ভারত নিয়ে নয়, হতাশা শাসন পরিচালনা নিয়ে: অমর্ত্য সেন
অমর্ত্য সেন |
নোবেল
পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, তিনি ভারতকে নিয়ে হতাশ নন
কিন্তু ভারতের শাসন পরিচালনা নিয়ে তিনি হতাশ। ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব
ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি
স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ওপর সরকারের মনোযোগ
বৃদ্ধি আরও জোরদার করার আহ্বান জানান। সিদ্ধার্থ ও সুরজিত গুপ্তার নেওয়া ওই
সাক্ষাৎকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
উন্নয়ন রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ভারতের উন্নয়নের ব্যাপারে আমার একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঘাটতিও আছে, আগের সরকারের আমলেও ঘাটতি ছিল। কিন্তু এই ঘাটতির প্রতিকার হচ্ছে না এবং বর্তমান সরকারের সময়ে এটা আরও তীব্রতর হচ্ছে। তার ওপর ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার মতো বিষয়গুলো নিয়েও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
মোটের ওপর ভারতীয়রা প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পায় না এবং ভালো মানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাও পায় না। একইভাবে আমরা বিশৃঙ্খলার মধ্যেই আছি। রোগীরা জানেন না, তারা কি বা কোথায় খরচ করছেন। তারা খুব সহজেই শোষণের শিকার হতে পারেন, যদি আপনি ভালো একটি সরকারি সেবা নিশ্চিত করতে না পারেন। আমরা এমনটা পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে দেখেছি অর্থাৎ ওই সরকারও এ বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। বলা হয় বা ভাবা হয় আমি ইউপিএ জোটের (কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট) সমর্থক। আমি তাঁদের সমালোচনাও করি। তারা খুব বেশি কিছু করেনি। তারা সবার জন্য শিক্ষা অভিযানে স্কুলে খাওয়ার জন্য বরাদ্দ কমিয়েছে এবং স্বাস্থ্যের জন্য তারা কিছুই করতে পারেনি। প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে হবে এবং এটা সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী মতো বিষয়গুলো ভারতে ধারাবাহিকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে এবং এখন আরও বেশি হচ্ছে।
প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কৌশল সংশোধনের প্রয়োজন আছে কি?
ভারত যে বিষয়গুলোতে খুব ভালো অবস্থানে আছে, তার কোনোটির ক্ষেত্রেই কিন্তু সাধারণ শ্রমশক্তির ওপর নির্ভর করতে হয় না। নির্ভর করতে হয় বিশেষায়িত শ্রমিকের ওপর। যেমনটি হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যালস ও অটোমোবাইল পণ্যের ক্ষেত্রে। অশিক্ষিত শ্রমিকদের দিয়ে এখানে নতুন পণ্য তৈরি করা কষ্টকর। কিন্তু এটা চীনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি আমার, কলম হাতে নিলে, টেলিফোন হাতে নিলে কিংবা হাত ঘড়ির দিকে তাকালে দেখতে পাই, সবই চীনের তৈরি। এগুলো আমরাও তৈরি করতে পারি। কিন্তু এর জন্য অর্থনৈতিক কৌশলের কোনো পদ্ধতি সংশোধনের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন হলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক কৌশলের মধ্যে সম্পর্ককে বোঝার পদ্ধতি সংশোধন করা।
মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এমজিএনআরইজিএ) সংশোধন করা প্রয়োজন আছে কি?
আমি মূলত এ ধরনের সংশোধনের পক্ষে। আমি কি ভেবেছিলাম যে এটা পুরোটাই ফেলনা? আমি আসলে তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু ফেলনা হওয়া সত্ত্বেও এর কিছু অর্জন আছে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্জন কম। তবে মনে হচ্ছে এটা কিছু অর্জন করেছিল বলে বর্তমান সরকার স্বীকার করতে চাচ্ছে। আর তারা মনে করছে ওই অর্জনের কৃতিত্বও তাদের। এখন সরকার যদি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করে এমজিএনআরইজিএ-কে আরও নিশ্ছিদ্র করার দিকে মনোযোগ দেয় ও সম্পদ সৃষ্টির দিকে মূল লক্ষ্য রাখে তাহলে সেটা ভালোই হবে।
সুশাসনের জন্য আপনার উদ্বেগের কারণ কি?
আমি সরকারকে কোনো উপদেশ দেব না। তবে আমি মনে করি, আমাদের অধিকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাওয়া উচিত। কারণ শক্তিশালী অর্থনীতি মূলত মানুষের শক্তির ওপর নির্ভর করে। আর মানুষের শক্তি নির্ভর করে তারা শিক্ষিত আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কি না তার ওপর। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে তারা কি ওই সময় সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় কোনো সহায়তা পাবে—এসব বিষয় আমাদের গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারটি কি এখনো আপনাকে বিব্রত করে?
