শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ও শিক্ষার মান by সুলতান মাহমুদ রানা
সরকারের
শেষ সময়ে এসে বেশকিছু নতুন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব উদ্যোগকে এক
কথায় নির্বাচনবান্ধব বলে আখ্যায়িত করা যায়। এর মধ্যে সরকারি
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের উদ্যোগ
উল্লেখযোগ্য। প্রায় ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবী নতুন কাঠামো অনুযায়ী বাড়তি
বেতন-ভাতা পাবেন। নির্বাচনের ঠিক পূর্বাবস্থায় এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে
অর্থাৎ নির্বাচিত হওয়ার পরপরই পে-কমিশন ঘোষণার একটি রীতি চালু আছে। এ
ধারাবাহিকতায়ই হয়তো এই উদ্যোগ। তবুও যা হোক, এটি একটি সান্ত্বনাও বটে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য
নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই বেতন কাঠামো অনুযায়ী
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পায় সর্বোচ্চ ৭৪ শতাংশ ও সর্বনিু ৫৬
শতাংশ। সরকারের শেষ সময়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
এখন একটু শিক্ষকদের বেতন কাঠামোসংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গ উপস্থাপন করতে চাই। নবম
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদে বলা হয়েছিল,
মানব উন্নয়নে শিক্ষা ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষাঙ্গনকে
দলীয়করণমুক্ত, শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর বেতন কাঠামো ও স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন
ও স্বতন্ত্র কর্মকমিশন গঠন করা হবে।’ এ সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হতে চলেছে।
কিন্তু শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে সরকারের কোনো উদ্যোগ
লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কযুক্ত। এ কারণে যে কোনো কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। একটি সুশিক্ষিত জাতি স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে যায়। বিশ্বের দরবারে নিজের উচ্চ স্থান নিশ্চিত করতে পারে। এজন্যই প্রয়োজন শিক্ষার মানোন্নয়ন। বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। তবে শিক্ষার মান নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য প্রথমে যে বিষয়টিতে লক্ষ্য রাখা দরকার তা হল শিক্ষকদের গুণগত মান কিংবা মানসম্পন্ন শিক্ষকতা। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরেই শিক্ষার গুণগত মান সুনিশ্চিত করা অপরিহার্য। সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদাই যে কোনো পেশাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। যে পেশায় সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা নেই, স্বাভাবিকভাবেই সেই পেশার প্রতি মেধাবীদের অনাগ্রহ ও অনিচ্ছা তৈরি হয়।
প্রথমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের বাস্তব অবস্থা নিয়ে দু-একটি কথা বলতে চাই। দেশের সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে বেতন কাঠামো, তা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৪র্থ ও ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীর বেতনের কাছাকাছি। সমাজে সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকরা নিশ্চয়ই এক ধাপ এগিয়ে। আর এই এক ধাপ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনযাত্রাও এক ধাপ এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একজন শিক্ষক তার বেতন কাঠামো বিচারে কোনোভাবেই সমাজে এগিয়ে থাকতে পারে না। এমনকি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে তার পেশার সঙ্গে অসামঞ্জস্য দায়িত্বও পালন করতে হয়। তিনি প্রতিদিন সকালে পাঠদানের জন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রথমেই বিদ্যালয় পরিষ্কারের জন্য ঝাড়– দেয়া থেকে শুরু করে এ ধরনের নানা দায়িত্ব পালন করে থাকেন, যে কাজগুলো একজন শিক্ষক হিসেবে তার জন্য কোনোক্রমেই মানানসই নয়। একদিকে তার নিুমানের বেতন কাঠামো অন্যদিকে পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কাজÑ এ দুয়ের ফলাফল যেমন জাতির জন্য লজ্জাজনক, তেমনি মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে পরিচিত গোটা শিক্ষক সমাজের জন্যও তা লজ্জাজনক। আমরা সবাই জানি, একটি শক্তিশালী ইমারত নির্মাণের পূর্বশর্ত হল শক্তিশালী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। ভিত্তিপ্রস্তর যদি দুর্বল হয়, তাহলে কোনোক্রমেই শক্তিশালী ইমারত নির্মাণ সম্ভব নয়। এমন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে আমাদের দেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা কাঠামোতে। প্রমোশন, আপগ্রেডেশন কোনো পদ্ধতিই এসব শিক্ষকের জন্য প্রযোজ্য নেই। ফলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিভিন্ন সময়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে অনশন করতে দেখা যায়। এতেই বোঝা যায় এদেশে শিক্ষকরা কেমন আছে।
