নতুন সূর্য উদয়ের অপেক্ষায় কিউবা: সমাজতন্ত্র নির্মাণই সংবিধান পরিবর্তনের লক্ষ্য by অনিম আরাফাত
গত
আগস্ট থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চলের কমিউনিস্ট রাষ্ট্র কিউবাতে দেখা যাচ্ছে নতুন
এক চিত্র। দেশটির অধিবাসীরা একটি বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণে মেতে
আছেন। দ্বীপরাষ্ট্রটির সর্বত্রই সরকার আয়োজিত সভায় জোগ দিচ্ছে সাধারণ
মানুষ। হাসপাতাল, স্কুল ও পার্কগুলোতে সংবিধানের নতুন খসড়া সমপর্কে আলোচনা
করতে জড়ো হচ্ছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে, এ সংবিধানটি পাস হলে দেশটির
রাজনৈতিক ইতিহাসের গত ৪ দশকের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হতে চলেছে
এটি। নতুন এ খসড়ায় যা রয়েছে তার মধ্যে সব থেকে আলোচিত হচ্ছে, সমলিঙ্গের
বিয়ের বৈধতা, ব্যক্তিগত মালিকানার স্বীকৃতি ও সাম্যবাদী দেশ গঠনের ধারণা
বর্জন। ইতিমধ্যে জনমতামত নেয়ার পর্যায়টি শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে সংবিধান
পরিবর্তনে কাজ শুরু হয়েছে জাতীয় পরিষদে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিউবার জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে?
কি ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে?
কয়েক দশক ধরে চলা অর্থনৈতিক সংকট ও বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন কিউবাকে বাধ্য করেছে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা থেকে কিছুটা বের হয়ে পৃথিবীর অন্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তাল মিলাতে। কিউবার বর্তমান সংবিধানটি সোভিয়েত আমলে প্রণয়ন করা হয়েছিল। গত জুলাই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট সংবিধান পরিবর্তনের অনুমোদন দেয় এবং এর খসড়া তৈরি করে। তারপর থেকে একে দেশের জনগণের রায়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। খসড়া অনুমোদনের সময় কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডিয়াজ-ক্যানেল বলেন, কিউবার প্রত্যেক নাগরিক তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে। এই সংবিধানই আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে রচনা করবে। ইতিমধ্যে দেশটির কর্মকর্তারা সমগ্র দেশ থেকে মানুষের মতামত হস্তলিখিত নোট আকারে সংগ্রহ করেছে। এখন আইনপ্রণেতারা এই জনরায়ের ভিত্তিতে সংবিধান পরিবর্তন সমপর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
নতুন এ সংবিধান সংশোধনের ফলে এখন থেকে কোনো প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ দুইবার নির্বাচিত হতে পারবেন। এরমধ্যে, প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার সময় তাকে অবশ্যই ৬০ বছরের কম বয়স্ক হতে হবে। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সবথেকে বেশি নজর কেড়েছে, নতুন এ সংবিধান প্রনয়নের মাধ্যমে মূলত একটি সাম্যবাদী সমাজ তথা কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে ত্যাগ করা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন এ সংবিধান এক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আনতে পারবে না। প্রথমত ব্যাপক সংস্কার সত্ত্বেও সমাজতন্ত্রের কথা ফেলে না দিয়ে বরং নতুন করে সাজানোর বিষয়টি উঠে এসেছে এখানে। একইসঙ্গে কিউবা পূর্বের মতোই শুধু কমিউনিস্ট পার্টি অব কিউবার শাসনেই থাকছে। একদলীয় রাষ্ট্র হিসেবে কিউবার পরিচয় রাতারাতি মুছে যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই কমিউনিস্ট পার্টিই রাষ্ট্রটির রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। জাতীয় পরিষদের সভাপতি ইস্তেবান লাজো হারনান্দেজ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানিয়েছেন, কিউবার নেতৃত্ব সবসময়ই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা, উন্নয়ন ও টেকসই অর্থনীতির লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা দ্বন্দ্বের সমাপ্তি হবে?
