পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি by মামুন রশীদ
বাংলাদেশে
কার্যরত একটি গ্লোবাল অ্যাপারেল সোর্সিং কোম্পানির কান্ট্রি ম্যানেজার
দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সর্বনিু মজুরি ৮০০০ টাকা করার ব্যাপারে
আমার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন। আমি জানতাম, তৈরি পোশাক শিল্পের
শ্রমিকদের বেতন কাঠামো ঠিক করতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ
বছরের ১২ মে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান
বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। বোর্ড গঠনের পর ১ মে থেকে শ্রমিকদের
ন্যূনতম মজুরি কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু সেই ন্যূনতম মজুরি কত
নির্ধারণ করা হয়েছে, আমি সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারিনি। বরং আমিই তার
কাছে ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ টাকা করার ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।
তিনি জানান, তৈরি পোশাক শিল্পের সামগ্রিক অবস্থা, বিদ্যুৎ ও পর্যাপ্ত
জ্বালানি সরবরাহ, ভবনের নিরাপত্তা, সর্বোপরি শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং
মালিকের সামর্থ্যরে বিষয়টি মাথায় রেখেই ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা উচিত।
তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও তার অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে হয়েছে,
তিনি একলাফে ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ টাকা করার ব্যাপারে কিছুটা স্পর্শকাতর এবং
এটা তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থায় ভালো ফল বয়ে আনবে না বলে মনে
করছেন।
বাংলাদেশ মজুরি বোর্ড কর্তৃক ১৯৯৪ সালে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য সর্বনিু মজুরি ধার্য করা হয়েছিল ৯৩০ টাকা। এর ১২ বছর পর ২০০৬ সালে এটি ১৬৬২ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। এরও অনেক পরে ২০১০ সালে এসে এটি ৩০০০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি হতাশাজনক। কেননা বর্তমান জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে এটি খাপ খায় না। যার ফলে প্রায়ই তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা বিক্ষোভ আন্দোলনে নেমে পড়েন।
কিছুদিন আগে ন্যূনতম মজুরি ৮১১৪ টাকা নির্ধারণকল্পে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা-নেত্রীরা দাবি তোলেন। পক্ষান্তরে গার্মেন্ট মালিকরা বর্তমান ন্যূনতম মজুরির ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করে তথা ৩০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫০০ টাকা করা বিষয়টি বিবেচনায় আনেন।
পণ্যের অনুকূল মূল্য নির্ধারণ বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বদাই চ্যালেঞ্জস্বরূপ। পণ্যের নিুমূল্য নির্ধারণ পণ্যের উৎপাদন ও গ্রাহকের কাছে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিকে প্রভাবিত করে। আবার উচ্চমূল্য পণ্যের গ্রহীতা বা বিক্রয় কমিয়ে দেয়। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমাদের এগোতে হবে। আমাদের দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ থেকে এটা বেশ স্পষ্ট যে, পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে সেটা হতে হবে মালিক, শ্রমিক, নিয়ন্ত্রক সংস্থাÑ প্রত্যেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য। কোনো পক্ষকেই এতে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এক্ষেত্রে এটি এখনই চীনের মতো ২০০ ডলার বা এমনকি ভারতের মতো ১০০ ডলার করার পর্যায়ে হয়তো আসেনি। আসেনি এজন্যই যে, বাংলাদেশে ৫৫০০ তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে মাত্র ৩০০০টি সরাসরি রফতানি অর্ডার পেয়ে তৈরি পোশাক রফতানি করে। বাকিরা সবাই স্বল্প লাভে সাব-কন্ট্রাক্ট করে থাকে।
আমরা জানি, তাজরিন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার ঘটনা পুরো বিশ্বকে নেতিবাচকভাবে নাড়া দিয়েছে। এতে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এতে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থার শিকার হন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তবে এটাও মানতে হবে, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনের ঘটনা শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। ছিল কারখানার নিরাপত্তা, শ্রমিক নিরাপত্তা তথা সামাজিকভাবে শ্রম অধিকারের সঙ্গে জড়িত। অপরদিকে এটাও সত্য যে, তাজরিন ফ্যাশন ও সাভার ট্রাজেডির মতো বিভিন্ন দুর্ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে চাপের মুখে ফেলে বিদেশী ক্রেতারা আদায় করে নিচ্ছেন বাড়তি সুবিধা।
