পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম ব্যবহার করে ভয়ঙ্কর প্রতারণা by মিজানুর রহমান ও ইমরান আলী
ওয়ার্ক
ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির লোভ দেখিয়ে ফেসবুকে ভয়াবহ প্রতারণার ফাঁদ
পেতেছে ভিনদেশি এক দম্পতি। তারা নিজেদের আমেরিকান বলে পরিচয় দিচ্ছে।
বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করতে ওই দম্পতি একটি ভিডিও প্রচার করেছে।
যাতে দেখানো হয়েছে তারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে- এজন্য এখানে এসেছে মাত্র ৬
মাসের জন্য। ওই সময়ের মধ্যে তারা কিছু লোকের ভিসা প্রসেস করবে এবং ওয়ার্ক
পারমিট দিয়ে আমেরিকায় পাঠাবে!
ভিডিওটিতে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ‘সোনালী রোদ্দুর’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। যার শিরোনাম দেয়া হয়েছে, ডাইরেক্ট ওয়ার্ক ভিসায় আমেরিকা! প্রতারণামূলক ওই ভিডিও প্রচার বন্ধ করতে এবং বিদেশি প্রতারকদ্বয়কে ধরতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাগুলো সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলছেন- ওয়ার্ক পারমিটসহ আমেরিকান ভিসা পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে প্রতারক চক্র যে ভিডিওটি প্রচার করছে তাতে অনুমতি ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম ও লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনভিপ্রেত। এ ছাড়াও ওই ভিডিও’র স্ক্রল মেসেজে প্রচারিত কিছু ফোন, ফ্যাক্স ও মোবাইল নম্বর এবং ই-মেইল ঠিকানা যোগাযোগের জন্য শেয়ার করা হয়েছে। যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বলে দাবি করা হয়েছে তা মোটেও সঠিক নয়। প্রচারিত প্রতারণামূলক ও বানোয়াট ভিডিও’র ব্যাপারে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধও জানিয়েছে সরকার। প্রচারিত ওই ভিডিও’র একটি কপি মানবজমিনের হাতে রয়েছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনায় বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে মানবজমিনের আইটি টিম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারক দম্পতি ঢাকা শহরেই রয়েছে। তবে তারা কোন এলাকায় বসবাস করছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভিডিওটি বিশ্বাসযোগ্য করতে সেখানে পররাষ্ট্র সচিবের একটি ভুয়া মেইলও ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটির সূচনা এবং সমাপনীতে জনস্বার্থে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় লেখা হয়েছে। এ ছাড়া দু’টি শিশুকেও সেখানে প্রদর্শন করা হয়েছে। ভিডিওটি দেখেছেন এমন কর্মকর্তারা বলছেন, ভিনদেশি ধূর্ত ওই প্রতারক দম্পতিকে যত দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে ততই মঙ্গল। বাংলা হরফে লেখা ‘সোনালী রোদ্দুর’ নামের ফেসবুক পেইজে বাংলায় ‘ডাইরেক্ট ওয়ার্ক ভিসায় আমেরিকা’ শিরোনামে একটি পোস্টও দেয়া রয়েছে।
যাতে ফার্স্ট ব্র্যাকেটের মধ্যে লেখা হয়েছে- ‘বাংলাদেশিদের জন্য এই কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।’ পোস্ট-এ লেখা হয়েছে- আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি মেরী ম্যাক্সাস গ্রুপের সিইও মিস্টার জেসন এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মিসেস মেরিনী বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন। বাংলাদেশিদের প্রতি মুগ্ধ এই আমেরিকান দম্পতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে ডাইরেক্ট ভিসা দিয়ে বেশকিছু বাংলাদেশিকে তাদের সঙ্গে করে আমেরিকায় নিয়ে যাবেন। এই ডাইরেক্ট ওয়ার্ক পারমিট প্রসেস করার জন্য তারা আগামী ছয় মাস বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। ডাইরেক্ট ওয়ার্ক ভিসায় আমেরিকা যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি বিশেষ করে প্রবাসীদের সরাসরি যোগাযোগ এবং দ্রুত রেজিস্ট্রেশনের অনুরোধ জানিয়ে কয়েকটি নাম্বার দিয়ে বলা হয়েছে- প্রদত্ত নাম্বারগুলোতে আপনারা সরাসরি কথা বলে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।
