আরেক ইন্দিরা খুঁজছে কংগ্রেস
২০১৪ সালে লোকসভা থেকে খালি হাতে ফেরার পর এবার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেও চারটিতে ‘ডাব্বা’। পরাজয়ের গণ্ডি থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন যেন ভারতকে স্বাধীনতা এনে দেয়া কংগ্রেসিয়ানরা। উত্তর প্রদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতৃত্বের খোলনলচে বদলে ফেলার পক্ষেই রায় দিচ্ছেন দলটির নেতারা। পাঞ্জাব ও উত্তরখণ্ডের বিধানসভায় যে কোনো উপায়ে জয়ের ধারায় ফেরার জন্য আরেক ‘ইন্দিরা’কে খুঁজছেন কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ লৌহমানবী ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি প্রিয়াংকা। লোকসভা হারের পর থেকেই শীর্ষমহল-অন্দরমহল হতে শুরু হয়ে মাঠে-ময়দানে সবখানেই ‘প্রিয়াংকা লাও, কংগ্রেস বাঁচাও’ রবে কণ্ঠ ফাটাচ্ছিলেন নেতাকর্মীরা। এবার সে আওয়াজই নতুন করে গীত হচ্ছে। ‘রাহুল ছাড়-প্রিয়াংকা ধর’ স্লোগানে সবাই কাঁধে কাঁধ। চেহারা থেকে শুরু করে চলন-বলন, রাজনীতির মঞ্চে রাজকীয় ভঙ্গিমা-সবকিছুতেই প্রিয়াংকার মাঝে কংগ্রেস যেন খুঁজে পাচ্ছে আরেক ইন্দিরার ছায়া। ইনিই সেই ইন্দিরা যিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিতজি জওহরলাল নেহরুর কন্যা।
বাবার প্রয়াণের পর দেশ এবং দলের হাল নিজের কাঁধে নিয়ে কঠোর হস্তে ধারণ করেছিলেন কংগ্রেসের পতাকাতলে একতাবদ্ধ ভারতের ঝাণ্ডা। তুমুল জনপ্রিয়তার নির্বাচনে জিতে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত টানা ১১ বছর ভারত শাসন করেছেন এই প্রিয়দর্শিনী। থলিতে পুরেছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের অভিজ্ঞতা। দলের ভাঙন ও জাতীয় অস্থিরতা রোধে ১৯৭৫ সালে জারি করেছিলেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত জরুরি অবস্থা। ভারত মাতাকে নিজের হাতের তালুতে চালাতেন তিনি। দলীয় ভাঙন-কোন্দল রুখে দিয়ে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসেন ১৯৮০ সালের নির্বাচনে। ১৯৮৪ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশটির নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই বহাল ছিলেন তিনি। পিতা-পুত্রী সমান সমান করে মোট ৩০ বছর ভারত শাসন করেছেন তারা। মোদি-ম্যাজিক উড়িয়ে দিয়ে আবারও ক্ষমতার রাজদণ্ড হস্তগত করার জন্য এমন একজন ক্যারিশমেটিক ব্যক্তিত্বকেই খুঁজছেন কংগ্রেসিয়ানরা। কংগ্রেসের পুনরুত্থানের জন্য দেশটির অকাল প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ‘ইন্দিরাপুত্র’ রাজীব গান্ধীর নাতনি প্রিয়াংকার পতাকাতলেই সমবেত হতে চান তারা। ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সাদারণ সম্পাদক দিগি¦জয় সিং বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার সময় হয়েছে। দলে শুদ্ধি অভিযান চালানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই। এবং সে সিদ্ধান্ত সোনিয়া গান্ধীকেই নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে প্রিয়াংকার উপস্থিতি এখন সময়ের দাবি। কোটি কোটি সমর্থক প্রিয়াংকার জন্য প্রতীক্ষা করছে।’ শুধু ছেলে রাহুলের ওপর চাপ না বাড়িয়ে বরং প্রিয়াংকাকে সক্রিয় করার জন্য কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক সংবাদে দিগি¦জয় আরও বলেন, ‘রায়বেড়েলি এবং আমেথিতে সফলতার প্রমাণ দিয়েছেন প্রিয়াংকা।
কংগ্রেসের উচিত এবার তাকে জাতীয় পরিসরে নিয়ে আসা।’ সদ্য শেষ হওয়া পাঁচ বিধানসভায় ভরাডুবির পর দলের নিয়ত ও নীতি নতুন করে নির্ধারণের জন্য কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সিনিয়র নেতারা। ফার্স্টপোস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কংগ্রেস নেতারা বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনের ফসকা গেরো অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার আগেই আবারও বিধানসভার পরাজয়ে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হচ্ছে দলটা। আর নিয়তির ওপর ভরসা করে বসে থাকাটা ঠিক হবে না। দ্রুত নীতি এবং নিয়ত ঠিক না করতে পারলে কংগ্রেসকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না।’ নিজেদের দুর্গ আসামেই শুধু না বরং সব রাজ্যেই কংগ্রেসের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। কেরালাতেও বামদের কাছে ক্ষমতা হারিয়েছে তারা। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-কে সঙ্গে নিয়েও আটকাতে পারেনি জয়ললিতাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে আবার বামদের সঙ্গে আপদকালীন জোট করেও তৃণমূলের তোড়ে ওড়ে গেছে রাহুলের মোহনীয়তা। ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতারা দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের ধস ঠেকাতে ব্যর্থ রাহুলকে আবারও সুযোগ দেয়ার কারণেই দলের এ বেহাল দশা।’ তুমুল সংকটের এ সময়ে প্রিয়াংকার হাতেই নিস্তারের জাদুরকাঠি দেখছেন কংগ্রেসিয়ানরা। প্রিয়ংবদাকে এবার লৌহমানবীরূপে দলের স্টিয়ারিংয়ে দেখতে চান তারা।
No comments