তাজরিন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি না পাওয়ার বিষয়টি, সেই সঙ্গে দালানের নিরাপত্তা কমপ্লায়েন্স না থাকা, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল না থাকা সর্বোপরি শ্রমিকদের সামান্যতম জীবন-মানের তত্ত্বাবধান না থাকার বিষয়টি নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। আন্তর্জাতিক মানে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের পাশাপাশি পোশাক শিল্পের নির্মাণ অবকাঠামো সুদৃঢ় করতে হবে। নিুমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ভবন তৈরি করে নিরীহ শ্রমিকদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়ার কোনো অর্থ হয় না। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অবশ্যই জোরদার করতে হবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটাই অচল। সেই সঙ্গে আগুন লাগলে পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট (পিএ) সিস্টেম না থাকায় এবং ফ্লোর ম্যানেজারের অসতর্কতায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় ২০০০ ফ্যাক্টরিতে নিরাপত্তা নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থাই নেই। অবশ্যই এ বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। একজন ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরকে নিশ্চিত হতে হবে, ফ্যাক্টরিতে বা ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে ন্যূনতম মান অনুসরণ করা হচ্ছে। আমাদের ফায়ার ব্রিগেডকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে হবে।
চীনের পোশাক শিল্পে মাসিক মজুরি ২০০ ডলারেরও বেশি। তবে চীনা শ্রমিকরা ২০০ ডলারের বেশি মজুরি নিয়ে যা উৎপাদন করছে, আমাদের শ্রমিকদের একই পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করতে লাগছে প্রায় ২০০ ডলার। সেক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বিবেচনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি কম নয়। যেখানে বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি ৪০ ডলারের নিচে, সেখানে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে ন্যূনতম মজুরি ১১৩ ডলার, পাকিস্তানে ন্যূনতম মজুরি ১১৮ ডলার এবং ভিয়েতনামে ন্যূনতম মজুরি ১২০ ডলার। দেশের পোশাক খাতের মজুরি নিয়ে প্রশ্ন সেখানেই। আবার এটাও সত্য যে, সদ্য যোগদানকারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই শুধু ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি প্রাসঙ্গিক কিংবা বড়জোর ৬ মাস একজন শ্রমিককে এই বেতনে রাখা যায়। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের মাসিক আয় প্রায় ৭০০০ টাকা বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে।
নিরাপদ ভবন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, জ্বালানি সমস্যার সমাধান, উপযুক্ত অবকাঠামো, কমপ্লায়েন্স ডেভেলপমেন্ট এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপান থেকেও আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। কেননা সেখানে শুধু শ্রমিকদের মজুরিই নয়, তাদের নিরাপত্তা, জীবনমান উন্নয়ন, উন্নত কর্মপরিবেশ ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। শ্রমিকরাও কেবল বেতনের দিকে মুখিয়ে থাকেন না। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। কিন্তু অদ্যাবধি এর প্রতি গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এই শিল্পে যেসব অভাব-অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর সমাধানকল্পে আমাদের প্রয়োজন পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। কেননা পথ কণ্টকাকীর্ণ হলেও সম্ভাবনা প্রচুর।
মামুন রশীদ : ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
বাংলাদেশ মজুরি বোর্ড কর্তৃক ১৯৯৪ সালে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য সর্বনিু মজুরি ধার্য করা হয়েছিল ৯৩০ টাকা। এর ১২ বছর পর ২০০৬ সালে এটি ১৬৬২ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। এরও অনেক পরে ২০১০ সালে এসে এটি ৩০০০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি হতাশাজনক। কেননা বর্তমান জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে এটি খাপ খায় না। যার ফলে প্রায়ই তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা বিক্ষোভ আন্দোলনে নেমে পড়েন।
কিছুদিন আগে ন্যূনতম মজুরি ৮১১৪ টাকা নির্ধারণকল্পে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা-নেত্রীরা দাবি তোলেন। পক্ষান্তরে গার্মেন্ট মালিকরা বর্তমান ন্যূনতম মজুরির ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করে তথা ৩০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫০০ টাকা করা বিষয়টি বিবেচনায় আনেন।
পণ্যের অনুকূল মূল্য নির্ধারণ বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বদাই চ্যালেঞ্জস্বরূপ। পণ্যের নিুমূল্য নির্ধারণ পণ্যের উৎপাদন ও গ্রাহকের কাছে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিকে প্রভাবিত করে। আবার উচ্চমূল্য পণ্যের গ্রহীতা বা বিক্রয় কমিয়ে দেয়। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমাদের এগোতে হবে। আমাদের দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ থেকে এটা বেশ স্পষ্ট যে, পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে সেটা হতে হবে মালিক, শ্রমিক, নিয়ন্ত্রক সংস্থাÑ প্রত্যেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য। কোনো পক্ষকেই এতে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এক্ষেত্রে এটি এখনই চীনের মতো ২০০ ডলার বা এমনকি ভারতের মতো ১০০ ডলার করার পর্যায়ে হয়তো আসেনি। আসেনি এজন্যই যে, বাংলাদেশে ৫৫০০ তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে মাত্র ৩০০০টি সরাসরি রফতানি অর্ডার পেয়ে তৈরি পোশাক রফতানি করে। বাকিরা সবাই স্বল্প লাভে সাব-কন্ট্রাক্ট করে থাকে।
