সুমনের প্রতারণার ভয়ঙ্কর জাল by রুদ্র মিজান
চেহারায়,
পোশাকে আভিজাত্য। কথা বলে ইংরেজি-বাংলার মিশ্রণে। নিজেকে বড় মাপের
ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেয়। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠজন
হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফায়দা হাসিল করে। কখনও কখনও নিজেকে গোয়েন্দা পুলিশের
কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে। নিজের স্ত্রী গৃহিণী হলেও তাকে
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া হয়। এভাবেই নানা
পরিচয়ে চাকরি, বদলি, প্লট-ফ্ল্যাট দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে
এ প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারের এ ছেলেটি এখন আঙুল ফুলে
কলাগাছে পরিণত হয়েছে। রয়েছে গাড়ি, বাড়ি, বিভিন্ন মিল-ফ্যাক্টরি। দেশের
বিভিন্ন এলাকার শ’ শ’ মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কুখ্যাত এ প্রতারকের
নাম নজরুল ইসলাম সুমন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে উত্তরা
এলাকায় ডিবি অফিসার পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছিল নজরুল ইসলাম সুমন। গত ৯ই
জুন দুপুরে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের এক নম্বর সড়কে ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজি
করার সময় অভিযান চালায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় সুমন ও তার
সঙ্গী আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবির উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের সঙ্গী
আরো চার-পাঁচজন পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের পর সুমনের ১২ নম্বর সেক্টরের ১
নম্বর সড়কের ১১ নম্বর বাসা থেকে দুটি ওয়াকিটকি, একটি লাল সিগন্যাল লাইট
জব্দ করা হয়। ডিবি পরিচয়ে প্রতারণা করার সময় ওয়াকিটকি ও সিগন্যাল লাইট
ব্যবহার করে। অভিযান পরিচালনাকারী ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো.
তরিকুল ইসলাম জানান, অনেক মানুষের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। কখনও
প্রধানমন্ত্রীর কাছের মানুষ, কখনও রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রতারণা
করে সে। তাকে গ্রেপ্তারের পর অনেকেই নানা অভিযোগ জানিয়েছেন। আমরা মামলা
করতে পরামর্শ দিয়েছি তাদের। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক
তথ্য পাওয়া যেতো। এজন্য সাতদিনের রিমান্ড চেয়েছিল ডিবি। আদালত রিমান্ড
না-মঞ্জুর করে তাকে জামিন দিয়েছে।
নজরুল ইসলাম সুমনের প্রতারণা সম্পর্কে ডিবি জানিয়েছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সুমন। নামাজ পড়লে সহজেই মানুষ বিশ্বাস করে। আস্থা রাখে। এর মাধ্যমে টার্গেটকৃত মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন পরিচয়ে নিজেকে উপস্থাপন করে এ প্রতারক। রাষ্ট্রপতির কাছের আত্মীয়। এমন নানা কৌশনে মানুষের আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে জানতে চায়, ভাইজানের কী ঢাকায় প্লট-ফ্ল্যাট আছে? তারপরই কৌশলে প্রস্তাব।‘ কী বলেন ভাই, এত ব্যবসা-বাণিজ করেন অথচ কিছুই করতে পারলেন না। চেষ্টা করলেই হয়। চেষ্টা করেন পেয়ে যাবেন। আমি তো কিছুদিন আগেও একটা নিয়ে দিলাম ঘনিষ্ঠ জনকে।’ এভাবেই এগুতে থাকে প্রতারণার জাল। জালে আবদ্ধ হলেই লাখ লাখ টাকা আয় হয় তার।
রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয়ে দীর্ঘদিন প্রতারণা করছিল সুমন। এ বিষয়ে গত বছরের ১৫ই সেপ্টেম্বর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (৬৫৮) করেন তারেক নামে এক ব্যক্তি। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ‘দক্ষিণ বাড্ডার ইকো ভিলেজের ২০১/২,ট নম্বর বাসার নজরুল ইসলাম সুমন (৩৬) আমার স্বজন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে রাজউকে প্লট দেবে বলে টাকাপয়সা নিচ্ছে। স্থানীয় লোকজন আমাকে বিষয়টি জানালে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে সে আমাকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে।’ ওই জিডির তদন্ত করছিলেন রামপুরা থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান। বর্তমানে খিলগাঁও থানায় কর্মরত পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, নজরুল একজন প্রতারক। তার বিরুদ্ধে এরকম অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এরকম হুমকির অভিযোগ অনেক। মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ না পেয়ে হত্যার হুমকি দেয় যুব কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বাচ্চুকে। এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানায় জিডি (নং-১০৭৩) করেছেন তিনি।
গ্রেপ্তারের পর নজরুল ইসলাম সুমন ডিবি পুলিশকে জানিয়েছে, আনন্দ মোহন কলেজ থেকে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করে ঢাকায় আসে। কোনো চাকরি বা ব্যবসা ছাড়াই ৭-৮ বছরের মধ্যেই হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার মালিক। গ্রামের লোকজন জানেন বঙ্গভবনে চাকরি করে সুমন। চাকরির সুবাধে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। ব্যবসা-বাণিজ্যের তো অভাব নেই। বড় ব্যবসায়ীর পরিচিতি রয়েছে তার ভিজিটিং কার্ডে। দেশ-বিদেশে ব্যবসা। কোটি টাকার ব্যাংক ড্রাফট থাকে তার পকেটে। যেকোনো চাকরি, বদলি, তদবির, অস্ত্রের লাইসেন্স ও বিদেশ পাঠানো মামুলি ব্যাপার তার কাছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সরাইলের নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বাড়িউড়া গ্রামের জামাল উদ্দিন চিশতী। তিনি কাপড়ের ব্যবসা করেন ঢাকার গুলশান-২ এ। রাজউকে প্লট দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে নিয়েছে ৪ লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু প্লট জুটেনি। টাকা ফেরত পাননি। একই উপজেলার চুন্টার ঘাগড়াজোড় গ্রামের দরিদ্র পরিবারের আবু সাঈদ মিয়ার ছেলে তাবারককে আনসার বিভাগে চাকরি দেয়ার কথা বলে সুমন নিয়েছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চাকরি ও টাকা কোনোটারই হদিস নেই। এ টাকার শোকে অসুস্থ হয়ে তাবারকের পিতার মৃত্যু হয়েছে।
জামালপুরের বাবু নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়ের পর সুমন তাকে জানায় অস্ট্রেলিয়ায় তার গার্মেন্টসের ব্যবসা রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে অষ্ট্রেলিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখায় সুমন। বিশ্বাস যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য ঢাকায় এনে ডাচ্্-বাংলা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করানো হয়। ছবি উঠানো হয়। অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর নামে তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও অস্ট্রেলিয়া যাওয়া হয়নি বাবুর। শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত চাইলে নানাভাবে হুমকি দেয়া হয় তাকে। বাবু জানান, অনেক ভোগান্তির পর তাকে ২ লাখ টাকার একটি চেক দেয় সুমন। ওই চেকটি চারবার ডিজ-অনার হয়।
একইভাবে সুমনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান। তিনি জানান, রাজউকের প্লটের আবেদনের জন্য পে-অর্ডারের কথা বলে সুমন তার কাছ থেকে ৪ বছর আগে ১২ লাখ টাকা নিয়েছে। তারপর থেকে সে লাপাত্তা। জমা স্লিপও দেয়া হয়। জিল্লুর রহমান বলেন, পরে বুঝতে পেরেছি এটি একটা ভুয়া স্লিপ। আমি সুমনকে খুঁজছি।
