জটিল সমীকরণে রাজনীতি ও নির্বাচন by মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
দেশের
রাজনীতি এক জটিল সমীকরণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। চলমান সমীকরণে দেশে
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আশা সুদূরপরাহত। যে কোনো নির্বাচনে পরাজয়
নিশ্চিত জানতে পারলে সেটা রাজনীতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বর্তমানে একটি
রাজনৈতিক দল সামনের নির্বাচনে তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে গেছে। তাই আগামী
নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল দুই মেরুতে অবস্থান করছে। এ ধারা
অব্যাহত থাকলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার আশা অবান্তর। আগামী নির্বাচন
যথাসময়ে হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে। একাধিক রাজনৈতিক নেতা
দেশে নির্বাচন না হওয়ার আশংকা করছেন। এরশাদ সাহেব বলেছেন, দেশে নির্বাচন
নাও হতে পারে, কাজী জাফর আহমদ ও কর্নেল (অব.) অলি আহমদ দেশে নির্বাচন না
হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারা অভিজ্ঞ রাজনীতিক, তাদের কথার অবশ্যই তাৎপর্য
আছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচন না হওয়ারই ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী কয়েক দিন আগে সংসদে বলেছেন, তত্ত্ব্াবধায়ক চাইলে দেশে
নির্বাচনই হবে না। তার এ কথায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এটি
পরোক্ষভাবে নির্বাচন না হওয়ারই আলামত হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে
প্রতীয়মান হয়। নির্বাচন না হলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে স্বপদে বহাল থাকার
এখতিয়ার পঞ্চদশ সংশোধনীতে সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এ সংশোধনী একটি
দুরভিসন্ধিকে সামনে রেখেই করা হয়েছে। যাতে দেশে নির্বাচন না হলেও বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী অনন্তকাল পদে বহাল থাকতে পারেন। এমন সুবিধা সংবিধান যেখানে
প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছে, সেখানে পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে কেন তিনি নির্বাচনের
ঝুঁকি নিতে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন, তার দল নির্বাচনে জেতার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন তিনি নির্বাচনের কথা চিন্তা করতে পারেন। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইলে দেশে নির্বাচন হবে না’- এ কথার তাৎপর্য এখানেই। এখন প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রী কি দেশে নির্বাচন না দিয়ে পারবেন? তখন রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কি তার হাতে থাকবে? সব দল নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিলে তিনি একা কী করবেন?
দেশের রাজনীতিতে একটা মেরুকরণ অবধারিত বলেই প্রতীয়মান হয়। ১৮ দলের সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আবির্ভূত হওয়া শক্তি হেফাজতে ইসলাম ও বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা। পাইপলাইনে আছে এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টি, আসম রবের জেএসডি ও কাদের সিদ্দিকীর দলসহ আরও কিছু দল। এই দলগুলো যদি এক প্লাটফর্মে সমবেত হয়, তাহলে বাকি থাকল সাম্যবাদী দল, ইনু সাহেবের জাসদ ও মেনন সাহেবের ওয়ার্কার্স পার্টিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল। এ ১৪ দলের মধ্যে ওয়ান ম্যান শো পার্টিও আছে এবং আওয়ামী লীগের বাইরে অন্যদের নিজস্ব কোনো ভোট ব্যাংক নেই। পক্ষান্তরে বিএনপির যেমন নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে, তেমনি হেফাজত, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিরও নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে। এরা সম্মিলিতভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটের অধিকারী। বলা বাহুল্য, সম্প্রতি দেশের চার প্রান্তে অনুষ্ঠিত হওয়া চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গড় ভোটের অংকে আওয়ামী লীগ শতকরা ২৮ ভাগ ভোট পেয়েছে। সেই হিসাবে আগামী নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট যদি এক পক্ষে যায়, তাহলে নির্বাচনের ফলাফলটা কী দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। অন্তত ভোটের রাজনীতিতে এটিকে ব্যালেন্স করা অসাধ্য। এ সত্য অনিবার্য মনে করে সামনের নির্বাচনকে জটিল করে তোলা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।
