ভারতের আরেক মাউন্টেন ম্যান রাজারাম
বলিউডে এখন চলছে দশরথ মাঝি ক্রেইজ। নেওয়াজউদ্দিন অভিনীত বাস্তবধর্মী গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘মাঝি, দ্য মাউন্টেইন ম্যান’ ছবিই এর কারণ। স্ত্রী পাহাড় থেকে পড়ে আহত হওয়ার পর দু’হাতে পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন দশরথ। আর তারই গল্প রুপালি পর্দায় উঠে এসেছে নেওয়াজউদ্দিনের হাত ধরে। এরই মধ্যে ভারতে খোঁজ মিলেছে আরেক দশরথের। এবার বিহার নয়, নতুন মাউন্টেন ম্যানের সন্ধান মিলেছে মহারাষ্ট্রের আহমেদাবাদে। নাম তার রাজারাম ভাপকর। টানা ৫৭ বছরের চেষ্টায় পাহাড় ভেঙে যিনি বানিয়েছেন ৪০ কিলোমিটারের রাস্তা। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। ভাপকরের গ্রামের বাড়ি আহমেদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম গুন্ডেগাঁও। প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামটা থেকে দেউলগাঁও সদরে কোনো কাজে যেতে হলে ঘুরতে হতো প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ। অথচ সরলরেখায় সেই দূরত্বই মোটে ১০ কিলোমিটারের। মাঝখানে রয়েছে পাহাড়। সেই পাহাড় ভেঙেই ৪০ কিলোমিটারের সহজ রাস্তা তৈরি করেছেন ভাপকর। গ্রাম থেকে সদরে যেতে এখন পেরোতে হয় মোটে ১০ কিলোমিটার পথ। স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, আগে সাইকেল নিয়েও মুশকিল হতো এত লম্বা পথ পেরোনো। এখন বড় গাড়ি চলার পথ বানিয়ে ফেলেছেন ভাপকর। পরনে সাদা জামা-পায়জামা, মাথায় টুপি।
এই বেশেই তাকে দেখে এসেছেন গ্রামবাসীরা। স্বাধীনতার পরেই সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয় রাস্তা বানানোর জন্য। কিন্তু সাড়া মেলেনি। এরপরেই নিজেই চেষ্টা শুরু করেন ভাপকর। গুন্ডেগাঁও থেকে কোলেগাঁও হয়ে দেউলগাঁও পৌঁছনোর ঘুরপথটাকে সরলরেখা করার চেষ্টায় লেগে পড়েন তিনি। ১৯৫৭ সালে জেলা পরিষদের স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। পরের বছর থেকেই একা হাতে কাজ শুরু। একটা একটা করে পাথর ভেঙেছেন। কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দিলে তাদের পারিশ্রমিক নিজের পকেট থেকেই দিতেন তিনি। এ বিষয়ে ভাপকর বলেন, ‘আমার বেতনের অর্ধেক এ কাজে লাগাতাম আমি। সরকার থেকে একটা পয়সাও মেলেনি। ১৯৯১ সালে অবসর নেয়ার পরেও এককালীন অর্থ পেলে তা দিয়ে কিছু আধুনিক যন্ত্র আনিয়েছিলাম। পেনশনের টাকাও রাস্তার কাজেই ব্যয় করেছি।’ ভাপকরের বয়স বর্তমানে ৮৪ বছর। ৫৭ বছর ধরে খেটে ৪০ কিলোমিটার পথ বানিয়ে থেমেছেন তিনি। কিন্তু এত কঠিন কাজের স্বীকৃতি কি মিলেছে? ভাপকর বলেন, ‘বহু মানুষ সম্মান করেন। আর আমার গ্রামের মানুষগুলোর সহজ যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।’
No comments