নিহত মুসলিম সেনার মা বাবাকে ট্রাম্পের বিদ্রূপ
ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য দেয়া নিহত মুসলিম মার্কিন সেনার বাবার পাশে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা তার মাকে বিদ্রূপ করলেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার আবেগঘন এ বক্তব্য দেয়ার সময় ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খানের বাবা খিজির খানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাজালা খান। পরে এবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে খিজির খানের দেয়া বক্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প বলেন, খিজির খানের বক্তব্য কার লেখা? হিলারির বক্তব্য যারা লেখেন তারাই কি? এর জবাবে খিজির খান বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী গাজালা মিলে বক্তব্যটি লেখেন। উপহাস করে ট্রাম্প আরও বলেন, তার (খিজির) স্ত্রী পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুই বলেননি। সম্ভবত তাকে কিছু বলার সুযোগই দেয়া হয়নি। ট্রাম্পের এ কথার জবাবে গাজালা এবিসি নিউজকে বলেন, গভীর শোকের কারণে ডেমোক্রেটিক দলের কনভেনশনে কিছু বলার ইচ্ছে তার হয়নি। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের এমন মনোভাবে আমি মর্মাহত হয়েছি। আমি মনে করি না যে ত্যাগের অর্থ ট্রাম্প বোঝেন। কারণ আমি যখন ওখানে দাঁড়ানো ছিলাম সব আমেরিকাই আমার কষ্ট অনুধাবন করেছে। একটি কথা না বললেও তারা আমার এ ব্যথা বুঝতে পেরেছে।
খিজির খান বলেন, আমি তাকে কিছু বলতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণ গাজালা জানতেন তিনি কিছু বলতে গেলে খুব আবেগতাড়িত হয়ে পড়তেন। খিজির খান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য বোঝার ক্ষমতা ট্রাম্পের নেই। তার কোনো ভদ্রতা জ্ঞান নেই। তিনি ভদ্রতা জ্ঞানশূন্য। তার হৃদয় কলুষিত। এর আগে কনভেনশনের বক্তব্যে ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে খিজির খান বলেন, সমাধিক্ষেত্রগুলোর দিকে তাকান, যেখানে শুয়ে আছেন সাহসী দেশপ্রেমিকরা। যারা আমেরিকাকে রক্ষায় প্রাণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সেখানে আপনি পাবেন সব ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি নির্বিশেষে দেশপ্রেমিকদের, যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের দেশের জন্য কোন অবদান নেই। খিজির খান আরও বলেন, ট্রাম্পের মুসলিম-বিদ্বেষী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তার ছেলের আত্মাহুতিকে অপমানিত করা হয়েছে। এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, দেশের জন্য আমার অনেক ত্যাগ আছে। আমি হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান করেছি। আমার রয়েছে ব্যাপক সাফল্য। আমি মনে করি, আমি অনেক করেছি।
এছাড়া ট্রাম্প কখনোই মার্কিন সংবিধান পড়েননি বেলে খিজির খানের অভিযোগও নাকচ করেন রিপাবলিকান এ প্রার্থী। খিজির খান তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ট্রাম্প আদৌ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সন্নিবেশিত ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন কিনা, তা নিয়ে তার সংশয় রয়েছে। এরপর তিনি ট্রাম্পকে আমেরিকার সংবিধানের একটি কপি ধার দিতে চান এবং সংবিধানে উল্লিখিত ‘স্বাধীনতা’ ও ‘সবার জন্য সমান আইন’ অধ্যায়টি ভালোভাবে পড়তে বলেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি কখনও সংবিধান পড়িনি, লাখ লাখ লোকের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথা বলার কোনো অধিকার খিজির খানের নেই। যদিও তার অভিযোগটি মিথ্যা। এদিকে খিজির খান, তার স্ত্রী ও গোটা পরিবারকে ‘দ্য বেস্ট অব আমেরিকা’ বলে সমর্থন করেছেন ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেন, এটাই উপযুক্ত সময় হুমায়ন খানের মতো সেনাদের সম্মান জানানো। ‘সেলুট ফর দেম’- অভিনন্দন তাদের জন্য। আমরা তাদের সম্মান জানাই। ২০০৪ সালের ইরাক যুদ্ধে গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন ২৭ বছর বয়সী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন সেনা হুমায়ন খান।
No comments