বার থেকেই পুলিশি জালে by কৃষ্ণকুমার দাস
নিয়মিত মদ্যপান এবং বারে টাকা উড়াতে গিয়েই
পুলিশের জালে ধরা পড়ে নারায়ণগঞ্জে ‘সেভেন মার্ডার’ মামলার প্রধান আসামি
নূর হোসেন। সঙ্গীসহ নূর হোসেনকে আট দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে
পশ্চিমবঙ্গের অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড (এটিএস)। শনিবার রাতে নূর হোসেন ও
তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গের এটিএস। রোববার রাতে নূর হোসেন
এবং অন্য দু’জনকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাট ছাড়াও আরও কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি
চালিয়েছে এটিএস। নূর হোসেনরা প্রাথমিক জেরায় কলকাতায় কিভাবে বেআইনিভাবে
ঢুকেছে এবং কোথায় ছিল সেই কথা জানালেও নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার নিয়ে
এখনও পর্যন্ত মুখ খুলেননি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত মদ্যপান এবং
বারে গিয়ে মুঠো মুঠো টাকা উড়ানোর নেশাই কলকাতা পুলিশের জালে ধরা পড়ে সাত
খুনের আসামি নূর হোসেন। গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে মাস আড়াই আগে কলকাতায় এসে
প্রথমে উঠেছিল উল্টোডাঙার কাছে একটি গেস্ট হাউসে। দিন পনের পরেই আসে আজিজুর
শামীম এবং এরপর সীমান্ত পেরিয়ে আসেন সুমন। এই উল্টোডাঙা গেস্ট হাউস থেকেই
মাঝেমধ্যে বাগুআইটির চিনারপার্কে স্পাইসগার্ডেনে বার-রেস্তোরাঁয় যেতেন।
সেখানে নর্তকীদের উচ্ছৃৃংখল নাচ শেষে খুশি হয়ে বান্ডিলে বাল্ডিলে টাকা
উড়িয়ে দিতেন তিনি। সেই কারণে এই বারের কর্মী এবং নর্তকীদের কাছে নিজের
মানুষ হয়ে উঠেছিলেন ’নূর ভাই’। কিন্তু গোল বাধে শনিবার সন্ধ্যায় অন্য দুই
গোষ্ঠী মারপিটের জেড়ে পুলিশ আসায়। পুলিশের সামনেই মদ্যপ অবস্থায় ’হিরো
গিরি’ করতে গিয়ে ভাষা এবং শব্দের উচ্চারণে পুলিশের কাছে চিহ্নিত হয়ে যায়
নূর একজন বাংলাদেশী। পুলিশকে মিথ্যা পরিচয় দিলেও পরে অনুসরণ করে বাড়ি দেখে
আসে অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াডের সদস্যরা। কিন্তু সাড়ে ৯টা নাগাদ দেখে
এলেও তখন গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এরপর বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে
ইন্টারপোলের মারফত ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখে প্রায় চমকে উঠেন এসিপি অনিশ
সরকার। পরে বিশাল বাহিনী নিয়ে গিয়ে গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলেন। এটিএসের প্রথম
সন্দেহ হয়েছিল নূর হোসেনের কাছে মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। সেই কারণে
বাড়ির সিকিউরিটিকে দিয়ে নক করিয়ে দরজা খোলানো হয়। বাইগুটির এই বাসা ভাড়াও
নিয়েছিল বারের কর্মীদের সহায়তায়। তারাই বাড়ির মালিকের প্রতিনিধির সঙ্গে নূর
হোসেনের পরিচয় করিয়ে দেন।
বাংলাদেশী উঠতি যুবক থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে পালিয়ে থাকার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে কলকাতার অদূরে নতুন উপশহর রাজারহাট-নিউটাউন এলাকা। কৈখালি, ভিআইপি, বাইগুটি, জোড়ামন্দির, নারায়নতলা, চালপট্টিসহ রাজারহাটের দশদ্রুণ এলাকায় এখন ব্যাঙের ছাতার মতো আবাসন গড়ে উঠছে। সেই সঙ্গে আবাসনগুলোতে চলছে নানা রকম অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য। বাইগুটির এমন একটি ভবন থেকেই সঙ্গীসহ গ্রেফতার হন নূর হোসেন।
বাংলাদেশী উঠতি যুবক থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে পালিয়ে থাকার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে কলকাতার অদূরে নতুন উপশহর রাজারহাট-নিউটাউন এলাকা। কৈখালি, ভিআইপি, বাইগুটি, জোড়ামন্দির, নারায়নতলা, চালপট্টিসহ রাজারহাটের দশদ্রুণ এলাকায় এখন ব্যাঙের ছাতার মতো আবাসন গড়ে উঠছে। সেই সঙ্গে আবাসনগুলোতে চলছে নানা রকম অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য। বাইগুটির এমন একটি ভবন থেকেই সঙ্গীসহ গ্রেফতার হন নূর হোসেন।
