তনুর ভাইয়েরা by রোকেয়া রহমান
গত
কয়েক দিনে সারা দেশে যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে
তনু। পুরো নাম সোহাগী জাহান তনু। কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী। ২০
মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে তনু হত্যার খবর প্রকাশ পাওয়ার পর শুরু হয় সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যমে তোলপাড়। এরপর তনুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে
কুমিল্লাজুড়ে ও রাজধানী ঢাকায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছেই।
আজ প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের ছবি ছাপা হয়েছে। ছবিতে বিক্ষোভকারীদের হাতে একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘আমরা সবাই তনুর ভাই, তনু হত্যার বিচার চাই’। তনুর ভাইয়েরা আজ তাঁর বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন। এটা আশার কথা। কিন্তু যে বা যারা তনুকে হত্যা করেছে, সে বা তারা কারও না কারও ভাই। তাদের হাত একটুও কাঁপেনি তনুকে হত্যা করতে। এই ভাইয়েরা জানে না নারীদের সম্মান করতে, এই ভাইদের কাছে নারীরা ভোগের বস্তু, নারীদের সঙ্গে যা খুশি তা করা যায়। এই ভাইদের কাছে কোনো নারীই নিরাপদ নয়।
এই যেমন গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে এমনই এক ‘ভাই’ একজন নারী চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এই ভাইটি একজন অটোরিকশাচালক। আজ প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠার খবরে প্রকাশ, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ওই নারী চিকিৎসক চট্টগ্রামের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকা থেকে অটোরিকশা করে কুঞ্জছায়া আবাসিক এলাকার বাসায় ফিরছিলেন। ষোলোশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় পৌঁছানোর পর সেখানে যানজট থাকায় চালক ভাইটি বিকল্প পথে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। এরপর একটি নির্জন স্থানে অটোরিকশা থামিয়ে চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। কিন্তু চিকিৎসকের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে চালক ‘ভাইটির’ অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ হতে পারেনি। এই অটোরিকশাচালক ‘ভাইয়ের’ কাছে ওই চিকিৎসক কেবলই একজন রক্তমাংসের নারী। যাঁকে উত্ত্যক্ত করা যায়, ভোগ করা যায়। নারীর পদমর্যাদা, তাঁর পেশা, তাঁর সামাজিক অবস্থান এগুলো তার কাছে বিবেচ্য নয়। এসব ভাইদের কাছে নারীরা কী করে নিরাপদ থাকবেন? এই চিকিৎসক চিৎকার দিয়ে বেঁচেছেন। তনুও হয়তো বাঁচার জন্য চিৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। মানুষরূপী হায়েনা বা হায়েনারা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
সমাজে এখন এমন ‘ভাইয়ের’ কোনো অভাব নেই। প্রায় দিনই আমরা তাদের অপকর্মের খবর শুনতে পাই। দেশে আইন রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। সবার নাকের ডগায় আমাদের মহান ভাইয়েরা সোল্লাসে ভয়ংকর সব অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেউ যেন এদের প্রতিরোধ করতে পারছে না। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু গত ৩১ জানুয়ারি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক ভালো। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মন্ত্রীর এই কথাকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না।
এই লেখাটা যখন লিখছি তখন পর্যন্ত তনুর হত্যাকারীদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এমন তো কতই ঘটেছে যে ভয়ংকর সব অপরাধ করেও অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে। তাই ভয় হয়, তনুর হত্যাকারীরা ধরা পড়বে তো! আজ যে ভাইয়েরা তনু হত্যার বিচার দাবিতে সরব হয়েছেন, তাঁদের শতকোটি স্যালুট জানাই। এই ভাইয়েরা বিক্ষোভ মিছিল করছেন, মানববন্ধন করছেন, সড়কে শুয়ে পড়ছেন, মোমবাতি প্রজ্বালন করছেন। তাঁদের আজ একটাই দাবি, তনুর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তনুর ভাইদের এ দাবি পূরণ হোক-এই আমাদের একান্ত চাওয়া।
রোকেয়া রহমান: সাংবাদিক
আজ প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের ছবি ছাপা হয়েছে। ছবিতে বিক্ষোভকারীদের হাতে একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘আমরা সবাই তনুর ভাই, তনু হত্যার বিচার চাই’। তনুর ভাইয়েরা আজ তাঁর বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন। এটা আশার কথা। কিন্তু যে বা যারা তনুকে হত্যা করেছে, সে বা তারা কারও না কারও ভাই। তাদের হাত একটুও কাঁপেনি তনুকে হত্যা করতে। এই ভাইয়েরা জানে না নারীদের সম্মান করতে, এই ভাইদের কাছে নারীরা ভোগের বস্তু, নারীদের সঙ্গে যা খুশি তা করা যায়। এই ভাইদের কাছে কোনো নারীই নিরাপদ নয়।
এই যেমন গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে এমনই এক ‘ভাই’ একজন নারী চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এই ভাইটি একজন অটোরিকশাচালক। আজ প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠার খবরে প্রকাশ, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ওই নারী চিকিৎসক চট্টগ্রামের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকা থেকে অটোরিকশা করে কুঞ্জছায়া আবাসিক এলাকার বাসায় ফিরছিলেন। ষোলোশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় পৌঁছানোর পর সেখানে যানজট থাকায় চালক ভাইটি বিকল্প পথে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। এরপর একটি নির্জন স্থানে অটোরিকশা থামিয়ে চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। কিন্তু চিকিৎসকের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে চালক ‘ভাইটির’ অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ হতে পারেনি। এই অটোরিকশাচালক ‘ভাইয়ের’ কাছে ওই চিকিৎসক কেবলই একজন রক্তমাংসের নারী। যাঁকে উত্ত্যক্ত করা যায়, ভোগ করা যায়। নারীর পদমর্যাদা, তাঁর পেশা, তাঁর সামাজিক অবস্থান এগুলো তার কাছে বিবেচ্য নয়। এসব ভাইদের কাছে নারীরা কী করে নিরাপদ থাকবেন? এই চিকিৎসক চিৎকার দিয়ে বেঁচেছেন। তনুও হয়তো বাঁচার জন্য চিৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। মানুষরূপী হায়েনা বা হায়েনারা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
সমাজে এখন এমন ‘ভাইয়ের’ কোনো অভাব নেই। প্রায় দিনই আমরা তাদের অপকর্মের খবর শুনতে পাই। দেশে আইন রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। সবার নাকের ডগায় আমাদের মহান ভাইয়েরা সোল্লাসে ভয়ংকর সব অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেউ যেন এদের প্রতিরোধ করতে পারছে না। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু গত ৩১ জানুয়ারি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক ভালো। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মন্ত্রীর এই কথাকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না।
এই লেখাটা যখন লিখছি তখন পর্যন্ত তনুর হত্যাকারীদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এমন তো কতই ঘটেছে যে ভয়ংকর সব অপরাধ করেও অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে। তাই ভয় হয়, তনুর হত্যাকারীরা ধরা পড়বে তো! আজ যে ভাইয়েরা তনু হত্যার বিচার দাবিতে সরব হয়েছেন, তাঁদের শতকোটি স্যালুট জানাই। এই ভাইয়েরা বিক্ষোভ মিছিল করছেন, মানববন্ধন করছেন, সড়কে শুয়ে পড়ছেন, মোমবাতি প্রজ্বালন করছেন। তাঁদের আজ একটাই দাবি, তনুর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তনুর ভাইদের এ দাবি পূরণ হোক-এই আমাদের একান্ত চাওয়া।
রোকেয়া রহমান: সাংবাদিক
No comments