচালিত এই অপারেশনে স্টিভেন স্মাইরেকের ওপর টানা পাখির দৃষ্টি রাখা হয়। তিনি ইসরাইলে অবতরণ করার পর পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ আছে, জার্মানির শিল্প-কারখানায়ও গোয়েন্দাবৃত্তি বা গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছে মোসাদ। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে বিএফভি’র প্রধান তার বিভাগের প্রধানদের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠান সতর্ক করে। এতে বলা হয়, জার্মানির কম্পিউটার বিষয়ক সর্বশেষ গোপনীয়তা চুরির ক্ষেত্রে প্রধান হুমকি হিসেবে রয়েছে মোসাদ।
১৯৭২ সালে জার্মানির মিউনিখে একটি গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এতে ইসরাইলের অলিম্পিক দলের ১১ সদস্য নিহত হয়েছিলেন। এর জবাবে মোসাদ একটি অভিযান পরিচালনা করে।
এর নাম দেয়া হয় অপারেশন র্যাথ অব গড। যা অপারেশন ‘বেয়োনেট’ নামেও পরিচিত। এ অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল মিউনিখ গণহত্যায় জড়িতদের হত্যা করা। মূল টার্গেট ছিল ফিলিস্তিনের সশস্ত্র উগ্রপন্থি গ্রুপ ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের’ সদস্যরা এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের অপারেটিভরা। এ অপারেশন অনুমোদন দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালের শরতে তখনকার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ার। ওই অপারেশন কমপক্ষে ২০ বছর অব্যাহত ছিল বলে মনে করা হয়। টিভিতে প্রচারিত ছবি ‘সোর্ড অব গিডিয়ন’ (১৯৮৬) এবং হলিউড পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের ২০০৫ সালের ছবি ‘মিউনিখ’-এ এই অপারেশন তুলে ধরা হয়েছে। এই অপারেশনের সময়ে পাঠানো হতো লেটার বোমা বা চিঠি বোমা। অর্থাৎ চিঠির মাধ্যমে বোমা পাঠানো হতো। তবে এসব হামলার কোনোটাই খুব ভয়াবহ ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল না কাউকে হত্যা করা। এমনই এক ঘটনা ঘটে নাৎসী যুদ্ধাপরাধী অ্যালোইস ব্রুনারের ক্ষেত্রে। তিনি ছিলেন পলাতক। তার হাতে পড়ে মোসাদের এমনই একটি লেটার বোমা। সেই চিঠি অ্যালোইস ব্রুনারের হাতে পড়ে ১৯৮০ সালে। তিনি যখন তা হাতে নেন তখন তা থেকে তার ডান হাতের চারটি আঙ্গুলই নষ্ট হয়ে যায়।
ফিলিস্তিনের লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের পপুলার ফ্রন্টের ফিলিস্তিনি এক নেতা ছিলেন ওয়াদি হাদাদ। তিনি আবু হানি নামেও পরিচিত ছিলেন। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তিনি বেশকিছু বেসামরিক বিমান ছিনতাই করেন ১৯৬০-এর দশক ও ১৯৭০-এর দশকে। এটা সংগঠিত করার বিষয়ে তাকে দায়ী করা হয়। তাকে হত্যার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বিষযুক্ত চকোলেট। ১৯৭৮ সালের ২৮শে মার্চ
তিনি মারা যান লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যানসারে। ২০০৬ সালে ‘স্ট্রাইকিং ব্যাক’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন আহারন ক্লেইন। এতে তিনি দাবি করেন, ড. ওয়াদি হাদাদকে হত্যা করেছে মোসাদ। তারা তার কাছে পাঠিয়েছিল বেলজিয়ান চকোলেট। এতে ছিল বিষের প্রলেপ দেয়া, যা খুব ধীরগতিতে কাজ করে। ফলে এই বিষক্রিয়া সহজে শনাক্ত করার মতো নয়। ফলে কয়েক মাস পড়ে মারা যান হাদাদ। ক্লেইন তার বইয়ে বলেছেন, এ জন্যই হাদাদ মারা যেতে সময় লেগেছে কয়েক মাস।
এক পর্যায়ে মোসাদ আবিষ্কার করে যে, জার্মান নাগরিক স্টিভেন স্মাইরেককে দলে ভিড়িয়েছে যোদ্ধা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এরপর স্টিভেন স্মাইরেক সফর করছিলেন ইসরাইলে। এ অবস্থায় তার ওপর কড়া নজর রাখে মোসাদ, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, জার্মান ইন্টারনাল সিকিউরিটি এজেন্সি ‘বুন্দেসামট ফার ভারফাসুঙ্গশটজ’ (বিএফভি) ও ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত। মোসাদের পরিচালিত এই অপারেশনে স্টিভেন স্মাইরেকের ওপর টানা পাখির দৃষ্টি রাখা হয়। তিনি ইসরাইলে অবতরণ করার পর পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ আছে, জার্মানির শিল্প-কারখানায়ও গোয়েন্দাবৃত্তি বা গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছে মোসাদ। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে বিএফভি’র প্রধান তার বিভাগের প্রধানদের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠান সতর্ক করে। এতে বলা হয়, জার্মানির কম্পিউটার বিষয়ক সর্বশেষ গোপনীয়তা চুরির ক্ষেত্রে প্রধান হুমকি হিসেবে রয়েছে মোসাদ।
মোসাদকাণ্ডে সুন্দরী যুবতীসহ ধরা পড়লেন জিয়াদ
লেবাননের
সুপরিচিত আর্টিস্ট, সাংবাদিক ও কাহিনীকার জিয়াদ আহমদ ইতানি। সরকারের
