প্রস্থানের কাছাকাছি ব্রিটিশরা by পিটার সাদারল্যান্ড
সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাবিষয়ক গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার বিরোধিতা শুরু হয়েছে। ব্যাপারটা তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নবিষয়ক ইতিবাচক মনোভাব সবচেয়ে জোরদার স্কটল্যান্ডেই।
যেমন, এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত একটি জরিপে দেখা যায়, জুন মাসে দেশটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না-থাকার বিষয়ে যদি কোনো গণভোট হতো, তাহলে ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে মত দিতেন, থাকার পক্ষে ভোট দিতেন ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু স্কটল্যান্ডে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একটি জরিপে দেখা যায়, সেখানকার ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ যুক্তরাজ্যের ইউনিয়নে থাকার পক্ষে মত দেবেন, বিপক্ষে দেবেন ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যান্য জরিপেও দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে স্কটল্যান্ডের মানুষ ইংল্যান্ডের মানুষের চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে বেশি ইতিবাচক।
তবে ওপরের ফলাফল থেকে শুরুতেই কোনো সিদ্ধান্ত টেনে ফেলা ঠিক হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না-থাকার ব্যাপারে ডেভিড ক্যামেরন যে গণভোটের প্রস্তাব করেছেন, সেটা হয়তো শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে না। তা ক্যামেরন ইউনিয়নে ব্রিটিশ সদস্যপদের শর্তাবলি সম্বন্ধে যতই পুনঃ আলোচনার কথা বলুন না কেন। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইউনিয়ন থেকে ব্রিটিশদের পদত্যাগের সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে। এতে স্কটল্যান্ডবিষয়ক গণভোটের গুরুত্ব মৌলিকভাবে পাল্টে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, তুলনামূলকভাবে অপরিচিত ব্যক্তি ও ইউকে হাউস অব লর্ডসের নেতা জোনাথন হিল জ্যাক ক্লদ জাঙ্কারের নেতৃত্বে গঠিত নতুন ইউরোপীয় কমিশনের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ব্রিটিশরা ইউনিয়ন-সংক্রান্ত একটানা যে ভুল করে যাচ্ছে, সেই তালিকায় এটি নতুন সংযোজন। ক্যামেরনের মুখপাত্র জুলাইয়ে বলেছেন, কমিশনের নতুন সভাপতির সঙ্গে প্রথম বৈঠকে তিনি হিলকে একটি মর্যাদাপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করবেন। তবে জাঙ্কারের কার্যালয় থেকে খুবই শীতল একটি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলা হয়েছে, নতুন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বসানো হবে আর ক্যামেরনের কাছে জাঙ্কারের কোনো ঋণ নেই।
কমিশনের প্রেসিডেন্ট পদে জাঙ্কারের নির্বাচনের বিরোধিতা করেছেন ক্যামেরন। ব্রিটিশ প্রেস তাঁকে হেনস্তা করতেও ছাড়েনি। ওদিকে ব্রিটিশ রাজনীতিতে হিল কোনো কেন্দ্রীয় চরিত্র নন, ফলে জাঙ্কার যখন কমিশনের বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেবেন, ক্যামেরন তখন কিছুটা বিচলিত হবেন। বহু জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদকে স্থান দিতে হবে জাঙ্কারকে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কাছ থেকে সে বিষয়ক অনুমোদন নেওয়াটাও খুব সহজ কাজ হবে না। আর ক্যামেরন যে জাঙ্কারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে উৎসাহ দেখাবেন না, তাতে কোনো বিস্ময় নেই, কিন্তু তাঁর বিরোধিতা ছিল খুব জোরালো।
ক্যামেরন কনজারভেটিভ পার্টির লোকদের আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন, তাঁর ইউরো-বিষয়ক সন্দেহবাতিকের কোনো কমতি নেই। এমনকি ক্যামেরন নাকি বলেছিলেন, জাঙ্কার নির্বাচিত হলে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে দেবে, এটি আসলে বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক। কারণ, ইউনিয়নে ব্রিটিশ সদস্যপদের চুক্তির শর্তাবলি নিয়ে পুনরালোচনা হতে হলে সেটা অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে হতে হবে, কমিশনের সঙ্গে নয়।