আমরা জানি, তাজরিন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার ঘটনা পুরো বিশ্বকে নেতিবাচকভাবে নাড়া দিয়েছে। এতে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এতে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থার শিকার হন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তবে এটাও মানতে হবে, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনের ঘটনা শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। ছিল কারখানার নিরাপত্তা, শ্রমিক নিরাপত্তা তথা সামাজিকভাবে শ্রম অধিকারের সঙ্গে জড়িত। অপরদিকে এটাও সত্য যে, তাজরিন ফ্যাশন ও সাভার ট্রাজেডির মতো বিভিন্ন দুর্ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে চাপের মুখে ফেলে বিদেশী ক্রেতারা আদায় করে নিচ্ছেন বাড়তি সুবিধা।
তাজরিন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি না পাওয়ার বিষয়টি, সেই সঙ্গে দালানের নিরাপত্তা কমপ্লায়েন্স না থাকা, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল না থাকা সর্বোপরি শ্রমিকদের সামান্যতম জীবন-মানের তত্ত্বাবধান না থাকার বিষয়টি নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। আন্তর্জাতিক মানে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের পাশাপাশি পোশাক শিল্পের নির্মাণ অবকাঠামো সুদৃঢ় করতে হবে। নিুমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ভবন তৈরি করে নিরীহ শ্রমিকদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়ার কোনো অর্থ হয় না। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অবশ্যই জোরদার করতে হবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটাই অচল। সেই সঙ্গে আগুন লাগলে পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট (পিএ) সিস্টেম না থাকায় এবং ফ্লোর ম্যানেজারের অসতর্কতায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় ২০০০ ফ্যাক্টরিতে নিরাপত্তা নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থাই নেই। অবশ্যই এ বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। একজন ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরকে নিশ্চিত হতে হবে, ফ্যাক্টরিতে বা ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে ন্যূনতম মান অনুসরণ করা হচ্ছে। আমাদের ফায়ার ব্রিগেডকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে হবে।
চীনের পোশাক শিল্পে মাসিক মজুরি ২০০ ডলারেরও বেশি। তবে চীনা শ্রমিকরা ২০০ ডলারের বেশি মজুরি নিয়ে যা উৎপাদন করছে, আমাদের শ্রমিকদের একই পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করতে লাগছে প্রায় ২০০ ডলার। সেক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বিবেচনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি কম নয়। যেখানে বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি ৪০ ডলারের নিচে, সেখানে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে ন্যূনতম মজুরি ১১৩ ডলার, পাকিস্তানে ন্যূনতম মজুরি ১১৮ ডলার এবং ভিয়েতনামে ন্যূনতম মজুরি ১২০ ডলার। দেশের পোশাক খাতের মজুরি নিয়ে প্রশ্ন সেখানেই। আবার এটাও সত্য যে, সদ্য যোগদানকারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই শুধু ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি প্রাসঙ্গিক কিংবা বড়জোর ৬ মাস একজন শ্রমিককে এই বেতনে রাখা যায়। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের মাসিক আয় প্রায় ৭০০০ টাকা বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে।
নিরাপদ ভবন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, জ্বালানি সমস্যার সমাধান, উপযুক্ত অবকাঠামো, কমপ্লায়েন্স ডেভেলপমেন্ট এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপান থেকেও আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। কেননা সেখানে শুধু শ্রমিকদের মজুরিই নয়, তাদের নিরাপত্তা, জীবনমান উন্নয়ন, উন্নত কর্মপরিবেশ ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। শ্রমিকরাও কেবল বেতনের দিকে মুখিয়ে থাকেন না। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। কিন্তু অদ্যাবধি এর প্রতি গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এই শিল্পে যেসব অভাব-অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর সমাধানকল্পে আমাদের প্রয়োজন পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। কেননা পথ কণ্টকাকীর্ণ হলেও সম্ভাবনা প্রচুর।
মামুন রশীদ : ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
No comments