রাজনৈতিক অচলাবস্থায় সংলাপ বিতর্ক by ড. মিহির কুমার রায়
সংলাপ একটি কার্যকর মাধ্যম, যেখানে অনেক
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে এবং একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানেও
উপনীত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। দেশের সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সমাজ
সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন, সংলাপের বিষয়টি চলমান রাজনৈতিক সংকট
নিরসনে অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান মহাজোট সরকারের মেয়াদ আগামী অক্টোবরের শেষের
দিকে সমাপ্ত হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ
নির্বাচন হওয়ার কথা, যা জানুয়ারি ২০১৪-এর মধ্যে হতে হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে,
এ মধ্যবর্তী সময়ে কে বা কারা সরকার পরিচালনা করবে- রাষ্ট্রপতির আওতায় তার
পছন্দমতো সর্বদলীয় নেতা-নেত্রীদের নিয়ে মাত্র তিন মাসের জন্য কোনো
কেয়ারটেকার সরকার থাকবে নাকি আগের তিনটি সাধারণ নির্বাচনের মতো
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত দেশ পরিচালিত হবে? এই
জটিল সমস্যাটির এখন পর্যন্ত কোনো সমাধানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং
সরকারের মেয়াদ যতই শেষ হয়ে আসছে, ততই তারা কঠোর অবস্থানের দিকে যাচ্ছেন বলে
প্রতীয়মান হয়।
সরকারের বক্তব্য হল, কোনো অসাংবিধানিক ব্যক্তি বা প্রক্রিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কোনো ভিত্তি নেই এবং পরবর্তী সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ছোট সরকার অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সব ব্যবস্থাই সংবিধানে আছে এবং এ ব্যবস্থা আইনসঙ্গত ও বিশ্ব দরবারে গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে যদি বিরোধী দলের কোনো বক্তব্য থাকে, তবে সংসদে এসে তা উপস্থাপন করারও সুযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জনসভায় বলেছেন, ২৪ জানুয়ারির আগেই জাতীয় নির্বাচন বর্তমান কাঠামোতেই অনুষ্ঠিত হবে এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। এখন এ প্রক্রিয়ায় বিরোধী দল নির্বাচনে যাবে কি-না কিংবা বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি-না অথবা সংলাপের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্বাচনে রাজি করানো যাবে কি-না- এ বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ভাবনা কী, তা বোঝার কোনো উপায় নেই।
বিরোধী দলের মুখপাত্র বিএনপির মহাসচিব তার দলীয় কার্যালয়ে প্রায়ই বলছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না এবং চলতি সংসদ অধিবেশনে যদি এ ব্যাপারে কোনো বিল উত্থাপিত না হয় (সম্ভবত এটি এ সংসদের শেষ অধিবেশন) তাহলে সহিংসতার জন্য সরকার দায়ী থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলছেন, বিরোধী দলের এই আন্দোলনের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তাহলে সমস্যা সমস্যাতেই রয়ে গেল এবং এ ধারাবাহিকতায় নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি-না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা সংশয় রয়ে গেছে। আর নির্বাচন এলেই দেশের ১৫ শতাংশ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নানা আতংকের মাঝে দিন কাটায় অতীতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে। এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা নিরসনের আহবান জানিয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রায়ই বিভিন্ন ফোরামে দেশের রাজনীতি, গ্রামীণ ব্যংক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা বলে থাকেন। এতে করে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশীদের কাছে ক্ষুণœ হচ্ছে এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে শংকিত। দুনেত্রীর বাক্যচয়নে প্রায়ই যে অশালীনতা লক্ষ্য করা যায় তা মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং দেশের মানুষকে তাদের রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়। যাই হোক, আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্বের যে মান, তা নিয়েই চলতে হবে এবং এর মধ্যেই সমাধান খুঁজতে হবে। বর্তমানে সংলাপই সমাধানের একমাত্র পথ। বিরোধী দল বলছে, সরকার সংলাপের পথে একমাত্র অন্তরায় এবং সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একদিকে সংলাপের কথা বলবে, অপরদিকে মামলা-হামলা করে বিরোধী দলকে পদদলিত করবে- একসঙ্গে এ দুটি কাজ চলতে পারে না। অপরদিকে সরকারি দল বলছে, সংলাপে বসতে হলে বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধীদের পরিত্যাগ করতে হবে। এই যে পরস্পর বিপরীতমুখী বক্তব্য, তা একের প্রতি অন্যের আস্থাহীনতারই প্রকাশমাত্র।
ঈদের পর বিএনপি আর আন্দোলনে যায়নি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ধারণা, তাদের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, বিশেষত পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ের পর তাদের এ ধারণা হয়েছে। সাধারণভাবে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে তাদের জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেছেন, বিএনপি এমনিতেই নির্বাচনে জয়লাভ করবে, যদি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তবে তাদের যে দাবি তার সমালোচনায় তিনি বলেছেন, বিএনপি কী ধরনের তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চায়, এখন পর্যন্ত তার কোনো রূপরেখা দিতে পারেনি। দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, বিরোধী দলের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই এবং শেষ মুহূর্তে তারা রাজি হয়ে যাবেন।
