ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হচ্ছে?
পাকিস্তানে আজ শনিবার সাধারণ নির্বাচন। শেষ মুহূর্তে সাবেক ক্রিকেটার ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানের পক্ষে সমর্থন বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। অবশ্য মোটের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) প্রধান নওয়াজ শরিফই এগিয়ে। তবে শেষ পর্যন্ত ঝুলন্ত পার্লামেন্টই হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। নানা কারণে প্রথম সারির দলগুলো নিজেদের পক্ষে ভোটারদের বড় অংশের সমর্থন টানতে ব্যর্থ হওয়ায় দুর্বল সরকার গঠিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। জাতীয় পরিষদের ৩৪২ আসনের মধ্যে ২৭২টিতে সরাসরি নির্বাচন হবে। বাকিগুলো সংরক্ষিত আসন। নওয়াজের দল বেশি আসন পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে ১৪ বছর পর ক্ষমতায় ফিরবেন তিনি। ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন নওয়াজ। তবে শেষ মুহূর্তে ইমরানের প্রতি সমর্থন বেড়ে গেছে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, তা ঝুলন্ত পার্লামেন্টের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে বিশাল সমাবেশ করেছে তেহরিক-ই-ইনসাফ। এতে অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ যোগ দেয়। গত মঙ্গলবার লাহোরের এক সমাবেশে মঞ্চে ওঠার সময় পড়ে আহত ইমরান হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাই ইসলামাবাদের সমাবেশে যোগ দিতে পারেননি তিনি। তার পরও সমাবেশে এত মানুষের উপস্থিতিকে তাঁর প্রতি সমর্থন বাড়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষক শামিলা চৌধুরী বলেন, শুরুর দিকে ইমরানের দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা চোখে পড়ছিল। তবে ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠেছে দলটি। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। নির্বাচনে যে বিষয়টিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে—সেই সহিংসতা কিন্তু চলছে। গতকাল শুক্রবারও কোয়েটা ও পেশোয়ারে পৃথক বোমা বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত হয়েছে। তালেবান হুমকি দিয়েছে, নির্বাচনের দিনও আত্মঘাতী হামলা চালানো হবে। তারা নির্বাচনকে নাস্তিকদের ব্যবস্থা বলে মনে করে। তালেবানের হুমকি সত্ত্বেও এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ভোটার ওয়াক্কাস আলী বলেন, তিনি অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। এবার ভোট দেবেন ইমরান খানকে। কারণ, তিনি পরিবর্তনের প্রতীক। এর আগে অন্যদের ভোট দিয়েছেন। কোনো লাভ হয়নি। এবারের নির্বাচনে ভোটারসংখ্যা আট কোটি ৬০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে নারী ভোটার প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ, ভোটকেন্দ্র ৭০ হাজার। নির্বাচনে ছয় লাখ নিরাপত্তাকর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার সেনাসদস্য থাকবেন। নির্বাচনে বিদায়ী সরকারের প্রধান শরিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) অবস্থান হতাশাজনক। তালেবানের হুমকির কারণে প্রচারণায় নেতার অভাব ছিল লক্ষণীয়। টেলিভিশন বিজ্ঞাপন ও ব্যানারে প্রচারণা চালানো পিপিপি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান বেনজির ভুট্টোর ভাবমূর্তিকেই মূল পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে। প্রেসিডেন্ট পদে থাকায় পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি প্রচারণায় নামতে পারেননি। অন্যদিকে জারদারি-বেনজির দম্পতির ছেলে দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো বয়স কম হওয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। এসব কারণে পিপিপির ফল হতাশাজনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
No comments