ক্যামেরন জাঙ্কারের প্রার্থিতা বানচালের যে ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন, তার মধ্য দিয়ে তিনি যে ২০১২ সালের ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক কমপ্যাক্ট গ্রহণের বিরোধিতা করেছেন, সেটা প্রতিভাত হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ব্রিটিশ অবস্থানের প্রতি যে সমর্থন জানিয়েছেন, ক্যামেরন সেটাতে অতি গুরুত্ব দিয়েছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ জার্মান ব্যক্তিই ক্যামেরনের এই স্বসৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার হাত বাড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ফলে ম্যার্কেল চাইলেই তেমন কিছু করতে পারবেন না।
ক্যামেরনের উপদেষ্টারা ম্যার্কেলের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তায় যদি অতি গুরুত্বারোপ করেন, তাহলে তাঁরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভূমিকাকে খাটো করে দেখছেন। অনেক দিন ধরেই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এটা পরিষ্কার করে বলে আসছে যে তারা কমিশনের সভাপতি নিয়োগসংক্রান্ত নবপ্রাপ্ত ক্ষমতা কীভাবে ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে তাদের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। লিসবন চুক্তির মাধ্যমে তারা এ ক্ষমতা লাভ করেছে। কিন্তু ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতাধর রাজনৈতিক শক্তিগুলো জাঙ্কারকে সমর্থন দিতে গিয়ে নির্বাচন-উত্তর যে দ্রুত মতৈক্যে পৌঁছেছে, সে কারণে ক্যামেরন কিছুটা বেকায়দায় পড়ে গেছেন।
ইউনিয়ন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার যে ঘোষণা ক্যামেরন দিয়েছেন, তাতে সেখানে ব্রিটিশ আধিপত্য তো বাড়েইনি, উল্টো ক্যামেরন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রভাব বিনষ্ট হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে, ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্রগুলো একে অপরকে অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করে। কিন্তু ইউনিয়নে এই ধারণা ক্রমেই পোক্ত হচ্ছে যে ক্যামেরন এই সদ্বিশ্বাসের অপব্যবহার করছেন।
ফলে জাঙ্কার প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ বজায় রাখা কঠিন হবে, ক্যামেরনের এ রকম ভবিষ্যদ্বাণী এখন আপনাআপনি পূরণ হওয়ার পথে রয়েছে। জাঙ্কারের প্রার্থিতা রাজনৈতিক নীতির ব্যাপার। ক্যামেরন ঐতিহাসিকভাবে কেন্দ্রিকতা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষপাতী অন্ধকার শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়ছেন, এমন কথা বলা হলে ইউরোপ থেকে ইংল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতার যে ধারণা রয়েছে, সেটাকে পাকাপোক্ত করা হয়, এদিকে ক্যামেরন আবার এ লক্ষ্যে সফল নন। স্কটল্যান্ডের ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা ঠিক এ রকম নয়।
২০১৫ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্যামেরন যদি আবারও ক্ষমতায় আসেন, তাহলে ইউতে ব্রিটিশ সদস্যপদ টেকাতে তাঁকে অনেক বাধার পাহাড় পেরোতে হবে। না, শুধু ইউরোপীয় দেশগুলোই নয়, তাঁর কনজারভেটিভ পার্টিও একপ্রকার চায় না ব্রিটেন ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে থাকুক। হ্যাঁ, ক্যামেরনের নিজের পুনঃ আলোচনার ফলাফলের ওপর অনুষ্ঠেয় গণভোটে ‘না’ রায় এলে সেটা গ্রহণ না করা তাঁর জন্য কঠিন হবে।
আগামী বছরের নির্বাচনে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের ইস্যুটি ঝুঁকির মুখে পড়বে। ব্রিটিশ ভোটাররা ইউরোপের ওপর তাঁদের রায়ের কী প্রভাব পড়বে, সেটা না বুঝে ভোট দিলে তা শেষমেশ বিয়োগান্ত হবে। একটা ব্যাপার মোটামুটি পরিষ্কার: স্কটল্যান্ড যদি সেপ্টেম্বরে আলাদা হওয়ার পক্ষে রায় দেয় আর তারপর ব্রিটেনের অবশিষ্ট অংশে যদি ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ নিয়ে গণভোট হয়, তাহলে যাঁরা সদস্যপদ রাখার পক্ষে, তাঁদের পক্ষে জয়লাভ কঠিন হয়ে উঠবে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
