১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়
আলোড়ন সৃষ্টিকারী ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও আটকের মামলার রায়ে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত অভিযুক্ত ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. আবদুর রহিম, আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াও রয়েছেন। অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩৮ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। আদালত তাঁর রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আসামিরাই পরস্পরের বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাতে এ ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তাঁরা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এ অস্ত্র পাচারের সঙ্গে যুক্ত হন এবং এর সঙ্গে একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকারও প্রমাণ পাওয়া যায়। জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী প্রতিটি দেশেরই অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কথা এবং ভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে নিজের ভূমি ব্যবহার করতে না দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক করা হয়। এসব অস্ত্র আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ উলফার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
সেই ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশের দুজন সদস্য অস্ত্রের চালানটি আটক করেন। এ কারণে তাঁদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হতে হয়, যা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্ভাগ্যজনক। আদালতের এই রায়ে বেরিয়ে আসা এই সত্য আমাদের উদ্বিগ্ন করে আরও এ কারণে যে, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে যাঁরা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরাই রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিপক্ষে কাজ করেছেন। তাঁরা পরস্পরের যোগসাজশে দেশকে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিতে যাচ্ছিলেন। তবে মামলার বিবরণীতে এটিও স্পষ্ট যে ঘটনার সঙ্গে আসামিদের সম্পৃক্ততার দুটি পর্ব আছে। প্রথমত, অস্ত্রের চোরাচালানে সহায়তা করা আর দ্বিতীয়টি হলো অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করা। আইনের দৃষ্টিতে দুটিই অপরাধ হলেও মাত্রায় নিশ্চয়ই তারতম্য আছে। বিচারের ক্ষেত্রে দুই অপরাধকে একই পাল্লায় মাপা হয়েছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক উঠকে পারে। ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বড় শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে কেউ যাতে বাংলাদেশকে অন্য কারও ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার বা ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবারই সর্বোচ্চ সজাগ ও সতর্ক থাকা জরুরি। আমরাও যেমন অন্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হব না, তেমনি চাইব না অন্য কোনো দেশ এমন কিছু করুক, যা আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
No comments