এই যে কথা চালাচালি চলছে, তা স্ব স্ব দলের রাজনৈতিক কৌশলমাত্র এবং এসব পথ পরিহার করে সরকারেরই উচিত সংলাপ আয়োজনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা। সেক্ষেত্রে এগোনোর রাস্তাটি কী হবে? তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন হলে পক্ষটি কে তা নির্ধারিত হয়েছে কি? যদি না হয়ে থাকে, তবে কোনো চেষ্টা চালানো হচ্ছে কি? এ প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজলে নিরাশ হতে হয়, যখন কোনো সমাধানের পথ খুঁজে না পাই। ক্ষমতার রাজনীতি এখানে খুবই প্রবল এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে নেতা-নেত্রীদের যে অঙ্গীকার, তা একবারে নেই বললেই চলে। সরকারের প্রতি কিছু পরামর্শ থাকবে। প্রথমত, সরকার হল দেশের ষোল কোটি মানুষের সরকার, এককভাবে কোনো দল বা গোষ্ঠীর সরকার নয়। এ কথাটি মনে রেখে সরকারকে সবার প্রতি সমান আচরণ করতে হবে। দেশের সুনাম কিংবা দুর্নাম প্রথমেই সরকারের ওপর আসে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিতে সবসময়ই উদাসীন এবং আচরণে মনে হয়, তিনি শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যারা বেশি সহনশীল, তাদের থেকে কয়েকজনকে নির্বাচিত করে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার কৌশল নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ কৌশল বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে। তৃতীয়ত, বিরোধী দলের মূল দাবিগুলো কী তা অনুধাবন করে কিভাবে আলোচনার সূচিতে সেগুলোকে আনা যায়, সে অনুশীলন করতে হবে। চতুর্থত, লাভ-লোকসানের সমীকরণ না করে সেগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে আগামী নির্বাচন সংক্রান্ত জনমনে যে সন্দেহের মেঘ সৃষ্টি হয়েছে, তা অবশ্যই কাটাতে হবে।
বিরোধী দলের প্রতিও কিছু পরামর্শ রাখতে চাই। প্রথমত, দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই- এ কথাটি স্মরণে রেখে তাদের এগোতে হবে। ১৮ দলের সর্ববৃহৎ শরিক দল বিএনপি তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল এবং জাতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা আছে বিধায় এ সুযোগটি হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। কারণ সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয় সংসদ নির্বাচনে তাদের বিজয়ের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে। দ্বিতীয়ত, সংসদের চলতি অধিবেশনে বিরোধী দল আগামী নির্বাচনের রূপরেখার ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে, যা একটি ভালো লক্ষণ। এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দুনেত্রীকে সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন সরকারি দল বিষয়টিকে কিভাবে নেবে তা দেখার বিষয়। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সব দলকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ড.মিহির কুমার রায় : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক
সরকারের বক্তব্য হল, কোনো অসাংবিধানিক ব্যক্তি বা প্রক্রিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কোনো ভিত্তি নেই এবং পরবর্তী সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ছোট সরকার অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সব ব্যবস্থাই সংবিধানে আছে এবং এ ব্যবস্থা আইনসঙ্গত ও বিশ্ব দরবারে গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে যদি বিরোধী দলের কোনো বক্তব্য থাকে, তবে সংসদে এসে তা উপস্থাপন করারও সুযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জনসভায় বলেছেন, ২৪ জানুয়ারির আগেই জাতীয় নির্বাচন বর্তমান কাঠামোতেই অনুষ্ঠিত হবে এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। এখন এ প্রক্রিয়ায় বিরোধী দল নির্বাচনে যাবে কি-না কিংবা বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি-না অথবা সংলাপের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্বাচনে রাজি করানো যাবে কি-না- এ বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ভাবনা কী, তা বোঝার কোনো উপায় নেই।
বিরোধী দলের মুখপাত্র বিএনপির মহাসচিব তার দলীয় কার্যালয়ে প্রায়ই বলছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না এবং চলতি সংসদ অধিবেশনে যদি এ ব্যাপারে কোনো বিল উত্থাপিত না হয় (সম্ভবত এটি এ সংসদের শেষ অধিবেশন) তাহলে সহিংসতার জন্য সরকার দায়ী থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলছেন, বিরোধী দলের এই আন্দোলনের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তাহলে সমস্যা সমস্যাতেই রয়ে গেল এবং এ ধারাবাহিকতায় নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি-না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা সংশয় রয়ে গেছে। আর নির্বাচন এলেই দেশের ১৫ শতাংশ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নানা আতংকের মাঝে দিন