টাইপরাইটারেই ভরসা
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের কার্যালয়। প্যালেস অব ন্যাশনস নামের ওই ভবনের প্রেস রুম ওয়ানের এক প্রান্তে পর্দা দেওয়া একটি জায়গা থেকে ভেসে আসছে কাগজের ওপরে ধাতব বোতাম পড়ার ঠনঠন শব্দ। এ শব্দের সৃষ্টিকর্তা গর্ডন মার্টিন। তিনি ভ্যাটিকান রেডিওর জাতিসংঘ প্রতিনিধি। জেনেভায় সিরীয় সংঘাত বন্ধে চলা দ্বিতীয় শান্তি সম্মেলনের সর্বশেষ খবর লিখতে ব্যস্ত মার্টিন। এ কাজে ব্যবহার করছেন ৪০ বছরের পুরোনো একটি টাইপরাইটার। গত ২৫ বছর ধরে সেখানে সাংবাদিকতা করছেন ৮৬ বছর বয়সী গর্ডন। বর্তমানে যেখানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও ডিজিটাল কূটনীতির জয়জয়কার, সেখানে মার্টিন এখনো রয়ে গেছেন দৃঢ়চেতা অ্যানালগ সাংবাদিক। ‘আমার কোনো মুঠোফোন নেই। আমি আধুনিক অনেক কলকবজার কিছু বুঝি না।’
তাঁর কথায় কিছুটা গর্বের সুর। মার্টিনের সাংবাদিকতায় আসা দৈবক্রমে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পর কিছুদিন শিক্ষকতায় ছিলেন। ১৯৯৫ সালে তিনি মদের ব্যবসায় ক্যারিয়ার গড়তে যাচ্ছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে তিনি মত পাল্টে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হন। ইতালিয়ান ভাষা জানায় তাঁকে রোমে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১০ বছর রয়টার্সে থাকার পর যোগ দেন বিবিসিতে; কাজ করেন বিভিন্ন দেশে গিয়ে। মার্টিন এখনো কাজ করছেন। তবে আর বেশি দিন হয়তো তাঁর টাইপরাইটারটি ঠনঠন আওয়াজ তুলবে না। মার্টিন বলেন, ‘আমার পায়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে...এ বছর কাজ করে হয়তো বিদায় নেব।’ সিরিয়া নিয়ে দ্বিতীয় জেনেভা সম্মেলন রুদ্ধদ্বার হলেও সিরিয়ার দুই পক্ষই ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে গণমাধ্যমে তাদের বার্তা পৌঁছায়। তবে তার মূল্য মার্টিনের কাছে সামান্যই। কেননা, তিনি ক্যারিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত নিজস্ব ঘরানায় সাংবাদিকতা করে যাবেন। বিবিসি।
No comments