নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার চান মোদি
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার চেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত শনিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে মোদি নিরাপত্তা পরিষদের বিষয়ে নয়াদিল্লির আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করলেন। মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া তাঁর প্রথম ভাষণে কাশ্মীর, সন্ত্রাসবাদ, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রসঙ্গেও কথা বলেন। খবর বিবিসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের অঙ্গগুলোতে বিংশ শতাব্দীর অপরিহার্য বিষয়গুলোর প্রতিফলন ঘটেছে। সেগুলো একবিংশ শতাব্দীতে সেভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাই পরিষদগুলোকে আরও ‘অংশগ্রহণমূলক’ করে গড়তে হবে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য তদবির চালিয়ে আসছে।
বর্তমানে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য হচ্ছে বিশ্বের প্রভাবশালী পাঁচটি দেশ। এগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। নির্দিষ্ট মেয়াদ পর পর অস্থায়ী ১০ সদস্যরাষ্ট্র পরিবর্তন হয়। জাতিসংঘে ‘প্রকৃত আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেন, সংস্কার না করায় জাতিসংঘ ‘অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে’ রয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তান প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চান। তবে এ জন্য অবশ্যই ‘উপযুক্ত পরিবেশ’ সৃষ্টি করতে হবে। ‘সন্ত্রাসবাদের ছায়া সরিয়ে’ সংলাপে বসতে হবে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেনা পাঠিয়ে থাকে। শান্তিরক্ষী বাহিনীতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ভূমিকার উল্লেখ করে এতে অবদান রাখা দেশগুলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বৈশ্বিক উৎপাদন ও প্রযুক্তির কেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ভারতের রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন মোদি। বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠক: সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা করার আগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। তাঁরা জাতিসংঘের সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন ও আঞ্চলিক নানা বিষয়ে কথা বলেন। বান কি মুনের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে ভারতের ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদান’ ও ভারতের জনগণের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মহাসচিব। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকবরউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান,
দুই নেতা জাতিসংঘের সংস্কার ও শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অবদান রাখা দেশগুলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সেন্ট্রাল পার্কে ভাষণ: নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে শনিবার প্রায় ৬০ হাজার দর্শকের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন মোদি। দারিদ্র্য দূরীকরণের লড়াই করা আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল পোভার্টি প্রজেক্ট আয়োজিত ‘গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ওই বক্তৃতা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া দর্শকদের একটি বড় অংশ ছিল তরুণ। প্রথম সাত মিনিট ইংরেজিতে বক্তৃতা করার পর সংস্কৃত শ্লোকের মাধ্যমে ‘বিশ্বের জন্য শান্তি কামনা’ করেন মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বদ্ধ সম্মেলন কক্ষের চেয়ে খোলা ময়দানে তরুণদের সামনে হাজির হতে পেরে তিনি উচ্ছ্বসিত। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমরা আজ যা করবে, সেটাই আমাদের আগামী নির্মাণ করবে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনেও ভাষণ দেন। সেখানে কয়েক হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অংশ নেয়।
No comments