সাইফুলের ফেরা নানা প্রশ্ন @মানবজমিন
অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর ফিরে এসেছেন ব্যবসায়ী সাইফুল। তার অপহরণের ঘটনাটিও ছিল সুপরিকল্পিত। নির্জন স্থানে একদিন রাখার পর শুক্রবার রাতে সাভারের নবীনগরে তাকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। বুধবার রাতে অপহরণের পর তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। এ বিষয়টি উল্লেখ করে থানায় ডায়েরি করেছিল অপহৃতের পরিবার। কিন্তু ফিরে এসে সাইফুল জানিয়েছেন, অপহরণের পর থেকে দীর্ঘ ২৬ ঘণ্টা তিনি অপহরণকারীদের কবলে থাকলেও তার কাছে কোন মুক্তিপণ চায়নি অপহরণকারীরা। এ বিষয়ে কোন কথাও বলেনি। এমনকি বন্দি থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে কোন বিষয়েই আলাপ করেনি অপহরণকারীরা। তিনি জানিয়েছেন, মুক্তিপণের জন্য কোন চাপ বা নির্যাতনও করেনি অপহরণকারীরা। ফেলে যাওয়ার সময় কোমরে লাথি দেয়া এবং কোন এক পর্যায়ে পায়ের তালুতে লাঠি দিয়ে কয়েকবার আঘাত করেছিল শুধু। এসব কারণে অপহরণকারীদের নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সাইফুল জানিয়েছেন কেন এবং কারা তাকে অপহরণ করেছিল তা তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি।
ছাড়া পাওয়ার পর ব্যবসায়ী সাইফুল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মানবজমিন-এর কাছেও তিনি অপহরণ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তাকে ফিরিয়ে দেয়ার আগ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, যখন বললো- চল, তখন আঁতকে উঠি। ভেতরে ভয় ঢুকে যায়। এর আগে পায়ের পাতায় ১০-১২টি বাড়ি দেয় আমাকে। সারাক্ষণ পিঠমোড়া করে হাত ও চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। এক পিস পাউরুটি আর একটু পানি ছাড়া ২৬ ঘণ্টায় কিছু খেতে দেয়নি। ক্ষুধা ও পানির পিপাসায় কাতর ছিলাম। গাড়িতে তুলে চোখ বাঁধা অবস্থায় কোমরে একটা লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়া হয় আমাকে। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি আমি সাভার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে। তবে কেন এবং কারা তাকে অপহরণ করেছে তা বলতে পারেন নি তিনি।
সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার এলাকার নুরজাহান নামে এক মহিলা তাকে ফোন করে এক হাজার টাকা ধার চান। ওই মহিলাকে এক হাজার টাকা দিয়ে তিনি সানারপাড় বাসস্ট্যান্ডে আসেন। স্ট্যান্ডে কোন রিকশা না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে পায়ে হেঁটে মৌচাকের দিকে যেতে থাকেন। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার উত্তর পাশে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। গাড়িটির কাছাকাছি যেতেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে ৩-৪ জন তাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, এই সাইফুল গাড়িতে উঠ। অন্ধকারে কাউকে চেনা যায়নি। গাড়িতে ওঠার পর পরই আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। এবং নাকের দিকে কিছু একটা লাগিয়ে দেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর নিজেকে আবিষ্কার করি একটি অন্ধকার রুমের ভেতর দেয়ালের সঙ্গে হেলান দেয়া অবস্থায়। চোখ বাঁধা। দুই হাত পেছন দিকে বাঁধা। প্রচ- ক্ষুধা অনুভব করলে অপহরণকারীদের একজন আমাকে এক পিস পাউরুটি ও একটু পানি খাইয়ে দেয়। অনেক সময় পর হঠাৎ আমার দুই পায়ের তালুতে লাঠি দিয়ে ১০-১২টি বাড়ি দেয়। আমি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকি। ক্ষুধা ও পানির পিপাসায় কাতর হয়ে উঠি। কিন্তু কোন খাবার দেয়া হয়নি। পরে ২-৩ জন এসে বলে এই চল। তখন আমি আঁতকে উঠি। না জানি কি হয়। আমাকে কি মেরে ফেলবে? না ছেড়ে দিবে? নানা প্রশ্ন তখন আমার মনে। বার বার মনে পড়ছিল ৭ জনকে অপহরণ করার পর মেরে ফেলার ঘটনাটি। গাড়িতে ওঠানোর পর আমাকে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় মারে। ২০-২৫ মিনিট গাড়ি চলার পর হঠাৎ আমার কোমরে একটা লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। তখনও আমার হাত ও চোখ বাঁধা ছিল। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি আমাকে সাভার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন একটি হোটেলের সামনে ফেলে যায়। পরে বিসমিল্লাহ নামে ওই হোটেলের এক লোকের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমার স্ত্রীকে ফোন করি। আমার স্ত্রী আমার কাছে পৌঁছার আগেই র্যাব-সদস্যরা আমার কাছে পৌঁছায়। তারা আমাকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া আফরিন সুলতানা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার পর সাইফুল আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানায়। কিন্তু সে কোথায় তা বলতে পারেনি। তখন আমি তাকে বলি তুমি ফোনটা ওখানের একজন লোককে দাও। তখন ওই লোকের কাছ থেকে জানতে পারি সে সাভার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন নবীনগর বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে আছে। তখন আমি বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ও র্যাব-১১কে জানাই। রাত সোয়া ১টার দিকে আমি নিজে সাভার নবীনগর র্যাব ৪-এর ক্যাম্পে গিয়ে উপস্থিত হই। নানা প্রশ্নের জবাবে অপহৃত সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ও র্যাবের তৎপরতার কারণেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাছাড়া, ১২ বছর ধরে আমি সানারপাড় এলাকায় ব্যবসা করি। এলাকায় আমার বেশ কয়েকটি ব্যবসা রয়েছে। কারও সঙ্গে কোন দিন কোন ঝামেলা হয়নি। ২০০২ সালে পূর্ব সানারপাড়ে বাড়ি করি। ২ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আমাদের সংসার। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখেই আছি। তিনি বলেন, আমি এক সময় সামান্য বেতনে ১৯৯৯ সালে ঢাকার মালিবাগে সিটি ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করতাম। পরে সানারপাড়ে ব্যবসা শুরু করি। আজ আমার কয়েকটি ব্যবসা। কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ। কারও সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব আছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত ৬ মাস আগে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর বিসিকে ব্রাদার্স নিটওয়্যার নামে একটা ব্যবসা শুরু করি। আমি এবং সানারপাড় এলাকার বেলায়েত হোসেন আলম নামে এক ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে। ওই প্রতিষ্ঠানে আমার বিনিয়োগ ২৭-২৮ লাখ টাকা। আর আলমের বিনিয়োগ ৬-৭ লাখ টাকা। কিন্তু উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়া ও লোকসানের কারণে আমি ফ্যাক্টরি বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তখন আলম বলে, বিক্রি করলে তো আমার-আপনার দুইজনেরই লোকসান। এরচেয়ে ভালও ফ্যাক্টরি আমাকে দিয়ে দেন। আমি আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে দেবো। মাসে ৫০ হাজার টাকা করে কিস্তি আকারে পরিশোধ করবো। এতে আমি রাজি হয়ে যাই। আগামী জুন মাসে প্রথম কিস্তি দেয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া, আমি ব্যবসার কারণে লোকজনের কাছে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পাবো। আর আমি দেনা আছি ২৫-২৬ লাখ টাকা। কিন্তু এ নিয়ে কারও সঙ্গে কোন মনোমালিন্য হয়নি।
অপহরণের ঘটনায় 'জড়িত' ৩ জন গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক দম্পতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলো নুরজাহান বেগম (৩৫), তার স্বামী ইউনুস আলী দুলাল (৫০) ও আকাশ (৩২)। গতকাল ভোরে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ইউনুস-নুরজাহান দম্পতি ও বিকালে আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আবদুল আহাদ জানান, গ্রেপ্তারকৃত তিন জনই সাইফুল ইসলামের অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রুপের অন্য সদস্যদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত নুরজাহান ও ইউনুস দম্পতি পেশাদার অপহরণকারী চক্রের সদস্য। নুরজাহানের কাজ হলো ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে ডেকে নিয়ে যাওয়া। পরে অপহরণকারী চক্রের অন্য সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে আটকিয়ে চাঁদা দাবি করে। এ কাজে তার স্বামী ইউনূস সহায়তা করে। আর আকাশ হলো টাকা ট্রান্সফার কোন মোবাইলে এবং কিভাবে হবে তা ঠিক করে। আকাশ দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বিকাশ আউটলেটের মালিক। এই চক্রের সঙ্গে আবুল কালামসহ আরও কয়েকজন জড়িত।
আদালতে সাইফুলের জবানবন্দি