পিটার সাদারল্যান্ড: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের চেয়ারম্যান।
যেমন, এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত একটি জরিপে দেখা যায়, জুন মাসে দেশটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না-থাকার বিষয়ে যদি কোনো গণভোট হতো, তাহলে ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে মত দিতেন, থাকার পক্ষে ভোট দিতেন ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু স্কটল্যান্ডে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একটি জরিপে দেখা যায়, সেখানকার ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ যুক্তরাজ্যের ইউনিয়নে থাকার পক্ষে মত দেবেন, বিপক্ষে দেবেন ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যান্য জরিপেও দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে স্কটল্যান্ডের মানুষ ইংল্যান্ডের মানুষের চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে বেশি ইতিবাচক।
তবে ওপরের ফলাফল থেকে শুরুতেই কোনো সিদ্ধান্ত টেনে ফেলা ঠিক হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না-থাকার ব্যাপারে ডেভিড ক্যামেরন যে গণভোটের প্রস্তাব করেছেন, সেটা হয়তো শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে না। তা ক্যামেরন ইউনিয়নে ব্রিটিশ সদস্যপদের শর্তাবলি সম্বন্ধে যতই পুনঃ আলোচনার কথা বলুন না কেন। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইউনিয়ন থেকে ব্রিটিশদের পদত্যাগের সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে। এতে স্কটল্যান্ডবিষয়ক গণভোটের গুরুত্ব মৌলিকভাবে পাল্টে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, তুলনামূলকভাবে অপরিচিত ব্যক্তি ও ইউকে হাউস অব লর্ডসের নেতা জোনাথন হিল জ্যাক ক্লদ জাঙ্কারের নেতৃত্বে গঠিত নতুন ইউরোপীয় কমিশনের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ব্রিটিশরা ইউনিয়ন-সংক্রান্ত একটানা যে ভুল করে যাচ্ছে, সেই তালিকায় এটি নতুন সংযোজন। ক্যামেরনের মুখপাত্র জুলাইয়ে বলেছেন, কমিশনের নতুন সভাপতির সঙ্গে প্রথম বৈঠকে তিনি হিলকে একটি মর্যাদাপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করবেন। তবে জাঙ্কারের কার্যালয় থেকে খুবই শীতল একটি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলা হয়েছে, নতুন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বসানো হবে আর ক্যামেরনের কাছে জাঙ্কারের কোনো ঋণ নেই।
কমিশনের প্রেসিডেন্ট পদে জাঙ্কারের নির্বাচনের বিরোধিতা করেছেন ক্যামেরন। ব্রিটিশ প্রেস তাঁকে হেনস্তা করতেও ছাড়েনি। ওদিকে ব্রিটিশ রাজনীতিতে হিল কোনো কেন্দ্রীয় চরিত্র নন, ফলে জাঙ্কার যখন কমিশনের বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেবেন, ক্যামেরন তখন কিছুটা বিচলিত হবেন। বহু জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদকে স্থান দিতে হবে জাঙ্কারকে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কাছ থেকে সে বিষয়ক অনুমোদন নেওয়াটাও খুব সহজ কাজ হবে না। আর ক্যামেরন যে জাঙ্কারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে উৎসাহ দেখাবেন না, তাতে কোনো বিস্ময় নেই, কিন্তু তাঁর বিরোধিতা ছিল খুব জোরালো।
ক্যামেরন কনজারভেটিভ পার্টির লোকদের আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন, তাঁর ইউরো-বিষয়ক সন্দেহবাতিকের কোনো কমতি নেই। এমনকি ক্যামেরন নাকি বলেছিলেন, জাঙ্কার নির্বাচিত হলে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে দেবে, এটি আসলে বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক। কারণ, ইউনিয়নে ব্রিটিশ সদস্যপদের চুক্তির শর্তাবলি নিয়ে পুনরালোচনা হতে হলে সেটা অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে হতে হবে, কমিশনের সঙ্গে নয়।