অন্যদিকে নূর হোসেন ধরা পড়ার পর রোববার বাংলাদেশ সরকার দিল্লি মারফত পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকায় দ্রুত এই অভিযুক্তকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সক্রিয় হয়েছেন কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। ২৭ মে বাংলাদেশ সরকারের বার্তা পেয়ে দিল্লি ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্সে উইং বৃহস্পতিবার কৈখালিতে এসেছিল। কিন্তু দিল্লির গোয়েন্দারা নূরের হদিস না পেলেও পশ্চিমবঙ্গে এটিএস নূর হোসেনদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার অন্যতম আসামি নূর হোসেন এবং তার দুই সহযোগী আজিজুর রহমান শামীম এবং খান সুমনকে উত্তরচব্বিশ পরগনা জেলার আদালত আট দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। কলকাতার লাগোয়া নতুন উপশহর বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের বাইগুটি থানার পুলিশ ১৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করেছিল। দ্বিতীয় মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক এস লেপচা ধৃতদের ২৩ জুন পরবর্তী বারাসতে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেন।
নূর হোসেনের গ্রেফতারের বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছেন বলে জানান কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। রোববার সরকারি ছুটির দিন, তাই হয়তো রাজ্য সরকারের তরফে আমরা কিছু জানতে পারিনি। আজ সোমবার অফিস খুললে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে কিছু জানতে পারলে আমরা সেই বার্তা আমাদের সরকারের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেব। তখন থেকেই কার্যত তাকে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ শুরু হয়ে যাবে।
জুন মাসের আট তারিখের আগে নিজেকে বাপি সাহা বলে পরিচয় দিয়ে কৈখালির ওই আবাসনের চার তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন নূর হোসেন এবং তার দুই সহযোগী আজিজুর রহমান শামীম এবং খান সুমন। শামীমের নাম বলা হয়েছিল ‘সৈকত কর্মকার’ এবং খান সুমন নিজে ‘সুমন সাহা’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
বাড়ির মালিক অবাঙালি অজয় সিং এবং মিনা সিং মাসে ১১ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র আট দিনের মধ্যে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি হওয়া নূর হোসেনকে কলকাতার বিধাননগর সিটি পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াডের (এটিএস) গোয়েন্দারা পাকড়াও করলেন। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই আবাসনে ভাড়া দেয়ার অপরাধে পুলিশ বাড়ির মালিক অবাঙালি অজয় সিং এবং মিনা সিংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলে জানা গেছে।
নূর হোসেন সম্প্রতি উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন। গোয়েন্দারা গ্রেফতারের সময় নূর হোসেন ভারতে প্রবেশের বৈধ কাজগপত্র দেখাতে পারেননি। যদিও তিনি প্রথমে নিজেকে ভারতীয় এবং বাপি সাহা বলে গোয়েন্দাদের কাছে পরিচয় দিয়েছিলেন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিধাননগর পুলিশ প্রিজনভ্যানে নূর হোসেন ও তার দুই সঙ্গীকে দমদম মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে শারীরিক চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বারাসত আদালতে প্রথমে আদালতের গারদখানায় রাখা হয় এবং বেলা ২টায় বিচারকের সামনে দাঁড় করানো হয়। সাত খুনের মামলার অন্যতম ফেরার নূর হোসেনের পক্ষে এদিন কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের তরফেও কেউ পুলিশের রিমান্ড আবেদনের বিরুদ্ধে সওয়াল জবাবও করেননি।
>>কৃষ্ণকুমার দাস @কলকাতা
No comments