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, গোয়েন্দা সংস্থার সব গোপন খবর, এমন কি রাষ্ট্রের
গোপন তথ্য বের করে নিতে তার পেছনে অতি সুন্দরী এক যুবতীকে লেলিয়ে দিলো
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ওই যুবতী মোসাদের একজন এজেন্ট হয়ে
জিয়াদের সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি একজন সুইডিশ নাগরিক হিসেবে নিজেকে পরিচয়
দেন। তার সঙ্গে আস্তে আস্তে
প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জিয়াদ সাংবাদিক হলেও বুঝতে পারেন নি ওই যুবতী মোসাদের এজেন্ট। তাদের প্রেম যখন পরিণত তখন তা শুধু মৌখিক কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না। সেই সম্পর্ক গড়ালো বিছানায়।
উন্মাতাল প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে তারা যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন। একবার দু’বার নয়। অনেকবার এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ওই যুবতীর সঙ্গে জিয়াদ যখন বিছানায় বেসামাল তখন সেই দৃশ্য গোপনে ভিডিওতে ধারণ করে মোসাদের অন্য এজেন্টরা। ব্যাস, কেল্লাফতে! জিয়াদ আহমাদ ইতানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হলো মোসাদের পক্ষ থেকে। বলা হলো লেবাননের সব কিছুতে তাকে গুপ্তচর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে অস্বীকৃতি জানান প্রথম দিকে জিয়াদ। কিন্তু তাকে চাপ দেয়া হয়। বলা হয়, ওই যুবতীর সঙ্গে তার যৌন সম্পর্কের ভিডিও আছে তাদের হাতে। তিনি যদি মোসাদের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে ওই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়া হবে। এমন চাপে পড়ে জিয়াদ আহমাদ ইতানি রাজি হয়ে যান মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে। ঘটনাটি খুব বেশিদিন আগের নয়। ২০১৭ সালে এ ঘটনায় ইসরাইলের গুপ্তচর সন্দেহে এ বছরই ২৪শে নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় জিয়াদ আহমাদ ইতানিকে। অভিযোগ আনা হয়, লেবাননের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছেন তিনি। এমন অভিযোগ নিয়ে কাজ করে সরকারি সংস্থা লেবানিজ স্টেটস সিকিউরিটি। তারা নিশ্চিত করে যে, ইসরাইলের মোসাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন জিয়াদ। এই ইসরাইল এবং লেবানন হলো পরস্পরের ঘোর বিরোধী রাষ্ট্র। এক পর্যায়ে বিবৃতি দেয়া হয়। বলা হয়, বৈরুতে জিয়াদের বাসায় অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। সেখানে এমন দাবির পক্ষে অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক, চারটি ল্যাপটপ, ৫টি মোবাইল ফোন। এতে করে গোপন সব ডাটা সংরক্ষণ করতেন তিনি। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জিয়াদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
আরব অঞ্চলে গোয়েন্দাগিরি চালাতে গিয়ে মোসাদ এমনি উপায়ে অনেক এজেন্টকে ফাঁদে ফেলে তাদের দলে ভেড়ায়। সুন্দরীদের ব্যবহার করে এভাবে সদস্য সংগ্রহ করা বা শিকার ধরাকে বলা হয় ‘হানি ট্রাপ’। ১৯৫০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত মোসাদ আরব অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাত শ্রেণিকে এক্ষেত্রে টার্গেট করেছে। কিন্তু জিয়াদ আহমাদ ইতানির মতো একজন সাংবাদিককে ইসরাইলের গুপ্তচর বানানোর মতো বিষয় কমই ঘটেছে। দৈনিক আল আকবার পত্রিকার উপ-সম্পাদক পিয়েরে আবি সাব বলেন, জিয়াদের ঘটনাটি বলে দেয় মোসাদ এ অঞ্চলে নতুন এক গোয়েন্দা যুদ্ধ শুরু করেছে। তারা আরব অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করে এমন একটি রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে যাতে তাদেরকে একটি স্বাভাবিক দেশ হিসেবে মেনে নেয় সবাই। ১৯৭৯ সালে ও ১৯৯৪ সালে যথাক্রমে মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে ইসরাইল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। তার অনেক আগে থেকেই আরব ও ইউরোপীয় অঞ্চলে দায়মুক্তি পাচ্ছে মোসাদ। এসব দেশে তারা ইসরাইলের শত্রুদের হত্যা করছে। তাদের সদস্য বৃদ্ধি করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফিলিস্তিনের বিখ্যাত বোদ্ধা ও লেখক ঘাসান কানাফানিকে ১৯৭২ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হত্যা করে ইসরাইলের মোসাদ। তারা ১৯৮২ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আরো হত্যা করে মিশরের পারমাণবিক বিজ্ঞানী ইয়াহিয়া আল মাশাদকে। তবে মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে তারা শান্তিচুক্তি করার পর দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তারা ফিলিস্তিনিদের হত্যার দিকে মনোনিবেশ করে। বর্তমানে অনেক আরব দেশের রাজধানীতে কাজ করছে মোসাদের বহু মিত্র। কতগুলো দেশে সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে তারা।