ক্যামেরন জাঙ্কারের প্রার্থিতা বানচালের যে ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন, তার মধ্য দিয়ে তিনি যে ২০১২ সালের ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক কমপ্যাক্ট গ্রহণের বিরোধিতা করেছেন, সেটা প্রতিভাত হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ব্রিটিশ অবস্থানের প্রতি যে সমর্থন জানিয়েছেন, ক্যামেরন সেটাতে অতি গুরুত্ব দিয়েছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ জার্মান ব্যক্তিই ক্যামেরনের এই স্বসৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার হাত বাড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ফলে ম্যার্কেল চাইলেই তেমন কিছু করতে পারবেন না।
ক্যামেরনের উপদেষ্টারা ম্যার্কেলের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তায় যদি অতি গুরুত্বারোপ করেন, তাহলে তাঁরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভূমিকাকে খাটো করে দেখছেন। অনেক দিন ধরেই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এটা পরিষ্কার করে বলে আসছে যে তারা কমিশনের সভাপতি নিয়োগসংক্রান্ত নবপ্রাপ্ত ক্ষমতা কীভাবে ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে তাদের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। লিসবন চুক্তির মাধ্যমে তারা এ ক্ষমতা লাভ করেছে। কিন্তু ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতাধর রাজনৈতিক শক্তিগুলো জাঙ্কারকে সমর্থন দিতে গিয়ে নির্বাচন-উত্তর যে দ্রুত মতৈক্যে পৌঁছেছে, সে কারণে ক্যামেরন কিছুটা বেকায়দায় পড়ে গেছেন।
ইউনিয়ন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার যে ঘোষণা ক্যামেরন দিয়েছেন, তাতে সেখানে ব্রিটিশ আধিপত্য তো বাড়েইনি, উল্টো ক্যামেরন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রভাব বিনষ্ট হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে, ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্রগুলো একে অপরকে অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করে। কিন্তু ইউনিয়নে এই ধারণা ক্রমেই পোক্ত হচ্ছে যে ক্যামেরন এই সদ্বিশ্বাসের অপব্যবহার করছেন।
ফলে জাঙ্কার প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ বজায় রাখা কঠিন হবে, ক্যামেরনের এ রকম ভবিষ্যদ্বাণী এখন আপনাআপনি পূরণ হওয়ার পথে রয়েছে। জাঙ্কারের প্রার্থিতা রাজনৈতিক নীতির ব্যাপার। ক্যামেরন ঐতিহাসিকভাবে কেন্দ্রিকতা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষপাতী অন্ধকার শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়ছেন, এমন কথা বলা হলে ইউরোপ থেকে ইংল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতার যে ধারণা রয়েছে, সেটাকে পাকাপোক্ত করা হয়, এদিকে ক্যামেরন আবার এ লক্ষ্যে সফল নন। স্কটল্যান্ডের ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা ঠিক এ রকম নয়।
২০১৫ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্যামেরন যদি আবারও ক্ষমতায় আসেন, তাহলে ইউতে ব্রিটিশ সদস্যপদ টেকাতে তাঁকে অনেক বাধার পাহাড় পেরোতে হবে। না, শুধু ইউরোপীয় দেশগুলোই নয়, তাঁর কনজারভেটিভ পার্টিও একপ্রকার চায় না ব্রিটেন ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে থাকুক। হ্যাঁ, ক্যামেরনের নিজের পুনঃ আলোচনার ফলাফলের ওপর অনুষ্ঠেয় গণভোটে ‘না’ রায় এলে সেটা গ্রহণ না করা তাঁর জন্য কঠিন হবে।
আগামী বছরের নির্বাচনে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের ইস্যুটি ঝুঁকির মুখে পড়বে। ব্রিটিশ ভোটাররা ইউরোপের ওপর তাঁদের রায়ের কী প্রভাব পড়বে, সেটা না বুঝে ভোট দিলে তা শেষমেশ বিয়োগান্ত হবে। একটা ব্যাপার মোটামুটি পরিষ্কার: স্কটল্যান্ড যদি সেপ্টেম্বরে আলাদা হওয়ার পক্ষে রায় দেয় আর তারপর ব্রিটেনের অবশিষ্ট অংশে যদি ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ নিয়ে গণভোট হয়, তাহলে যাঁরা সদস্যপদ রাখার পক্ষে, তাঁদের পক্ষে জয়লাভ কঠিন হয়ে উঠবে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
পিটার সাদারল্যান্ড: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের চেয়ারম্যান।
No comments