আমি আপনাকে এটা বলতে পারি যে কেন আমি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ড চাচ্ছিল যে আমি সেখানে থাকি। কিন্তু সরকার চায়নি আমি সেখানে থাকি। এ ছাড়া আমার কাছে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছিল যে, আমি যদি আমার আমিত্ব ধরে রাখার জন্য সেখানে থাকতাম, তাহলে আমাকে জরিমানা দিতে হতো। আর নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও বিষয়টি ভালো হতো না। কারণ আমার প্রতিটি বিষয়ে সরকার বিরোধিতা করছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের জুলাই মাসে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হন অমর্ত্য সেন। গত বছরের জুলাই মাসে সেই মেয়াদ শেষ হয়। তাঁকে দ্বিতীয়বারের মতো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য থাকার অনুরোধ করা হলেও তিনি এতে রাজি হননি। তিনি বরাবরই বলে আসছেন, মোদি সরকারের সমালোচনা করায় সরকারের চাপেই তিনি ওই পদে আর থাকতে রাজি হননি।
উন্নয়ন রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ভারতের উন্নয়নের ব্যাপারে আমার একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঘাটতিও আছে, আগের সরকারের আমলেও ঘাটতি ছিল। কিন্তু এই ঘাটতির প্রতিকার হচ্ছে না এবং বর্তমান সরকারের সময়ে এটা আরও তীব্রতর হচ্ছে। তার ওপর ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার মতো বিষয়গুলো নিয়েও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
মোটের ওপর ভারতীয়রা প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পায় না এবং ভালো মানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাও পায় না। একইভাবে আমরা বিশৃঙ্খলার মধ্যেই আছি। রোগীরা জানেন না, তারা কি বা কোথায় খরচ করছেন। তারা খুব সহজেই শোষণের শিকার হতে পারেন, যদি আপনি ভালো একটি সরকারি সেবা নিশ্চিত করতে না পারেন। আমরা এমনটা পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে দেখেছি অর্থাৎ ওই সরকারও এ বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। বলা হয় বা ভাবা হয় আমি ইউপিএ জোটের (কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট) সমর্থক। আমি তাঁদের সমালোচনাও করি। তারা খুব বেশি কিছু করেনি। তারা সবার জন্য শিক্ষা অভিযানে স্কুলে খাওয়ার জন্য বরাদ্দ কমিয়েছে এবং স্বাস্থ্যের জন্য তারা কিছুই করতে পারেনি। প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে হবে এবং এটা সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী মতো বিষয়গুলো ভারতে ধারাবাহিকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে এবং এখন আরও বেশি হচ্ছে।
প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কৌশল সংশোধনের প্রয়োজন আছে কি?
ভারত যে বিষয়গুলোতে খুব ভালো অবস্থানে আছে, তার কোনোটির ক্ষেত্রেই কিন্তু সাধারণ শ্রমশক্তির ওপর নির্ভর করতে হয় না। নির্ভর করতে হয় বিশেষায়িত শ্রমিকের ওপর। যেমনটি হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যালস ও অটোমোবাইল পণ্যের ক্ষেত্রে। অশিক্ষিত শ্রমিকদের দিয়ে এখানে নতুন পণ্য তৈরি করা কষ্টকর। কিন্তু এটা চীনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি আমার, কলম হাতে নিলে, টেলিফোন হাতে নিলে কিংবা হাত ঘড়ির দিকে তাকালে দেখতে পাই, সবই চীনের তৈরি। এগুলো আমরাও তৈরি করতে পারি। কিন্তু এর জন্য অর্থনৈতিক কৌশলের কোনো পদ্ধতি সংশোধনের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন হলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক কৌশলের মধ্যে সম্পর্ককে বোঝার পদ্ধতি সংশোধন করা।
মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এমজিএনআরইজিএ) সংশোধন করা প্রয়োজন আছে কি?
আমি মূলত এ ধরনের সংশোধনের পক্ষে। আমি কি ভেবেছিলাম যে এটা পুরোটাই ফেলনা? আমি আসলে তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু ফেলনা হওয়া সত্ত্বেও এর কিছু অর্জন আছে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্জন কম। তবে মনে হচ্ছে এটা কিছু অর্জন করেছিল বলে বর্তমান সরকার স্বীকার করতে চাচ্ছে। আর তারা মনে করছে ওই অর্জনের কৃতিত্বও তাদের। এখন সরকার যদি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করে এমজিএনআরইজিএ-কে আরও নিশ্ছিদ্র করার দিকে মনোযোগ দেয় ও সম্পদ সৃষ্টির দিকে মূল লক্ষ্য রাখে তাহলে সেটা ভালোই হবে।
সুশাসনের জন্য আপনার উদ্বেগের কারণ কি?
আমি সরকারকে কোনো উপদেশ দেব না। তবে আমি মনে করি, আমাদের অধিকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাওয়া উচিত। কারণ শক্তিশালী অর্থনীতি মূলত মানুষের শক্তির ওপর নির্ভর করে। আর মানুষের শক্তি নির্ভর করে তারা শিক্ষিত আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কি না তার ওপর। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে তারা কি ওই সময় সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় কোনো সহায়তা পাবে—এসব বিষয় আমাদের গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারটি কি এখনো আপনাকে বিব্রত করে?
আমি আপনাকে এটা বলতে পারি যে কেন আমি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ড চাচ্ছিল যে আমি সেখানে থাকি। কিন্তু সরকার চায়নি আমি সেখানে থাকি। এ ছাড়া আমার কাছে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছিল যে, আমি যদি আমার আমিত্ব ধরে রাখার জন্য সেখানে থাকতাম, তাহলে আমাকে জরিমানা দিতে হতো। আর নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও বিষয়টি ভালো হতো না। কারণ আমার প্রতিটি বিষয়ে সরকার বিরোধিতা করছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের জুলাই মাসে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হন অমর্ত্য সেন। গত বছরের জুলাই মাসে সেই মেয়াদ শেষ হয়। তাঁকে দ্বিতীয়বারের মতো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য থাকার অনুরোধ করা হলেও তিনি এতে রাজি হননি। তিনি বরাবরই বলে আসছেন, মোদি সরকারের সমালোচনা করায় সরকারের চাপেই তিনি ওই পদে আর থাকতে রাজি হননি।
No comments