আগ্রহীদের যোগাযোগের জন্য দুটি মোবাইল ফোন নাম্বার বিশেষ চিহ্ন দিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে। যার একটি নাম্বার মিস্টার জেসনের এবং অপরটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বলে প্রচার করা হয়েছে। নাম্বার দুটি হলো- ০১৮৬৯৫৫২৫৯২ (মি. জেসন) এবং ০১৭৪৫১৫৯৭১১ (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়)। পোস্টটি বিশ্বাসযোগ্য করতে সূত্র হিসাবে ফেসবুক পোস্টে বিবিসি নিউজ এবং বিটিভি ওয়ার্ল্ড-এর নামও জুড়ে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, ভিডিওটিকে গ্রহণযোগ্য করতে এক্সক্লুসিভ লিখে ওয়াটার মার্কও দেয়া হয়। অনুসন্ধান বলছে- ২৫শে আগস্ট শনিবার রাত ১২টা ৩৬ মিনিটে ৫৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিও আপলোড করা হয়। যার সূচনাতে একজন পুরুষ কথা বলেন। সঙ্গে একটি শিশু। ভিডিও’র ফ্রেমে ওই ব্যক্তির অ্যাসটন বা পরিচিতি স্থানে ডক্টর জেসন মেনডিরিন পিএইচডি, সিইও ম্যারি ম্যাক্সাস গ্রুপ, ইউনাইটেড স্টেট অব অ্যামেরিকা, ইউএসএ লেখা রয়েছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। সেখানে তিনি তার সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানে আপ্লুত বলেই জানাচ্ছিলেন। ভিডিও’র সমাপনীতে এক নারী কথা বলেন।
যা অ্যাসটন বা পরিচিতি স্থানে লেখা রয়েছে- মারিনি মার্গারসন এমবিএ, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (হিউম্যান রিসোর্স), ম্যারি ম্যাক্সাস গ্রুপ, ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকা, ইউএসএ। ভিডিও’র স্ক্রলে যে লাইনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল তা হলো- অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের এবং ইমার্জেন্সি সার্ভিসের জন্য যোগাযোগ করুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। যোগাযোগের জন্য একটি ল্যান্ড ফোন নাম্বার, একটি ফ্যাক্স নাম্বার এবং দুটি ভিন্ন মোবাইল ফোন নাম্বার দেয়া ছিল। অনুসন্ধানে দেখা যায় নাম্বারগুলো না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের না প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ নিয়ে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন। ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের যে পরিচয় দেয়া হয়েছে মানবজমিনের টিম নিশ্চিত হয়েছে যে, ওই দুটি পরিচয়ই ভুয়া। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ম্যারি ম্যাক্স নামে কোনো গ্রুপ নেই। ওয়েব সাইটে এর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সোনালী রোদ্দুর নামে যে ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে তার আইডি সম্পর্ককে খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে মালয়েশিয়ার একটি নাম্বার দেয়া রয়েছে। আইডিতে যারা কমেন্ট বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাদের বেশিরভাগই মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি। এমনই একজন ফেসবুক ইউজার সাইদুল ইসলাম নাহিদ। তিনি তার কমেন্টে লিখেন- আমি মিস্টার জেসন প্রদত্ত একটি নাম্বারে কল দিয়েছিলাম। মাহমুদ নামের একজন ফোনটি রিসিভ করলেন।
তিনি নিজেকে জেসনের সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দেন। মাহমুদ বলেন, তিনি নাকি ইউএস অ্যাম্বাসিতে রিক্রুটেড হয়েছেন। মোহাম্মদ বশির নামে একজন লিখেন- আমি মি. জেসনকে কল দিয়েছিলাম। অনেক কথা হলো তার সঙ্গে। আমার পাসপোর্ট নাম্বার নিলো, ভিসা নাম্বারও নিলো এবং বললো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে নাম্বার দেয়া হয়েছে রেজিস্ট্রেশনের জন্য তাতে কল করতে এবং ৯৫০০ টাকা দিতে। তখনই আমি বুঝে গেছি এটা বাটপারি! পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, জেসন দম্পতির প্রচারিত ফোন, ফ্যাক্স ও মোবাইল নম্বর এবং ই-মেইল ঠিকানায় যোগাযোগকারীদের