নিরপেক্ষ নির্বাচন পাওয়া বাংলাদেশের জনগণের অধিকার by অ্যান মেইন
বাংলাদেশে
এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণ-প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩০শে ডিসেম্বর। পূর্ববর্তী ২০১৪ সালের নির্বাচন
নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এতে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
(বিএনপি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। বাংলাদেশের জনগণের একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও
নিরপেক্ষ নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। বৃটিশ সরকার ও এর আন্তর্জাতিক মিত্ররা
এই অধিকারকে বাস্তবে পরিণত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করবে। বাংলাদেশের জন্য
দুর্নীতি একটি সমস্যা। নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলোর মধ্যে একটি উদ্বেগজনক
প্রবণতা রয়েছে। তাহলো- পূর্ববর্তী নির্বাচনে যারা তাদের সঙ্গে লড়েছেন তাদের
বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইনি পদক্ষেপ নেয়া।
সামপ্রতিক সময় প্রণয়ন করা অস্পষ্ট ও বিস্তৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সমাজকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এ আইন সরকারকে বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক যুক্তিতর্ক কার্যকরভাবে দমন করার ক্ষমতা দিয়েছে। বিশেষভাবে, ড. শহিদুল আলমের ঘটনাটি উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের মুক্ত সমাজের জন্য আইনটি কত ভয়ঙ্কর হতে পারে, শহিদুল আলমের ঘটনায় তা ফুটে উঠেছে। সমপ্রতি মুক্তি পাওয়া এ আলোকচিত্রী ও অধিকারকর্মীকে ঢাকায় একটি আন্দোলন চলার সময় গণমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ ও ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্য প্রদানের দায়ে কারাগারে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এখন একটি তাৎপর্যপূর্ণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে, বৃটেন ও জাতিসংঘ এই আইনের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য ডিএফআইডি স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ১৬ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি অর্থ প্রদান করেছে বৃটেন। আমাদের বৃটিশ করদাতাদের দেয়া এ অর্থের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যেন মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, যে আশায় আমরা এখানে অনুদান দিয়েছিলাম, সেভাবে কাজ হচ্ছে না।
কিন্তু এখন দেশটির জন্য আশার সময়। বাংলাদেশি রাজনীতির একজন কৌতূহলী পর্যবেক্ষক হিসেবে, দেশটির রাজনৈতিক মতপার্থক্য আমার আগ্রহের বিষয় নয়। আমি শুধু দেখতে চাই, দেশটির গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নয়ন হচ্ছে কি না। আশা করি, তা সেখানকার জনগণের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক চলছে। শুরুতে ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ দিন নির্ধারণ করা হলেও পরে তা এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হয়। পিছিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান যুক্তি একটি অনুরোধ। তা হলো- নির্বাচনী প্রচারণার সময়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। বিরোধী দলগুলোর যুক্তি, এটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে প্রচারণা চালানো থেকে বিরত রাখবে।
চূড়ান্তভাবে নির্বাচনের যে তারিখই নির্ধারণ করা হোক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে মাত্রায় পর্যবেক্ষণ করা উচিত তা, বছরের এ সময়ে তা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। কেননা ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ক্রিসমাস ও নববর্ষ উপলক্ষ্যে সীমিতসংখ্যক কর্মকর্তা থাকবে। চূড়ান্তভাবে এসব সমস্যা সমাধানে নির্বাচন কমিশনকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত একদশকে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। বেশির ভাগ স্থানে জীবনযাত্রার মানে নিয়মিত উন্নতি ঘটছে। এছাড়া অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও অবকাঠামোগত উন্নতির কথাও উল্লেখযোগ্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি জনগণকে ব্যাপকভাবে উন্নত করেছে। আর এতে আমরা যে অবদান রেখেছি, তাতে যুক্তরাজ্যের গর্বিত হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হলে একটি সত্যিকারের উন্মুক্ত, অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন করা। জনগণকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহি করার ক্ষমতা দেয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। এটা তাদেরকে এই অনুভূতি দেবে যে, বাংলাদেশ যে ভবিষ্যতের দিকে নজর দিচ্ছে, তাতে জনগণকে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সহিংসতা কখনোই শান্তিপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র অর্জনের উপায় হতে পারে না। এটা ছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার একটি বিরাট ব্যর্থতা। গত নির্বাচনের পরে যে বিভক্তি ও প্রাণহানি ঘটেছিল, উন্নতি করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই আসন্ন নির্বাচনে এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেয়া যাবে না। সহিংসতা ও বাকস্বাধীনতা দমনের অভিযোগে কলঙ্কিত নয়- এমন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বৃটিশ সরকারকে অবশ্যই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দিতে হবে। আগামী সপ্তাহ বা মাসগুলোতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। নাগরিকদের অবশ্যই এটা অনুভব করতে হবে যে, তাদের নির্বাচিত রাজনীতিবিদরা অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ ধারণ করেন কি না।