কিন্তু নতুন এই পরিবর্তন কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার সমপর্ক উন্নয়নে সাহায্য করবে? ১৯৫৯ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির অহি-নকুল সমপর্ক। বিপ্লবী কিংবদন্তি ফিদেল ক্যাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবায় কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় বসার পর থেকেই এই দ্বন্দ্বের শুরু। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করে নাকের ডগায় সোভিয়েতপন্থি এ রাষ্ট্রটি তখন মার্কিনিদের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়। কিউবার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কিউবা ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে সমপর্ক তলানিতে পৌঁছায় ১৯৬১ সালের সিআইএ পরিচালিত বে অব পিগস অপারেশনের পর। সে বছর প্রায় ১৫০০ অত্যন্ত দক্ষ সিআইএ সেনা এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিল। এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করে কিউবার সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানো। সে অভিযানে অংশ নেয়া সিআইএ এজেন্টরা কিউবার সেনাদের হাতে ধরা পড়ে এবং পরে তাদেরকে হত্যা করা হয়। একে ধরা হয়, পৃথিবীর ইতিহাসের সবথেকে ব্যর্থ গোয়েন্দা অভিযান হিসেবে। এক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের দেড় হাজারেরও বেশি এজেন্ট নিহত হওয়ার ক্ষতি এখনো পুষিয়ে নিতে পারেনি দেশটি। এরপর ১৯৬২ সালে কিউবার মিসাইল সংকটের সময়ও দেশদু’টির সমপর্কে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।
দীর্ঘকাল এমন বৈরী সমপর্ক থাকার পর ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রচেষ্টায় কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমপর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিন্তু ডনাল্ড ট্রামপ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এ সমপর্ক পুনরায় খারাপ হতে শুরু করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কিউবার এ সংবিধান পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমপর্ক স্থাপনে যথেষ্ট হবে না। কিউবায় এখনো কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাই থেকে যাবে। তাই যুক্তরাষ্ট্র নিজেও সমপর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হবে না।
কিউবার অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে?
১৯৯১ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কিউবার অর্থনীতি ধাক্কা খায়। দেশটি ব্যাপক মাত্রায় সোভিয়েত ইউনিয়নের দেয়া মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সাহায্যের উপর নির্ভর করতো। কিন্তু সোভিয়েত পতনের পর এ সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লাগাতার অর্থনৈতিক অবরোধও কিউবার অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ২০০৬ সালে ফিদেল ক্যাস্ত্রো তার ভাই রাউল ক্যাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। রাউল ক্যাস্ত্রো তখন দেশটিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন সাধন করেন। এর ফলে দেশটিতে স্বল্প মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যক্তিগত সমপত্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়। মুক্ত বাজার ও ব্যক্তিগত সমপত্তির ধারণাগুলো এর আগে কিউবার কমিউনিস্ট নেতাদের দ্বারা ব্যাপক সমালোচনার শিকার হলেও এখন এই ধারনাগুলোকেই জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে দেশটিতে। তবে এর উদ্দেশ্য সেই সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠাই বলে জানানো হচ্ছে। তবে শুধু অর্থনৈতিক পরিবর্তনই নয়, চীন ও ভিয়েতনামের মতো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মতো নিজের আধুনিকায়নের চেষ্টাও করবে। তবে কিউবার নেতারা এখনো ব্যক্তিগত সমপত্তি ও বৈষম্যমূলক সমাজের বিষয়ে চিন্তিত। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে এ সকল পদক্ষেপ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। একই সঙ্গে দেশটি পৃথিবীর অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্যিক সমপর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে এ মাসে প্রেসিডেন্ট ডিয়াজ ক্যানেল রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও লাওস সফর করেন। এ দেশগুলোকে কিউবায় বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলাই এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। এছাড়াও রয়েছে দেশটির মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা প্রশ্ন। সব মিলিয়ে কিউবায় আগামীতে কতখানি পরিবর্তন আসতে চলেছে- তা সময়ই বলে দেবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিউবার জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে?
কি ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে?
কয়েক দশক ধরে চলা অর্থনৈতিক সংকট ও বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন কিউবাকে বাধ্য করেছে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা থেকে কিছুটা বের হয়ে পৃথিবীর অন্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তাল মিলাতে। কিউবার বর্তমান সংবিধানটি সোভিয়েত আমলে প্রণয়ন করা হয়েছিল। গত জুলাই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট সংবিধান পরিবর্তনের অনুমোদন দেয় এবং এর খসড়া তৈরি করে। তারপর থেকে একে দেশের জনগণের রায়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। খসড়া অনুমোদনের সময় কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডিয়াজ-ক্যানেল বলেন, কিউবার প্রত্যেক নাগরিক তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে। এই সংবিধানই আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে রচনা করবে। ইতিমধ্যে দেশটির কর্মকর্তারা সমগ্র দেশ থেকে মানুষের মতামত হস্তলিখিত নোট আকারে সংগ্রহ করেছে। এখন আইনপ্রণেতারা এই জনরায়ের ভিত্তিতে সংবিধান পরিবর্তন সমপর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
নতুন এ সংবিধান সংশোধনের ফলে এখন থেকে কোনো প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ দুইবার নির্বাচিত হতে পারবেন। এরমধ্যে, প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার সময় তাকে অবশ্যই ৬০ বছরের কম বয়স্ক হতে হবে। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সবথেকে বেশি নজর কেড়েছে, নতুন এ সংবিধান প্রনয়নের মাধ্যমে মূলত একটি সাম্যবাদী সমাজ তথা কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে ত্যাগ করা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন এ সংবিধান এক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আনতে পারবে না। প্রথমত ব্যাপক সংস্কার সত্ত্বেও সমাজতন্ত্রের কথা ফেলে না দিয়ে বরং নতুন করে সাজানোর বিষয়টি উঠে এসেছে এখানে। একইসঙ্গে কিউবা পূর্বের মতোই শুধু কমিউনিস্ট পার্টি অব কিউবার শাসনেই থাকছে। একদলীয় রাষ্ট্র হিসেবে কিউবার পরিচয় রাতারাতি মুছে যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই কমিউনিস্ট পার্টিই রাষ্ট্রটির রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। জাতীয় পরিষদের সভাপতি ইস্তেবান লাজো হারনান্দেজ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানিয়েছেন, কিউবার নেতৃত্ব সবসময়ই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা, উন্নয়ন ও টেকসই অর্থনীতির লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা দ্বন্দ্বের সমাপ্তি হবে?