কাছে অর্থ দাবি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অভিযোগ আসছে। এই ধরনের কোনো উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বা সংশ্লিষ্টতা নেই। বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতারণাপূর্ণ, মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ভ্রান্ত প্রচারণায় প্রতারিত না হওয়ার ব্যাপারে সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে এবং কেউ প্রতারণার শিকার হলে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া যাচ্ছে। অবশ্য ওই ভিডিও’র পক্ষেও প্রচারণা রয়েছে। যারা পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে তারা ওই চক্রের অংশ কি-না তা নিশ্চিত হতে সরকারের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- আরিফ পাটওয়ারি নামে একজন বেশ জোরালো ভাবেই প্রতারক দম্পতি এবং তাদের প্রচারিত পোস্টের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তার ভাষ্য হচ্ছে- “সোনালী রোদ্দুর সম্পর্কে আমি জানি, বিষয়টা সত্য, কিন্তু কিছু আবালকে এটা বুঝানো অসম্ভব! যদি বলেন- ড্রাগন গ্যাপস দিয়ে যাওয়া, সেটা বিশ্বাস করবে। এরই নাম বাঙালী!” ওই ব্যক্তি এ-ও লিখেন- কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। ওয়ার্ক ভিসার যোগ্যতা কি তা জানতে চাই। বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো। মানবজমিন অনুসন্ধানি টিম জেসন প্রদত্ত নাম্বারে কথা বলার চেষ্টা করে। একবার একজন ফোনটি রিসিভ করেন। তবে তিনি নিজের পরিচয় না দিয়ে বাংলায় ‘একটু ব্যস্ত আছি পরে কথা বলুন’ বলে লাইনটি কেটে দেন।
পরে বহুবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। এক সময় ফোনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। উল্লেখ্য, সোনালী রোদ্দুর পেজটির ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি। পেজটির লোকেশন ঢাকা দেয়া থাকলেও যোগাযোগের নম্বর হিসেবে দেয়া হয়েছে +৬০ ১৭-২১৫ ০০৮৩। এটি নিশ্চিতভাবে মালয়েশিয়ার নাম্বার। ওই ভিডিওটি ইউটিউবেও প্রচার করেছেন ভিন্ন এক ব্যক্তি। ভিডিওটির নির্মাতা প্রতারক চক্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আরডি রুপন নামের এক ব্যক্তি একজন ইউটিউবার। তার চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১৬২৫।
ভিডিওটিতে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ‘সোনালী রোদ্দুর’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। যার শিরোনাম দেয়া হয়েছে, ডাইরেক্ট ওয়ার্ক ভিসায় আমেরিকা! প্রতারণামূলক ওই ভিডিও প্রচার বন্ধ করতে এবং বিদেশি প্রতারকদ্বয়কে ধরতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাগুলো সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলছেন- ওয়ার্ক পারমিটসহ আমেরিকান ভিসা পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে প্রতারক চক্র যে ভিডিওটি প্রচার করছে তাতে অনুমতি ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম ও লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনভিপ্রেত। এ ছাড়াও ওই ভিডিও’র স্ক্রল মেসেজে প্রচারিত কিছু ফোন, ফ্যাক্স ও মোবাইল নম্বর এবং ই-মেইল ঠিকানা যোগাযোগের জন্য শেয়ার করা হয়েছে। যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বলে দাবি করা হয়েছে তা মোটেও সঠিক নয়। প্রচারিত প্রতারণামূলক ও বানোয়াট ভিডিও’র ব্যাপারে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধও জানিয়েছে সরকার। প্রচারিত ওই ভিডিও’র একটি কপি মানবজমিনের হাতে রয়েছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনায় বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে মানবজমিনের আইটি টিম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারক দম্পতি ঢাকা শহরেই রয়েছে। তবে তারা কোন এলাকায় বসবাস করছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভিডিওটি বিশ্বাসযোগ্য করতে সেখানে পররাষ্ট্র সচিবের একটি ভুয়া মেইলও ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটির সূচনা এবং সমাপনীতে জনস্বার্থে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় লেখা হয়েছে। এ ছাড়া দু’টি শিশুকেও সেখানে প্রদর্শন করা হয়েছে। ভিডিওটি দেখেছেন এমন কর্মকর্তারা বলছেন, ভিনদেশি ধূর্ত ওই প্রতারক দম্পতিকে যত দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে ততই মঙ্গল। বাংলা হরফে লেখা ‘সোনালী রোদ্দুর’ নামের ফেসবুক পেইজে বাংলায় ‘ডাইরেক্ট ওয়ার্ক ভিসায় আমেরিকা’ শিরোনামে একটি পোস্টও দেয়া রয়েছে।