(দ্য সানডে টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধের ভাবানুবাদ। লেখক বৃটেনের কনজারভেটিভ পার্টির এমপি।)
সামপ্রতিক সময় প্রণয়ন করা অস্পষ্ট ও বিস্তৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সমাজকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এ আইন সরকারকে বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক যুক্তিতর্ক কার্যকরভাবে দমন করার ক্ষমতা দিয়েছে। বিশেষভাবে, ড. শহিদুল আলমের ঘটনাটি উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের মুক্ত সমাজের জন্য আইনটি কত ভয়ঙ্কর হতে পারে, শহিদুল আলমের ঘটনায় তা ফুটে উঠেছে। সমপ্রতি মুক্তি পাওয়া এ আলোকচিত্রী ও অধিকারকর্মীকে ঢাকায় একটি আন্দোলন চলার সময় গণমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ ও ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্য প্রদানের দায়ে কারাগারে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এখন একটি তাৎপর্যপূর্ণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে, বৃটেন ও জাতিসংঘ এই আইনের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য ডিএফআইডি স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ১৬ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি অর্থ প্রদান করেছে বৃটেন। আমাদের বৃটিশ করদাতাদের দেয়া এ অর্থের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যেন মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, যে আশায় আমরা এখানে অনুদান দিয়েছিলাম, সেভাবে কাজ হচ্ছে না।
কিন্তু এখন দেশটির জন্য আশার সময়। বাংলাদেশি রাজনীতির একজন কৌতূহলী পর্যবেক্ষক হিসেবে, দেশটির রাজনৈতিক মতপার্থক্য আমার আগ্রহের বিষয় নয়। আমি শুধু দেখতে চাই, দেশটির গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নয়ন হচ্ছে কি না। আশা করি, তা সেখানকার জনগণের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক চলছে। শুরুতে ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ দিন নির্ধারণ করা হলেও পরে তা এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হয়। পিছিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান যুক্তি একটি অনুরোধ। তা হলো- নির্বাচনী প্রচারণার সময়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। বিরোধী দলগুলোর যুক্তি, এটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে প্রচারণা চালানো থেকে বিরত রাখবে।
চূড়ান্তভাবে নির্বাচনের যে তারিখই নির্ধারণ করা হোক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে মাত্রায় পর্যবেক্ষণ করা উচিত তা, বছরের এ সময়ে তা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। কেননা ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ক্রিসমাস ও নববর্ষ উপলক্ষ্যে সীমিতসংখ্যক কর্মকর্তা থাকবে। চূড়ান্তভাবে এসব সমস্যা সমাধানে নির্বাচন কমিশনকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত একদশকে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। বেশির ভাগ স্থানে জীবনযাত্রার মানে নিয়মিত উন্নতি ঘটছে। এছাড়া অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও অবকাঠামোগত উন্নতির কথাও উল্লেখযোগ্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি জনগণকে ব্যাপকভাবে উন্নত করেছে। আর এতে আমরা যে অবদান রেখেছি, তাতে যুক্তরাজ্যের গর্বিত হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হলে একটি সত্যিকারের উন্মুক্ত, অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন করা। জনগণকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহি করার ক্ষমতা দেয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। এটা তাদেরকে এই অনুভূতি দেবে যে, বাংলাদেশ যে ভবিষ্যতের দিকে নজর দিচ্ছে, তাতে জনগণকে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সহিংসতা কখনোই শান্তিপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র অর্জনের উপায় হতে পারে না। এটা ছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার একটি বিরাট ব্যর্থতা। গত নির্বাচনের পরে যে বিভক্তি ও প্রাণহানি ঘটেছিল, উন্নতি করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই আসন্ন নির্বাচনে এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেয়া যাবে না। সহিংসতা ও বাকস্বাধীনতা দমনের অভিযোগে কলঙ্কিত নয়- এমন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বৃটিশ সরকারকে অবশ্যই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দিতে হবে। আগামী সপ্তাহ বা মাসগুলোতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। নাগরিকদের অবশ্যই এটা অনুভব করতে হবে যে, তাদের নির্বাচিত রাজনীতিবিদরা অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ ধারণ করেন কি না।
(দ্য সানডে টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধের ভাবানুবাদ। লেখক বৃটেনের কনজারভেটিভ পার্টির এমপি।)
No comments