সূত্রমতে, রাজউকে প্লট দেয়ার নামে মহাখালীর মঞ্জুরুল আলমের কাছ থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার, এলিফেন্ট রোডের ব্যবসায়ী নাছিরের কাছ থেকে ৬ লাখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার হানিফ মিয়ার কাছ থেকে ৫ লাখ, কাপড় ব্যবসায়ী নাছির মিয়ার কাছ থেকে ২৫ লাখ, টাঙ্গাইলের ফখরুলের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাসহ আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সুমন।
সূত্রমতে, বিভিন্ন ব্যাংকের নামে নিজের তৈরি ভুয়া পে-অর্ডারই নজরুল ইসলাম সুমনের প্রতারণার মূল হাতিয়ার। পেছনের তারিখের পে-অর্ডার থাকে তার সঙ্গে। এর অধিকাংশ পে-অর্ডারই জাল। প্লটের আবেদনের সময় শেষ। তাতে কোনো সমস্যা নেই। পেছনে তারিখের ভুয়া পে-অর্ডার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নজরুল ইসলাম সুমন। তাদের একজন বিক্রমপুরের কবির মিয়া। তাকে ২০১৪ সালের ২০শে মার্চ রাজধানীর পান্থপথ শাখার একটি ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত (নং- ০২৩১৮৫২) একটি ভুয়া পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৫ লাখ নিয়ে গেছে।
এ রকম অনেক অভিযোগ ময়মনসিংহের চরলক্ষ্মীপুরের ট্রাকচালক আব্দুল মান্নানের ছেলে নজরুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে। কিন্তু অভিযোগ, মামলা কোনোকিছুই দমাতে পারেনি তাকে। নির্বিঘ্নে প্রতারণা করে যাচ্ছে নজরুল ইসলাম সুমন।
নজরুল ইসলাম সুমনের প্রতারণা সম্পর্কে ডিবি জানিয়েছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সুমন। নামাজ পড়লে সহজেই মানুষ বিশ্বাস করে। আস্থা রাখে। এর মাধ্যমে টার্গেটকৃত মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন পরিচয়ে নিজেকে উপস্থাপন করে এ প্রতারক। রাষ্ট্রপতির কাছের আত্মীয়। এমন নানা কৌশনে মানুষের আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে জানতে চায়, ভাইজানের কী ঢাকায় প্লট-ফ্ল্যাট আছে? তারপরই কৌশলে প্রস্তাব।‘ কী বলেন ভাই, এত ব্যবসা-বাণিজ করেন অথচ কিছুই করতে পারলেন না। চেষ্টা করলেই হয়। চেষ্টা করেন পেয়ে যাবেন। আমি তো কিছুদিন আগেও একটা নিয়ে দিলাম ঘনিষ্ঠ জনকে।’ এভাবেই এগুতে থাকে প্রতারণার জাল। জালে আবদ্ধ হলেই লাখ লাখ টাকা আয় হয় তার।
রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয়ে দীর্ঘদিন প্রতারণা করছিল সুমন। এ বিষয়ে গত বছরের ১৫ই সেপ্টেম্বর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (৬৫৮) করেন তারেক নামে এক ব্যক্তি। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ‘দক্ষিণ বাড্ডার ইকো ভিলেজের ২০১/২,ট নম্বর বাসার নজরুল ইসলাম সুমন (৩৬) আমার স্বজন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে রাজউকে প্লট দেবে বলে টাকাপয়সা নিচ্ছে। স্থানীয় লোকজন আমাকে বিষয়টি জানালে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে সে আমাকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে।’ ওই জিডির তদন্ত করছিলেন রামপুরা থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান। বর্তমানে খিলগাঁও থানায় কর্মরত পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, নজরুল একজন প্রতারক। তার বিরুদ্ধে এরকম অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এরকম হুমকির অভিযোগ অনেক। মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ না পেয়ে হত্যার হুমকি দেয় যুব কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বাচ্চুকে। এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানায় জিডি (নং-১০৭৩) করেছেন তিনি।