যাতে ফার্স্ট ব্র্যাকেটের মধ্যে লেখা হয়েছে- ‘বাংলাদেশিদের জন্য এই কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।’ পোস্ট-এ লেখা হয়েছে- আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি মেরী ম্যাক্সাস গ্রুপের সিইও মিস্টার জেসন এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মিসেস মেরিনী বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন। বাংলাদেশিদের প্রতি মুগ্ধ এই আমেরিকান দম্পতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে ডাইরেক্ট ভিসা দিয়ে বেশকিছু বাংলাদেশিকে তাদের সঙ্গে করে আমেরিকায় নিয়ে যাবেন। এই ডাইরেক্ট ওয়ার্ক পারমিট প্রসেস করার জন্য তারা আগামী ছয় মাস বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। ডাইরেক্ট ওয়ার্ক ভিসায় আমেরিকা যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি বিশেষ করে প্রবাসীদের সরাসরি যোগাযোগ এবং দ্রুত রেজিস্ট্রেশনের অনুরোধ জানিয়ে কয়েকটি নাম্বার দিয়ে বলা হয়েছে- প্রদত্ত নাম্বারগুলোতে আপনারা সরাসরি কথা বলে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।
আগ্রহীদের যোগাযোগের জন্য দুটি মোবাইল ফোন নাম্বার বিশেষ চিহ্ন দিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে। যার একটি নাম্বার মিস্টার জেসনের এবং অপরটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বলে প্রচার করা হয়েছে। নাম্বার দুটি হলো- ০১৮৬৯৫৫২৫৯২ (মি. জেসন) এবং ০১৭৪৫১৫৯৭১১ (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়)। পোস্টটি বিশ্বাসযোগ্য করতে সূত্র হিসাবে ফেসবুক পোস্টে বিবিসি নিউজ এবং বিটিভি ওয়ার্ল্ড-এর নামও জুড়ে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, ভিডিওটিকে গ্রহণযোগ্য করতে এক্সক্লুসিভ লিখে ওয়াটার মার্কও দেয়া হয়। অনুসন্ধান বলছে- ২৫শে আগস্ট শনিবার রাত ১২টা ৩৬ মিনিটে ৫৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিও আপলোড করা হয়। যার সূচনাতে একজন পুরুষ কথা বলেন। সঙ্গে একটি শিশু। ভিডিও’র ফ্রেমে ওই ব্যক্তির অ্যাসটন বা পরিচিতি স্থানে ডক্টর জেসন মেনডিরিন পিএইচডি, সিইও ম্যারি ম্যাক্সাস গ্রুপ, ইউনাইটেড স্টেট অব অ্যামেরিকা, ইউএসএ লেখা রয়েছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। সেখানে তিনি তার সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানে আপ্লুত বলেই জানাচ্ছিলেন। ভিডিও’র সমাপনীতে এক নারী কথা বলেন।
যা অ্যাসটন বা পরিচিতি স্থানে লেখা রয়েছে- মারিনি মার্গারসন এমবিএ, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (হিউম্যান রিসোর্স), ম্যারি ম্যাক্সাস গ্রুপ, ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকা, ইউএসএ। ভিডিও’র স্ক্রলে যে লাইনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল তা হলো- অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের এবং ইমার্জেন্সি সার্ভিসের জন্য যোগাযোগ করুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। যোগাযোগের জন্য একটি ল্যান্ড ফোন নাম্বার, একটি ফ্যাক্স নাম্বার এবং দুটি ভিন্ন মোবাইল ফোন নাম্বার দেয়া ছিল। অনুসন্ধানে দেখা যায় নাম্বারগুলো না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের না প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ নিয়ে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন। ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের যে পরিচয় দেয়া হয়েছে মানবজমিনের টিম নিশ্চিত হয়েছে যে, ওই দুটি পরিচয়ই ভুয়া। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ম্যারি ম্যাক্স নামে কোনো গ্রুপ নেই। ওয়েব সাইটে এর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সোনালী রোদ্দুর নামে যে ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে তার আইডি সম্পর্ককে খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে মালয়েশিয়ার একটি নাম্বার দেয়া রয়েছে। আইডিতে যারা কমেন্ট বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাদের বেশিরভাগই মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি। এমনই একজন ফেসবুক ইউজার সাইদুল ইসলাম নাহিদ। তিনি তার কমেন্টে লিখেন- আমি মিস্টার জেসন প্রদত্ত একটি নাম্বারে কল দিয়েছিলাম। মাহমুদ নামের একজন ফোনটি রিসিভ করলেন।
তিনি নিজেকে জেসনের সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দেন। মাহমুদ বলেন, তিনি নাকি ইউএস অ্যাম্বাসিতে রিক্রুটেড হয়েছেন। মোহাম্মদ বশির নামে একজন লিখেন- আমি মি. জেসনকে কল দিয়েছিলাম। অনেক কথা হলো তার সঙ্গে। আমার পাসপোর্ট নাম্বার নিলো, ভিসা নাম্বারও নিলো এবং বললো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে নাম্বার দেয়া হয়েছে রেজিস্ট্রেশনের জন্য তাতে কল করতে এবং ৯৫০০ টাকা দিতে। তখনই আমি বুঝে গেছি এটা বাটপারি! পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, জেসন দম্পতির প্রচারিত ফোন, ফ্যাক্স ও মোবাইল নম্বর এবং ই-মেইল ঠিকানায় যোগাযোগকারীদের কাছে অর্থ দাবি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অভিযোগ আসছে। এই ধরনের কোনো উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বা সংশ্লিষ্টতা নেই। বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতারণাপূর্ণ, মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ভ্রান্ত প্রচারণায় প্রতারিত না হওয়ার ব্যাপারে সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে এবং কেউ প্রতারণার শিকার হলে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া যাচ্ছে। অবশ্য ওই ভিডিও’র পক্ষেও প্রচারণা রয়েছে। যারা পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে তারা ওই চক্রের অংশ কি-না তা নিশ্চিত হতে সরকারের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- আরিফ পাটওয়ারি নামে একজন বেশ জোরালো ভাবেই প্রতারক দম্পতি এবং তাদের প্রচারিত পোস্টের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তার ভাষ্য হচ্ছে- “সোনালী রোদ্দুর সম্পর্কে আমি জানি, বিষয়টা সত্য, কিন্তু কিছু আবালকে এটা বুঝানো অসম্ভব! যদি বলেন- ড্রাগন গ্যাপস দিয়ে যাওয়া, সেটা বিশ্বাস করবে। এরই নাম বাঙালী!” ওই ব্যক্তি এ-ও লিখেন- কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। ওয়ার্ক ভিসার যোগ্যতা কি তা জানতে চাই। বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো। মানবজমিন অনুসন্ধানি টিম জেসন প্রদত্ত নাম্বারে কথা বলার চেষ্টা করে। একবার একজন ফোনটি রিসিভ করেন। তবে তিনি নিজের পরিচয় না দিয়ে বাংলায় ‘একটু ব্যস্ত আছি পরে কথা বলুন’ বলে লাইনটি কেটে দেন।
পরে বহুবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। এক সময় ফোনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। উল্লেখ্য, সোনালী রোদ্দুর পেজটির ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি। পেজটির লোকেশন ঢাকা দেয়া থাকলেও যোগাযোগের নম্বর হিসেবে দেয়া হয়েছে +৬০ ১৭-২১৫ ০০৮৩। এটি নিশ্চিতভাবে মালয়েশিয়ার নাম্বার। ওই ভিডিওটি ইউটিউবেও প্রচার করেছেন ভিন্ন এক ব্যক্তি। ভিডিওটির নির্মাতা প্রতারক চক্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আরডি রুপন নামের এক ব্যক্তি একজন ইউটিউবার। তার চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১৬২৫।
No comments