প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জিয়াদ সাংবাদিক হলেও বুঝতে পারেন নি ওই যুবতী মোসাদের এজেন্ট। তাদের প্রেম যখন পরিণত তখন তা শুধু মৌখিক কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না। সেই সম্পর্ক গড়ালো বিছানায়।
উন্মাতাল প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে তারা যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন। একবার দু’বার নয়। অনেকবার এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ওই যুবতীর সঙ্গে জিয়াদ যখন বিছানায় বেসামাল তখন সেই দৃশ্য গোপনে ভিডিওতে ধারণ করে মোসাদের অন্য এজেন্টরা। ব্যাস, কেল্লাফতে! জিয়াদ আহমাদ ইতানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হলো মোসাদের পক্ষ থেকে। বলা হলো লেবাননের সব কিছুতে তাকে গুপ্তচর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে অস্বীকৃতি জানান প্রথম দিকে জিয়াদ। কিন্তু তাকে চাপ দেয়া হয়। বলা হয়, ওই যুবতীর সঙ্গে তার যৌন সম্পর্কের ভিডিও আছে তাদের হাতে। তিনি যদি মোসাদের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে ওই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়া হবে। এমন চাপে পড়ে জিয়াদ আহমাদ ইতানি রাজি হয়ে যান মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে। ঘটনাটি খুব বেশিদিন আগের নয়। ২০১৭ সালে এ ঘটনায় ইসরাইলের গুপ্তচর সন্দেহে এ বছরই ২৪শে নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় জিয়াদ আহমাদ ইতানিকে। অভিযোগ আনা হয়, লেবাননের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছেন তিনি। এমন অভিযোগ নিয়ে কাজ করে সরকারি সংস্থা লেবানিজ স্টেটস সিকিউরিটি। তারা নিশ্চিত করে যে, ইসরাইলের মোসাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন জিয়াদ। এই ইসরাইল এবং লেবানন হলো পরস্পরের ঘোর বিরোধী রাষ্ট্র। এক পর্যায়ে বিবৃতি দেয়া হয়। বলা হয়, বৈরুতে জিয়াদের বাসায় অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। সেখানে এমন দাবির পক্ষে অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক, চারটি ল্যাপটপ, ৫টি মোবাইল ফোন। এতে করে গোপন সব ডাটা সংরক্ষণ করতেন তিনি। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জিয়াদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
আরব অঞ্চলে গোয়েন্দাগিরি চালাতে গিয়ে মোসাদ এমনি উপায়ে অনেক এজেন্টকে ফাঁদে ফেলে তাদের দলে ভেড়ায়। সুন্দরীদের ব্যবহার করে এভাবে সদস্য সংগ্রহ করা বা শিকার ধরাকে বলা হয় ‘হানি ট্রাপ’। ১৯৫০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত মোসাদ আরব অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাত শ্রেণিকে এক্ষেত্রে টার্গেট করেছে। কিন্তু জিয়াদ আহমাদ ইতানির মতো একজন সাংবাদিককে ইসরাইলের গুপ্তচর বানানোর মতো বিষয় কমই ঘটেছে। দৈনিক আল আকবার পত্রিকার উপ-সম্পাদক পিয়েরে আবি সাব বলেন, জিয়াদের ঘটনাটি বলে দেয় মোসাদ এ অঞ্চলে নতুন এক গোয়েন্দা যুদ্ধ শুরু করেছে। তারা আরব অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করে এমন একটি রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে যাতে তাদেরকে একটি স্বাভাবিক দেশ হিসেবে মেনে নেয় সবাই। ১৯৭৯ সালে ও ১৯৯৪ সালে যথাক্রমে মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে ইসরাইল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। তার অনেক আগে থেকেই আরব ও ইউরোপীয় অঞ্চলে দায়মুক্তি পাচ্ছে মোসাদ। এসব দেশে তারা ইসরাইলের শত্রুদের হত্যা করছে। তাদের সদস্য বৃদ্ধি করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফিলিস্তিনের বিখ্যাত বোদ্ধা ও লেখক ঘাসান কানাফানিকে ১৯৭২ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হত্যা করে ইসরাইলের মোসাদ। তারা ১৯৮২ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আরো হত্যা করে মিশরের পারমাণবিক বিজ্ঞানী ইয়াহিয়া আল মাশাদকে। তবে মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে তারা শান্তিচুক্তি করার পর দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তারা ফিলিস্তিনিদের হত্যার দিকে মনোনিবেশ করে। বর্তমানে অনেক আরব দেশের রাজধানীতে কাজ করছে মোসাদের বহু মিত্র। কতগুলো দেশে সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে তারা।
No comments