মনে রাখতে হবে, নদীর স্রোত ও বাতাসের গতিবেগ যেমন আটকে রাখা যায় না, তেমনি মানুষের আবেগও আটকে রাখা যায় না। নির্বাচনের জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা তার সুস্পষ্ট উদাহরণ। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথে পা বাড়ালে জনগণ দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত বলেই প্রতীয়মান হয়। কাজেই একটি পক্ষপাতহীন ও গ্রহণযেগ্য নির্বাচনই চলমান সংকট সমাধানের একমাত্র পথ। এর মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হাতবদল হতে পারে। দেশ ও মানুষের ভালো চাইলে এ পথকেই অনিবার্য মনে করতে হবে রাজনীতিকদের।
বাংলাদেশকে ঘিরে পরাশক্তি ও আঞ্চলিক শক্তির বিশেষ তৎপরতা লক্ষণীয়। ক্ষমতার হাতবদলকে পুঁজি করে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে মরিয়া। এ সময়কে তারা মোক্ষম সময় মনে করে ক্ষমতার হাতবদলকে জটিল করার কাজে রত আছে বলেই প্রতীয়মান হয়। তারা চায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে কর্তৃত্ব কায়েম করতে। তারা চায় বাংলাদেশের তেল-গ্যাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। আর এসব করতে হলে রাজনীতিকে অশান্ত করে তুলতে হবে। ক্ষমতার হাতদবলই রাজনীতিকে অশান্ত করার মোক্ষম সময়। অশান্ত রাজনীতিই সবকিছু তছনছ করতে পারে, তৈরি করতে পারে সুযোগের ক্ষেত্র; আর এই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করতে প্রস্তুত পরাশক্তি ও আঞ্চলিক শক্তি।
এখন প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের রাজনীতিকরা কি তাদের এ সুযোগ তৈরি করে দেবেন? যদি না দিতে চান তাহলে জাতীয় স্বার্থে অন্তত রাজনীতিকদের এক হতে হবে, ক্ষমতার হাতবদলকে শান্তিপূর্ণ করতে হবে; প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে হবে, পরমতসহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্রকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখার বিষয়টি এখন সর্বতোভাবে বর্তমান সরকারের ওপরই নির্ভর করছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে পক্ষপাতহীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি দেশও এক অনিবার্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা বিপন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দেবে; বৃদ্ধি পাবে সংঘাত-সহিংসতা।
রাজনৈতিক সহিংসতায় গত কয়েক মাসে প্রচুর সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, প্রচুর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। একই জাতি ও ধর্মের মানুষের মধ্যে এই আÍঘাতী ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে বোঝা যায়, ক্ষমতার পালাবদলকে কেন্দ্র করে সুকৌশলে জাতিকে ভয়ানক বিভক্তির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে; যাতে এই জাতি বিপন্ন জাতিতে পরিণত হয়। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের ভিত্তিও জনগণ; জনগণকে বিপন্ন করে রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। কাজেই রাজনৈতিক সহিংসতায় আর যাতে কোনো প্রাণ ঝরে না যায়, আর যাতে কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। সাংঘর্ষিক ও প্রতিশোধমূলক রাজনীতি পরিহারের জন্য স্থিতিশীল আবহ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এর জন্য সবাইকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। দুরভিসন্ধি ত্যাগ করতে হবে। বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে যা কিছু ঘটে চলেছে, তাকে এক পরিকল্পিত দুরভিসন্ধি ছাড়া অন্য কিছু বলার উপায় নেই।
দেশকে অপূরণীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে গঠনমূলক, সহনশীল ও পরিপক্ব রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। আপনি কত বড় রাজনীতিক সেটি বড় কথা নয়, আপনার কর্মকাণ্ড দেশের জন্য কতটা ইতিবাচক ও মঙ্গলজনক- জাতির কাছে সেটিই বড় বলে বিবেচিত। জাতির কাছে একটি সত্য দিবালোকের মতো উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে- বর্তমান সরকার ইচ্ছা করলে দেশকে যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার তা-ই করবে, অন্ধকার দূর করে দেশকে আলোর পথে নিয়ে আসবে। তাহলে জাতি হয়তো তাদের নতুন চোখে দেখবে, নির্বাচনে তারা ভালো ফলাফল করতে পারবে।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন, তার দল নির্বাচনে জেতার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন তিনি নির্বাচনের কথা চিন্তা করতে পারেন। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইলে দেশে নির্বাচন হবে না’- এ কথার তাৎপর্য এখানেই। এখন প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রী কি দেশে নির্বাচন না দিয়ে পারবেন? তখন রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কি তার হাতে থাকবে? সব দল নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিলে তিনি একা কী করবেন?