এ অবস্থায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কাঠামো অনেকটাই কোচিংনির্ভর হয়ে পড়েছে। সরকার অনেকবার কোচিং বন্ধের উদ্যোগ নিলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের পাঠদানের অনিচ্ছা মূলত অর্থনৈতিক অভাব থেকেই সৃষ্ট। অভাব মেটানোর তাগিদেই গড়ে উঠেছে কোচিং বাণিজ্যের ব্যাপকতা। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ও প্রাইভেট কোচিংয়ের সঙ্গে দেশের সরকারি কলেজের শিক্ষকরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এমনকি কোনো কোনোটির পরিচালকও বটে। শিক্ষকদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মনোযোগী করে তোলার জন্য দরকার যুগোপযোগী বেতন কাঠামো। বেতন কাঠামোর মাধ্যমেই মেধাবীদের এই পেশায় আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব।
এবার আশা যাক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা কোনোভাবেই যুগোপযোগী নয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের যে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, সে তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত কম। এ কারণেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষকতায় ঝুঁকে পড়েছেন। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শুধু বেতনের ওপর নির্ভর করতে হয়। জীবনযাপনের খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় বেতনের এই অর্থ দিয়ে শিক্ষকদের সামাজিক অবস্থানটুকু ধরে রাখা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে কর্মক্ষেত্রে তাদের হতাশায় ভুগতে হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকেরই ব্যক্তিগত বসার কোনো জায়গা নেই। অন্যান্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধাও নেই। নিরাপত্তা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। গবেষণায় নিমগ্ন হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে শিক্ষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
মহাজোট সরকারের দিন বদলের সনদে শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলা হলেও সরকারের শেষ সময়ে তা উপযুক্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি। শিক্ষাঙ্গনকে দলীয়করণমুক্ত করা যায়নি। বরং তা ক্রমেই বাড়ছে। শিক্ষকদের উচ্চতর বেতন কাঠামো, স্থায়ী বেতন কমিশন ও স্বতন্ত্র কর্মকমিশন গঠন আজও স্বপ্নই থেকে গেছে। সরকারি দল প্রদত্ত অন্যতম এই অঙ্গীকার পালন না করেই আবার নির্বাচনী ইশতেহারে এমন বক্তব্য পুনঃস্থাপন করা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সামনে নৈতিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে মানসম্পন্ন শিক্ষক, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা এবং শিক্ষকের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর বিকল্প নেই।
সুলতান মাহমুদ রানা : শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কযুক্ত। এ কারণে যে কোনো কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। একটি সুশিক্ষিত জাতি স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে যায়। বিশ্বের দরবারে নিজের উচ্চ স্থান নিশ্চিত করতে পারে। এজন্যই প্রয়োজন শিক্ষার মানোন্নয়ন। বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। তবে শিক্ষার মান নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য প্রথমে যে বিষয়টিতে লক্ষ্য রাখা দরকার তা হল শিক্ষকদের গুণগত মান কিংবা মানসম্পন্ন শিক্ষকতা। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরেই শিক্ষার গুণগত মান সুনিশ্চিত করা অপরিহার্য। সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদাই যে কোনো পেশাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। যে পেশায় সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা নেই, স্বাভাবিকভাবেই সেই পেশার প্রতি মেধাবীদের অনাগ্রহ ও অনিচ্ছা তৈরি হয়।