ওদিকে বিকাল ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে অপহৃত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জবানবন্দি দিয়েছেন। অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই উত্তম কুমার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সাইফুল ইসলামকে আদালতে নিয়ে আসেন। পুলিশ জানায়, সাইফুল ইসলাম আদালতকে বলেছে, শুক্রবার রাতে বাসায় যাওয়ার পথে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে একটি অন্ধকার ঘরে হাত ও চোখ বেঁধে আটকে রাখা হয়। পরদিন শুক্রবার রাতে একটি গাড়ি থেকে লাথি দিয়ে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। সে কাউকে চিনতে পারেনি। কারা তাকে অপহরণ করেছে তিনি তা জানেন না।
ছাড়া পাওয়ার পর ব্যবসায়ী সাইফুল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মানবজমিন-এর কাছেও তিনি অপহরণ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তাকে ফিরিয়ে দেয়ার আগ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, যখন বললো- চল, তখন আঁতকে উঠি। ভেতরে ভয় ঢুকে যায়। এর আগে পায়ের পাতায় ১০-১২টি বাড়ি দেয় আমাকে। সারাক্ষণ পিঠমোড়া করে হাত ও চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। এক পিস পাউরুটি আর একটু পানি ছাড়া ২৬ ঘণ্টায় কিছু খেতে দেয়নি। ক্ষুধা ও পানির পিপাসায় কাতর ছিলাম। গাড়িতে তুলে চোখ বাঁধা অবস্থায় কোমরে একটা লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়া হয় আমাকে। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি আমি সাভার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে। তবে কেন এবং কারা তাকে অপহরণ করেছে তা বলতে পারেন নি তিনি।
সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার এলাকার নুরজাহান নামে এক মহিলা তাকে ফোন করে এক হাজার টাকা ধার চান। ওই মহিলাকে এক হাজার টাকা দিয়ে তিনি সানারপাড় বাসস্ট্যান্ডে আসেন। স্ট্যান্ডে কোন রিকশা না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে পায়ে হেঁটে মৌচাকের দিকে যেতে থাকেন। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার উত্তর পাশে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। গাড়িটির কাছাকাছি যেতেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে ৩-৪ জন তাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, এই সাইফুল গাড়িতে উঠ। অন্ধকারে কাউকে চেনা যায়নি। গাড়িতে ওঠার পর পরই আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। এবং নাকের দিকে কিছু একটা লাগিয়ে দেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর নিজেকে আবিষ্কার করি একটি অন্ধকার রুমের ভেতর দেয়ালের সঙ্গে হেলান দেয়া অবস্থায়। চোখ বাঁধা। দুই হাত পেছন দিকে বাঁধা। প্রচ- ক্ষুধা অনুভব করলে অপহরণকারীদের একজন আমাকে এক পিস পাউরুটি ও একটু পানি খাইয়ে দেয়। অনেক সময় পর হঠাৎ আমার দুই পায়ের তালুতে লাঠি দিয়ে ১০-১২টি বাড়ি দেয়। আমি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকি। ক্ষুধা ও পানির পিপাসায় কাতর হয়ে উঠি। কিন্তু কোন খাবার দেয়া হয়নি। পরে ২-৩ জন এসে বলে এই চল। তখন আমি আঁতকে উঠি। না জানি কি হয়। আমাকে কি মেরে ফেলবে? না ছেড়ে দিবে? নানা প্রশ্ন তখন আমার মনে। বার বার মনে পড়ছিল ৭ জনকে অপহরণ করার পর মেরে ফেলার ঘটনাটি। গাড়িতে ওঠানোর পর আমাকে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় মারে। ২০-২৫ মিনিট গাড়ি চলার পর হঠাৎ আমার কোমরে একটা লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। তখনও আমার হাত ও চোখ বাঁধা ছিল। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি আমাকে সাভার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন একটি হোটেলের সামনে ফেলে যায়। পরে বিসমিল্লাহ নামে ওই হোটেলের এক লোকের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমার স্ত্রীকে ফোন করি। আমার স্ত্রী আমার কাছে পৌঁছার আগেই র্যাব-সদস্যরা আমার কাছে পৌঁছায়। তারা আমাকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া আফরিন সুলতানা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার পর সাইফুল আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানায়। কিন্তু সে কোথায় তা বলতে পারেনি। তখন আমি তাকে বলি তুমি ফোনটা ওখানের একজন লোককে দাও। তখন ওই লোকের কাছ থেকে জানতে পারি সে সাভার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন নবীনগর বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে আছে। তখন আমি বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ও র্যাব-১১কে জানাই। রাত সোয়া ১টার দিকে আমি নিজে সাভার নবীনগর র্যাব ৪-এর ক্যাম্পে গিয়ে উপস্থিত হই। নানা প্রশ্নের জবাবে অপহৃত সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ও র্যাবের তৎপরতার কারণেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাছাড়া, ১২ বছর ধরে আমি সানারপাড় এলাকায় ব্যবসা করি। এলাকায় আমার বেশ কয়েকটি ব্যবসা রয়েছে। কারও সঙ্গে কোন দিন কোন ঝামেলা হয়নি। ২০০২ সালে পূর্ব সানারপাড়ে বাড়ি করি। ২ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আমাদের সংসার। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখেই আছি। তিনি বলেন, আমি এক সময় সামান্য বেতনে ১৯৯৯ সালে ঢাকার মালিবাগে সিটি ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করতাম। পরে সানারপাড়ে ব্যবসা শুরু করি। আজ আমার কয়েকটি ব্যবসা। কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ। কারও সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব আছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত ৬ মাস আগে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর বিসিকে ব্রাদার্স নিটওয়্যার নামে একটা ব্যবসা শুরু করি। আমি এবং সানারপাড় এলাকার বেলায়েত হোসেন আলম নামে এক ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে। ওই প্রতিষ্ঠানে আমার বিনিয়োগ ২৭-২৮ লাখ টাকা। আর আলমের বিনিয়োগ ৬-৭ লাখ টাকা। কিন্তু উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়া ও লোকসানের কারণে আমি ফ্যাক্টরি বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তখন আলম বলে, বিক্রি করলে তো আমার-আপনার দুইজনেরই লোকসান। এরচেয়ে ভালও ফ্যাক্টরি আমাকে দিয়ে দেন। আমি আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে দেবো। মাসে ৫০ হাজার টাকা করে কিস্তি আকারে পরিশোধ করবো। এতে আমি রাজি হয়ে যাই। আগামী জুন মাসে প্রথম কিস্তি দেয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া, আমি ব্যবসার কারণে লোকজনের কাছে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পাবো। আর আমি দেনা আছি ২৫-২৬ লাখ টাকা। কিন্তু এ নিয়ে কারও সঙ্গে কোন মনোমালিন্য হয়নি।
অপহরণের ঘটনায় 'জড়িত' ৩ জন গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক দম্পতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলো নুরজাহান বেগম (৩৫), তার স্বামী ইউনুস আলী দুলাল (৫০) ও আকাশ (৩২)। গতকাল ভোরে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ইউনুস-নুরজাহান দম্পতি ও বিকালে আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আবদুল আহাদ জানান, গ্রেপ্তারকৃত তিন জনই সাইফুল ইসলামের অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রুপের অন্য সদস্যদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত নুরজাহান ও ইউনুস দম্পতি পেশাদার অপহরণকারী চক্রের সদস্য। নুরজাহানের কাজ হলো ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে ডেকে নিয়ে যাওয়া। পরে অপহরণকারী চক্রের অন্য সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে আটকিয়ে চাঁদা দাবি করে। এ কাজে তার স্বামী ইউনূস সহায়তা করে। আর আকাশ হলো টাকা ট্রান্সফার কোন মোবাইলে এবং কিভাবে হবে তা ঠিক করে। আকাশ দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বিকাশ আউটলেটের মালিক। এই চক্রের সঙ্গে আবুল কালামসহ আরও কয়েকজন জড়িত।
আদালতে সাইফুলের জবানবন্দি
ওদিকে বিকাল ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে অপহৃত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জবানবন্দি দিয়েছেন। অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই উত্তম কুমার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সাইফুল ইসলামকে আদালতে নিয়ে আসেন। পুলিশ জানায়, সাইফুল ইসলাম আদালতকে বলেছে, শুক্রবার রাতে বাসায় যাওয়ার পথে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে একটি অন্ধকার ঘরে হাত ও চোখ বেঁধে আটকে রাখা হয়। পরদিন শুক্রবার রাতে একটি গাড়ি থেকে লাথি দিয়ে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। সে কাউকে চিনতে পারেনি। কারা তাকে অপহরণ করেছে তিনি তা জানেন না।
No comments