কাটায় অতীতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে। এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা নিরসনের আহবান জানিয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রায়ই বিভিন্ন ফোরামে দেশের রাজনীতি, গ্রামীণ ব্যংক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা বলে থাকেন। এতে করে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশীদের কাছে ক্ষুণœ হচ্ছে এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে শংকিত। দুনেত্রীর বাক্যচয়নে প্রায়ই যে অশালীনতা লক্ষ্য করা যায় তা মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং দেশের মানুষকে তাদের রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়। যাই হোক, আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্বের যে মান, তা নিয়েই চলতে হবে এবং এর মধ্যেই সমাধান খুঁজতে হবে। বর্তমানে সংলাপই সমাধানের একমাত্র পথ। বিরোধী দল বলছে, সরকার সংলাপের পথে একমাত্র অন্তরায় এবং সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একদিকে সংলাপের কথা বলবে, অপরদিকে মামলা-হামলা করে বিরোধী দলকে পদদলিত করবে- একসঙ্গে এ দুটি কাজ চলতে পারে না। অপরদিকে সরকারি দল বলছে, সংলাপে বসতে হলে বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধীদের পরিত্যাগ করতে হবে। এই যে পরস্পর বিপরীতমুখী বক্তব্য, তা একের প্রতি অন্যের আস্থাহীনতারই প্রকাশমাত্র।
ঈদের পর বিএনপি আর আন্দোলনে যায়নি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ধারণা, তাদের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, বিশেষত পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ের পর তাদের এ ধারণা হয়েছে। সাধারণভাবে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে তাদের জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেছেন, বিএনপি এমনিতেই নির্বাচনে জয়লাভ করবে, যদি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তবে তাদের যে দাবি তার সমালোচনায় তিনি বলেছেন, বিএনপি কী ধরনের তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চায়, এখন পর্যন্ত তার কোনো রূপরেখা দিতে পারেনি। দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, বিরোধী দলের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই এবং শেষ মুহূর্তে তারা রাজি হয়ে যাবেন।
এই যে কথা চালাচালি চলছে, তা স্ব স্ব দলের রাজনৈতিক কৌশলমাত্র এবং এসব পথ পরিহার করে সরকারেরই উচিত সংলাপ আয়োজনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা। সেক্ষেত্রে এগোনোর রাস্তাটি কী হবে? তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন হলে পক্ষটি কে তা নির্ধারিত হয়েছে কি? যদি না হয়ে থাকে, তবে কোনো চেষ্টা চালানো হচ্ছে কি? এ প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজলে নিরাশ হতে হয়, যখন কোনো সমাধানের পথ খুঁজে না পাই। ক্ষমতার রাজনীতি এখানে খুবই প্রবল এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে নেতা-নেত্রীদের যে অঙ্গীকার, তা একবারে নেই বললেই চলে। সরকারের প্রতি কিছু পরামর্শ থাকবে। প্রথমত, সরকার হল দেশের ষোল কোটি মানুষের সরকার, এককভাবে কোনো দল বা গোষ্ঠীর সরকার নয়। এ কথাটি মনে রেখে সরকারকে সবার প্রতি সমান আচরণ করতে হবে। দেশের সুনাম কিংবা দুর্নাম প্রথমেই সরকারের ওপর আসে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিতে সবসময়ই উদাসীন এবং আচরণে মনে হয়, তিনি শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যারা বেশি সহনশীল, তাদের থেকে কয়েকজনকে নির্বাচিত করে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার কৌশল নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ কৌশল বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে। তৃতীয়ত, বিরোধী দলের মূল দাবিগুলো কী তা অনুধাবন করে কিভাবে আলোচনার সূচিতে সেগুলোকে আনা যায়, সে অনুশীলন করতে হবে। চতুর্থত, লাভ-লোকসানের সমীকরণ না করে সেগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে আগামী নির্বাচন সংক্রান্ত জনমনে যে সন্দেহের মেঘ সৃষ্টি হয়েছে, তা অবশ্যই কাটাতে হবে।
বিরোধী দলের প্রতিও কিছু পরামর্শ রাখতে চাই। প্রথমত, দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই- এ কথাটি স্মরণে রেখে তাদের এগোতে হবে। ১৮ দলের সর্ববৃহৎ শরিক দল বিএনপি তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল এবং জাতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা আছে বিধায় এ সুযোগটি হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। কারণ সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয় সংসদ নির্বাচনে তাদের বিজয়ের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে। দ্বিতীয়ত, সংসদের চলতি অধিবেশনে বিরোধী দল আগামী নির্বাচনের রূপরেখার ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে, যা একটি ভালো লক্ষণ। এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দুনেত্রীকে সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন সরকারি দল বিষয়টিকে কিভাবে নেবে তা দেখার বিষয়। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সব দলকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ড.মিহির কুমার রায় : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক
No comments