প্রথমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের বাস্তব অবস্থা নিয়ে দু-একটি কথা বলতে চাই। দেশের সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে বেতন কাঠামো, তা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৪র্থ ও ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীর বেতনের কাছাকাছি। সমাজে সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকরা নিশ্চয়ই এক ধাপ এগিয়ে। আর এই এক ধাপ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনযাত্রাও এক ধাপ এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একজন শিক্ষক তার বেতন কাঠামো বিচারে কোনোভাবেই সমাজে এগিয়ে থাকতে পারে না। এমনকি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে তার পেশার সঙ্গে অসামঞ্জস্য দায়িত্বও পালন করতে হয়। তিনি প্রতিদিন সকালে পাঠদানের জন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রথমেই বিদ্যালয় পরিষ্কারের জন্য ঝাড়– দেয়া থেকে শুরু করে এ ধরনের নানা দায়িত্ব পালন করে থাকেন, যে কাজগুলো একজন শিক্ষক হিসেবে তার জন্য কোনোক্রমেই মানানসই নয়। একদিকে তার নিুমানের বেতন কাঠামো অন্যদিকে পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কাজÑ এ দুয়ের ফলাফল যেমন জাতির জন্য লজ্জাজনক, তেমনি মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে পরিচিত গোটা শিক্ষক সমাজের জন্যও তা লজ্জাজনক। আমরা সবাই জানি, একটি শক্তিশালী ইমারত নির্মাণের পূর্বশর্ত হল শক্তিশালী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। ভিত্তিপ্রস্তর যদি দুর্বল হয়, তাহলে কোনোক্রমেই শক্তিশালী ইমারত নির্মাণ সম্ভব নয়। এমন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে আমাদের দেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা কাঠামোতে। প্রমোশন, আপগ্রেডেশন কোনো পদ্ধতিই এসব শিক্ষকের জন্য প্রযোজ্য নেই। ফলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিভিন্ন সময়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে অনশন করতে দেখা যায়। এতেই বোঝা যায় এদেশে শিক্ষকরা কেমন আছে।
এ অবস্থায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কাঠামো অনেকটাই কোচিংনির্ভর হয়ে পড়েছে। সরকার অনেকবার কোচিং বন্ধের উদ্যোগ নিলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের পাঠদানের অনিচ্ছা মূলত অর্থনৈতিক অভাব থেকেই সৃষ্ট। অভাব মেটানোর তাগিদেই গড়ে উঠেছে কোচিং বাণিজ্যের ব্যাপকতা। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ও প্রাইভেট কোচিংয়ের সঙ্গে দেশের সরকারি কলেজের শিক্ষকরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এমনকি কোনো কোনোটির পরিচালকও বটে। শিক্ষকদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মনোযোগী করে তোলার জন্য দরকার যুগোপযোগী বেতন কাঠামো। বেতন কাঠামোর মাধ্যমেই মেধাবীদের এই পেশায় আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব।
এবার আশা যাক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা কোনোভাবেই যুগোপযোগী নয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের যে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, সে তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত কম। এ কারণেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষকতায় ঝুঁকে পড়েছেন। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শুধু বেতনের ওপর নির্ভর করতে হয়। জীবনযাপনের খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় বেতনের এই অর্থ দিয়ে শিক্ষকদের সামাজিক অবস্থানটুকু ধরে রাখা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে কর্মক্ষেত্রে তাদের হতাশায় ভুগতে হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকেরই ব্যক্তিগত বসার কোনো জায়গা নেই। অন্যান্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধাও নেই। নিরাপত্তা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। গবেষণায় নিমগ্ন হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে শিক্ষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
মহাজোট সরকারের দিন বদলের সনদে শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলা হলেও সরকারের শেষ সময়ে তা উপযুক্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি। শিক্ষাঙ্গনকে দলীয়করণমুক্ত করা যায়নি। বরং তা ক্রমেই বাড়ছে। শিক্ষকদের উচ্চতর বেতন কাঠামো, স্থায়ী বেতন কমিশন ও স্বতন্ত্র কর্মকমিশন গঠন আজও স্বপ্নই থেকে গেছে। সরকারি দল প্রদত্ত অন্যতম এই অঙ্গীকার পালন না করেই আবার নির্বাচনী ইশতেহারে এমন বক্তব্য পুনঃস্থাপন করা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সামনে নৈতিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে মানসম্পন্ন শিক্ষক, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা এবং শিক্ষকের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর বিকল্প নেই।
সুলতান মাহমুদ রানা : শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
No comments