গ্রেপ্তারের পর নজরুল ইসলাম সুমন ডিবি পুলিশকে জানিয়েছে, আনন্দ মোহন কলেজ থেকে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করে ঢাকায় আসে। কোনো চাকরি বা ব্যবসা ছাড়াই ৭-৮ বছরের মধ্যেই হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার মালিক। গ্রামের লোকজন জানেন বঙ্গভবনে চাকরি করে সুমন। চাকরির সুবাধে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। ব্যবসা-বাণিজ্যের তো অভাব নেই। বড় ব্যবসায়ীর পরিচিতি রয়েছে তার ভিজিটিং কার্ডে। দেশ-বিদেশে ব্যবসা। কোটি টাকার ব্যাংক ড্রাফট থাকে তার পকেটে। যেকোনো চাকরি, বদলি, তদবির, অস্ত্রের লাইসেন্স ও বিদেশ পাঠানো মামুলি ব্যাপার তার কাছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সরাইলের নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বাড়িউড়া গ্রামের জামাল উদ্দিন চিশতী। তিনি কাপড়ের ব্যবসা করেন ঢাকার গুলশান-২ এ। রাজউকে প্লট দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে নিয়েছে ৪ লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু প্লট জুটেনি। টাকা ফেরত পাননি। একই উপজেলার চুন্টার ঘাগড়াজোড় গ্রামের দরিদ্র পরিবারের আবু সাঈদ মিয়ার ছেলে তাবারককে আনসার বিভাগে চাকরি দেয়ার কথা বলে সুমন নিয়েছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চাকরি ও টাকা কোনোটারই হদিস নেই। এ টাকার শোকে অসুস্থ হয়ে তাবারকের পিতার মৃত্যু হয়েছে।
জামালপুরের বাবু নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়ের পর সুমন তাকে জানায় অস্ট্রেলিয়ায় তার গার্মেন্টসের ব্যবসা রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে অষ্ট্রেলিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখায় সুমন। বিশ্বাস যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য ঢাকায় এনে ডাচ্্-বাংলা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করানো হয়। ছবি উঠানো হয়। অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর নামে তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও অস্ট্রেলিয়া যাওয়া হয়নি বাবুর। শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত চাইলে নানাভাবে হুমকি দেয়া হয় তাকে। বাবু জানান, অনেক ভোগান্তির পর তাকে ২ লাখ টাকার একটি চেক দেয় সুমন। ওই চেকটি চারবার ডিজ-অনার হয়।
একইভাবে সুমনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান। তিনি জানান, রাজউকের প্লটের আবেদনের জন্য পে-অর্ডারের কথা বলে সুমন তার কাছ থেকে ৪ বছর আগে ১২ লাখ টাকা নিয়েছে। তারপর থেকে সে লাপাত্তা। জমা স্লিপও দেয়া হয়। জিল্লুর রহমান বলেন, পরে বুঝতে পেরেছি এটি একটা ভুয়া স্লিপ। আমি সুমনকে খুঁজছি।
সূত্রমতে, রাজউকে প্লট দেয়ার নামে মহাখালীর মঞ্জুরুল আলমের কাছ থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার, এলিফেন্ট রোডের ব্যবসায়ী নাছিরের কাছ থেকে ৬ লাখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার হানিফ মিয়ার কাছ থেকে ৫ লাখ, কাপড় ব্যবসায়ী নাছির মিয়ার কাছ থেকে ২৫ লাখ, টাঙ্গাইলের ফখরুলের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাসহ আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সুমন।
সূত্রমতে, বিভিন্ন ব্যাংকের নামে নিজের তৈরি ভুয়া পে-অর্ডারই নজরুল ইসলাম সুমনের প্রতারণার মূল হাতিয়ার। পেছনের তারিখের পে-অর্ডার থাকে তার সঙ্গে। এর অধিকাংশ পে-অর্ডারই জাল। প্লটের আবেদনের সময় শেষ। তাতে কোনো সমস্যা নেই। পেছনে তারিখের ভুয়া পে-অর্ডার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নজরুল ইসলাম সুমন। তাদের একজন বিক্রমপুরের কবির মিয়া। তাকে ২০১৪ সালের ২০শে মার্চ রাজধানীর পান্থপথ শাখার একটি ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত (নং- ০২৩১৮৫২) একটি ভুয়া পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৫ লাখ নিয়ে গেছে।
এ রকম অনেক অভিযোগ ময়মনসিংহের চরলক্ষ্মীপুরের ট্রাকচালক আব্দুল মান্নানের ছেলে নজরুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে। কিন্তু অভিযোগ, মামলা কোনোকিছুই দমাতে পারেনি তাকে। নির্বিঘ্নে প্রতারণা করে যাচ্ছে নজরুল ইসলাম সুমন।
No comments