ওবামা-পুতিন রুদ্ধদ্বার বৈঠক ব্যর্থ
গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়ার সংকট সমাধানে কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠক। জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি সোমবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন এই দুই প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জানান, কোনো নির্দিষ্ট চুক্তি ছাড়াই ওবামা ও পুতিনের বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে ওই মুখপাত্র জানান। এদিকে বৈঠকের ব্যাপারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, পরিকল্পনার চেয়ে অনেক লম্বা সময় ধরে দুই নেতার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিরিয়া নিয়ে ভালো আলোচনা হয়েছে বলে তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা তাস। জি-২০ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে ওবামা-পুতিন বৈঠক নিয়ে অনেকেই আশাবাদী ছিলেন। সিরিয়া ও ইউক্রেন সংকট দুই প্রেসিডেন্টের আলোচ্য সূচিতে থাকার কথা জানিয়েছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ওবামা-পুতিন বৈঠকে সিরিয়া বিষয়ে চুক্তির ব্যাপারটি সামনে আসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের আলোচনার পর। জি-২০ সম্মেলনের আগে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক ও আলোচনায় সিরিয়া ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছার আভাস দেয়া হয়েছিল। দুই মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, উভয় দেশই সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ও বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি বন্ধ হোক, এটাই চায়। রোববার দুপুরে ওবামাও বলেছিলেন, সিরিয়া ইস্যুতে মতৈক্যের লক্ষ্যে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মার্কিন পররষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ চুক্তির বিষয়ে রোববারই যৌথ ঘোষণা দিতে পারেন।
কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চুক্তিটি এখনই হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা যে বিষয়গুলোকে মীমাংসিত হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম, সেগুলো থেকে শেষ পর্যন্ত রাশিয়া সরে গেছে।’ বৈঠক শেষ হওয়ার পর কেরি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো চুক্তি মেনে নেবে না যা ফের ভেঙে পড়বে’। কোনো কোনো বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে চুক্তিতে পৌঁছান যাচ্ছে না তার বিস্তারিত জানাতে সম্মত হননি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এর আগে ফেব্র“য়ারিতে লাভরভ ও কেরির মধ্যস্থতায় সিরিয়া বিষয়ে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি করা হলেও তা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভেঙে পড়ে। ওই চুক্তি লংঘন করার জন্য ওয়াশিংটন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীগুলোকে দায়ী করেছিল। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের বৈঠকের সময় কেরি ও লাভরভ নিউইয়র্কে ফের মিলিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সোমবার দুই প্রেসিডেন্টের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়াতে আশংকা করা হচ্ছে সিরিয়া নিয়ে রুশ-মার্কিন সমঝোতা ভেস্তে যাচ্ছে। এক মার্কিন কর্মকর্তার মতে, ‘অনেক বিষয় মীমাংসার বাকি আছে’। সিরিয়া নিয়ে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরুরও কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সিরিয়ায় ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে আড়াই লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। সিরিয়ার চলমান সংকট নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিপরীতধর্মী। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তারা আসাদ সরকারের বিদ্রোহ ঘোষণাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে এবং ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাচ্ছে। তবে আসাদ সরকারের দাবি, আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে যুক্তরাষ্ট্র মূলত বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করতে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। সিএনএন
No comments