কিন্তু নতুন এই পরিবর্তন কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার সমপর্ক উন্নয়নে সাহায্য করবে? ১৯৫৯ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির অহি-নকুল সমপর্ক। বিপ্লবী কিংবদন্তি ফিদেল ক্যাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবায় কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় বসার পর থেকেই এই দ্বন্দ্বের শুরু। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করে নাকের ডগায় সোভিয়েতপন্থি এ রাষ্ট্রটি তখন মার্কিনিদের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়। কিউবার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কিউবা ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে সমপর্ক তলানিতে পৌঁছায় ১৯৬১ সালের সিআইএ পরিচালিত বে অব পিগস অপারেশনের পর। সে বছর প্রায় ১৫০০ অত্যন্ত দক্ষ সিআইএ সেনা এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিল। এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করে কিউবার সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানো। সে অভিযানে অংশ নেয়া সিআইএ এজেন্টরা কিউবার সেনাদের হাতে ধরা পড়ে এবং পরে তাদেরকে হত্যা করা হয়। একে ধরা হয়, পৃথিবীর ইতিহাসের সবথেকে ব্যর্থ গোয়েন্দা অভিযান হিসেবে। এক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের দেড় হাজারেরও বেশি এজেন্ট নিহত হওয়ার ক্ষতি এখনো পুষিয়ে নিতে পারেনি দেশটি। এরপর ১৯৬২ সালে কিউবার মিসাইল সংকটের সময়ও দেশদু’টির সমপর্কে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।
দীর্ঘকাল এমন বৈরী সমপর্ক থাকার পর ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রচেষ্টায় কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমপর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিন্তু ডনাল্ড ট্রামপ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এ সমপর্ক পুনরায় খারাপ হতে শুরু করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কিউবার এ সংবিধান পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমপর্ক স্থাপনে যথেষ্ট হবে না। কিউবায় এখনো কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাই থেকে যাবে। তাই যুক্তরাষ্ট্র নিজেও সমপর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হবে না।
কিউবার অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে?
১৯৯১ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কিউবার অর্থনীতি ধাক্কা খায়। দেশটি ব্যাপক মাত্রায় সোভিয়েত ইউনিয়নের দেয়া মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সাহায্যের উপর নির্ভর করতো। কিন্তু সোভিয়েত পতনের পর এ সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লাগাতার অর্থনৈতিক অবরোধও কিউবার অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ২০০৬ সালে ফিদেল ক্যাস্ত্রো তার ভাই রাউল ক্যাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। রাউল ক্যাস্ত্রো তখন দেশটিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন সাধন করেন। এর ফলে দেশটিতে স্বল্প মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যক্তিগত সমপত্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়। মুক্ত বাজার ও ব্যক্তিগত সমপত্তির ধারণাগুলো এর আগে কিউবার কমিউনিস্ট নেতাদের দ্বারা ব্যাপক সমালোচনার শিকার হলেও এখন এই ধারনাগুলোকেই জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে দেশটিতে। তবে এর উদ্দেশ্য সেই সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠাই বলে জানানো হচ্ছে। তবে শুধু অর্থনৈতিক পরিবর্তনই নয়, চীন ও ভিয়েতনামের মতো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মতো নিজের আধুনিকায়নের চেষ্টাও করবে। তবে কিউবার নেতারা এখনো ব্যক্তিগত সমপত্তি ও বৈষম্যমূলক সমাজের বিষয়ে চিন্তিত। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে এ সকল পদক্ষেপ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। একই সঙ্গে দেশটি পৃথিবীর অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্যিক সমপর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে এ মাসে প্রেসিডেন্ট ডিয়াজ ক্যানেল রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও লাওস সফর করেন। এ দেশগুলোকে কিউবায় বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলাই এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। এছাড়াও রয়েছে দেশটির মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা প্রশ্ন। সব মিলিয়ে কিউবায় আগামীতে কতখানি পরিবর্তন আসতে চলেছে- তা সময়ই বলে দেবে।
No comments