রাহুলের খামখেয়ালিতে আসামডুবি
অভাবের দিনে নাকি ভাতের মাড়টুকুও ফেলতে নেই, সেখানে সোনায় ভরা থালাটাই ফেলে দিলেন রাহুল গান্ধী! পরিণামে কংগ্রেসের আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত আসামেও দলটি এবার চূড়ান্ত ধরাশায়ী। দলীয় নেতাদের সঙ্গে রাহুলের খামখেয়ালি আচরণ, রাজনৈতিক কূটচালে অজ্ঞ কংগ্রেসের এ অপরিণামদর্শী উত্তরাধিকারের ঔদ্ধত্যের হেনস্তা থেকে বাঁচতে দল ছেড়েছেন কংগ্রেসের তরুণ ‘আসাম নায়করা’। শোধ তুলতে পরে আবার তারাই যোগ দিয়েছেন দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ বিজেপিতে। আসামের মাটিতে কংগ্রেসকে শুইয়ে দিয়ে বিজেপির বিজয় নিশানও উড়ালেন তারা। রাহুলের ওপর রাগের ঝাল মেটালেন কংগ্রেসের গায়ে। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ধরা খাওয়ার পর দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ। ২০১৬ সালের বিধানসভাকে টার্গেট করে তরুণ নেতার হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়ার সুপারিশও করেছিলেন স্থানীয় জ্যেষ্ঠ নেতারা। কিন্তু কংগ্রেস মসনদের ‘বাদশাহ’ আসামের নেতাদের দাবিতে কান দিলেন না। এদিকে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন তরুণ নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
তরুণ বনাম শর্মা দ্বন্দ্বে উত্তাল হয়ে উঠল পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসের ‘বাঙাল ঘাঁটি’খ্যাত রাজ্যটা। সংকট নিরসনের জন্য অনেকদিন ঘুরঘুর করেও দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীর টিকিটিও খুঁজে পাননি শর্মা। শুক্রবার গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শর্মা বলেন, ‘অবশেষে এক ফোরামে রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ হল। সেদিনের বৈঠকে তরুণ গগৈও উপস্থিত ছিল। রাজনীতির বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাইলে দুই মিনিট সময় বেঁধে দিলেন রাহুল।’ সেই দুই মিনিটও কথা বলতে পারেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শর্মা। তিনি আরও বলেন, ‘আমি কথা বলা শুরু করার পর রাহুল তার ছোট কুকুর ছানাটিকে নিয়ে খেলতে শুরু করেন। এ সময় আমাদের জন্য রাখা বিস্কুটগুলো পর্যন্ত খেয়ে নিল রাহুলের কুকুরছানা। এ ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর আমি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। এরপরেই রাহুল আমাকে দেখা করতে ডাকেন। কিন্তু আমি জানিয়ে দেই যে, ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা শশী থারুর দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘এ পরাজয়ের দায় শুধু গান্ধী পরিবারের ওপরই বর্তায় না। তবে কংগ্রেসকে এখনই গতিশীল এবং জনমুখী নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে।’ তবে রাহুল গান্ধীর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘গান্ধীজি নিশ্চই একসময় ভালো করবে!’ এদিকে বিহারের নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়কে কাজে লাগিয়েও রাহুল গান্ধী ঠিকমতো জনমত গঠন করতে পারেননি বলে দাবি করেছে শুক্রবারের দি ইন্ডিয়া টাইমস। বিরোধী দলকে সামলাতে রাহুলের কৌশলের ঘাটতি আছে বলেও দাবি করে পত্রিকাটি। অন্যদিকে দলের সিনিয়র নেতারা ডেইলি নিউজ অ্যানালিসিসকে (ডিএনএ) বলেন, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরও দল গোছাতে কোনো উদ্যোগ নেননি শীর্ষ নেতারা। এ ছাড়া পরাজয়ের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও পার্টির ফোরামে প্রকাশ করা হয়নি। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের বালখিল্যতাই কংগ্রেসের তলানিমুখী হওয়ার কারণ বলে দাবি করেন কংগ্রেস নেতারা। আসামের নির্বাচনের পরাজয়ের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেছেন তারা।
No comments