শিশুদের যেভাবে জঙ্গি বানাচ্ছে আইএস
ইরাকের কিরকুকে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর আগমুহূর্তে রোববার ১২ বছরের এক শিশুকে আটক করেছে পুলিশ। শিশুটির গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ তাকে চ্যালেঞ্জ করে। তখন তার কোমরে বিস্ফোরণের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাকে আÍঘাতী হামলার জন্য প্রস্তুত করে মাঠে নামিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ঘটনার একদিন আগেই তুরস্কে এক বিয়ে বাড়িতে আÍঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেছেন, হামলাকারীর বয়স ১২-১৪ বছর। শিশু জঙ্গিদের ব্যবহার করে হামলার নজির ইরাক-নাইজেরিয়া হয়ে এবার তুরস্কে দেখা গেল। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে শিশুদের ব্যবহার নতুন নয়। শ্রীলংকার তামিল টাইগার, আফ্রিকা-কলম্বিয়ার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী গোয়েন্দাগিরি, চোরাকারবারি ও যোদ্ধা সহকারী হিসেবে শিশুদের ব্যবহার করেছে। তবে ইরাক-সিরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস শিশুদের ব্যাপক হারে আত্মঘাতী মিশনে ব্যবহার করছে। ইন্ডিপেন্ডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী নিজেদের তথাকথিত ‘খেলাফত’ কায়েমে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই ‘শাসন ব্যবস্থা’ টিকিয়ে রাখতে শিশুদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে আইএস। ‘আগামী প্রজন্মের’ জঙ্গি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া হিসেবে বিদেশী সদস্যদের সন্তানদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক জন হরগান ইউএসএ টুডেকে বলেন,
মোট ছয়টি ধাপে শিশুদের জঙ্গি হিসেবে গড়ে তুলছে আইএস। আইএসের কবল থেকে বেঁচে ফেরা বিভিন্ন মানুষের সাক্ষাৎকার, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও পুনর্বাসন কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে হরগান এ বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি বলেন, প্রথম পদক্ষেপ মোহাবিষ্ট করা। ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশুদের নিয়ে একত্রে জড়ো করে জঙ্গিরা। এরপর তাদের ক্যান্ডি-খেলনা কিনে দেয়। ধর্মের কথা বলে কোরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতা করে। বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে। এমনকি তাদের আইসক্রিম কিনে দেয়। ধীরে ধীরে তাদের হিংসাত্মক পথে নিয়ে যায়। সহিংসতায় অভ্যস্ত করতে তাদের বিভিন্ন শিরোশ্ছেদ অনুষ্ঠানে হাজির করানো হয়। একপর্যায়ে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ছুরি-তলোয়ার হাতে দৌড়াদৌড়ি করে, ইউনিফর্ম পরে মার্চ করে, অস্ত্রের মহড়া দেয়। অনেক সময় শিশুদের দিয়েই বিভিন্ন রক্তপাতের ঘটনা ঘটানো হয়। আইএসের এক প্রোপাগান্ডা ভিডিওতে চার বছর বয়সী এক ব্রিটিশ শিশুকে মৃত্যুদণ্ড দিতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, আইএস অধ্যুষিত এলাকায় শিশুদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। কোনো কোনো শিশুকে সেখানে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কেউ বা সেখানে আটকা পড়েছে। আবার আইএসের বিদেশী সদস্যদের সন্তানরাও ওই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে।
অন্তত ৫০ জন ব্রিটিশ শিশু-কিশোর ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে যুক্ত রয়েছে। আইএসের কথিত রাজধানী সিরিয়ার রাকাতে ধারণ করা ‘খেলাফতের শিশু’ নামে এক ভিডিওতে দেখা যায়, পাঁচ বছরের শিশুরাও আইএসের সামরিক পোশাক পরে আছে। আর তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সন্ত্রাসবাদের ওপর বার্ষিক প্রতিবেদনে ইউরোপোল জানিয়েছে, আইএসের শাসনে বেড়ে ওঠা শিশুদের নিয়ে তারা বিশেষভাবে চিন্তিত। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইএসের কথিত খেলাফতে রয়েছে অর্ধশতাধিক ব্রিটিশ শিশু। যাদের জঙ্গি দীক্ষায় প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। জাতিসংঘের নথি অনুযায়ী শুধু সিরিয়ায় ৩৬২ জন শিশু যুদ্ধকাজে জড়িত। এর মধ্যে ২৭৪ জন আইএসের আওতাধীন। এর আগে ‘চিলড্রেন অব ইসলামিক স্টেট’ নামের এক প্রতিবেদনে লন্ডনের সন্ত্রাসবিরোধী থিংক-ট্যাংক ‘কুইলিয়াম’ তার তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করেছেন, ৩১ হাজার গর্ভবতী নারীকে লালন করছে আইএস। তাদের গর্ভেই জš§ নেয়া শিশুরাই হবে আইএসের নতুন প্রজšে§র ‘জঙ্গি’। জন হরগান বলেন, এখন এসব শিশু অবশ্যই ‘ভিকটিম’। তবে তারা বড় হয়ে আগামী দিনের সন্ত্রাসী হবে। তখন কেউ তাদের ভিকটিম হিসেবে গণ্য করবে না।
No comments