‘ন্যায্য বিচার’ করবে যুক্তরাষ্ট্র
ইরাক ও সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দ্বিতীয় মার্কিন সাংবাদিককে শিরশ্ছেদ করার পর নড়েচড়ে বসছে পাশ্চাত্য। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এ ঘটনার ‘ন্যায্য বিচার’ করা হবে। ইরাকে আরও ৩৫০ সেনাসদস্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। দেশটি বলেছে, তারাও ইরাকে বিমান হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। মার্কিন সাংবাদিক স্টিভেন সটলফকে শিরশ্ছেদ করার ভিডিও গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমের নজরে আসে। সেটিকে আসল বলে গতকাল বুধবার নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভিডিওটিতে আইএসের হাতে জিম্মি থাকা একজন ব্রিটিশ নাগরিককেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সটলফকে হত্যার ঘটনায় ‘ভীতসন্ত্রস্ত’ হয়ে পড়েনি। তবে আইএসকে রুখতে ‘সময় লাগবে’ বলে স্বীকার করেন তিনি। ইউরোপের এস্তোনিয়া সফররত ওবামা বলেন, শিরশ্ছেদের ঘটনা ‘একটা নিষ্ঠুর কাজ। যারা সটলফকে ভালোবাসে, তারা এই মুহূর্তে যে যন্ত্রণা পাচ্ছে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না। আমাদের দেশ তাদের সঙ্গে কাঁদছে।’ তবে মার্কিনরা পিছু হটবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভয় পাবো না। তাদের (আইএসের) নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ করবে... আমাদের হাত অনেক লম্বা। ন্যায্য বিচার করা হবে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গতকাল এক বিবৃতিতে সটলফ হত্যার তীব্র নিন্দা করে বলেন, হত্যাকারীদের জেনে রাখা উচিত, যত সময়ই লাগুক, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিচারের সম্মুখীন করবে। এদিকে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস ও নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে বাড়তি ৩৫০ জন সেনা পাঠানোর বিষয়ে প্রতিরক্ষা দপ্তরের অনুরোধ অনুমোদন করেছেন প্রেসিডেন্ট। ক্যামেরনের জরুরি বৈঠক: আইএসের হাতে দ্বিতীয় মার্কিন সাংবাদিক নিহত এবং জিম্মি থাকা একজন ব্রিটিশ নাগরিককে হত্যার হুমকির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য সরকারের জরুরি পদক্ষেপবিষয়ক কমিটি গতকাল এক বৈঠকে মিলিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বৈঠকের আগে ক্যামেরন বলেন, সাংবাদিক সটলফকে শিরশ্ছেদের বিষয়টি একটি ‘ঘৃণ্য ও বর্বর’ কাজ। ক্যামেরনও আইএসের অস্তিত্ব বিলোপ করার প্রতিজ্ঞা করেন। এ লক্ষ্যে তিনি আঞ্চলিক জোট গঠনেরও প্রতিশ্রুতি দেন। দুই জিম্মির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ক্যামেরন বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ রকম ঘৃণ্য ও বর্বর ঘটনা আরও ঘটতে পারে। কিন্তু জঙ্গিদের বোঝা উচিত, সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করার লড়াই থেকে আমরা কিছুতেই পিছু হটব না।’ বৈঠক শেষে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেন, জিম্মি ব্রিটিশ নাগরিককে হত্যার হুমকির কারণে ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাজ্যের বিমান হামলার আশংকা বাড়বে এমন নয়। তবে তাঁরা এমন সম্ভাবনা উড়িয়েও দিচ্ছেন না। হ্যামন্ড জানান, জিম্মি ব্রিটিশ নাগরিককে উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে তা ব্যর্থ হয়। তিনি আরও জানান, আইএসের সম্প্রতি প্রকাশিত ভিডিওটি আসল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জাতিসংঘের নিন্দা: জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সাংবাদিক সটলফকে শিরশ্ছেদের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটা জঘন্য একটা কাজ। ৩৩ বছর বয়সী সটলফ গত বছর সিরিয়ায় অপহৃত হন। গত মাসে আইএস আরেক মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফলিকে শিরশ্ছেদের যে ভিডিও প্রকাশ করেছিল, তাতে সটলফকেও দেখানো হয়েছিল। তখন আইএস হুমকি দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করলে তাঁকেও একইভাবে হত্যা করা হবে। পাকিস্তানেও আইএস!: এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে আইএস। দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ার এবং এর আশপাশে আইএসের পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করে জিহাদের পক্ষে সমর্থন চাওয়া হয়েছে।
No comments