একে একে বন্ধ হচ্ছে ইউরোপের দুয়ার
ইউরোপে ঢলনামা সিরিয়া শরণার্থীদের দুয়ার একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে একইসঙ্গে নতুন পথের সন্ধান করছেন শরণার্থীরা। এ ব্যাপারে তারা যে কোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। মঙ্গলবার হাঙ্গেরির সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ বিশেষ করে জার্মানিতে পৌঁছাতে নতুন যাত্রাপথ বেছে নিচ্ছে তারা। এরই মধ্যে নতুন রুট ক্রোয়েশিয়ার সার্বিয়া সীমান্তে পৌঁছেছে শরণার্থীদের প্রথম দলটি। হাঙ্গেরির রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী ভিকতর অরবান সার্বিয়া সীমান্তের পর রোমানিয়ার সঙ্গে সীমান্তেও কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে রোমানিয়া এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে।
বুধবার জার্মান পুলিশ বলেছে, ফরাসি সীমান্তেও তারা কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এছাড়া শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ডেনমার্ক। দেশটির অভিবাসনবিরোধী ক্ষমতাসীন দল এ ব্যাপারে একটি আইন পাস করতে যাচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপি বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। কোপেনহেগেন জানিয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার অভিবাসী ঢুকেছে। এর মধ্যে মাত্র ৯০০ জন আশ্রয়প্রার্থী হওয়ার আবেদন করেছে। এদিকে, সিরীয় শরণার্থীরা ডেনমার্কে যেতেও খুব একটা আগ্রহী নয়। ২৬ বছর বয়সী সিরিয়ার একজন লরি ড্রাইভার আবদুর রহমান আল শেহাগী বলেন, ‘ডেনমার্ক দেশটা আমাদের জন্য ভালো নয়।’ শেহাগী বর্তমানে সুইডিশ শহর মালমিতে রয়েছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে অস্ট্রিয়াও তাদের সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে। দেশটির সরকার বলছে, তাদের রেলওয়ে স্টেশনগুলো অভিবাসীতে ভরপুর হয়ে উঠেছে। সালজবুর্গের প্রধান স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া লাগতে পারে। সীমান্ত পাড়ির অনুমতি দেবে ক্রোয়েশিয়া : ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জোরান মিলানোভিক জানিয়েছেন, তার দেশ শরণার্থীদের সীমান্ত পাড়ির অনুমতি দেবে। বুধবার তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের গ্রহণ করতে ও নির্দেশনা দিতে প্রস্তুত। তারা কোন ধর্মের বা তাদের গায়ের রং কি তা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। তারা যেখানে ইচ্ছা যাবে, জার্মানি কিংবা স্ক্যান্ডিনেভিয়া...।
৩৬৭ শরণার্থীকে আটক করেছে হাঙ্গেরি : অবৈধভাবে হাঙ্গেরিতে ঢোকায় ৩৬৭ শরণার্থীকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। নতুন অভিবাসী আইন কার্যকরের পর মঙ্গলবার সার্বিয়া সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করে হাঙ্গেরি। এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি শত শত পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়। একটি রেলওয়ে ক্রসিংও বন্ধ করে দেয় হাঙ্গেরি। এতসব পদক্ষেপে হাঙ্গেরি সরকার দেশে অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে পারছে না। বুধবার পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার মোট ৩৬৭ জন শরণার্থী হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করেছে। তাদের সবাইকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৬ জনের বিরুদ্ধে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে ফেলা ও বাকি ৫১ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে। চলতি বছর অন্তত দুই লাখ শরণার্থী হাঙ্গেরি পাড়ি দিয়ে জার্মানিতে ঢুকেছে। শরণার্থীদের সাহায্য করতে আরব দেশগুলোর আহ্বান : সিরিয়ার শরণার্থীদের সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো। তেলসমৃদ্ধ এসব দেশ নিজরা কাউকে আশ্রয় দিচ্ছে না বলে সমালোচনা সত্ত্বেও মঙ্গলবার তারা এ আহ্বান জানায়। ছয় উপসাগরীয় রাষ্ট্রের জোট (জিসিসি) রিয়াদে এক বৈঠকের পর এ যৌথ বিবৃতিতে বলেন, শরণার্থীদের সহায়তা করা বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। সিরিয়া সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের প্রতিও আহ্বান জানান তারা।
ইউরোপযাত্রায় যে কোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত শরণার্থীরা : মিসরীয় কোস্টগার্ডের কাছে আটক হয়ে ১২ দিন রিমান্ডে ছিলেন সিরিয়ার তরুণী সাউদ ও তার ভাই। শত নির্যাতন সহ্য করলেও ইউরোপ যাওয়ার সংকল্প এক বিন্দুও সরে আসেননি তারা। যত ঝুঁকিই থাকুক, যে কোনো মূল্যে তারা ইউরোপে যেতে প্রস্তুত। খবর এএফপির। যুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে মিসরের উপকূলীয় শহর আলেক্সান্দ্রিয়ায় এসেছেন সাউদ (১৮)। তিনি ও তার ১৭ বছরের ভাই মোহাম্মদ তখন কোস্টগার্ডের হাতে। সাউদ বলেন, ‘কোস্টগার্ড আমাদের দিকে গুলি ছুড়েছিল। একজন মিসরীয় এতে আহত হন। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু পরে অনুভব করি, আমি ঠিক আছি।’ সাউদের বাবা আবু মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।
No comments