দেশের রাজনীতিতে একটা মেরুকরণ অবধারিত বলেই প্রতীয়মান হয়। ১৮ দলের সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আবির্ভূত হওয়া শক্তি হেফাজতে ইসলাম ও বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা। পাইপলাইনে আছে এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টি, আসম রবের জেএসডি ও কাদের সিদ্দিকীর দলসহ আরও কিছু দল। এই দলগুলো যদি এক প্লাটফর্মে সমবেত হয়, তাহলে বাকি থাকল সাম্যবাদী দল, ইনু সাহেবের জাসদ ও মেনন সাহেবের ওয়ার্কার্স পার্টিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল। এ ১৪ দলের মধ্যে ওয়ান ম্যান শো পার্টিও আছে এবং আওয়ামী লীগের বাইরে অন্যদের নিজস্ব কোনো ভোট ব্যাংক নেই। পক্ষান্তরে বিএনপির যেমন নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে, তেমনি হেফাজত, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিরও নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে। এরা সম্মিলিতভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটের অধিকারী। বলা বাহুল্য, সম্প্রতি দেশের চার প্রান্তে অনুষ্ঠিত হওয়া চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গড় ভোটের অংকে আওয়ামী লীগ শতকরা ২৮ ভাগ ভোট পেয়েছে। সেই হিসাবে আগামী নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট যদি এক পক্ষে যায়, তাহলে নির্বাচনের ফলাফলটা কী দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। অন্তত ভোটের রাজনীতিতে এটিকে ব্যালেন্স করা অসাধ্য। এ সত্য অনিবার্য মনে করে সামনের নির্বাচনকে জটিল করে তোলা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।
মনে রাখতে হবে, নদীর স্রোত ও বাতাসের গতিবেগ যেমন আটকে রাখা যায় না, তেমনি মানুষের আবেগও আটকে রাখা যায় না। নির্বাচনের জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা তার সুস্পষ্ট উদাহরণ। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথে পা বাড়ালে জনগণ দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত বলেই প্রতীয়মান হয়। কাজেই একটি পক্ষপাতহীন ও গ্রহণযেগ্য নির্বাচনই চলমান সংকট সমাধানের একমাত্র পথ। এর মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হাতবদল হতে পারে। দেশ ও মানুষের ভালো চাইলে এ পথকেই অনিবার্য মনে করতে হবে রাজনীতিকদের।
বাংলাদেশকে ঘিরে পরাশক্তি ও আঞ্চলিক শক্তির বিশেষ তৎপরতা লক্ষণীয়। ক্ষমতার হাতবদলকে পুঁজি করে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে মরিয়া। এ সময়কে তারা মোক্ষম সময় মনে করে ক্ষমতার হাতবদলকে জটিল করার কাজে রত আছে বলেই প্রতীয়মান হয়। তারা চায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে কর্তৃত্ব কায়েম করতে। তারা চায় বাংলাদেশের তেল-গ্যাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। আর এসব করতে হলে রাজনীতিকে অশান্ত করে তুলতে হবে। ক্ষমতার হাতদবলই রাজনীতিকে অশান্ত করার মোক্ষম সময়। অশান্ত রাজনীতিই সবকিছু তছনছ করতে পারে, তৈরি করতে পারে সুযোগের ক্ষেত্র; আর এই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করতে প্রস্তুত পরাশক্তি ও আঞ্চলিক শক্তি।
এখন প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের রাজনীতিকরা কি তাদের এ সুযোগ তৈরি করে দেবেন? যদি না দিতে চান তাহলে জাতীয় স্বার্থে অন্তত রাজনীতিকদের এক হতে হবে, ক্ষমতার হাতবদলকে শান্তিপূর্ণ করতে হবে; প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে হবে, পরমতসহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্রকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখার বিষয়টি এখন সর্বতোভাবে বর্তমান সরকারের ওপরই নির্ভর করছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে পক্ষপাতহীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি দেশও এক অনিবার্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা বিপন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দেবে; বৃদ্ধি পাবে সংঘাত-সহিংসতা।
রাজনৈতিক সহিংসতায় গত কয়েক মাসে প্রচুর সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, প্রচুর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। একই জাতি ও ধর্মের মানুষের মধ্যে এই আÍঘাতী ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে বোঝা যায়, ক্ষমতার পালাবদলকে কেন্দ্র করে সুকৌশলে জাতিকে ভয়ানক বিভক্তির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে; যাতে এই জাতি বিপন্ন জাতিতে পরিণত হয়। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের ভিত্তিও জনগণ; জনগণকে বিপন্ন করে রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। কাজেই রাজনৈতিক সহিংসতায় আর যাতে কোনো প্রাণ ঝরে না যায়, আর যাতে কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। সাংঘর্ষিক ও প্রতিশোধমূলক রাজনীতি পরিহারের জন্য স্থিতিশীল আবহ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এর জন্য সবাইকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। দুরভিসন্ধি ত্যাগ করতে হবে। বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে যা কিছু ঘটে চলেছে, তাকে এক পরিকল্পিত দুরভিসন্ধি ছাড়া অন্য কিছু বলার উপায় নেই।
দেশকে অপূরণীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে গঠনমূলক, সহনশীল ও পরিপক্ব রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। আপনি কত বড় রাজনীতিক সেটি বড় কথা নয়, আপনার কর্মকাণ্ড দেশের জন্য কতটা ইতিবাচক ও মঙ্গলজনক- জাতির কাছে সেটিই বড় বলে বিবেচিত। জাতির কাছে একটি সত্য দিবালোকের মতো উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে- বর্তমান সরকার ইচ্ছা করলে দেশকে যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার তা-ই করবে, অন্ধকার দূর করে দেশকে আলোর পথে নিয়ে আসবে। তাহলে জাতি হয়তো তাদের নতুন চোখে দেখবে, নির্বাচনে তারা ভালো ফলাফল করতে পারবে।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
No comments